-দোস্ত একটা কোক নিয়ায় তো!!(অভি)
-হ রে একটা না দুই তিনটা নিয়ায়.. যে গরম! বাপ রে বাপ। (নিলয়)
-আচ্ছা তোরা এখানে বস আনতাছি!( আমি) দোকানে গেলাম!!
-মামা এতক্ষন লাগে তিনডা কোক দিতে.. তাড়াতাড়ি দেন! (আমি একটু ক্ষিপ্ত হয়ে)
-বুইড়া হয়ে গেছি তো বাবা! তাই আর আগের মতো তাড়াতাড়ি কাজ করতে পারি না! শরীরে কুলায় না (দোকানি)
-কথা টার দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ করলাম নাহ! এসব আবেগি ফালতু প্যাচাল শুনতে ইচ্ছে হয় নাহ!। (আমি) কোক নিয়ে চলে আসলাম দোকানের অপর পাশে!! ওদের টা ওদের হাতে দিলাম
-আহ! যাক গলা টা জিরালো! কি গরম রে মাইরি!(আমি)
-হ রে ব্যাটা শান্তি আসলো একটা! (নিলয়)
আড্ডা দিতেছি! নিত্যদিনের কাজ! অনেক্ষন পর। একটা জায়গা তে গিয়ে হঠাত চোখ আটকে গেল। কেমন যেন একটা অনুভূতি! অভি আর নিলয় খেয়াল করে নি!.. খেয়াল করেই বা কি! একটা মানুষ! রিক্সাওয়ালা! রিক্সা টা সাইড করে রাখলো! ঘাড়ের গামছা টা দিয়ে রিক্সার আশে পাশে রিক্সার গা ঝাপটা দিল! আবার সেইটা ঘাড়ে চাপিয়ে নিল!
পরনে হালকা তাতের লুঙ্গী। তবে নোংরা! গায়ের জামাটাও পুরোনো! মনে হচ্ছে কত দিন কাচে নি! কেমন যেন ইতস্তত লাগছিল.. শরীর ঘামে ভিজে গেছে তার! সারা গায়ে লেপ্টে গেছে জামা! যে গামছা টা দিয়ে একটু আগে রিক্সা টা মুছলো সেইটা দিয়ে আবার সযত্নে নিজের মুখটা মুছে ফেল্ল!..তারপরও মুখে কেমন যেন সুখের তৃপ্তি দেখতে পারলাম লোকটার! কাচা-পাকা দাড়ি.. কোনো দিন মনে নিজের মুখ আয়নায় ভাল করে দেখে নি!.. লোক টা আস্তে আস্তে দোকানের দিকে এগিয়ে গেল! দোকানের বাইরের অংশে কলা, পাওরুটি,লাড্ডু, মিস্টি সিংগাড়া, আরো হরেক রকমের হালকা খাবার টাংগানো আছে!.. সেগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে লোকটা! মানুষ টা কে তখন কেও দেখলে হয়ত বলতো ছোট লোক! জীবনে কোনো দিন খায় নি!আমারি মনে হচ্ছিল তাই!।।.. কিছুক্ষন পর তাকিয়ে থাকার পর!…দোকানি বলে উটলো
-কি নিবেন মিয়া?(দোকানি)
-এই তো ভায়া দেখত্যাছি!! (রিক্সাওয়াল চাপা হাসি দিয়ে) কিছুক্ষন পর ৮টাকা দামের একটা পাওরুটি প্যাকেট থেকে বার করে নিয়ে বাইরের বেঞ্চে এসে বসলো! ড্রাম থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে আগে হাত আর মুখে হালকা পানি ছিটালো! আবার এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে সামনে রাখলো!. পাওরুটি টা নাকে নিয়ে শুকলো! দেখতে বিচ্ছিড়ি লাগছিল! তারপর দোকানি কে জিজ্ঞেস করলো?
-ভায়া রুটি কি আইজক্যা আনছোনি ? (রিক্সাওয়ালা)
-হ ভাউ!(দোকানি)
আর সাত-পাচ না ভেবে রুটি টা পানিতে চুবিয়ে নিল.. একটু করে মুখে দিতে লাগলো! পানিতে ভেজানোয় রুটি নরম হয়ে পরে যেতে লাগলো! তবুও দুই হাত দিতে ধরে রাখার আপ্রাণ চেস্টা করে যাচ্ছে লোক টা! দৃশ্য টা বেশ মজার!
লোক টা খাচ্ছে আর তার কপাল দিয়ে ঘাম বয়ে পড়ছে! সেদিকে মাঝে মাঝে গামছা দিয়ে মঝছে!.. কি নিস্ফল চেহারা ফূটে উঠেছে! রুটি টা শেষ করে আবার দোকানের সেই কলা,পাওরুটি,লাড্ডুর দিকে এক পলক চেয়ে নিল!।। কি জানি কিসের জন্য! কিন্তু আমার মন বলছিল হয়ত সে আরো কিছু নিতে চেয়েছিল হয়ত.. কিন্তু না কিচুক্ষন পর গ্লাসের পানিটা খেয়ে নিল!! ড্রাম থেকে আরেক গ্লাস পানি নিয়ে খেল.. গামছা দিয়ে মুখ মুঝছে! এতক্ষন ধরে আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি সে কোনো খেয়ালই করে নি! সে জানেও না যে তাকে কেও এভাবে দেখছে!.. লুঙ্গীরর ভাজে থাকা ছোট মোবাইল টা বের করে কাকে যেন কল দিচ্ছে একটু পর…
-হ্যালো রাহাতের মা! (রিক্সাওয়ালা)
-!!(হয়ত রাহাতের মা কথা বলছে)
-খাইছোনি?
-হ খাইছি!
-আরে হ রে ভাল তাই খাইছি!রাহাত বাড়ি আইছেনি?
-আইয়া পরবো..বাড়ি আইলে.তাড়াতাড়ি খাইবার দিয়ো!
সকালে পোলাডা কিচ্চু খায়া যায় নাই!.. আচ্চা এহন রাহি! কিছুক্ষন পর ফোনটা সযত্নে আবার লুঙ্গীরর ভাজে আটকে নিল একটু জিরিয়ে নিল গামছার ঝাপটা দিয়ে..!! উঠে দাড়ালো.. মুখে সেই চাপা হাসি!! লোকটা র কিসের এত সুখ??নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে বসলাম!! লোকটা আবার তার রিক্সা নিয়া জোর কদমে এগিয়ে যাচ্ছে.. মুখে সেই চাপা হাসি!.. আর আমিও চেয়েই আছি সেই পায়ের প্যাডেল গুলার দিয়ে… খট খট শব্দ হচ্ছে.. মনে হচ্ছে কোনো কস্ট ছাড়াই নিজ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে লোকটি! বামে তাকিয়ে দেখলাম মিথি বিষ্ময়ের সাথে আমার দিকে তাকিয়ে আছে..চোখে মুখে প্রশ্ন খেলা করছে তার! বলে উঠলাম..
-আজ আমিও চায়ের দোকানে বসে আছি এক কাপ চা আর সেই ৮ টাকার পাওরুটি!(আমি)
– মিথি চুপ করে আছে
-তফাত কি জানো?তুমি খাবার খাও ডাইনিং এ আর আমি মাটিতে বসে!!
-মিথি যেন আরো আকাংখিত ভাবে এক পলকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে!
-স্বপ্ন টা অনেক দূর ছুতে অনেক সময় লাগবে আমার এখনো!
-চুপ…
-গল্প টা কেন শুনালাম তোমায়? জানো?
-না বোধক চাওনি নিয়ে তাকালো!..
-কারণ এই রাহাতের বাবা যে অই রিক্সাওয়ালা!! বলে উঠে চলে আসতে লাগলাম..হঠাত মিথি হাত চেপে ধরলো
-চোখের কোণায় পানি!..অপেক্ষায় থাকলাম! সেই ৮ টাকার পাওরুটির জন্য…(মিথি)
-চাপা হাসি দিয়ে তাকালাম.. কিছু বলতে পারি নি ৮ টাকার স্বপ্ন টা যে এখনো অনেক দূর.. আমায় ডাকছে.. হুম পৌছাতেই হবে!! আবেগে সাড়া দেয়া যাবে নাহ!.. হয়ত মিথি সত্তি আমায় ভালবাসে..চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে…!সেই রিক্সাওয়ালা বাবা চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে তার রাহাতের দিকে এগোতেই হবে আমায়..