দিনটা ছিলো ২৭ অক্টোবর ২০১৮। সকাল সাত ঘটিকা নাগাদ একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে আমার ফোনে। তখন আমি নিদ্রারত অবস্থায় বিছানায় শুয়ায়িত ছিলাম। ঘুম ঘুম চোখে কলটা রিসিভ করে হ্যালো বললাম। কিন্তু অপর পাশ থেকে কোনো প্রত্যুত্তর আসলো না। আমি আবারও হ্যালো বললাম। তবুও অপর পাশ থেকে কোনো উত্তর আসলো না। পরপর কয়েকবার ‘হ্যালো’ বলার পরেও কোনো রেসপন্স পেলাম না। প্রায় ২৫ সেকেন্ড পর অপর পাশ থেকে উত্তর এলো। একটা অপরিচিত মেয়ে কণ্ঠস্বর। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কে আপনি? সে উত্তরে বললো, “আমি নিয়তি।”
– কোন নিয়তি?
প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে মেয়েটি উল্টো আমাকে জিজ্ঞেস করলো, স্যার আজকে কত তারিখ? আমি বললাম, কেন? আজ ২৭ তারিখ! মেয়েটি আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো, শুভ জন্মদিন স্যার। আমি সত্যই ভুলে গিয়েছিলাম যে আজ আমার জন্মদিন। আমি মেয়েটিকে আবারও জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? বাসা কোথায় আপনার? আর আজ যে আমার জন্মদিন, সেটা কিভাবে জানলেন? মেয়েটি পূর্বের ন্যায় প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর না দিয়ে বললো, স্যার দেখা করতে পারবেন? মেয়েটির কন্ঠটা অসম্ভব সুন্দর ছিলো। যা আমাকে এবং আমার মনকে বিমোহিত করেছিলো। তাই আমি আর দেখা করার বিষয়ে ‘না’ বলতে পারলাম না। তবুও একবার মনে হলো “অচেনা অজনা একটা মেয়ের সাথে আমি কেন দেখা করবো?” তাই আমি তাকে বললাম, “কেন?” সে বললো, আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
– তা কোথায় দেখা করতে হবে?
মেয়েটি কয়েকটি জায়গার নাম বললো। অবশেষে আমারদের দেখা করার স্থান সিলেক্ট হলো। স্থানটি “জিয়া উদ্যান।”
সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। সূর্যটা তখন পশ্চিমে মোর নিয়েছে। আমি বেড়িয়ে পড়লাম সেই প্রভাতী মিষ্টি কন্ঠী মেয়েটার সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে। দেখার করার জন্য উক্ত স্থানে গিয়ে দেখি, একটা সাদা ড্রেস পড়া মেয়ে স্ট্যাচু ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা দেখতে অতীব সুন্দরী বটে! তবে এই মেয়েটিই যে সকালের সেই “নিয়তি।” তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য আমি ফোনটা বের করে আননোন নাম্বারটিতে কল দিলাম। আহা আহা! এটাই দেখি সেই প্রভাত কন্যা। আমি কাছে এগিয়ে গেলাম। মেয়েটি আমাকে দেখেই বলে উঠলো,
– কেমন আছেন স্যার? (মেয়েটি)
– জ্বী, আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?
– জ্বী স্যার, আমিও ভালো আছি। চলুন ওপাশটাই গিয়ে দাঁড়াই।
নিয়তির সাথে কথা বলার সময় আমি লক্ষ্য করে দেখলাম, তার চোখ দু’টো নীল বর্ণের। দেখে মনে হলো যেন চোখ দু’টো নীল না হয়ে কালো হলে বড্ড বেমানান লাগতো। তার পরিধেয় পোশাক ছিলো একদম সাদা। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন উলুক্ষেতের খরগোশগুলোকে। বিস্তীর্ণ উলুক্ষেতে ছোট ছোট সাদা বর্ণের খরগোশগুলোকে একদম নিষ্পাপ অনন্য, অনবদ্য দেখায়। ঠিক তেমন এই মেয়েটি তথা নিয়তিকেও তেমনই দেখাচ্ছিলো।
– কী হলো স্যার? চলুন ওদিকটাতে গিয়ে দাঁড়াই। তার ডাকে আমি কল্পনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলাম এবং বললাম, হ্যাঁ.. হ্যাঁ চলো।
“স্যার আপনার সারপ্রাইজ সে হঠাৎ করেই সারপ্রাইজ বলাতে সামনে তাকিয়ে দেখলাম একটি টেবিলের উপর প্যাকেটিং করা কিছু একটা রয়েছে। নিয়তি প্যাকেটটা খুলতেই সাদা রঙের ছোট্ট একটি কেক দেখতে পেলাম। সূর্যটা ততক্ষণে নিজ অস্তিত্ব বিলীন করতে চলেছে। চারিদিকে তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। নিয়তি বললো, স্যার কেক কাটুন। আমি কেক কাঁটতে গিয়ে দেখি কেক কাঁটার ছুঁড়িটাই নেই। নিয়তি আমার দিকে ছুঁড়ি এগিয়ে দিয়ে বললো, এবার কাটুন স্যার। আমি কেক কাঁটার জন্য মাত্রই ছুঁড়িটা কেকের সমীপে নিয়েছি। ঠিক তখনই সে বলে উঠলো, না না এভাবে না। আমার দিকে তাকিয়ে কাঁটতে হবে। আমি বললাম, মানে?
– মানে আপনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কেক কাঁটবেন। কেকের দিকে তাকানো যাবে না একদম।
খোকা ওঠ ওঠ, আর কত ঘুমাবি? সকাল হয়ে গিয়েছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ কয়টা বাজে।” মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙে যায় আমার। আমি বিছানা ছেড়ে উঠে দেখি কোথাও সেই প্রভাত-ফেরীতে কল করা মিষ্টি মেয়ে “নিয়তি” নেই, নেই কোনো কেক। তখন আমি অানমনেই বলে উঠলাম, তাহলে কী এতক্ষণ আমি স্বপ্ন দেখছিলাম? হায়রে! এতো সুন্দর একটা মুহূর্ত মিস করে ফেললাম। “মা তুমি আর ডাকার সময় পেলে না?” “অসাধারণ, অসাধারণ স্টোরি স্যার। অনেক অনেক ভালো লাগলো। ” “এটাই ছিলো তোমাদের জন্য আমার পক্ষ থেকে ছোট্ট একটি রোমান্টিক স্টোরি।” “ধন্যবাদ স্যার, আগামীদিন এরকম আরো একটা গল্প আশা করছি আপনার থেকে।” উৎসর্গ: প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় ঈমাম হোসেন স্যার।