টিউশনি

টিউশনি

শালার মাইনষে কয় ঢাকা শহরে নাকি টিউশনির অভাব নাই। কিন্তু মুই আজ পর্যন্ত একটা টিউশনির চোপা দেখলাম না। শালার কপালডাই খারাপ। পকেটে একটা টাকাও নাই। দিন দিন আমার অবস্থা ফকিন্নির মতো হইতাছে। ফকিন্নির অবস্থা তাও ভালো আছে,,আর আমার তাও নাই। অবশেষে এক বড় ভাইয়ের হাতে পায়ে ধইরা চাডাম চুডাম মাইরা বহুত কষ্টে একটা টিউশনি যোগার করলাম। ছাত্র ক্লাস থ্রিতে পড়ে। জীবনে টিউশনি করানোর অভিজ্ঞতা নাই বললেই চলে।

বড় ভাই ছাত্রের বাসার ঠিকানা একটা কাগজের মধ্যে লিখে দিলো। আমিও খুশিতে কুইন্যা ব্যাঙের মতো লাফাতে লাফাতে টিউশনি করাতে চলে গেলাম। অনেক আশা নিয়ে বাসার কলিংবেল চাপ দিলাম। দরজা খুলতেই মুই অবাক। একটা বস্তা সাইজের মেকআপ আন্টি আমার সামনে খারাইয়া রইছে। তাকে দেখতে একদম বাংলা সিনেমার ময়ূরীর মতো লাগছে। আহারে ময়ূরী আমারতো মনে হয় তুমি ফুটপাতের ভিখারি। কিন্তু ভাবসাব এমন মনে হয় তুমি অপ্সরী। তুমি অপ্সরী হও আর ভিখারি হও,, তাই আমার কি। আন্টি মোরে দেইখা মুচকি একখান আবাল মার্কা হাসি দিলো। মুই হেতির আবাল মার্কা হাসি উপেক্ষা করিয়া কইলাম….

-আন্টি এইটা কি আরমানদের (আমার ছাত্র) বাসা? আন্টি হেতির মুখটারে ভেটকি মাইরা কইলো…

–হেইইইইই…. হ্যান্ডসাম আমারে কি আন্টি আন্টি লাগে নাকি? (মুচকি হাসি) উরিশশশশ..শালাআআ কয় কি ফইন্নি। দেইখাতো মাওয়োই মাওয়োই মনে হয়।

-সরি বোইন। আপনারে তো ময়ূরীর মতো লাগে।
–কি কইলি? (রাগ)
– আরে নাআআআআ,,পলির মতো লাগে।
–পলি কে? (উৎসুক ভাবে)
-এক সময় তামিল ছবির শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী ছিলো (ডাহা মিছা কতা)
–ও তাই বুজি?(গুলুগুল)আচ্ছা তুমি ভিতরে আসো।
-আসলে আমি আরমানেরর স্যার।
–হুমম জানি,,,তুমি বসো আমি আরমানকে পাঠাচ্ছি। একটু পর আরমান মানে আমার ছাত্র আসলো। আরমান এসেই আমাকে জিজ্ঞাস করলো….
-স্যার আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে।

আরমানের এমন কথা শুনে মুই টাস্কি খাইলাম। মনে মনে কইলাম হালার পো হালা কয় কি। পকেটে ফাকা,, নাই একটা টাকা আবার গার্লফ্রেন্ড। তাই কইলাম…

–না নেই।
-স্যার আপনাকে একটা কথা বলি।
–হুমমম বলো।
-আপনাকেনা মটু পাতলুর চিংগাম স্যারের মতো লাগে।

লও ঠ্যালাআআ…এই ছাত্র পড়াইতে যে আমার প্যান্ট ছিরা যাইবো সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। শালার টিউশনি ছাড়াইতো মনে হয় ভালো ছিলাম। কোন দুঃখে যে টিউশনি টা নিলাম। যাইহোক আরমানকে বললাম…

-তুমি পড়ো পরে কথা হবে।
–কি পড়বো স্যার।
-কালকে স্কুলে তোমার কি পড়া।
–স্যার শুধু ইংরেজি পড়া। আর সবগুলো হইছে।
-আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে তুমি Our Classroom প্যারাগ্রাফ টা লেখো।
–ওক্কে স্যার।

এই বলে আরমান প্যারাগ্রাফ লেখা শুরু করলো। এই ফাকে হঠাৎ আন্টি আসলো আমার কাছে। আন্টির এক হাতে শরবত আরেক হাতে সেমাই। আমিতো খুশিতে গুলুগুলু কুলুকুলি পুলুপু্লু হইলাম। আহারে কত্তদিন সেমাই খাইনা। আন্টি বিনয়ের সুরে বলল…

-নাও খাও। অনেক কষ্ট করে তোমার জন্য কচুর পাতার শরবত বানিয়ে আনছি।

কচুর পাতার শরবতের কথা শুনে আমার অবস্থা খারাপ। আয় হায় কয়কি। কচুর পাতার শরবত এইডা আবার কি। আন্টি এক প্রকার জোর করে আমার হাতে শরবত দিলো। উপায়ন্তর না পেয়ে আমি সেই শরবত খাইলাম। খাইয়াতো মোর অবস্থা টাইট। প্যাটের মধ্যে ভুডুর ভুডুর শব্দ করতেছে। গলার অবস্থা আরো খারাপ।

ও আন্টিগে তুমি মোরে কি খাওয়াইলা। এহন মুই কিতা করমু মনে হয় মইরা যামু। ঈদের দাওয়াত কেমনে খামু। গলার কামুর কন্ট্রোল করার জন্য যেই সেমাই খাওয়া শুর করব ঠিক তখন-ই চোখ মোর চরক গাছ। সেমাই-র মধ্যে আলু,বাগুন কুচিকুচি করে কেটে দেওয়া। গুড় দিয়ে সেমাই রান্না করা। সেমাইয়ের উপরে সরিশার তেল ভাসমান। আর সেমাইয়ের রং লাল। সেমাইয়ের এই রকম অবস্থা দেখে আমার তো…কি আর কমু। আন্টি বলল…

–এই গুলো উগান্ডার সেমাই। গতকাল টিভিতে দেখে শিখছি। দারুন হইছেনা?

আমি হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছিনা। টিউশনি রক্ষা করার জন্য মাথা নেরে হ্যা সুচক জবাব দিলাম। সাথে সাথে আন্টি সেমাইয়ের প্লেটটা আমাকে দিয়ে খেতে বলল। আমি উগান্ডার সেমাই খাচ্ছি আর বলছি উগান্ডার সেমাই এত্ত স্বাদ ক্যারেএএএ….(কাঁদো কাঁদো অবস্থা)। আমার এহেম কথা শুনে আন্টি আরো একটু সেমাই এনে দিলো। আর আমি সেগুলো গপগপ করে খাচ্ছি। খেতে খেতে আমার অবস্থা কুইচ্যা মুরগির মতো হইছে। মনে মনে ঠিক করলাম এই টিউশনি আমি জীবনে করামু না। খাওয়া শেষ হলে আন্টি চলে গেলো আর আরমান বলল….

–স্যার প্যারাগ্রাফ লিখছি।
-দেখি দাওতো। আরমানের প্যারাগ্রাফ দেখে আমার দম বের হওয়ার মতো অবস্থা। সে লিখছে……

Our classroom. Our classroom is big classroom of the school.We there read daly.Our classroom have a 23 girls.Mina,,Tin a,,Abida,,Amina,,Shima,,Shumi,,Rumi etc.Abida is a very beutiful girl our classroom.She is my first and last crash.We dui jon dui jon ke khub love kori.We boro hoye palie biye korbo.Apnake amader biyete dawat.I love you Abida very much..Ummmaaaa…

অনুবাদঃ আমাদের ক্লাসরুম খুবই বড় আমাদের স্কুলের মধ্যে। আমরা সেখানে পড়ি। আমাদের ক্লাসরুমে ২৩ জন মেয়ে আছে।মিনা,টিনা,আবিদা,আমিনা,সিমা,সুমি,রুমি ইত্যাদি। আবিদা হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর আমাদের ক্লাসের মধ্যে। সে আমার প্রথম এবং সর্বশেষ ক্রাসস। আমরা দুইজন দুইজনকে খুব ভালোবাসি। আমরা বড় হয়ে পালিয়ে বিয়ে করবো। আপনাকে আমাদের আমাদের বিয়েতে দাওয়াত। আমি আবিদাকে অনেক ভালোবাসি। উম্মাআআআ আরমানের প্যারাগ্রাফে দশের মধ্যে দুইশো মার্ক দিয়ে কোনরকম চলে আসলাম। আর প্রতিজ্ঞা করলাম” সারাজীবন ভিক্ষা করে খাবো,,তবুও আর টিউশনি করাবোনা।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত