অনেকদিন পর কাজে বেরিয়েছিল গগন। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বাড়িতে বসে আছে ও। আসলে এই বর্ষাকাল নামলেই গগনের কাজে একটু ভাটা পড়ে যায়। চারদিকে প্যাচপ্যাচে কাদা। এছাড়া সাপখোপ, জোঁক, পোকামাকড় এইসবেরও ভয় থাকে। তাই বর্ষাকাল পড়লে গগন আর কাজে বেরোয় না। কিন্তু আজকের ব্যাপারটা একটু আলাদা। ল্যাংড়া বিশু খবর এনেছে, চৌধুরীদের দোতালা-বাড়ির নিচের তালায় যে ভাড়াটেরা আছে আজ তার শালীর বিয়ে। এই উপলক্ষে ওরা তিনদিন থাকবে না। অন্য কেউ সেরে দেয়ার আগে আজ প্রথমদিনেই কাজ হাসিল করতে চায় গগন। তাই আজ এই ঝমঝমে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গগন বেরিয়েছে। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় একবার ওর টর্চ নেয়ার কথা মনে হয়েছিল। তারপর আকাশে যেভাবে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে সেটা দেখে ভাবল, নাহ্ থাক। তাছাড়া গগন রাতে কাজ করে। এককথায় বলতে গেলে ওরা নিশাচর। ফালতু টর্চের মতো এক্সট্রা লাগেজ বইবে কেন?
জলকাদা মাড়িয়ে হারুদের বাঁশবাগানের নিচে যখন ও পৌঁছাল তখন বৃষ্টিটা একটু ধরে এসেছে। কিন্তু বাজ পড়া একটুও কমেনি। ও যখন বাঁশবাগানের মাঝামাঝি পৌঁছেছে ঠিক তখনই ওর সামনে একটা আলোর ঝলক পলকের জন্য সরে গেল। যেন একটা উদ্যত তরোয়াল এক মুহূর্তের মধ্যে মাটিতে সেঁধিয়ে গেল। আর তার পরক্ষণেই চারদিক আলোড়িত করে একটা প্রকাণ্ড কান ফাটানো আওয়াজ। দু’হাতে কান চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বসে পড়ল গগন।
বর্তমান দিনে কলকাতা এবং তার সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে আপনি যদি একটা ঘর ভাড়ায় পান আহলে আপনাকে ভাগ্যবান বলতে হয়। তবে আমার ভাগ্যটা কোনওদিনই ভালো ছিল না। তাই শত চেষ্টাতেও আমি কলকাতার কাছাকাছি একটা এক কামরা কি দু’কামরা ঘর জোটাতে পারিনি। জন্মসূত্রে আমি বর্ধমানের ছেলে। কিন্তু কাজের সুবাদে আমাকে চলে আসতে হয় কলকাতার বালিগঞ্জ। প্রথম প্রথম এক মাসির বাড়ি থেকে কাজ করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সে আর কতদিন? মাসি নিজের কথাবার্তা, হাবভাব দিয়ে ক্রমাগত বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন আমার এবার অন্য একটা আস্তানা যোগাড় করা উচিত। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও আমি যখন কলকাতার বুকে একটা মনের মতো ঘর খুঁজে পেলাম না এইরকম পরিস্থিতিতে হাল ধরল আমার সহকর্মী স্বপন। স্বপন সোনারপুরে থাকে। ওখান থেকেই ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে। আমার কাহিল অবস্থা দেখে ও একদিন অমাকে বলল, “দেখ ভাই, তুই যদি সোনারপুরে আসতে পারিস তাহলে আমি তোকে তোর বাজেটের মধ্যেই একটা সুন্দর ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। আর যাতায়াতেরও তেমন কোনও অসুবিধা নেই। এই তো আমি রোজ যাতায়াত করছি। আর আমাদের যে সময় থেকে অফিস তখন ট্রেনও খালি থাকে। তুই রাজি থাকলে বল, আমার এক পরিচিত জ্যাঠামশাই বাড়ি ভাড়ায় দেবে। আমি তোর কথা বলে দেখতে পারি।’’
ভেবেচিন্তে আমি স্বপনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম। একদিন স্বপনের জ্যাঠামশাইয়ের বাড়িও দেখে এলাম। বেশ ভালো ছিমছাম সুন্দর দোতলা বাড়ি। অত বড়ো বাড়ি অথচ থাকার লোক কম। কেবল বৃদ্ধ আকাশ সেন এবং ওঁর স্ত্রী গঙ্গা সেন। ওঁরা বিবাহিত দম্পতি খুঁজছিলেন। কিন্তু স্বপনের বন্ধু হওয়ার কারণে হয়তো আমার মতো ব্যাচেলারকে ঘর ভাড়ায় দিতে রাজি হয়ে গেলেন। আর অন্য কোনও উপায় না থাকায় আমিও ওদের সাথে থাকতে রাজি হয়ে গেলাম।
এরপর দিনগুলো আমার ভালোই কাটছিল। মাথায় আলাদা কোনও চিন্তা না থাকায় আমার অফিসের কাজ ভালোই চলছিল। সম্যসা বাধল সেইদিন থেকে যখন আমি ওই ডায়েরিটা পেলাম। বড়ো অদ্ভুতভাবে আমি ডায়েরিটা পেয়েছিলাম। অফিস যাওয়া আর ঘরে ফেরা ছাড়া আমার আর তেমন কোনও কাজ ছিল না। রান্নাও করতে হত খুব কম। প্রায়দিন জেঠিমা আমার জন্য খাবার দিয়ে যেতেন। অবসর সময় আমি বই পড়ে অথবা ল্যাপটপে সিনেমা দেখে কাটাতাম। কিন্তু সেদিন আমার মাথায় ঘর পরিষ্কার করার খেয়াল চাপল। ঘরে তেমন কিছু আসবাব ছিল না। একটা রট আয়রনের খাট, একটা রিডিং টেবিল, তার সাথে একটা চেয়ার আর চারদিকে ছড়ানো অজস্র বই। আমার আসল উদ্দেশ্য ছিল এই বইগুলোকেই গুছিয়ে রাখা আর এই বইগুলো গুছিয়ে রাখতে গিয়েই আমি ওই ডায়েরিটা পেয়েছিলাম।
ভেবেছিলাম ডায়েরিটা আকাশবাবুর। এই বাড়িতে ওঁরা ছাড়া তো আর কেউ থাকে না। তাই এটা হয়তো ওঁর ডায়েরি। তারপর মাথায় খেয়াল এল, আমার আগেও নিশ্চয়ই এই বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তাদের কারও নয়তো? এই চিন্তা মাথায় আসতেই আমি ডায়রিটা খুলে পড়েছিলাম। আর একপাতা পড়ার পরি আমি বুঝতে পেরেছিলাম, এটা কোনও সাধারণ ডায়েরি নয়।
ডায়েরির পাতা থেকে –
‘এই ডায়েরিটা কেউ যখন পড়বেন তখন আমি হয়তো থাকব না। আর যদি থাকি তাহলে এই ডায়েরির লেখা কথাগুলো আমি কিছুতেই আমার লেখা বলে চিতে পারব না। অথবা এটা যে আমার ডায়রি সেটাই আমি কিছুতেই মনে করতে পারব না। তবুও আমি এই ডায়রি লিখছি কারণ, এই কিছুদিন ধরে আমার সাথে যে বিচিত্র ঘটনাবলি ঘটছে সেগুলি আমি কাউকে জানিয়ে রাখতে চাই।
জীবনটা বড়ো বিচিত্র। কখন কার সাথে কী ঘটে যাবে কেউ বলতে পারে না। এই যে আমি গগন সেন, আমি একজন পেশাদার চোর। চোর শুনে নাক সিঁটকোবেন না। তাছাড়া আমি মনে করি, কোনও কাজই ছোটো নয়। ভাবছেন, চোরে আবার ডায়েরি লিখছে! ভাবুন, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। তবে এটা জানিয়ে রাখি, আমাদের গ্রহে চুরি করাটা তেমন কোনও অপরাধ নয়।
আমাদের গ্রহ বললাম কারণ, আমি এখন যেখানে বসে এই ডায়েরিটা লিখছি সেটা আমাদের পৃথ্বী নয়। এটা আমাদের গ্রহের সম্পূর্ণ জেরক্স কপি বা আমাদের গ্রহ এই গ্রহের জেরক্স কপি। বই পড়ে জেনেছি, এখানকার লোকে এই গ্রহকে পৃথিবী বলে। কী মিল, না? আমরা আমাদের গ্রহকে বলি পৃথ্বী। আর এখানকার লোকেরা বলে পৃথিবী। আরও অনেক মিল আছে। এই যে আমি এখন যেখানে বসে ডায়েরিটা লিখছি, এখানকার লোকেরা এই জায়গাটাকে বলে সোনারপুর। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এইরকম দেখতে আরও একটা জায়গা আছে, আমরা তাকে বলি সোনাগাঁও। ভাবুন তো, কী মিল, ভাবুন একবার!
তবে সবথেকে বড়ো মিল হল এই বাড়ির মালিক আকাশ সেন এবং আমার মধ্যে। আর কী আশ্চর্য সমাপতন ভাবুন, আমার নাম গগন আর এই বাড়ির মালিকের নাম আকাশ।
ভাবছেন, কীসব গাঁজাখুরি গুলগল্প লিখছি? কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি একবর্ণ মিথ্যে কথা লিখছি না। আমি সত্যিই গগন সেন। খুব আশ্চর্যভাবে আমি এখানে চলে এসেছি।
আমার পরিষ্কারভাবে মনে আছে সেই রাতের কথা। আকাশে মেঘের কালো ছায়া। সারাদিন ঝিরি ঝিরি, কখনও বা ঝম ঝম করে একনাগাড়ে বৃষ্টি পড়ছিল। সন্ধের পর থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি আরম্ভ হল, সেই সঙ্গে মেঘের গুরুগম্ভীর আওয়াজে কান পাতা দায়। এমন একটা রাতে শয়তানও ঘর থেকে বেরোনোর সাহস পায় না। কিন্তু আমি বেরিয়েছিলাম। আর সেদিনেই আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুলটা করেছিলাম। অথবা বলতে পারেন, সেইদিনেই আমার জীবনের সবথেকে ভালো কাজের শুরু হয়েছিল।
golpogagansen (1)
সেদিন রাতে প্রচন্ড বৃষ্টি আর ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকের সাথে সাথে আমি মন্থরগতিতে আমার গন্তব্যে যাচ্ছিলাম। এমন সময় ঠিক আমার সামনেই বাজ পড়ল। সেই সঙ্গে প্রচন্ড আওয়াজ। আমি দু’হাতে কান চেপে, চোখ বন্ধ করে মাটিতে বসে পড়েছিলাম। তারপর যখন চোখ খুললাম, কী দেখলাম জানেন? কেউ বিশ্বাস করবে না। দেখলাম, আমার সামনে পড়ে আছে আমার দেহ। বিশ্বাস করুন, সেই মুহুর্তে আমি ভাবলাম আমি নিশ্চয়ই মরে গেছি। আমার আত্মা দেহ ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু না, আমার এই ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল ছিল তার প্রমাণ আমি একটু পরেই পেয়েছিলাম।
আমি তখন সেখানে দাঁড়িয়ে ভাবছি, আমি কি সত্যি মরে গিয়েছি! সেই সময় আমার পিছন থেকে একটা গমগমে গলায় কেউ বলে উঠল, “না, তুমি এখনও বেঁচে আছ। কিন্তু সমান্তরাল বিশ্ব সময়ঘড়ি অনুযায়ী তোমার এতক্ষণ মরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তুমি এখনও বেঁচে আছ।”
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি আমার পিছনে একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। আমি এতটাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে আমার মুখ থেকে কোনও কথা সরছিল না। কারণ, সেই সময় যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল তাকে আমি চিনি। এই চেহারা কখনও ভোলার নয়। আজ ঘর থেকে বেরনোর আগের মুহুর্তে আমি এই চেহারা আয়নায় দেখে এসেছি। একটু আগে আমি এই চেহারার একজন মানুষকে মরে পড়ে থাকতে দেখেছি। আর এখন এই চেহারার একজন আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
আমার অবস্থা দেখে সে বলল, “খুব অবাক হয়ে গেছ, না! নিশ্চয়ই ভাবছ, আমি কে। আর সামনে যে মরে পড়ে আছে সেই বা কে?”
আমি কোনওরকমে আমার ঘাড় হেলিয়ে একটা ঢোঁক গিললাম। আমার গলা পুরো শুকিয়ে গিয়েছিল।
“আমার নাম অম্বর সেন। আর তোমার সামনে যে মরে পড়ে আছে, ওর নাম আকাশ সেন। আসলে তুমি, আমি, আর ও যে মরে পড়ে আছে আমরা প্রত্যেকে একই মানুষ। আর আমদের নামের মিলটা দেখ – তুমি গগন, আমি অম্বর এবং ওর নাম আকাশ। আমাদের তিনজনের নামের মানেই এক।”
কোনওমতে আমি বললাম, “সেটা কী করে সম্ভব?”
“দেখ, তোমার এই প্রশ্নের উত্তর এককথায় দেওয়া সম্ভব নয়। তবে আমি তোমাকে সহজ করে বুঝিয়ে বলছি। এই যে আমাদের দুনিয়া সেটা কেবল একটা দুনিয়া নয়। একই সময় একই জায়গায় কোটি কোটি সমান্তরাল দুনিয়া একসাথে অবস্থান করছে এবং এদের প্রত্যেকটিতে একটি করে গগন, আকাশ, অম্বর এইরকম নামের একজন করে মানুষ আছে। তাদের কেউ চোর, কেউ ডাকাত, কেউ বিজ্ঞান, কেউ খেলোয়াড়, কেউ বা রাজনীতিক। সবথেকে মজার ব্যাপার হল, একটা সমান্তরাল দুনিয়াতে যে থাকে সে অন্য দুনিয়ার খবর পায় না। কারণ, এই দুনিয়াগুলোর মাঝে মাঝে হাইপার স্পেসের দেয়াল তোলা থাকে। যাক, সেসব বিজ্ঞানের কথা থাক। তুমি শুধু এটুকু জেনে রাখ, এই আমি অম্বর সেন। আমদের দুনিয়াতে আমি একজন বিজ্ঞানী। আমি অনেকদিন থেকেই সমান্তরাল বিশ্ব নিয়ে রিসার্চ করছি। আমার রিসার্চের বিষয় ছিল কীভাবে হাইপার স্পেসের দেয়াল পেরিয়ে অন্য সমান্তরাল বিশ্বে প্রবেশ করা যায়। আর তুমি দেখতেই পারছ, আমি এই ব্যাপারে সফল হয়েছি।
“তবে গবেষণায় সফল হলেও প্রকৃতির এই নিয়মকে লঙ্ঘন করার অপরাধে আমাকে এর মাশুল গুনতে হচ্ছে। গবেষণা শেষ হওয়ার পর আমি হাইপার স্পেসের দেয়াল পেরিয়ে সমান্তরাল বিশ্বে ভ্রমণের লোভ সামলাতে পারিনি। এই প্রক্রিয়ায় আমার ক্যালকুলেশনে একটা সমস্যা হয়ে যায়। যার ফলে আমি যে যে দুনিয়াতে ভ্রমণে গিয়েছি সেখানে হাইপার স্পেস টাইমে একটা বিরাট সমস্যা দেখা যায়। ফলে এই সমস্ত দুনিয়াগুলির সময় নিজেদের মধ্যে ক্রমশ মিশে যাচ্ছে। এর প্রভাব অন্য কারোর উপর না পড়লেও আমার এবং আমাদের অস্তিত্বের উপর সবথেকে বেশি পড়েছে। ফলে আজকের হিসাব অনুযায়ী এই দুনিয়াতে তোমার মারা যাওয়ার কথা। কিন্তু তোমার বদলে অন্য দুনিয়ার এই আকাশ সেন মারা গেল।
“আমি এখানে এসেছি তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে। আসলে তোমার আজ মারা যাওয়ার কথা, কিন্তু তুমি এখনও বেঁচে আছ আর যার মারা যাওয়ার কথা নয় সে আজ মারা গেল। এর ফলে প্রকৃতির নিয়মে একটা বিরাট পরিবর্তন দেখা দেবে। আর এই পরিবর্তন যাতে না হয় সে জন্য তোমাকে আমার সাথে পৃথিবী গ্রহে যেতে হবে।
“যাক, আমার কাছে আর বেশি সময় নেই। শুধু একটা একটা কথা জানিয়ে রাখি। কিছুদিন পর তোমার এখানকার স্মৃতিও মুছে যাবে। আর তার জায়গা দখল করবে এই আকাশ সেনের স্মৃতি।”
আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “এই মৃতদেহটা তাহলে কী হবে?”
আমার উত্তরে অম্বর সেন হেসে জানাল, “ওটা কোনও মৃতদেহ নয়। ওটা একটা প্রতিচ্ছবি মাত্র। তোমাকে বোঝানোর জন্য এটা আমি তৈরি করেছিলাম।”
আমি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অম্বর সেন আমার হাত ধরে একটা টান দিল। তারপরে আমার আর কিছু মনে নেই।
পরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার জীবনে একটা বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেছে। আর সেটা কী পরিবর্তন সেটা এই ডায়েরি পড়লেই আপনি জানতে পারবেন। সবকিছু ভুলে যাওয়ার আগে আমি এই কথাগুলো লিখে রাখছি। পরে যদি কোনওদিন এই ডায়েরিটা পড়ে কিছু মনে পড়ে।’
গগন সেন।
ডায়েরি শেষ।
সত্যি বলতে কী, ডায়েরিটা পড়ার পর থেকে আমার চিন্তাভাবনা পুরো পালটে গেছে। চিন্তায় আমি কিছুদিন ঘুমোতে পারিনি। সবসময় ভাবতাম, আকাশবাবু কি ডায়েরিটা লিখে ভুলে গেছেন? ডায়েরির কথা ওঁর কি একদম মনে নেই? সবসময় ভাবতাম, আকাশবাবুকে আমি এই কথাগুলো আবার কীভাবে মনে করাতে পারি। মাথায় কিছু না আসায় একদিন সকালে আমার এক বন্ধুর কাছে গিয়ে ডায়েরিটা দেখালাম। বন্ধু আবার একটি নামকরা পত্রিকার সম্পাদক। সে দেখে বলল, “ভাই, এটা তো পুরো কল্পবিজ্ঞানের গল্প হয়ে গেছে। তুই এক কাজ কর, আমি এটা আমাদের পত্রিকার পরবর্তী সংখ্যায় ছেপে দিই। লেখক হিসাবে আকাশবাবুর নাম দেব।”
যুক্তিটা আমার খারাপ লাগল না। আমি বন্ধুর কথায় রাজি হয়ে গেলাম। যথাসময়ে পত্রিকাটি ছেপে বেরোল। কিন্তু একটা ব্যাপারে আমার চিন্তা ছিল, পত্রিকাটি আকাশবাবু কীভাবে পড়বেন। আমার বন্ধুই এই ব্যাপারের সমাধান করে দিল। আমার কাছ থেকে আকাশবাবুর ঠিকানা চেয়ে নিয়ে পত্রিকার একখানা কপি আকাশবাবুর নামে পাঠিয়ে দিল।
যেদিন পত্রিকাটি ওখানে পৌঁছায় সেদিন ছিল শনিবার। আমি তখন অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। সেই সময় পিওন এসে পত্রিকাটি আকাশবাবুর হাতে দিয়ে যায়। আমি অফিসের জন্য বেরিয়ে গেলাম। অফিসে গিয়েও আমি কাজে মন দিতে পারলাম না। খালি মনে হচ্ছিল, বাড়ি গিয়ে কী জানি কী দেখব।
ঘরে ফিরে দেখি আকাশবাবু বারান্দায় বসে আছেন। আমাকে দেখেই তিনি বলে উঠলেন, “আরে এসো এসো, তোমার জন্যই বসে আছি। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো, তোমাকে একটা দারুণ জিনিস দেখাব।”
আমি জানতাম উনি আমাকে কী দেখাবেন। তবুও ফ্রেশ হয়ে ওঁর কাছে গেলাম। উনি আমাকে পত্রিকার কপিটা এনে দেখালেন। তারপর সেই নির্দিষ্ট পাতা খুলে আমার হাতে দিলেন। তারপর বললেন, “একদিন একটা সায়েন্স জার্নালে প্যারালাল ইউনিভার্স সম্বন্ধে জানতে পারি। বিষয়টা জানার পর আমার কেন জানি মনে হল, এই বিষয়ের উপর একটা গল্প লিখলে কেমন হয়। তারপর একটা পুরনো ডায়েরি নিয়ে এই গল্পটা আমি লিখেছিলাম। অনেকটা ডায়েরি লেখার মতো করে। তারপর কবে আমি এটা পত্রিকায় পাঠিয়েছিলাম আমার ঠিক খেয়াল নেই। আজকে ডাকে এই পত্রিকার সৌজন্য সংখ্যা পেলাম। পড়ে বলো তো গল্পটা কেমন হয়েছে।”