-দোস্ত অনিরে দেখছস?
-না
-মিরা অনিরে দেখছস?
-উঁহু
যাকে জিজ্ঞেস করছে সেই না বলছে। অনিন্দিতাকে কেউই দেখেনি। ঋষির মেজাজ খারাপ হয়ে আছে ভয়ানক ভাবে। আর মাত্র তিনমিনিট পর মেয়েটির স্টেজে ওঠার কথা। ও না থাকলে বেইজ্জতির চূড়ান্ত হবে।ওর মত করে উপস্থাপনা করতে পারবে না কেউ।পারলেও অনির মত হবে না।রাগে নিজের চুল ছিঁড়তে বাদ রাখলো ঋষি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দম বন্ধ করে ফেললো।মঞ্চের আলো নিভে গেছে। ভয়ে, উত্তেজনায় চোখ বন্ধ করে ফেললো ও।এক মিনিট,দু মিনিট।দর্শকদের মধ্যে চাপা গুঞ্জন উঠলো।মামুন স্যার এগিয়ে এসে ঋষিকে জিজ্ঞেস করলো,
-অনি কই রে? শুকনো কন্ঠে উত্তর দিল,
-জানি না স্যার তক্ষুনি যেন অদৃশ্যভাবে কন্ঠ ভেসে এলো।
‘In the end of the story, we only regret for the chances we didn’t take . Hello,ladies and gentlemen. A very very good evening to you and sorry for late ‘.আলো গিয়ে পড়লো কন্ঠস্বরের মালিকের উপর,দর্শক সারির পেছনে।অনিন্দিতা ওর চেনা রহস্যময় হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে নেমে আসছে।ধূসর তসরের শাড়ি, গলায় মুক্তোর মালা, চুলগুলো হাত খোঁপা করে দুটো চন্দ্রমল্লিকা গুঁজে দেয়া,চোখে গাঁঢ় টানের কাজল।যেকোনো সুন্দরী,জিরো ফিগারের মেয়ের চেয়ে অনিন্দিতাকে আকর্ষণীয় লাগছিল। মঞ্চে উঠেই বললো, ‘আমাকে লেট করার জন্য দোষ দিবেন না।শুনেছি ভুমিষ্ঠ হতেও যথেষ্ট আলসেমি করেছিলাম।একেতো নির্দিষ্ট ডেটের পরেও নাকি আম্মুর পেইন ওঠে নি।তার পর মাথা বের না করে এক পা বের করে অন্য পা কিছুতেই বের করতে চাইনি।ডাক্তাররা খুব করে পা ধরে অনুরোধ করায় দ্বিতীয় পা বের করি ।
দর্শক সারিতে হাসির ফোয়ারা ছুটলো।ঋষি পাশ থেকে মামুন স্যারের স্বস্তির শ্বাস ফেলার শব্দটা স্পষ্ট শুনলো।খেয়াল হলো নিজেও এতক্ষন শ্বাস চেপে ছিল।ফোঁস করে দম ছাড়লো।অনিটা এমনই।যেভাবে ওকে কোনো কাজ করতে বলা হবে সেভাবে কক্ষনো করবে না।প্রত্যেকটা কাজে ওর নিজস্বতা আছে।আজকের প্রোগ্রাম হলো থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষ্যে। ফানুস ওড়ানো দিয়ে শুরু হবে নতুন বছর।কিন্তু তার আগ পর্যন্ত চলবে নাচ-গান ।ওরা এবার ভার্সিটি ছাড়বে।দুজনই একই ডিপার্টমেন্টের। প্রোগ্রাম শেষ হয়ে গেছে অনেকক্ষন। ক্যাম্পাসে কেউ নেই।ভোর চারটে বাজতে যাচ্ছে প্রায়। অনি জলদি জলদি হাত লাগাচ্ছে ডেকোরেটরদের সাথে। ওর আর ঋষির উপরই এই দায়িত্ব থাকে। প্ল্যানিং করে অনি। ওর মাথা থেকে বেরও হয় সব দারুন দারুন আইডিয়া। পেছন থেকে কেউ ডাকলো,
-অনি না ফিরেই উত্তর নিল ও।জানে মামুন স্যার।
-প্রোগ্রামের আগে কই ছিলি রে পাজি মেয়ে? এবার ঘুরে দাঁড়ালো ও।বত্রিশ পাটির ডিসপ্লে দিয়ে বললো,
-স্যার,কোনদিন আমি স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী চলি?
-তা ঠিক।আর জন্মের ব্যাপারটা?
-হাচা কইসি স্যার।বিশ্বাস না হয় আমার আব্বাজানরে ফোন দেই?
মামুন স্যার হাসলো।উনি ওদের ডিপার্টমেন্টের প্রধান।জানে একমাত্র অনিই এভাবে কথা বলতে পারে। অন্য কারো সাধ্য নেই রাগী,মেজাজী বুড়োর সাথে এভাবে কথা বলে।মামুন স্যার নিজেও ভেবে পায় না মেয়েটা কিভাবে তার এতটা কাছে চলে এসেছে।সতেরো বছরের শিক্ষকতা করতে এসে তো কম দেখেন নি।কিন্তু অনি!ঝড়ো হাওয়ার মত।আসে। সব উড়িয়ে নিয়ে যায়।তারপর আর পাওয়া যায় না।আস্তা একটা ভালোবাসার নাম অনিন্দিতা। দীর্ঘশ্বাস ফেললো স্যার। মনে মনে ভাবলো ‘তার মেয়েটাও যদি এমন হতো ‘।তক্ষুনি কথা বলে উঠলো অনি ঋষির উদ্দেশ্যে।
-হারামজাদা, পিছলা পাঙাশ বলেই জিব কাটলো,
-স্যরি স্যার। মনেই নাই আপনি আছেন এইখানে।
স্যার মনে মনে ভাবলো ‘যাক। আমার মেয়েটা অন্তত এমন নয় ‘। মেয়েদের অসংখ্য গুণের একটা হলো নেকুপুষুমণি হয়ে থাকতে চায়।ন্যাকামি কয় প্রকার কি কি ম্যাক্সিমাম মেয়েকে দেখলেই ধারণা হয়ে যাবে।কিন্তু অনিকে সৃষ্টির সময় থেকেই গড়বড় হয়েছে মনে হয়।নতুবা উপরওয়ালা কে এমন জ্বালিয়েছে যে বেচারা ওকে পুরোপুরিভাবে মেয়েলি গুণ গুলো দিতেই পারেনি।ন্যাকামি ওর সহ্য হয় না।সুন্দর ছেলে, মেয়ে, বুড়ো যাই হোক না কেন,ওর চোখে ভাল লাগলেই সোজা গিয়ে বলবে আপনাকে আমার ভাললাগছে। ক্লাসের একটা মেয়ের সাথেও ওর খাতির হয়নি গত চার বছরে। তার কারণ আছে।
সব ক্যাম্পাসেই একটা করে অতি রুপবতী, বড়লোক মেয়ে থাকে ।তার আশেপাশে মৌমাছির মত কিছু চাটুকার থাকে।সবে বোধহয় মাস তিনেক ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস শুরু হয়েছে।দুম করে একদিন ক্লাসে ঢুকতে ঢুকতে বললো, রিদিমা, তুমি তো বেশ সুন্দর সুন্দর জামাকাপড় পড়ে আস। বেশ কিছু চাটুকারও জুটে গেছে।তোমার ডজন খানেক জামাকাপড় আমাকে দিও তো।নতুন না হোক।পুরাতন হলেই হবে।তবে তোমাকে যদিও এক কাপড়ে দুদিন দেখিনি। এইরকম কথা শোনার পর প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে নিজেরাই আন্দাজ করুন পাঠক।রিদিমা ভয়ংকর রেগে গেল।ঠান্ডা ভাবে বললো,
-তুমি পড়বা নাকি?
-আরে নাহ! আমার বাসার পাশেই বস্তিতে বেশ কিছু মেয়ে আছে। ওদের দিতাম।আমি তো বাচ্চা হাতী।আর দেখতেই পাচ্ছ।ছেলেদের মত এক জামাকাপড়েই বেশি চলে আমার। আবার একদিন নীলিমাকে যেয়ে বললো,
-তোমাদের বাসায় কি আটাময়দা খুব বেশি?
-কেন?
-না, আসলে মনে হয় তুমি আটা মুখে মাখো।তা নইলে হাত পা কালো, মুখ এত সাদা কেন?
স্বভাবতই মেয়েরা ওকে শত্রু মনে করতো।আর ওর কথাবার্তা, চালচলনে বন্ধু জুটে গেল অনেক।কিন্তু ছেলেদেরও ছেড়ে কথা বলতো না। যেমন নীলিমার এই কথাই একদিন যখন আড্ডাতে উঠলো তখন ও বললো,
-দ্যাখ,আমি বলি না মেয়েরা সাজবে না।সাজবে।উগ্র ভাবে নয়।ড্রেস নিয়ে আমার মাথাব্যথা নাই।কিন্তু এইটা শিক্ষাঙ্গন ।কোটি টাকার মালিকের সন্তানও পড়ে,রিকশাওয়ালার সন্তানও পড়ে। তার মধ্যে কেন আমি শুধু শুধু দেখাতে যাব আমি আলাদা?আসছি পড়তে।একসাথে থাকবো, পড়বো, আড্ডাদিব।রিকশাওয়ালার সন্তানও বাবার পেশা নিয়ে লজ্জা পাবে না।বড়লোকের সন্তানও না। তাহলে প্রবলেম কি?আসলে আমাদের এই সিস্টেমের মধ্যেই করাপশন।
পাল্টানো উচিত।তাই নিজেই শুরু করছি।আর তোরা যে আমাকে বলিস আমি এত ভাল মেয়ে কেন?আমি ভাল তাই আমার বরও জুটবে না কপালে।ছেলেরা বিয়ের জন্য নেকু, ভীতু মেয়েই খোঁজে।আমার মত মেয়ে নয়। সেদিনের আড্ডার ওই শেষ কথা কানে যায় ঋষির। ভীড় থেকে একটু দূরে বসেছিল ও।চোখ তুলে কন্ঠের মালকিনকে দেখলো।সাদাকালো স্কার্ট, সাদাগেঞ্জির সাথে রয়াল ব্লু শার্ট কনুই অব্দি গোটানো।বাঁ হাতে বড় ডায়ালের ঘড়ি।চোখে কাজল। চুলগুলো হাত খোপা করে রাখা। ঋষি দেখলো হাসলে মেয়েটার গালে টোল পড়ে,ঠোঁটের নীচে অদ্ভুত একটা ভাঁজ পড়ে।মোটুসোটু মেয়েটাকে নিমেষে ও পছন্দ করে ফেললো। আড্ডা শেষে অনি যখন চলে যাচ্ছিল তখন ঋষি ডাকলো ওকে।অনি দাঁড়াতে ঋষি এগিয়ে গিয়ে বললো,
-আমি কি আপনার সাথে কথা বলতে পারি?
-হু
-আমি কি আপনার বন্ধু হতে পারি? অনি চোখ ছোট ছোট করে ঋষিকে দেখলো।তারপর শীতল গলায় বললো,
-বন্ধুত্ব কখনো বলে কয়ে নিয়ম মেনে হয়না।কাজেই আপনার প্রস্তাব সংসদে পাস হলো না। বলে খিলখিল করে হেসে ফেললো । বললো,
-তোর নাম ঋষি না?আমি তো জানি তুই কথাই বলতে পারিস না।ক্লাসে প্রেজেন্ট পর্যন্ত দিস না।ঋষি সহজ হয়ে গেছে অনেকটা।
-আসলে মেয়েদের আমার খানিকটা ভয় লাগে। অনি বললো,
-আমার সাথে থাকলে তো তোকে মার্ডারও করতে হবে ।
সত্যি সত্যি ঋষির গলা শুকিয়ে গেল।অনি আবার হেসে উঠলো। ঋষি এবার পুরোই সহজ হয়ে গেছে।মাথা চুলকে বললো,
-ইয়ে দোস্ত, ব্লাড দেখলে যে আমার মাথা ঘোরে।মার্ডার করলাম। পুলিশ এসে দেখলো মার্ডারার অস্ত্র হাতে লাশের পাশে অজ্ঞান হয়ে আছে। সেটা কি ভাল হবে?
অনিন্দিতা বেলোয়ারী কাঁচ ভাঙা শব্দে হেসে উঠলো। অনিন্দিতাকে এক শব্দে প্রকাশ করা অসম্ভব। এই একটা কথা বললো সেকেন্ডের মধ্যে সেটা ঘুরিয়ে ফেললো। কোনো কথায় ,কাজে একদন্ড স্থির নয়।মন না মতি সদাই।কিন্তু ও যেটা পেয়েছে সেটা হলো ভালবাসা। ছেলে, বুড়ো, বৃদ্ধা, বণিতা, শিশু ।যারাই ওর সংস্পর্শে এসেছে ওকে ভালবেসেছে। বলতে হয় বাধ্য হয়েছে। ওর আকর্ষণী ক্ষমতাই এমন ছিল। প্রথম দেখায় ওকে যে কেউ টমবয় বলে নাকচ করে দেবে ।ঋষি এমন অনেককেই দেখেছে। দূর থেকে পছন্দ করতো না, কিন্তু কাছে আসার পর ওর প্রতি ধারণা বদলাতে বাধ্য হয়েছে। হাসি খুশি মেয়েটি নিমেষেই মানুষের মন বুঝে নিতে জানে। তাই বলাই বাহুল্য,ঋষি নিজেও দূরে থাকতে পারেনি।হাত পা ভেঙে অনির প্রেমে পড়েছে। কিন্তু বলেনি।হিডেন পেইনের মত লুকিয়ে রেখেছে। কারণ ঋষি বিষণ্ণতার অতল গভীরতা দেখেছে অনির চোখে ।যে গভীরতা পেরিয়ে যাওয়া ওর পক্ষে সম্ভব না। একদিন ও কথায় কথায় বলে ফেললো আড্ডাতে অনির অনুপস্থিতিতে।
-তোরা কি খেয়াল করছিস? অনি খুব হালকা মনের মেয়ে। পেছন থেকে সুদর্শন বললো,
-ভুল বললি দোস্ত ।ওর মনের গভীরতা এতটাই যে আমরা তল খুঁজে পাই না।
ঋষির মন বিতৃষ্ণায় ভরে গেল।সুদর্শনকে ও দুই চোখে সহ্য করতে পারে না। কারণ সুদর্শন সেই প্রথম থেকে অনিকে ভালবাসে ।সুদর্শনকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে হয় ঋষির কাছে। প্রাচীন কালের মত ডুয়েল লড়ার সুযোগ থাকলে বোধহয় দুজন ডুয়েলে নামতো। দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে অনেকটা সময়। চারটা বসন্ত একসাথে কাটিয়েছে ওরা।একদিন ঋষি অনিকে বললো,
-দোস্ত চল ঘুরে আসি
-কই?
-টিএসসি বসবি?
-চল টিএসসি সবসময়ই জমজমাট। ভীড়ের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ঋষি বললো,
-অনি
-উঁ
-তোকে কিছু কথা বলবো।
-বল মাঠের একপাশে বসে ঋষি বললো,
-আমি তোকে খুব ভালবাসি অনি।
-বিয়ে করবি আমায়?
-তুই ভালনা বাসিস। আমি একাই বাসবো।পাশাপাশি থাকিস।কখনো বন্ধুত্বটা যেন না ছোটে। অনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-ঋষি। আমি একটা ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়েরে। আমারও যে ইচ্ছে করে না কাউকে ভালবাসতে তা নয়।কিন্তু আমি চাই না আমার মত আরেকটা অনি তৈরি হোক।অনিন্দিতা একজনই থাকুক। আমি আসলে বাঁধনে জড়ানোর মত মেয়ে নই।বুনো একটা মন ছুটে বেড়ায় অনিশ্চিত ।বোহেমিয়ান এই আমিটা মরে গেলে যে অনিন্দিতা থাকবে তাকে তুই কখনোই ভালবাসতে পারবি না। ঋষি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-কিছু আত্মা মুক্তই থাকে শুনেছি।তবুও তোর জন্য আমি অপেক্ষা করবো অনি।দেখিস।
দীর্ঘ সতেরো বছর কেটে গেছে। সেই দিনের পর। অনি ফেরে নি।ঋষি ? ঋষির সামনে ওর মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। রাফা। দেখতে একেবারে ঋষির জিরক্স প্রায়।
-বাবা
-হু
-কি তখন থেকে হু হু করছো।কথা শোনো।
-শুনছি। বল্।
-আমার এক্সাম শেষ। চলো না ঘুরে আসি একটু।
-কোথায় যাবি?
-সমুদ্র দেখতে। চিটাগাং।
-তোর মাকে বল্
-মা তো রাজি।
-আচ্ছা ঠিক আছে ।
-তুমি এত্ত গুলা ভাল বাবা।
ঋষি হাসলো।শীতকালীন ছুটি চলছে ওর।ঘুরে আসাই যায়। সমুদ্র দেখে রাফা আর সোহানা ভীষণ খুশি। ঋষি মা মেয়েকে দ্যাখে আর হাসে। সুখী মানুষের হাসি। দুপুর থেকেই রাফা বায়না ধরেছে সমুদ্রস্নান করবে।ঋষি রাজি না হওয়ায় মা মেয়ে একাই গেল।ঋষির চোখ লেগে এসেছে। কিন্তু ভীষণ হৈ চৈ এ ধড়মড়িয়ে উঠে বসলো।গেলো, গেলো রব তুলেছে। ঋষি দৌড়ে বীচে এসে দেখে ওর মেয়ে ঢেউয়ে বেশ দূরে চলে গেছে। শান্ত সমুদ্র হঠাৎ করে বড্ড উত্তাল হয়ে গেছে। আরেকটা মাথা দেখা যাচ্ছে সাঁতরাচ্ছে।রাফাকে ধরে ফেললো কিছুক্ষণের মধ্যেই।তারপর তীরে এসে উঠলো।ঋষি দৌঁড়ে যেয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো।আবেগের প্রশমন হতেই উদ্ধারকারীর দিকে ফিরলো ধন্যবাদ দিতে। ঘুরেই দুজনেই চমকে উঠলো। একসাথে বলে উঠলো,
-তুই! অনি!অনি!!অনি!!! ঋষির বুকের মধ্যে যেন রক্ত চলকে উঠলো।এত বছর পরে দেখা! অনিই ই এগিয়ে এলো,
-মেয়েকে সাতাঁর শেখাস নাই ক্যান গাধার বাচ্চা? মিন মিন করে বললো,
-রাফা সাঁতার জানে কিন্তু সমুদ্রতো
-চুপ থাক। আজীবন বেকুব তুই।
যা মেয়েকে শুকনো জামাকাপড় পড়িয়ে আন।তোর বউ কই? এতক্ষনে হুঁশ হলো ওর।সোহানার দিকে তাকিয়েই যা বোঝার বুঝে নিল দুজনেই।নিজের স্বামীর প্রাক্তন প্রেমিকাকে কজন মেয়েই ভাল চোখে দেখে?তাও ঋষি মাঝে মাঝেই প্রচণ্ড আদরের সময়েও অনি বলে ডেকে ওঠে ।যদিও অনি কোনোভাবেই ঋষির প্রেমিকা ছিল না। অনি এগিয়ে যেয়ে জড়িয়ে ধরলো সোহানাকে।কানের পাশে মুখ নিয়ে বললো,
-ভাই, ভয় পেও না।তোমার বরকে কেড়ে নিব না। ছেড়ে দিয়ে বললো,
-যাও ভাই।মেয়েকে নিয়ে যাও। সোহানা মেয়েকে নিয়ে যেতেই অনির উপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়লো ঋষি।
-কি অবস্থা তোর?
-জোশ!
-তুই তো আগের চেয়ে সুন্দর হয়েছিস বয়স বাড়ার সাথে সাথে।
-শালা মারবো লাথি।
-বিয়ে বলেই লজ্জা পেল ও।কারণ ও বলেছিল অনির জন্য অপেক্ষা করবো।কিন্তু অনি সেসব কিছু বললো না।খোঁচাও দিল না।বললো,
-ক্ষ্যামা দে ভাই।
-কেন?
-সময় কই?
-কেন?
-কেন কেন করতেছিস ক্যান? এখানেই এক স্কুলে মাস্টারি করি।একা থাকি। আমার স্কুলের বাচ্চাকাচ্চাই সামলাতে পারিনা।সবসময় পকেটে ক্যান্ডি নিয়ে ঘুরি। ওরা ডাকেই আমাকে ক্যান্ডি মিস বলে। বুড়ো একটা মানুষকে কিভাবে সামলাতাম বল?
-তুই তাহলে মুক্তই রয়ে গেলি? হাসলো অনি।
-কিছু আত্মাকে সত্যিই বন্দী করা যায় না রে।ধরা যায়, ছোঁয়া যায়,নিজের করে পাওয়া যায় না কখনোই। দুজন মাঝবয়েসী মানুষ বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কোনো কথা বলছে না। বলার তো আসলে নেইও কিছু।সূর্যটা টুপ করে ডুবে গেল লাল আবীর ছড়িয়ে।