ইফতারি কেনার জন্য মেস থেকে বের হলাম।মেস থেকে ৫ মিনিট লাগে হেঁটে গেলে,যেখানে ইফতার পাওয়া যায়।
হাঁটতেছি হাঁটতেছি ঠিক এমন সময় কে যেন পিছন দিক থেকে ডাক দিল,
– এই জুবায়ের সাহেব পিছনে তাকিয়ে দেখি একটি মেয়ে, আমি যেই মেসে থাকি তার পাশের বাসায় এই মেয়েটি থাকে।মেয়েটির নাম মায়া।
মেয়ে আবার ধনী ঘরের সন্তান। আমি বললাম…
– কি হয়েছে
– কোথাই যাচ্ছেন
– ইফতার কিনতে
– কেন মেসে কি ইফতার তৈরি করেন না?
– না, ইফতার সবসময় বাজার থেকে নিয়ে আসি”
এই বলে আমি আবার হাঁটতে শুরু করলাম।
ইফতারের সময় আরো ১৫ মিনিট আছে। তাই একটু দ্রুত হাঁটতেছি। অাবার মায়া ডাক দিল..
– জুবায়ের সাহেব
– আরে কি হলো
– এত দ্রুত হাঁটতেছেন কেন
– এমনি, তোমার কাছে বলতে হবে
তারপর মেয়েটি যে কোথাই চলে গেল আমার সেদিকে খেয়াল নেই। ইফতার করার পর নামাজ পড়লাম।ভাবলাম একটু ছাদে
যায়।এমা,ছাদে গিয়ে দেখি মায়া তাদের ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। আসলে প্রত্যেক দিন ইফতারের পরে আমি ছাদে
আসি।তার জন্য মায়াও ছাদে আসে।
আমি জানি মায়া আমাকে ভালোবাসে।
তবে এখনো বলতে পারে নাই।আর আমার
মায়া কে একদম পছন্দ হয় না।কেমন যেন তার চেহারা,সবসময় রাগি মুডে থাকে,চোখ দুটো বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে তাকে আর আমার দিকে তাকিয়েই একটা মুচকি হাসি দিবে।
পরের দিন সকালে যাচ্ছি একটা টিউশনি করার জন্য। আমার যাওয়ার রাস্তার সামনে মায়া দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রত্যকদিন আমাকে দেখার জন্য মেয়েটি দাঁড়িয়ে থাকে।আমি শুধু নিচের দিকে মাথা দিয়ে হেঁটে চলে যায়।মেসে আসতে আসতে প্রায় বিকেল হয়ে গেল। মেসে ঢুকেই আমি হা করে তাকিয়ে আছি। কিছুই বুঝলাম না। আমার পড়ার টেবিল, বিছানা,রুম সব
পরিষ্কার করে সুন্দর করে গুছানো।কে করল এসব ভাবতেছি।এমন সময় আমার রুম মেট কে বললাম…
– কেরে এসব করছে
– কেন তুই জানিস না
– না,জানি না কে করছে
– আমার ভাবি
– ভাবি টা কে
– ন্যাকা যেন কিছুই বুঝেনা
– আরে বল কে
– মায়া ভাবি
আমি কিছুই বললাম না।আর এর মধ্যে সবারে বলছে যে মায়া আমার বউ।আজকে আবার ইফতার কিনতে যাচ্ছি। এমন সময় দেখি মায়া।
– এই মায়া তুমি কি পাইছ,যেটা মনে চায়
সেটাই কর
– আমি আবার কি করলাম
– এই যে, সবারে বলছ যে তুমি আমার বউ
– তাতে কি হয়ছে, আমি তো আপনার বউ হবই
– মানে
– মানে খুব সহজ, আমি আপনাকে ভালোবাসি আর আপনিও আমাকে ভালোবাসেন
– কি বলছে এসব তোমাকে
– বাহ্ রে,আপনি সবসময় আমার দিকে তাকিয়ে তাকেন,আমার সাথে কথা বলেন
– আমি কি তোমাকে কোনো দিন বলছি যে,মায়া আমি তোমাকে ভালোবাসি?
– না,বলেন নাই তবে আমার মন বলছে আপনি আমাকে ভালোবাসেন
– না,আমি তোমাকে ভালোবাসি
না,তোমাকে আমি ঘৃণা করি।যাও আর কোনো দিন আমার সামনে আসবে না
আরো অনেক কথা বলছি। আজকে ইচ্ছে মতো বকে দিলাম। কি পেয়েছে মেয়েটা যা ইচ্ছে তাই করবে।আমার সামনে থেকে
মাথাটা নিচু করে চলে গেল। এতদিনে তাহলে মেয়েটার উচিত শিক্ষা হয়ছে।
ইফতারি করে ছাদে গেলাম। আজকে গিয়ে দেখি মায়া ছাদে আসে নাই। আমি বললাম যাক বাবা তাহলে এতো দিনে
মেয়েটার বুঝ আসল। রাত্রে ভালো ভাবে ঘুমিয়ে পড়লাম।সকাল বেলা যখন মেস থেকে বাহির হলাম, পথের মাঝে আজকে
আর মায়া কে দেখতে পারলাম না।
সারাদিন চলে গেল একবার ও মায়াকে দেখলাম না।কেমন যে মনের ভেতর একটা খালি খালি অনুভব লাগতেছে।ভাবলাম
আজকে মায়াদের বাসায় যাবো।মায়ার বাবার সাথে আমার আবার একটু সম্পর্ক ভালো।বাসার কলিং বেল বাজতেই আন্টি
এসে দরজা খুলল।মানে মায়ার মা।
– আসসালামু আলাইকুম
– অঅালাইকুম ওয়াস্সালাম
– কেমন অাছেন আন্টি
– ভালো,তুমি কেমন আছ বাবা
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো অাছি,আন্টি
মায়া কোথাই
– গতকাল ধরে মায়া কিছুইই
খাচ্ছে না।সারাদিন ধরে রুমের দরজা খুলে না।একা একা শুধু কাঁদে।কতবার বললাম মা কিছু খেয়ে নে।আমার কোনো কথাই
শুনল না
– আন্টি মায়ার রুমটা একটু দেখিয়ে
দিবেন
– ঐ যে বাবা,ঐ রুমটা
আমি মায়ার রুমের দরজাতে নক করলাম কোনো সারা শব্দ নেই।
– মায়া দরজা খুলো
– কে ওখানে,আমি দরজা খুলব না
– আরে মায়া দরজা খুলো,আমি জুবায়ের
– আপনে কেন এসেছেন, এখান থেকে আপনি
চলে যান,আপনি ওই তো বলছেন আমি যেন আপনার সামনে আর না যাই
– আরে দরজা খুল
– না খুলব না
– তাহলে আর কোনো দিন তোমার সাথে কথা বলব না,আমি চলে যাচ্ছি”
এই বলে চলে যাব এমন সময় মায়া দরজা খুলে,আমার শার্টের কলার ধরে একটানে মায়ার বিছানাই নিয়ে বসাল। তারপর মায়া বলতেছে…
– অামাকে ভালোবাসেন তো
– না,বাসি না
– তাহলে চলে যান এখান থেকে এই বলে ফুফিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করে দিল।
আমি কিছুই বললাম না।মায়া বলতেছে….
– আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি
জুবায়ের
– আমি যে তোমাকে ভালোবাসতে পারব না, মায়া
– কেন
– কেন এর কোনো উত্তর নেই
আমি চলে যাচ্ছি মায়ার রুম থেকে এমন সময় মায়া বলল……
– আমি যদি আপনাকে না পাই তাহলে আমার জীবন রাখব না
আমি শুধু একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে আসলাম।ভাবলাম এটা আবেগ কয়েকদিন পরে এই আবেগ চলে গেলে আমি কে তা আর কোনো দিন চিনবেনা মায়া।
ভালোই দিনকাল চলতে ছিল। আমার লেখাপড়া আর টিউশনি।মনে মনে ভাবি এমন মেয়েই আমি খুঁজতেছি, যে আমাকে আমার
চেয়ে বেশি ভালোবাসবে।কিন্তু একটা সমস্যা। সমস্যা হলো আমি মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে আর মায়া ধনী ঘরের মেয়ে। তারপর সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি এতিম।ছোট বেলা একটা এতিম খানায় বড় হয়েছি।
কোনো ভাবে জীবন চালিয়ে স্কুল পড়া শেষ করলাম। বর্তমানে কলেজে অধ্যায়নরত আছি।টিউশনি দিয়ে লেখা পড়া আর জীবন
চলছে।সেখানে এত বড় আবদার কেউ মানবে না।মানার কথাও না।আমাকে চলে যেতে হবে দূর বহুদূরে।এই ব্যস্ততম শহর থেকে
কোনো এক অজানা অচেনা শহরে।
এর মধ্যে অনেক দিন মায়া আমাকে বলছে যে তাকে আমি ভালোবাসি কি না।তখন আমি কোনো উত্তর দিতাম না।
তার কারন আমিও মায়া কে ভালোবেসে ফেলি।মায়া কে নিয়ে ঘর বাধার স্বপ্ন ও দেখি।একদিন মেসে এসে দেখি আমার
ডায়রিটা আমার পড়ার টেবিলে।মানে টা কি।আমি তো ডায়রিটা লুকিয়ে রেখেছিলাম।তার মানে কি মায়া এসেছিল। এই ভেবে ডায়রিটা খুললাম।খুলে যা দেখলাম। তা ভাববার মতো নই….
এই ডায়রিতে মায়ার সাথে প্রত্যকটা কথা তুলে ধরছি।আমি মায়া কে ভালোবাসি তাও সব লেখা এই ডায়রিতে।
ডায়রির শেষ প্রান্তে লেখা ছিল।
“আমি ও তোমাকে অনেক ভালোবাসি মায়া।কিন্তু তোমার পরিবার কোথাই আর আমার পরিবার কোথাই।তোমার আমার
সম্পর্ক কি তোমার বাবা-মা মেনে নিবে ??
বাস্তবতা বড়ই কঠিন।
এটার নিচে মায়া লেখছে…
হ্যাঁ মেনে নিবে……
আমি তখন ডায়রিটা বন্ধ করে দিলাম।ছাদে গেলাম।
ছাদে গিয়ে ঐ আকাশ পানে মুক্ত পাখির মতো দুই হাত প্রসারিত করে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নিয়ে অনেক জুড়ে সুড়ে বললাম,
“আমি পারব না,আমি পারব না কাউকে ভালোবাসতে।জীবন বড় বৈচিত্র্যময়।
বাস্তবতা বড়ই কঠিন।আমাকে ক্ষমা করে দিও মায়া”
রাতের আধারে ব্যগটা কাধে নিয়ে হাঁটা ধরলাম অচেনা অজানা কোনো এক শহরে।
বেড়িয়ে পড়লাম মায়ার মায়া জাল থেকে।
মায়ার মায়া জালে আমি আবদ্ধ হয়ে পড়তে চাই না।তাই তো মায়া জাল থেকে বেড়িয়ে আমি কোনো এক অচেনা অজানা
শহরের উদ্দেশ্যে…..