–ভাইয়া
–এই ভাইয়া
–হুমমমমমম
–আরে ওঠ না।
–কি?
–ওঠ
–আজ কি? অফিস বন্ধ তো।
–উঠে বস।
–কি হয়েছে?
–কয়টা বাজে দেখ।
–হুমমমম, মাত্র ৯:৩০
–যা বাজারে যা, বাসায় তরতাজা কিছুই নেই।
–উফ, ছুটির দিনেও ঘুমাতে দিবি না?
–উঠবি? নাকি পানি আনবো।
–সরি সরি, এক্ষুনি যাচ্ছি। কিন্তু আজ হঠাৎ তরতাজা বাজার কেনো?
–যানতে পারবি, এখন যা, বাজার আনার পরই নাস্তা পাবি। না হলে সারাদিন উপোস থাকবি।
–আচ্ছা যাচ্ছি।
হাত মুখ ধুয়ে সোজা বাজারের দিকে রওয়ানা দিলাম।
আমি মামুন, পড়ালেখা শেষ করে এখন একটি কোম্পানিতে ভালো অবস্থানে চাকরি করি।
আর যার সাথে কথা হচ্ছিলো, সে আমার বোন সিনথিয়া।
মাত্র ১০ম শ্রেনীতে পড়ে। ও একদম ছোট, তখনই বাবা মারা যায়।
ঠিক ২বছর আগে মা ও মারা যায়।
অত্মিয়-স্বজন অনেক আছে, কিন্তু কেউ আপন হতে চায় না।
২ ভাই বোন একে অপরের কলিজা।
সারাদিন অফিসেই থাকতে হয়। আর সিনথিয়া স্কুল থেকে এসে বাসায় একাই সময় কাটায়।
যাই হোক, বাজার করে সোজা বাসায় আসি।
কারন নাস্তা করা বাকি ছিলো। বাহিরে নাস্তা আমার জন্য নিষেধ।
প্রতি ছুটির দিন আমরা বাসায় পার্টি করি।
কোন অতিথি ছাড়াই।
আজ সিনথিয়াকে দেখছি কয়েকজনের খাবার বেশিই রান্না করছে।
.
–আপু…
–হুম
–আজ এতো রান্না কেনো?
–আজ ভাবি আসবে তাই।
–ওওও, তা উনি এতো খাবার খাবে?
–তোর কোন সমস্যা?
–নাহ, সমস্যা তো নাই।
–তাহলে যা, বিরক্ত করিস না।
–আচ্ছা, ভাবিটা কে?
হঠাৎ আমার দিকে ঘুরে তাকালো, চোখ বড় বড় করে।
–আমি কি করছি? এখুনি যাচ্ছি।
–ভাইয়া,
–হুম
–আখি আসবে।
–ওওও, ও ভাবি হলো কি করে?
–ও তো তোকে পছন্দ করে। বিয়ে হলেতো ভাবিই হবে।
–বিয়ে? এই পিচ্চি মেয়েটাকে? তাও আবার ৩ বার এসএসসি ফেল করা মেয়ে।
–চুপ কর, মেয়েটা খুব ভালো। খুব সুন্দর ও দেখতে।
–তো?
–আমারতো ওকে খুব পছন্দ, আমিই আজ ওকে ডেকেছি।
–কেনো?
–ও তোর জন্যই ফেল করে করে এখনো ১০ম শ্রেনীতে আছে।
–বেশী পাকামো করিস না। আমার খাবার রুমে দিয়ে যাস।
বলেই রুমে চলে আসি।
চাকরি করার আগে পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি করাতাম।
আমার প্রথম ছাত্রী ছিলো এই আখি।
মেধাবী ও খুব ভদ্র ছাত্রী ছিলো।
চাকরি পাওয়ার পর টিউশনি ছেড়ে দেই,
টিউশনি ছাড়ার পরই মেয়েটার এই হাল,
ফেল করে করে এখন আমার বোনের সাথে।
ওকে বলে, আমাকে নাকি পছন্দ করে।
.
–ভাইয়া, খেতে আয়।
–রুমে দিয়ে যা,
–পারবো না, এসে নিয়ে যা।
–কাজ করতেছি, দেনা বোইন,
–না, আমি টিভি দেখতেছি।
গেলাম টেবিল থেকে নাস্তা নিয়ে আসতে।
–একি? আখি তুমি?
–তুই যা, এটা আমার বান্ধবী। কথা বলিস না।
–আমি কি করলাম? কেবল জিজ্ঞেসই তো করলাম।
–জিজ্ঞেস করতে হবে না। আমি তোর উপর রেগে আছি। কথা বলবো না, যা…
–আমি কি করলাম? বল আমাকে…..।
–যা বলবো শুনবি?
–হুম
–তুই বিয়ে কর।
–এটা কেমন কথা? এটা বাদে অন্য কিছু বল।
–না, এটাই।
–পারবো না।
(আখি দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমাদের কার্যকলাপ দেখছে)
–না পারলে আমার সাথে কথা বলবি না।
বলেই আখিকে সাথে নিয়ে ওর রুমে চলে গেলো।
বোনের সব আবদারই রাখার চেষ্টা করি।
কি এই আবদার আমার মোটেও পছন্দ নয়।
কারন বিয়ের পর বোনকে যদি বউ সহ্য করতে না পারে?
যদি ঝগড়া লেগে থাকে,
তাছাড়া আমি চাই না আমাদের মাঝে ৩য় কেউ আসুক।
আগে বোনের বিয়ে দেবো, তারপর নিজের কথা ভাববো।
সেদিন সিনথিয়া আমার সাথে আর তেমন একটা কথা বলে নি।
নিজের রুমেই আখির সাথে সারাদিন কাটিয়েছে।
সন্ধ্যায় আখি চলে যায়।
রাত প্রায় ৮ টা।
সোজা ওর রুমে চলে গেলাম, বই নিয়ে বসে ছিলো।
–সিনথিয়া……
–(চুপ……..)
–কথা বলবি না?
–(……….)
–ভাইয়ার উপর এতো রাগ?
–আমি তোর সাথে কথা বলবো না। বের হ
–আমার খুদা লাগছে তো।
–(আমার দিকে ঘুরে তাকালো)
–খাবার দিবি না?
–আমাকে দিতে হবে কেনো? আমি কে হই তোর?
–আমার কলিজার টুকরা।
–মিথ্যা বলবি না, বের হ আমার রুম থেকে। তোর কাছে আমার কোন দাম নেই।
–কে বলছে দাম নেই? আমার বোন আমার সব। আমার বোনের উপরে আর কেউ নেই।
–তোর কোন কথা শুনবো না, যা। আমার পড়া আছে।
–আচ্ছা, যাচ্ছি। আমি দুপুরে খাই নি। খুব খুদা লাগছিলো। তাই আসছিলাম।
সিনথিয়া পুরো চোখ পানিতে ভরে ওঠে।
ওর দিকে না তাকিয়ে সোজা রুমে চলে আসি।
কারন আমি জানি, ও এখন খাবার নিয়ে আসবে।
.
শুয়ে শুয়ে ফোন টিপতেছি।
হাতে প্লেট নিয়ে হন হন করে রুমে ঢুকলো।
–এই নে, খা।
–আমার খুদা নেই।
–খা না….
–খাবো না, ঘুম পাচ্ছে।
–ভাইয়া….
–হুম
–সরি।
–কেনো?
–আমার জন্যই দুপুরে খাসনি?
–তুইতো রুম থেকেই আর বের হলি না, খাবার দেবে কে?
–(নিরবতা…… সাথে টইটুম্বুর চোখের পানি)
–কি হলো?
–আমি খুব খারাপ করছি এটা। আমায় ক্ষমা করে দে ভাইয়া।
–এই পাগলি, কাঁদিস না। তুই কাঁদলে আমার খুব কষ্ট হয় রে।
–তুই নিয়ে খাসনি কেনো?
–ইচ্ছে হয়নি।
–খাবার আনছি, খাবি না?
–রুচি নেই।
–আমি খাইয়ে দেই?
–দে….
–তুই আমার হাতে খাওয়ার জন্যই নাটক করছিলি, তাই না?
–ওকে, খাবো না।
–এই ভাইয়া, মজা করছিলাম। এই নে, হা কর।
–হা………….
যেনো আমার মা আমায় খাইয়ে দিচ্ছিলো।
সিনথিয়া দেখতেও পুরো আমার মায়ের মতো।
আমায় খাইয়ে দেয়, মাঝে মাঝে ঘুম পাড়িয়ে দেয়, গল্প শোনায়।
বলতে গেলে আমার অভিবাবক।
–তুই খাইছিস?
–না।
–আরো বেশি করে ভাত নিয়ে আয়।
–আচ্ছা।
দুজন খাওয়াদাওয়া শেষ করলাম।
–যাহ, এবার ফোন টিপ।
–বোইন
–আবার কি?
–ঘুমামু তো।
–উফ, তোরে নিয়ে আমার জ্বালা। এতো বড় হইছত, তাও তোরে ঘুম পারাই দিতে হয়।
–আচ্ছা থাক,
–হইচে, আর ঢং করিস না।
চুপচাপ সিনথিয়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম।
–চোখ বন্ধ কর।
–হুম
ও আমার চুলে বিনি কেটে দিচ্ছে।
–বোইন
–হুম
–আখিকে কি তোর খুব পছন্দ?
–থাক বাদ দে।
–বল না।
–পছন্দ হয়ে আর কি হবে? কেউ কি আমার পছন্দের কথা ভাবে?
–আমার বিয়ের জন্য এতো তাড়া দেস কেন?
–তার কারন তো আছে, তাই না?
–কি কারন?
–১. আমার কথা ভেবে ভেবে তুই বিয়ে করছিস না, তোর বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে।
২. তুই সারাদিন অফিসে থাকিস, সন্ধ্যায় বাসায় ফিরিস। আমি বাসায় একা, আমারো তো একজন সঙ্গীর দরকার আছে, তাই না?
–তা, আখিকেই কেনো পছন্দ?
–১. ও খুব ভদ্র ও ভালো মন মানসিকতার মানুষ।
২. আমার ভালো বান্ধবী।
৩. তোকে খুব পছন্দও করে।
৪. প্রায় আমার সমবয়সী হওয়ায় আমার ভাবি এবং ভালো সঙ্গীও হবে।
–ওর বাবা-মা কি রাজি হবে?
–১০০বার হবে, আমার ভাইয়া শিক্ষিত, ভালো চাকরি করে, আর কত্ত কিউট, ওনাদের মতে ৩বার ফেল করা মেয়ের জন্য এর থেকে ভালো প্রস্তাব আর আসবে না। রাজি না হয়ে পারবে?
–আগামী সপ্তাহে আবার ওকে ডাকিস, কথা আছে ওর সাথে।
–ওকে বিয়ে করবি?
–হুম
–থ্যাংক ইউ ভাইয়া, আমার ভাই কত্ত ভালো। (আমার কপালে একটা পাপ্পি দিলো)
ও আমার কত্ত ছোট, তবু আমাকে খুব শাসন করে, বকে, উপদেশ দেয়, হুকুম করে। আমিও সব মাথা পেতে নি।
.
পরের সপ্তাহে আখি আবার আসে,
আমি জানি মেয়েটা খুব ভালো, এবং আমাকে পছন্দ ও করে, সেটা টিউশনি করানোর সময় থেকেই বুঝতাম।
তাও সারাজীবনের প্রশ্ন, বিয়ের আগে মত বিনিময় হওয়া দরকার।
আখি আর সিনথিয়া আমার সামনে বসে আছে।
–আখি
–জ্বী স্যার।
–এখন আমি তোমার স্যার নই।
–ওওওও, সরি ভাইয়া।
–কিহ? আমি তোমার কোন কালের ভাইয়া?
–কি বলবো তাহলে?
–কিছু বলতে হবে না, আমিই বলছি। তুমি আমাকে পছন্দ করো?
–(নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো)
–আমাকে বিয়ে করতে রাজি আছো?
–(মাথা নাড়ালো)
–বোইন, তোর কিছু বলার থাকলে বল।
–হুম, আমার কিছু শর্ত আছে।(সিনথিয়া)
–হুম বল।
–১. যতদিন আমি আছি, আমার সামনে আমার ভাইয়াকে খাইয়ে দিতে পারবে না। আমিই খাওয়াই ভাইয়াকে।
২. আমাদের ভালোবাসায় ভাগ বসাতে পারবে না।
৩. আমি ভাইয়াকে বকবো, মারবো, শাসন করবো, কিচ্ছু বলতে পারবে না।
৪. এই পৃথিবীতে ভাইয়া ছাড়া আমার আর কেউ নেই। আমার ভাইয়াকে কখনো আমার থেকে আলাদা করার চেষ্টা করবে না। তাহলে আমি মরেই যাবো।
–এই পাগলি, এদিকে আয়। কি বলছিস? আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে?
–ভাইয়া দেখ, আখির চোখে পানি।
–আরে, তোমার আবার কি হলো?
–আপনাদের এই সম্পর্ককে আমি সম্মান জানাই, আমি সব শর্তে রাজি।
–ঠিক আছে, আগামী সপ্তাহে আমরা তোমাদের বাসায় যাবো। তোমার বাবাকে বলিও,
–আচ্ছা।
রাতে ল্যাপটপে কাজ করছিলাম, তখন সিনথিয়া আসলো।
–কিরে? কিছু বলবি?
–না, ভালো লাগছিলো না। তাই এলাম।
— বস, শরীর খারাপ?
–না। এমনিই
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসেই রইলো।
–ভাইয়া
–হুম
–আমাদের মাঝে ৩য় একজন আসবে, ও কি আমাদের আলাদা করে দিবে?
–ধুর পাগলি? কি বলিস? ওর এমন সাহস আছে?
–আমার কিছু ভালো লাগছে না।
–ওদের নিষেধ করে দিবো?
–না, তোকে বলছি নিষেধ করতে? বিয়ে হবে।
–তাহলে তুই এমন মন মরা হয়ে আছিস কেনো?
–এমনি।
–ভাত নিয়ে আয়, খুদা লাগছে।
–বিয়ের পর তো ভাবিকেই বলবি, তাই না?
–এটা কেমন কথা হলো? এটাতো ওর দায়িত্ব।
–হুম, তাও ঠিক।
–যা নিয়ে আয়।
–হুম।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে বসে রইলাম।
–কিরে? ঘুমাবি না?
–ভাইয়া, আজ আমারে ঘুম পারাই দিবি?
–বোইন, তোর কি মন খারাপ?
–কেনো জানি মনে হচ্ছে আমার সুখের দিনগুলো পুরিয়ে আসতেছে।
–কি বলছিস? এতো চিন্তা হলে বিয়ে কেনো করতে বলছিস?
–তা তো একদিন করতেই হবে তাই না?
–এদিকে আয়।
ও চুপচাপ আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।
–এতো কথা ভাবিস না, ঘুমা।
–মাথায় হাত বুলিয়ে দে।
কিছুক্ষণ পরই সিনথিয়া ঘুমিয়ে পড়লো।
.
ও এখনো খুব ছোট,
তাই এসব চিন্তা ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।
এভাবে কয়েকদিন সিনথিয়া মন মরা হয়ে থাকতো।
পরের সপ্তাহে আমি আর সিনথিয়া আখিদের বাসায় যাই।
আমার কোন চান্সই নাই, কথা বার্তা সব সিনথিয়াই বললো।
আখির বাবা এক পায়ে রাজি।
উনি নাকি আখির আমাকে পছন্দ করার ব্যাপারটা জানতেন।
পরিক্ষায় পাশ করলে যদি ওর বিয়ে দিয়ে দেয়, এই ভয়ে ও ৩ বছর যাবত আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
আর দেরি না করে পরের মাসেই বিয়ে ঠিক করা হলো।
বোনের নেতৃত্বে আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো।
বিয়ের পরেও সব ঠিকঠাক মতোই চলছে।
আখির সাথে সিনথিয়া খুব ভালোভাবেই মিশে গেছে।
আখি কখনো আমাদের ব্যাপারে মাথা ঘামায় না।
বরং ও নিজেও উপভোগ করে।
বিয়ে তো করছি, কিন্তু বউটা খুবই বোকা।
তার ব্যবহার, কর্মকাণ্ড খুবই নমনীয়।
সিনথিয়াও আগের মতো মন মরা হয়ে থাকে না।
ও ভাবতো হয়তো বিয়ের পর বউ ওর ভালোবাসায় ভাগ বসাবে।
কিন্তু ও এটা জানতো না যে পৃথিবীতে সবকিছু ভাগ করা যায়, কিন্তু ভালোবাসা না, আর সেটা যদি হয় ভাই বোনের ভালোবাসা। তাহলেতো কথাই নেই।
আমাকে ভালোবাসার মতো ২জন হলো।
কিন্তু এখনো বোনের জন্য একমাত্র আমিই তার সব।
——–সমাপ্ত ——–
গল্পের বিষয়:
গল্প