জমিদারের আল্লাহ দেখার ঘটনা

জমিদারের আল্লাহ দেখার ঘটনা

এক স্বনাম ধন্য জমিদার ছিল, তার কোন কিছুরই অভাব ছিল না। একদিন সে চিন্তা করল, জীবনে অনেক কিছু পেলাম, অনেক কিছুই দেখলাম। কিন্তু একটা জিনিস দেখলাম না। এ জিনিসটা দেখলেই আমার জীবমের সকল সাধ পূর্ণ হয়। যিনি আমাকে সৃষ্টি করলেন, আমাকে ধন-সম্পদ, স্ত্রী-পুত্র আর ভোগের সামগ্রী দান করলেন সে সৃষ্টিকর্তাকে দেখা হলো না। সুতরাং যেভাবেই হোক তাকে দেখতে হবে।

জমিদার বাড়ি থেকে বের হলেন। এক ব্রাক্ষণ পুরোহিতের কাছে গিয়ে বললেন, “আমি সৃষ্টিকর্তাকে দেখতে চাই। আপনি কি আমাকে দেখাতে পারেন? ব্রাক্ষণ বললো, ‘অবশ্যই! ভিতরে আসুন।” একথা বলে জমিদারকে মন্দিরের ভিতরে নিয়ে গিয়ে একটি মূর্তি দাড় করানো ছিল তার দিকে ইশারা করে বললো, “এই যে ইনি হলেন সৃষ্টিকর্তা।” জমিদার বাবু বললেন, “এই সৃষ্টিকর্তা নয়। আসল সৃষ্টিকর্তাকে দেখতে চাআই।”

ব্রাক্ষণ বললো, “আমার কাছে এ সৃষ্টিকর্তাই আছে। এ ছাড়া আমি আর কিছু দেখাতে পারবো না।” জমিদার বাবু সেখান থেকে বিদায় হলেন। তিন্নি শুনতে পেলেন অমুক জায়গায় এক সাধু আছে, বহুদিন থেকে সে সাধনা করছে। সে অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা দেখাতে পারবে। সুতরাং জমিদার সেদিকে রওয়ানা হলেন। সাধুর আশ্রমে গিয়ে বললেন, “বহুদিন থেকে আমার সৃষ্টিকর্তা দেখার ইচ্ছা হয়েছে। আপনি যদি আমাকে সৃষ্টিকর্তা দেখান তবে আমার বহুদিনের একটি সাধ পূর্ণ হবে। সাধু বললেন, ঠিক আছে। এখনই সৃষ্টিকর্তা দেখিয়ে দিচ্ছি। ঐ যে দেখছেন পর্দা! ঐ পর্দা সরালেই সৃষ্টিকর্তা দেখতে পাবেন।

জমিদার পর্দা সরাতেই দেখেন বিশাল এক পাথরের মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। তিনি সাধুকে বললেন, “এসব সৃষ্টিকর্তা তো ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি। আমি আসল সৃষ্টিকর্তা দেখতে চাই। সাধু বললেন, “এই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আমার কাছে আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। আপনি অন্যখানে চেষ্টা করুণ।” অতঃপর জমিদার বাবু আরেক সাধুর সন্ধান পেলেন। অনেক দূর সফুর করে সে সাধুর কাছে গিয়ে তার মনের বাসনা ব্যক্ত করলেন। সাধু বললেন, “এখন এখানেই অপেক্ষা করুণ। গভীর রাত্রে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়বে, চারিদিক নীরব নিস্তব্ধ হবে তখন সৃষ্টিকর্তা আগমন করবেন।”

জমিদার সাধুর কথামত অপেক্ষা করতে লাগলেন। রাত্রি যখন গভীর হলো তখন তাকে নিয়ে সাধু মন্দির থেকে বের হলেন। সাধু দূরে দিগন্তের দিকে আঙ্গুলি নির্দেশ করে বললেন, “ঐ যে দেখেন, একটা আলো এদিক থেকে ওদিকে যাচ্ছে ঐটাই পরমেশ্বরের জ্যোতি। জীবন্ত সৃষ্টিকর্তা, তিনি চলা-ফেরা করেন।” জমিদার বাবু অবাক হলেন। কিন্তু তবু তার দ্বন্দ্ব রয়ে গেল। তিনি বললেন, “তাহলে কাছে গিয়ে দেখে আসি?” সাধু বললেন, খবরদার! কাছে যেয়ো না জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।” জমিদার বাবু আগ্রহের আতিশয্যে ছুটে গেলেন পরমেশ্বরের জ্যোতি দেখতে। কাছে গিয়ে দেখেন একটি কচ্চপের পিঠের উপর সিমেন্টের ঢালাই করা সমতল একটা পাটাতান। তার উপর প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। কচ্চপটি এদিক-সেদিক চলাফেরা করার সময় প্রদীপের আলো এদিক-সেদিক চলাফেরা করছে। একেই পরমেশ্বরের জ্যোতি নাম দিয়ে সাধু অনেক লোককে দেখিয়ে বেশ সুনাম অরজন করেছেন।

জমিদার বাবু সাধুর কাছে এসে বললেন, “এটাতো একটা কচ্চপ মাত্র, সৃষ্টিকর্তা কোথায়?” সাধু বললেন, “আমার কাছে এইটাই আছে আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। তবে তোমার কাছে আমার অনুরোধ, কারো কাছে একথা প্রকাশ করবে না। তুমি কোথাও যেয়ো না। আমার কাছে থেকে যাও। হালুয়া রুটি এখানে প্রচুর আছে খেতে পারবে।” জমিদার বললেন, হালুয়া রুটি আমার বাড়িতে অনেক আছে। হালুয়া চাই না। সৃষ্টিকর্তাকে দেখতে চাই।” অবশেষে তিনি মুসলমানদের স্বরণাপন্ন হলেন। এক মসজিদে গিয়ে একজন মুসল্লিকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের মধ্যে সব চেয়ে বড় আলেম কে?” লোকটি আমার নাম বলে দিল যে তিনি হলেন মাওলানা আশরাফ আলী থানবী।

অতঃপর জমিদার বাবু বহু রাস্তা অতিক্রম করে একদিন আমার কাছে এসে বললো, “আমি আল্লাহকে দেখতে চাই। বহু লোকের কাছে গেছি কেউ আমাকে আল্লাহ দেখাতে পারেনি। সাধু-সন্যাসী-পুরোহিতের কাছে গেলাম সবাই প্রতারণা করেছে। আমি আশা করি আপনি আমাকে আল্লাহ দেখাতে পারেন তবে আমি মুসলমান হয়ে যাবো।”
আমি বললাম, “তোমার মুসলমান হওয়াতে আমার কোন প্রয়োজন নেই। যদি তুমি মুসলমান হও তবে তুমি দোযখের আযাব থেকে বেঁচে যাবে এবং বেহেশ্তের অধিকারী হতে পারবে তাতে তোমারই লাভ হবে। আমার কোন প্রয়োজন নেই। তবে একটি কথা বলে দিচ্ছি, এ দুনিয়াতে কোনদিন আল্লাহকে দেখতে পাবে না। দুনিয়াতে আল্লাহকে দেখা সম্ভব না।

“আরেকটি সত্য কথা শুনে রাখ, তুমি যদি মুসলমান ও হও তবে অবশ্যই বেহেশ্তের প্রবেশ করবে। আর্ব সত্য হলো একজন মুসলমান মৃত্যুর পরে যখন বেহেশ্তের প্রবেশ করবে তখন উবশ্যই সে আল্লাহকে দেখতে পারবে।
লোকটির অন্তরে সত্য এত আছর করলো যে সে তখন বলে উঠলো, “হুজুর, আমি মুসলমান হতে চাই, আমাকে মুসলমান করে নিন।” আমি তার আন্তরিকতা দেখে হাত বাড়িয়ে দিলাম। কালেমা পড়ে সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান হয়ে গেল। সত্য কথার ওজন এত বেশী যে নিমষে পাথরও চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ধুলায় পরিণত হয়ে যায়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত