দ্বিতীয় সুযোগ

দ্বিতীয় সুযোগ

আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে আমার চার বছরের ছোট্ট বুড়িটা। একটু ভয় পাওয়ার ভান করে বললাম,
আমি কি কোনো ভুল করে ফেলেছি মামনি? কলেছইটো টোমাল জন্য নানুমনি কত আপসেট জানো টুমি। কেন মা আমি আবার কি করলাম? কাল হসপিটাল থেকে দেলি কলে এলে কেন? কি করব মা কাল ইমারজেন্সি ছিল তো। কাল টোমাকে দেখাল জন্য কত আংকেল আন্টিলা এসেছিল বাট টোমাল কোনো খোজ নাই নানুমনি টো আপসেট হবেই।  ও আচ্ছা তুমি খেল আমি তোমার নানুমনিকে সরি বলে আসি কেমন। ওকে মামনি।

মায়ের ওপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। আমি মানা করা সত্বেও আবার পাত্র নিয়ে এসেছে। অবশ্য মায়ের মন মাকেইবা কি দোষ দিব। ময়ের রুমে গিয়ে দেখি মনমরা হয়ে বসে আছে। গলাটা যথাসম্ভব কঠিন করে মাকে ডাকলাম। আমার আওয়াজ শুনেই মা কিছুটা ভয় পেয়ে আমার দিকে তাকালেন। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বললাম, মা তোমাকে কতবার না বলেছি আমার জন্য কোনো বিয়ের সমন্ধ আনবেনা। দেখ মা তোর কিই বা বয়স আর তাছাড়া তিতলি ও তো চুপ করো তিতলিকে নিয়ে কিছু বলবেনা তুমি। মা দেখ তিতলিকে আমি দেখতে পারব। তুই ও শশুরবাড়ি থেকে এসে দেখে যাবি মাঝে মধ্যে তোর তিতলির এটুকু অযত্ন করবনা। শত হলেও আমার মেয়ের অংশ ও। মা তোমার মনে হয় তিতলি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে আর আমাদের নিয়ে যদি তোমার এত সমস্যা হয় তাহলে আমরা এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। তুমি জানো সে ক্ষমতা আমার আছে।

কিন্তু সিথি আর একটা কথাও নয় মা আর কোনোদিনও বিয়ের সমন্ধে কিছু শুনতে চাইনা। মাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে এলাম। মায়ের ইমোশনাল কথা বার্তা শোনার কোনো ইচ্ছা আমার নেই এখন। এ বিষয়ে পাপার সাথে কথা বলতে হবে। বাট উনি তো ইউ কে তে বসে আছেন কবে ফিরবে কে জানে। নিজের রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। কাল অনেক রাতে ফিরেছি। এখনো খুব টায়াড লাগছে। শুয়ে শুয়ে ভাবছি মায়ের কথা। বিয়েটা না করার পিছনের একমাত্র কারণ কি তিতলি নাকি অন্য কেউ ও আছে? প্রশ্নটার উত্তর জানলে ও এড়িয়ে যাই প্রতিবার। এখন আমার লাইফের ফাস্ট প্রয়োরিটি তিতলি আর কেউ নয়।

দুদিন ধরে একটা শাড়ির জন্য জ্বালিয়ে মারছে তিতলি। না জানি কার কাছ থেকে শুনেছে। কাজের চাপে এনেদিতে পারছিলাম না আজ নিয়ে এসেছি। বিনুর মা বলছিল কদিন ধরে নাকি তিতলি বিকালে কোথাও যায়। মার কাছে জানতে চাইলে মা কিছুই বলেনি। তিতলিকে জিঙ্গেস করতেই ও লজ্জা মাখা কন্ঠে বলে আমাল ফেলেন্ডের সাথে দেখা কলতে যাই। প্রথম কয়দিন হেসে উড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু আজ যখন আমার আনা শাড়ি পড়ে সেজে গুজে বের হল তখন কেমন জানি সন্দেহ হলো। তাই ওর পিছে আমিও বেরোলাম। আমার ছোট্ট মেয়েটার মাথায় যে এসব ঢোকাচ্ছে তার খবর আজ আমি বের করব। তাই তিতলির পেছন পেছন আমিও বের হলাম। কিন্তু লুকিয়ে যেতে পারলাম না তার আগেই তিতলি দেখে ফেলল, মামনি এভাবে লুকিয়ে আসছ কেন? লুকিয়ে আসতে যাব কেন নানুমনি বলল তোমার নাকি নতুন বন্ধু হয়েছে তাই দেখতে এলাম। ভালোই কলেছো তোমাল সাথে আমাল ফ্লেন্ডের বিয়ে হবে জানো।

তিতলির কথা শুনে চোখ কপালে উঠে গেল আমার। আর লোকটাকে দেখার জন্য কৌতুহল ও হলো। ঠিক করলাম সামনে যাব না তাই তিতলিকে পাঠিয়ে ওর পিছে পিছে গেলাম। লোকটা পিছন ফিরে আছে। পেছন থেকেই কেমন চেনা চেনা লাগছে। সেদিকে পাত্তা দিলাম না। দেখলাম তিতলি ওনার কাছে যেতেই ওকে কোলে তুলে নিলেন আর বললেন,আরে আজ দেখি তিতলি শাড়ি পরেছে। শাড়িতে তোমাকে তোমার মামনির থেকেও সুন্দর লাগছে। কন্ঠটা শুনে অটোমেটিকলি এগিয়ে গেলাম আমি। চোখের সামনে পুরোনো স্মৃতি গুলো ভেসে বেড়াচ্ছে। আমাকে আসতে দেখে তিতলি বলল, দেখ কে এসেছে তোমাল সাথে দেখা করতে। তিতলির কথা শুনে আমার দিকে ফিরল অনিত। এখনো আগের মতই আছে শুধু পোশাকটা বদলেছে। আমাকে দেখে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে‌ বলল, কেমন আছো সিথি? কেমন থাকা উচিত বলে মনে কর? রাগ করে আছ খুব? রাগ করার কি যথেষ্ট কারণ রাখনি তুমি।

হুম রেখেছি । কিন্তু তা ছাড়া কি কোনো উপায় ছিল আমার কাছে। আমাকে বিয়ে করলে কি সুখি হতে তুমি? আমি কি তোমার যোগ্য ছিলাম বল? যোগ্যতা দেখে তো প্রেম করিনি। ঘর বাধার জন্য করেছিলাম। কিন্তু তুমিই চলে গেলে। এখনতো ফিরে এসেছি তোমার যোগ্য হয়েই। তোমার মনে হয়না অনেক দেরি করে ফেলেছো? মনে হয়েছিল যখন প্রথমদিন তিতলিকে দেখেছিলাম কিন্তু পরবর্তিতে তিতলির কথা শুনে মনে হলো কিছুই দেরি হয়নি বরং সঠিক সময়ে ফিরে এসেছি।  মানে?আমার কথা শুনে তিতলিকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে ওকে খেলতে বলে আমাকে নিয়ে পাশের বেন্ঞ্চে বসল অনিত। আর বলতে শুরু করল।

সেদিন যখন তিতলিকে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখলাম তখন খুব মায়া হয়েছিল আমার। কাছে গোয়ে জানতে চাইলে বলে তোমাকে নাকি দেখতে এসেছে তাই তোমার মা ওকে নিচে পাঠিয়ে দোয়েছে। কিন্তু তুমি নাকি তখনও আসোনি। শুনে কেমন যেন সন্দেহ হলো। তিতলির কাছে জানতে চাইলাম ওর বাবার কথা। ও বলল ওর বাবা নেই। সত্যি বলতে অনেক খুশি হয়েছিলাম তখন। তোমাকে ফিরে পাওয়ার একটা ওয়ে পেয়েছিলাম আমি।
এ পর্যায়ে আমি মুখ খুললাম,তুমি ভাবলে কি করে তোমাকে বিয়ে করব আমি? না ভাবার কি আছে। আমি জানি তোমার বিয়ে না করার পেছনে শুধু তিতলি না এরকারন আমিও। উল্টা পাল্টা কথা একদমই বলবানা। নিজেকেই প্রশ্ন কর তিতলি সহ তোমাকে অনেকেই একসেপ্ট করতে চেয়েছে কিন্তু তুমি রাজি হওনি। কেন? কারন তিতলির বাবার জায়গা কাউকে দিতে পারবনা তাই। কাকে বোকা বানাচ্ছ তুমি। তোমার যে বিয়ে হয়নি আমি জানি। আর তিতলি যে তোমার না তিথি আপুর মেয়ে তাও জানি।

তুমি জানলে কেমন করে? সেদিন আন্টির সাথে দেখা করেছিলাম। আন্টিই বলেছে সব। তিথি আপু আর তৌকির ভাইয়ার একসিডেন্টের পর একবছরের তিতলিকে কিভাবে মানুষ করেছো সব বলেছেন তিনি। কিন্তু মা তো আমাকে কিছুই বলেনি? আমি মানা করেছিলাম তাই। দেখো সিথি তিতলি এখন বড় হচ্ছে এতদিন তুমি একা ওকে মানুষ করলেও এখন ওর একটা বাবার প্রয়োজন আর তুমি জানো ওর বাবার ভুমিকাটা আমার থেকে ভালো কেউ নেভাতে পারবেনা। এই বলে হাটু গেরে বসে একটা আংটি বের করে অনিত বলল, দেখ সিথি লাইফ সবাইকে দ্বিতীয় সুযোগ দেয়না কিন্তু আমাদের দিয়েছে। তাই প্লিজ আমাকে তিতলির বাবা হতে দাও। প্লিজ সিথি হ্যা বলে দাও।

আমি খুবই দ্বিধায় ভুগছি। এই দিনটার জন্যই মনে মনে অপেক্ষা করেছি কিন্তু একটা চাপা অভিমান কিছুতেই মন থেকে যাচ্ছেনা। এমন সময় তিতলি এসে আমার হাত ধরে অনিতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
হ্যা বলো মামনি। ওর এই নিস্পাপ অনুরোধ আর ফেলতে পারলাম না। কারন আমি জানি অনিত ছাড়া কেউই আমার তিতলির বাবা হতে পারবেনা। তাই দেরিনা করে বললাম, হ্যা নেব এই দ্বিতীয় সুযোগ। করব তোমাকে তিতলির বাবা। দেরি না করে তাড়াতাড়ি আংটিটা পরিয়ে দিল ও এই দ্বিতীয় সুযোগ কিছুতেই হারাতে চায়না ও।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত