কাছাকাছি পাশাপাশি

কাছাকাছি পাশাপাশি

গেটের সামনের শিউলি ফুলের গাছের নীচে বেঞ্চিতে বসে গতকালের পড়াতে দেখতেছিলাম পাশেই একটা মেয়ে এসে আমাকে বললঃ

মেয়ে– আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া??

আমি– ওয়ালাইকুম আসসালামু!! কিছু বলবেন??

মেয়ে– ইকোনোমিকস ডিপার্টমেন্ট এর রুমটা একটু বলবেন প্লিজ

আমি– দুইতলার ৬নং রুমটা

বলেই কাজে মন দিলাম! তখনো আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি! মেয়েটার দিকে তাকানো হয়নি!! এই গতকালের ম্যাথ নিয়ে খুব প্যারাই ছিলাম বলে কোন কিছুই মাথায় ঢুকলোনা!! একটু পরে প্রান্ত এলে ওর থেকে বুঝে নিলাম! তারপর মিলিয়ে দেখলাম সহজ অংক আমি পেঁচাচ্ছিলাম শুধুশুধু!! তারপর রুমে গেলাম স্যার আজকে আবার সবার পরিচয় পর্ব নিলেন!! সবায় দারিয়ে বলতে লাগলো!! আমি আর প্রান্ত তখনো একটা সূচকের অংক দেখছিলাম! এবার স্যার একটা মেয়েকে বলতে বললেন… আমার কন্ঠটা খুব পরিচিত মনে হচ্ছিল!!

তারপর তাকিয়ে দেখি সেই মেয়েটা যে আমার কাছে ক্লাসের কথা শুনছিল মাথা থেকে পা পর্যন্ত বোরকা দিয়ে ঢাকা!! সব কালো রং!! হাতে পায়ে মোজা!! শুধুমাত্র চোখ দেখা যাচ্ছে আমার কিছু দুষ্টু ফ্রেন্ডস বলে উঠলো খ্যাত আমি মেয়েটির চোখের দিকে তাকালাম!! কোন মানবীর চোখ এতটা মায়াবী হয় আমার জানাছিলোনা!! আমি অবাক হয়ে তাকিয়েই আছি… চোখ ছাড়া আর কিছুই দেখার কোন উপায় নেই!! আধুনিকতা নেই এই মেয়ের মাঝে! নাম মায়া বাসা ঝিনাইদহ! শুনে আমি মেয়েটির সাথে কথা বলতে চাইলাম!! কিন্তু জানি মেয়ে না করে দিবে মেয়েটার সাথে আমার প্রায় দেখা হয়!! সেই মিষ্টি কন্ঠের সালাম দেওয়াটা আমার কানে সবসময় বাজতে শুরু হলো!! মেয়েটি প্রায় দেখি একায় থাকে!! কারন অধিকাংশ মেয়েরা ছেলেদের সাথে আড্ডামারে এই মেয়ের এসব পছন্দ নাহ… হাতে একটা লাল রঙের বই থাকে সেটাই পড়ে!! একদিন মনে হল কথা বলি….

আমি- আসসালামু আলাইকুম??

মায়া– ওয়ালাইকুম আসসালাম!! কেমন আছেন আপনি??

আমি– জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি??

মায়া– আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি! কিছু বলবেন??

আমি– আমি কি আপনার বন্ধু হতে পারি??

মায়া– ক্ষমা করবেন ভাইয়া!!

কোন নারী কোন পুরুষের সাথে কথা বললে গুনাহ হয় পরিবার ব্যতিত! ভাল থাকবেন ইনশাল্লাহ! খোদা হাফেজ বলেই চলে গেলো! আমি থ! মেরে দারিয়ে আছি! আজকালকার যুগে এমন মেয়ে?? কি মিষ্টি করে কথা বলে!! কন্ঠে যেন মধুর রেশ উপচে পড়ে! আর চোখ দুটো হরিনীর মতো!! মেয়েটা খু’বি ধার্মিক!! কেন যেন আমি মেয়েটির প্রেমে পড়ে গেলাম!! প্রায় সবসময় তাকিয়েই থাকতাম মেয়েটির দিকে! একপাক্ষিক ভালোবাসার মজা হচ্ছে একজন অপেক্ষা করে বাকিজন বুঝেই নাহ!! আমি প্রায় মায়ার জন্য অপেক্ষা করতাম শুধু ঐ চোখ দুটো একবার দেখার জন্য!! ওই চোখে কি যাদু আছে? আমাকে এত টানে? নাকি মায়া?? মেয়েটার নিয়ে আমার ভাবতে ভিষন ভালোলাগে… মায়ার জন্য একজন ভাল নারীর সব গুলো গুন আছে!! প্রতিটা পুরুষ একজন ফ্রেশ সতী নারী আশা করে! তাই আমিও করছি আমার জীবনসঙ্গিনী যেন মায়া হয়!! কারন মায়াকে হারানো খুব বোকামি হবে! আর মায়ার থেকে সবকিছু যেন আশাকরা যায় আমি প্রান্ত কে খুলে বললাম…

আমি- দোস্ত একটা কথা ছিলো!

প্রান্ত- হুম বলো!!

— মায়া কে তোমার কেমন লাগে??
— মায়া কে?? ঐ খ্যাত মেয়ে টা??
— দেখো ওরে খ্যাত বলবা না! কারন মায়া ধার্মিক মেয়ে!
— তুমি কি প্রেমে পড়েছো??
–. হ্যা.. আর বিয়ে করলে ওরেই করব…
— কি বলো মাথা ঠিকাছে?? এতো সিরিয়াস কিভাবে হলে??
— এতোকিছু বুঝিনা!! আমার প্রচণ্ড ভালো লেগেছে মায়াকে!! তুমি কি পাশে থাকবে??
— হ্যা হেল্প লাগলে বইলো!!

বাই এখন আসছি আমি জানি প্রান্ত মনেমনে খুশিনা! কারন এই যুগে এমন মেয়েকে কেউ আশা করেনা!! সবায় চাই আধুনিক মেয়ে!! স্মার্ট মেয়ে!! কিন্তু সেখানে এমন পর্দাশীল মেয়ে মায়া কে কেউ কি পছন্দ করবে? এজন্য বেচারির হয়তো কোন বন্ধু/ বান্ধবী নেই!! আচ্ছা মেনেনিলাম বন্ধু নিলে গুনাহ তাহলে বান্ধবি নেইনা কেন?? এই মেয়ের প্রেমে পড়ে আমি অন্ধ হয়ে গেছি আমার সবকিছু কেমন যেন মায়াময় লাগে!! যেখানেই তাকাই যেন মায়া আর মায়া!! যা করি মায়া আর মায়া!! এত মায়া মায়া লাগে যে দেখতে ইচ্ছা করে বাড়বার!! একদিন রুম থেকে বেড়িয়ে এলাম সবায় আড্ডা দেবার জন্য! মায়া দেখলাম বসেই আছে!! আমি লুকিয়ে আবার রুমে গেলাম কথা বলতেঃ

আমি– কেমন আছেন??

-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?
— আমিও!! কি করছিলেন??
— এই হাদিসের বই পড়ছিলাম!!
— আমাকে পড়ে শোনাবেন??
— আচ্ছা আপনি ওযু করে আসেন তাহলে শয়তান আপনার মনে কোন দুশ্চিন্তা রাখবেনা!!
— আচ্ছা আসছি!! তারপর এযু করে বসলাম তার সামনে!!

মেয়েটা একটা গল্প পড়ে শোনাচ্ছিলেন!! আর আমি তার দিয়ে তাকিয়ে আছি!! কি অদ্ভুত মিষ্টি কন্ঠ!! আর মায়াবী চোখ! বেশ গুছিয়ে বোঝাতে পাড়ে!! তারপর তার ব্যাগ থেকে আমাকে একটা বই দিলেন!! সেটা ইসলামিক বই!! তার মানে এই মেয়ের কাছে সবসময় ইসলামিক বই আছে!! আলহামদুলিল্লাহ মেয়েটা কত লক্ষি!! এযুগে বিড়ল দেখতে দেখতে ১ বছর কেটে গেলো! আমার অনেকগুলা বই পড়া হয়েছে এর মাঝে সবগুলো মায়া আমাকে দিয়েছে!! আমিও কিছু বই কিনে তাকে দিয়েছি যার সবগুলো ইসলামিক বই… আমাদের মাঝে যতটুকু কথা হত ক্লাসের ফাঁকেফাঁকে তার স’বি ধর্মসংক্রান্ত বিষয় আগে নামাজে মনযোগ কম ছিলো! মায়ার সাথে কথা বলার পর নামায পড়ি!! একদিন মায়াকে বললামঃ

আমি– আচ্ছা মায়া আমরা একই সাথে পড়ি তবুও কেন আপনি করে কথা বলি??

মায়া– অচেনা মানুষের সাথে সুশীল আর মার্জিত আচরণ করতে হয়!! তাই আমি আপনাকে আপনি করেই কথা বলবো!!

আমি– আচ্ছা মেনে নিলাম!! তবে আজকে আমার সাথে ঝালমুড়ি খেতে হবে…

মায়া– ক্ষমা করবেন!! আমি মুখ খুলে কিছুই খেতে পারবোনা!!

আমি– আচ্ছা এখানে খাওয়া লাগবেনা! আপনি বাসায় যেয়েই খাবেন! কেমন??

মায়া– ইনশাল্লাহ!! শুকরিয়া ভাইয়া

সৌভাগ্য এই যে, শুধুমাত্র বই দেওয়া নেওয়ার সময় একটু কথা হয় তার বেশি নয়!! কথা বললেও নাকিগুনাহ হয়… তাই আমি আর বেশি জোর করিনা!! স্বাভাবিক মেয়ে থেকে মায়া যে আলাদা আমার আর বুঝতে বাকি নেই! আর আমি এও জানি বিয়ে যদি করতে পারি তাহলে।রেখার সৌভাগ্য হবে তাছাড়া কিছুইনা… মায়া এর পরিবার নিয়ে কোন কথা বলেন নাহ!!

মায়ার কোন ফোন বা ফেইসবুক আছে কিনা আমি জানিনা!! আর থাকলেও আমাকে দিবেনা হয়তো!! কারন মায়া এতটা মেনে চলে যে তার জন্ম ভাল কাজ করার জন্য আর পরকালে জান্নাত!! শয়তান যে কারও না কারও কাছে হার মানে আমি মায়াকে দেখে শিখেছি!! সবসময় প্রবিত্র থাকে মেয়েটি শয়তান আসবে কিভাবে?? কিছুদিন পর মায়াকে আর দেখা পেলাম নাহ ভার্সিটি তে!! মন টা খুব খারাপ হলো!! ওর খুঁজে পাওয়াও যাবেনা জানি! কারন কোনরকম কিছুই আমার কাছে নেই! আমার মনে হয় বাকি কারো কাছেই নেই!! সেদিন সারাদিন বাইরে বসে কাটালাম!! তারপর বাসায় এসে চিন্তা হচ্ছিল! মায়ার কোন বিপদ হলো নাতো?? কিন্তু আমাকে তো বলবেই নাহ মেয়েটি!! খুব খারাপ লাগতে শুরু করল মেয়েটির জন্য! একটা চাপা কষ্ট অনুভূত হচ্ছিল এর ঠিক ৫ দিন বাদে মায়াকে ভার্সিটি তে দেখে আমার মুখে হাসি ফুটলো! দ্রুত এগিয়ে এসে জিগ্যাসা করলাম…

আমি– এতদিন কোথায় ছিলেন?? ক্লাসে আসেননি কেন??

মায়া– একটু অসুস্থ ছিলাম!

আমি– এখন কেমন আছেন??

মায়া– আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভাল রেখেছে আল্লাহ আমাকে!!

আমি– আলহামদুলিল্লাহ!!

আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুণ!! আমি ৫ দিন আপনার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম তারপর আবার আগের মতো হাল্কা কথা হতো! কিন্তু কাছাকাছি যাবার মতো কোন উপায় ছিলোনা… কি আর করা মায়া হয়ত আমাকে ঐভাবে নিবে নাহ!! তাই বাড়িতে আমি আম্মুকে ডেকে সব খুলে বললাম! আম্মু শুনেও রাজি হলেন! কারন এমন মেয়েকেই আমি বিয়ে করবো যেই মেয়ে খু’বি ধার্মিক! আর সবায় কে ভাল রাখবে!! সবার অনুমতিতে আমাদের বিয়ের কথা পাকাপাকি হলো..

আমি– মায়া কেমন আছেন??

মায়া– ভাল আপনি??

আমি– আপনার সাথে আমার বিবাহের কথা হয়েছে শুনেছেন কি??

মায়া– এ ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে চাইনা!!

ভাল থাকবেন মায়া হঠাৎ এমন করলো কেন?? লজ্জা নাকি?? হতেও পারে… তারপর আমাদের বিয়ের দিন আগিয়ে এলো বিয়ের দিন রাতে যখন ঘড়ে প্রবেশ করি! মায়া আমাকে সালাম করে বলে দুই রাকাত নফল নামায পড়তে!! তারপর যখন সে মুখ খুললো!! আমি তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলাম!! মহান আল্লাহ তাকে এত রুপ দিয়েছেন! আমার ঘড়তা জ্বলে উঠলো তার রুপের আলোই….

মায়া– আমি প্রথম থেকেই আপনাকে ভাল মানুষ হবার জন্য মিশেছিলাম! তারপর আপনাকে বিভিন্ন বই দিয়ে নামাজের পথে নিয়ে এসেছিলাম!! তবে আপনাকে শুধুই একজন মানুষ ভেবে উপকার করেছি! তবে আজ থেকে আপনি আমার স্বামি! আমার এই রুপ দেখার অধিকার আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন তাই আমি সারাজীবন পর্দা করে চলেছি! আজ থেকে আপনি যা বলবেন আমি তা মেনেচলার চেষ্টা করবো আমি শুনে খুশিতে কান্না করে দিয়েছিলাম!! এজন্য হাদিসে লিখা আছে- একজন নেককার বান্দা তার সঙ্গি হিসাবে নেককারী কে পাবেন!!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত