রামিসা ছিলো আমার শৈশবের ক্রাশ। সে অনেক বছর আগের কথা সম্ভবত নার্সারিতে এ পড়ি তখন। রামিসার বাবা আমাদের ফার্ম দেখাশুনা করতো। রামিসার ভূমিষ্ঠ হওয়ার কয়েক ঘন্টা পর মা সহ সবাই বাবুটারে দেখতে গেলাম। বাবুটারে দেইখা ভয়ংকর রকমের ক্রাশ খাইলাম। গড়াগড়ি দিয়া চিক্কুর দেয়া শুরু করলাম। আম্মু সহ সবাই আমার চিক্কুর দেইখা টাস্কি খায়া গেলো! কারণ তারা কেউ আমার কাঁন্নার রহস্য বুঝতে পারলো না। চকলেটের লোভ দেখাইয়াও কেউ আমার কান্না থামাইতে পারলো না। সবাই বলতেছে কি চাস বল। তাই এনে দিবো তবুও কান্না থামা ৷
উত্তরে আমি বললাম বাবুটারে আমি বাসায় নিয়া যামু। মা সহ সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। সবাই আমারে বুঝাইলো বাবুটা একটু বড়ো হইলে বাসায় নিয়া যাইতে নয়তো অসুস্থ হইয়া যাবে। বাবুটার নাম আমিই রাখলাম রামিসা। দিন যায় রামিসা বড় হয়। স্কুলে ভর্তি হয়। আমরা একসাথে স্কুলে যাইতাম। রামিসারে আমি প্রেমিকা ভাবলেও সে আমারে যাষ্টফ্রেন্ড ভাবতো। কাশেম রামিসার সাথে মিশার চেষ্টা করতো যা কোনভাবেই মানতে পারতাম না। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতো। একদিন টিফিন পিরিয়ডে দেখি কাশেম আর রামিসা টিফিন ভাগাভাগি কইরা খাইতাছে৷ এই দৃশ্য হজম না করতে পাইরা ঘুষি দিয়া কাশেমের নাক ফাটায় দিলাম। আব্বা তখন ছুটিতে গ্রামে ছিলো। স্কুল মাঠে কোর্ট মার্শাল বসাইলো। বিচারে রায় হইলো আমারে শহরের হোষ্টলে পাঠাবে৷ আমি কোনভাবেই রামিসারে ছাড়া যামু না। আমার হাজার চিৎকার-চেচামেচি, চোখের জল নাকের একাকার কইরাও কোন লাভ হইলো না। শহরে যাওয়ার সময় একটা চিঠি লিখলাম – শহরে পড়াশুনা শেষ করে মানুষের মতো মানুষ হয়ে ফিরবো। তুমি আমার জন্য অপেক্ষা কইরো রামিসা। প্লে শ্রেণীতে পড়া এক জুনিয়রকে বললাম চিঠিটা ঠিকমতো পৌছায়া দিতে। পরে জানতে পারি কাশেম তার দলবল নিয়া চিঠি ছিনায়া নিছে।
উচ্চমাধ্যমিক পাশ কইরা গ্রামে ফিরে দেখি আমার রামিসা আর আমার নাই। সে এখন কাশেমের বউ। এতো কষ্ট বুকের ভেতর কেমনে চাপা দেই। বাসায় আইসা বিদ্রোহ ঘোষনা করলাম। আমি দুনিয়ার বুকে আগুন জ্বালায়া দিবো রামিসা যদি আমারি না হয় গান গাইতে থাকলাম আর মদের বোতলে পানি খাইতে লাগলাম। আমার অবস্থা দেইখা এলাকার এক বড় ভাই মোটিভেট করতে আসলো। এক রামিসা চলে গেছে তো কি হইছে আরো হাজার ললনা পাবি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হইতে পারোস। হাজার ললনার লোভে এক রামিসারে ভুইলা গেলাম। ভার্সিটিতে ভর্তি হইয়া দেখি হাজার ললনাতো দূরের কথা একটা যাষ্টফ্রেন্ডও পাইলাম না ।
ছুটিতে ক্যাম্পাস থেকে বাড়ির উঠানে পা রাখতেই দেখি বিশাল জটলা। কাশেমরে উল্টা কইরা বাইন্ধা পেটাচ্ছে কাশেমের বউ রামিসা । আর উৎসুক জনতা উৎসাহ দিতাছে। আমার এক স্যার স্যার বলছিলো অন্যের অপদস্ত হতে দেখার মতো মজা আর দুনিয়াতে কিচ্ছু নাই। আইজকা তাই দেখতেছি।কেউ কেউ আবার হাত তালিও দিতাছে ।
কাশেম আমারে দেইখা গগনবিদারী চিক্কুর দিলো বাঁচাও বাঁচাও। তুহিন তুই না আমার পিচ্চি কালের বন্ধু। বন্ধুত্বের কসম দিলাম এই অত্যাচারীর হাত রক্ষা কর। ছেলে হয়ে আরেক ছেলের হেনস্তা কোন সহ্য করতে পারলাম না। বাঘের গর্জন দিতে গিয়াও মিউ মিউ কইরা বললাম থামো এবার। আইনের ছাত্র হইয়া আইন নিজের হাতে তোলে নেয়া বরদাস্ত করতে পারি না। কাশেমের অপরাধ কি, সূক্ষ্ম বিচার করমু। কাশেমের চারটা বিয়ে করতে ইচ্ছা করছে। নারী স্বাধীনতার এই যুগে যা অসম্ভব। হঠাৎ তার কাঠুরিয়ার গল্পটা মনে পড়ে গেলো। সে নদীর পাড়ে গিয়া রামিসারে নদীতে ধাক্কা দিয়া ফালায়া দিয়া কাঁদতে লাগলো। পরী এসে পর পর তিনটা সুন্দরী বউ দেখাবে, সে নিতে অস্বীকার করবে। সততার জন্য আসল বউয়ের সাথে বাকি তিনটা পুরস্কার হিসাবে দেয়া হবে। রায় কি দিমু, মামলা শুইনাই মাথা দুইবার ঘুরান্টি দিলো।
রামিসা ভয়ংকর স্টাইলে আমার দিকে তাকায়া আছে। যেনো দিয়া ভস্ম করবে। রামিসার হিংস্ররুপ দেইখা আমি অপ্রস্তুত হইয়া গেলাম। মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়। বেঁচে থাকলে বদলায়, সময়ে অসময়ে বদলায়।