সকাল থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। জানালার থাইগুলো একটু সরিয়ে দিতেই বৃষ্টির শব্দটা অনেকটা পরিস্কার হল। একটু ভালভাবে তাকাতেই বুঝলাম এটা সাদা মেঘা বৃষ্টি। কখন শেষ হবে তা বলা যাবে না। এধরনের বৃষ্টি এই যান্ত্রিক শহরে আমার কাছে খুবি বিরক্তিকর। না ভালমত বৃষ্টির পানিতে ভেজা হয়, না এর কোন তৃপ্তি। তবে এরকম বৃষ্টিমুখর দিনে গ্রামের বাড়িতে ভুনা খিচুড়ি সাথে ডিম ভাজি নয়তো মাংস ভুনা যেন অমৃত। তবে এই যান্ত্রিক শহরে এই বৃষ্টি কেবলই রাস্তায় কাঁদা বাড়িয়ে চলাচলে বেঘাত ঘটায়।
বৃষ্টির কারনে এতটা ঘুমিয়ে ফেলেছি যে অফিসের সময় পেড়িয়ে গেছে। তাই ভাবলাম আজ অফিসে যাব না। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার সময় সকালের নাস্তাটা বাইরেই খেয়ে যাই। কিন্তু আজ সেটা হল না বলে একটু একটু খিদেও পেয়েছে। কিন্তু এখন রান্না করার কোন ইচ্ছে নেই আর মুল কথা হল রান্না করার জন্য বাজারও কিছু নেই। আর এদিকে বৃষ্টির কারনে বাইরেও যেতে ইচ্ছে করছে না। আজ যদি একটা বউ থাকতো তাহলে এসব নিয়ে চিন্তাই করতে হত না। এসব ভাবতেই মনে হল মামা বলেছিল, আমাদের বংশে ত্রিশের আগে বিয়ে নয়। এটা শুনে মনে মনে বলছিলাম, এত বয়সে বিয়ে করাটা কি খুব জরুরী? অনেকটা বুড়ো বয়সে ভীমরতি নয় তো? ঠিক তখনি দরজায় কে যেন দড়জায় কড়া নাড়ল।
আমি ভাবলাম এই সাত সকালে আবার কে এলো। আরও একবার কড়া নাড়লে আমি বলে উঠলাম, কে? ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো, বাবা মামুন একটু দরজাটা খোল তো। বুঝতে পারলাম খালাআম্মা মানে বাড়িওয়ালী এসেছে। আমি ঝটপট উঠে বিছানা বালিস একটু গুছিয়ে দরজা খুললাম। আসেন খালাআম্মা ভেতরে আসেন। উনি ভেতরে এসে আমার কোনমতে গোছানো রুমটা দেখে একটু হেসে বললেন, এবার বিয়েটা করে নিলেই তো পার। তারপর হটপটের বাটিটা টেবিলে রেখে বললেন, খিচুড়ি রেধেছি, গরম আছে খেয়ে নিও। আমি বললাম, জি খালাআম্মা এতো কষ্ট করার কি দরকার ছিল? উনি বললেন, এখানে কষ্টের কি আছে? বাসায় রেধেছি তাই তোমার জন্য নিয়ে এলাম।
আর আজকে তো অফিসে যাবে না মনে হচ্ছে। আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম, না আজকে তো যেতে পারব না। তখন উনি বললেন, তাহলে দুপুরে খাওয়ারটা আমাদের ফ্লাটেই খেও। আমি শুধু বলতে যাব যে না খালাআম্মা আমি দুপুরে বাইরেই খেয়ে নেব, কিন্তু তার আগেই খালাআম্মা বলল, বাইরে থাকবে ওখানেই খেয়ে নেবে এটা বলে অজুহাত দেওয়া বাদ দাও। আর আমি মনে হয় খুব একটা খারাপ রান্না করি না। তাই সময় মত চলে আসবে। আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। আসলে এই বাড়ির মালিক আমাকে কেন জানি একটু কমবয়সী বাচ্চাটাইপ মনে করে। ছয়তলায় একটা চিলেকোঠার রুমে থাকি আমি। প্রায় তিনবছর ধরে এখানে ভাড়া থাকি আমি।
এতকিছু বলার পর মনে পড়ল যে খালাআম্মার দেওয়া গরম খিচুড়ি ঠান্ডা হওয়ার পথে। খিচুড়ি খেয়ে আজ অনেকদিন পর বাড়ির রান্নার কথা মনে পড়ল। একেই তো গ্রামের বাড়ি যাওয়াই হয় বছরে দুই থেকে তিন বার। ওই কিছুদিন থেকেই মায়ের হাতের রান্না আর আদরগুলো নিয়েই সারাটাবছর কাটিয়ে দিতে হয়। তবে আমি অবশ্য অন্য একটা পথ বেছে নিয়েছি। তাই এখন খুব একটা খারাপ লাগেনা। এদিকে খালাআম্মার কথা মনে হতেই ভাবলাম, আজ এতো খাতিরদারী কেন করছেন উনি? উনার তো কোন মেয়ে নেই যে আমার গলায় ঝুলাবেন। তাছড়া উনাদের কিছু দরকার হলে তা আমি এমনিতেই এনে দেই। তাহলে আজকে আবার সকালে খিচুড়ি আর দুপুরে নিমন্ত্রন কি জন্য? কোন কিছুই ভেবে পেলাম না তাই রুমে বসে নাটক দেখে কাটিয়ে দিলাম সময়টা।
দুপুরে খেতে গেলাম খালাআম্মার বাসায়৷ অনেক কিছু রান্না করেছেন উনি। খাবার টেবিলে বসে বললাম, এত কিছু রান্না করেছেন কেন খালাআম্মা? কেউ আসবে নাকি? উনি বললেন, তোমার জন্যই রেধেছি। কখনও তো ভালভাবে তোমাকো খাওয়াতে পারিনি তাই আজ একটু করলাম আরকি। কি হল, বসে আছো কেন? শুরু কর? আমি জি খালাআম্মা বলে বললাম, আংকেল কে দেখছিনা। উনি বললেন, তোমার আংকেল গোসলে আছে। আমি বললাম, আংকেল আসলে আপনিসহ একসাথে খেতে পারতাম।
একটু অপেক্ষা করি নাকি? খালাআম্মা যেন একটু মলিন হয়ে গেলেন। আস্তে করে বললেন ঠিক আছে তুমি ততোক্ষনে ড্রয়িং এ বসে পেপার পড়। আমিও উঠে ড্রয়িং এ চলে এলাম। একটু পরে আন্টি একটা লাগেজ আমার সামনে নিয়ে এলেন। লাগেজটা একপাশে রেখে বললেন, খাবার টেবিলে এসো, তোমার আংকেল এর হয়ে গেছে। আমি উঠে আংকেলের পাশে এসে সালাম দিলাম। উনি সালাম নিয়ে বলল, তো বাবা মামুন, তোমার দিনকাল কেমন যাচ্ছে? আমি মৃদু হেসে বললাম, এইতো আংকেল ভালই। একটু পরেই খালআম্মা এসে আমাদের খাবার বেড়ে দিলেন।
আমি খাবার খাওয়ার আগেই দেখলাম উনি দাড়িয়েই আছেন। তাই বললাম, খালাআম্মা আপনিও বসুন। আজ অনেকদিন পর দুপুরে এভাবে একসাথে খেতে পারছি ভেবেই ভাল লাগছে। উনি বললেন, তোমরা খাও আমি তোমাদের পরেই খেয়ে নেব। আমি বললাম, কেন খালাআম্মা, আমি আছি বলে কি একসাথে খাওয়া যাবে না? খালাআম্মার চোখ দিয়ে দেখলাম একটু নোনা পানি গড়িয়ে পড়ল। আমি দাড়িয়ে উনার চোখে চোখ রেখে বললাম, খালাআম্মা কোন সমস্যা হয়েছে কি? খালাআম্মা এবার একটু জোরেই কেঁদে ফেললেন। আমি উঠেই খালাআম্মার পাশে গিয়ে উনার দুকাধে হাত রেখে বললাম, আপনি কাঁদছেন কেন? আমি কি কিছু ভুল করেছি? এবার খালাআম্মা পেছনে ঘুরে জড়িয়ে নিয়ে আরও জোরে কাঁদতে লাগলেন। আমি অনেকটা দ্বিধায় পরে গেলাম।
আংকেল উঠে আমার কাধে হাত রেখে ফুপিয়ে কাঁদছেন। আমি কিছু বুঝতেই পারছিনা এই দুটি মানুষ কেন কাঁদছে? তাদেরকে আমি ধরে চেয়ারে বসালাম। তাদেরকে শান্ত করতে আমার চোখ দিয়েই কিভাবে যেন পানি গড়িয়ে পড়ল। একটু পরে খালাআম্মা একটু শান্ত হলেন। আমি বললাম, খালাআম্মা কিছু হয়েছে কি? আংকেল কোন সমস্যা হলে বলুন দেখি যদি আমি কিছু করতে পারি? আর আমি কি কোন ভুল করেছি? আংকেল চোখের পানিটা মুছে বললেন, আজ আমাদের একমাত্র সন্তান জিসানের জন্মদিন। তাই আজ….এটুকু বলে তিনি আর কিছু বলতে পারলেন না। কেঁদে ফেললেন আবারও। আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু আমি তো গত তিনবছর ধরে এ বাসাতেই আছি। আপনার ছেলেকে তো কখনও দেখলাম না আমি।
খালাআম্মা এবার বললেন, সে তার পোস্ট গ্রাজুয়েটের জন্য দেশের বাইরে যায়। যাওয়ার দিনে তাকে নিয়ে অনেক কান্না করি আমরা। কিন্তু ও চলে যাওয়ার পর প্রথম দিকে তাও কথা হত মাসে একবার। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে সে কোন যোগাযোগ করেনি আমাদের সাথে। এই পাঁচ বছরে আমরা এই দুটি মানুষ খুব কম সময়ই সুখের দেখা পেয়েছি। রাতে হয়তবা মাঝে মাঝে একসাথে খেতে বসি। কিন্তু কখনও নিজের চোখের পানি সাথে খাবার গুলো পানসে হয়ে যেত। আমি বললাম, আপনারা কি তার কোন খোঁজ নিয়েছিলেন জিসানের? আংকেল অনেক ক্লান্ত ও শীতল গলা নিয়ে একটা হাইনিংশ্বাস ছেড়ে বললেন, হ্যা নিয়েছিলাম। সে নাকি ওখানেই বিয়ে করে স্যাটেল হয়ে গেছে। আমাদেরকে জানানোর কোন প্রয়োজন মনে করল না। বিয়ে করেও অন্তত দুএকবার দেশে আসলেও তো আমাদের কোন সমস্যা হত না। তাকে আমরা এতো ভালবাসি, তাকে কি আমরা মেনে নিতাম না? কিন্তু নাহ।
সাদা চামড়া দেখেই সে বাঙ্গালীর ময়লা রংয়ের বাবা মাকেই এভাবে ভুলে গেল। খালাআম্মা এবার বললেন, একবার খুব করে জ্বর এসেছিল, জিসান তখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ত। সারারাত আমি আর ওর বাবা তার পাশে ছিলাম। জ্বরের প্রকোপে সে প্রলাপ বকছিল প্রায়। খুব জ্বরে যখন সে কেঁপে কেঁপে উঠছিল তখন আমরা দুজনি তাকে বুকে জড়িয়ে রাখছিলাম। সকাল হতে হতে জ্বরটা একটু কমে এলে সে চোখ খুলে আমাদের দেখে। দেখতে পেয়েই জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বলে, তোমরা আমাকে কখনও ছেড়ে যাবে নাতো। আমার তোমাদেরকে ছাড়া খুব ভয় করে। আমি ছেলের এই কথা শুনে হেসে দিয়ে বলি ধুর পাগল ছেলে! কোন মা বাবা তার ছেলেকে ছেড়ে কোথাও যায় নাকি? আমরা সবসময় তোর সাথে থাকব। কিন্তু এখন দেখ সেই নিজের ছেলেই আমার দিব্যি বাইরে একাই আছে। এখন খোকা আমার আর ভয় পায় না।
খালাআম্মা আর আংকেলের মুখে এসব শুনতে শুনতে কখন যে নিজের চোখেও একটু পানি জমে গেছে বুঝতেই পারিনি। খাবার সামনে খাবার টেবিলে বসেই এসব কথা হচ্ছিল। কেউ এখনও খাবারে হাত পর্যন্ত রাখে নি। আমি বললাম, যা হবার হয়ে গেছে। আপনারা আপনাদের ছেলের জন্য কখনও কষ্ট মনে রাখবেন না। এই কষ্টটাই আপনাদের ছেলের অনেক খারাপ কিছু করতে পারে।
হাজার হলেও তাকে আপনারা ভালবাসেন। আর যত খারাপ কাজেই সে করে থাকুক না কেন আমি তবুও বলতে পারি যে আপনারা তার ভালই চান। আল্লাহর কাছে তার জন্য সবসময় দোয়া করেন। নাহলে কি আর এতদিন পরেও তার জন্মদিনে এভাবে এতকিছু রান্না করেন? খালাআম্মা বলল, একটা কথা কি জান মামুন? এতদিন এই দিনে এ বাড়িতে শুধু দুটো মানুষের কান্নায় সময় পার হয়ে যেতো। তবে এসব রান্না শুধু তোমার জন্য করা। এতদিনেও কেউ কখনও তোমার মত বলেই নি যে আসেন খালাআম্মা একসাথে খাই। জিসান থাকাকালীন আমরা সবাই একসাথেই খেতাম। তাকে ঘিরেই আমাদের যত স্বপ্ন ছিল। কিন্তু ও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু যখন থেকে তুমি এ বাড়িতে এলে তখন থেকেই তোমাকে দেখছি।
আমাদের যখন যা দরকার ছিল তোমার দারা করিয়েছি। কিছু আনতে বললে তোমাকেই পাঠিয়েছি। তুমি কখনই না করনি। বরং যেদিন তোমার চাকরীতে প্রমোশন হল সেদিন তুমি আমাদের জন্য নিজেই বাজার করে এনে রান্না করে খাইয়েছিলে। তোমার সাথে আমাদের রক্তের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু তবুও এই দুটো মানুষের মনে এখন শুধু তুমিই আলো। কেন জানি তোমাকে আকড়ে ধরে আবারও বাঁচার তাগিদ পাই আমরা। তোমার তো অনেক মা। এই বেদনায় জর্জরিত মানুষটিকে কি তুমি তোমার মনে মা হিসেবে মেনে নিতে পারবে বাবা? আমি একটু অবাক চোখে তাকালাম উনাদের দিকে। বললাম, আমার অনেক মা মানে বুঝলাম না। খালাআম্মা বলল, আমরা জানি তুমি তোমার মাকে অনেক মিস কর। প্রথম প্রথম আসার পর অনেক সময়েই মন খারাপ থাকতো তোমার। তাই তুমি নিজের কষ্টকে হালকা করতে এখানেও বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে অনেক মা খুজে নিলে।
তাই বলছি, তুমি কি পারবে এই মাকেও তোমার মনে স্থান দিতে? একটু হেসে আবারও বললেন, এখানে মায়ের সাথে একটা বাবাও ফ্রিতে পেয়ে যাবে। আমি এবার আর ঠিক থাকতে পারলাম না। খালাআম্মাকে জড়িয়ে নিয়ে বললাম, মা, আমিতো আছিই। আর কোন চিন্তা কর না। আংকেল এবার পেছন থেকে আমার কাঁধে হাত রাখলেন। একটু তার দিকে তাকাতেই দুজনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন অনেকখন। শান্ত হওয়ার পর আমি প্লেটে খাবার নিয়ে তাদের খাইয়ে দেওয়ার জন্য গেলাম। খাওয়ার মুখের সামনে ধরতেই খালাআম্মা মুখে হাসি আর চোখে কান্না নিয়ে প্লেট থেকে আমাকে এক লোকমা খাইয়ে দিলেন। এবার খালাআম্মাকে আমিও এক লোকমা খাইয়ে দিয়ে সবাই বিভিন্ন কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে খাওয়া শেষ করলাম।
খাওয়া শেষে খালআম্মা আর আংকেল আমাকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে এলেন। তারপর রেখে যাওয়া লাগেজটি খুলে অনেক গুলো শাড়ি দেখালেন। আমি বললাম এতো শাড়ি কেন? খালাআম্মা বললেন, তুমি যেই বৃদ্ধাশ্রমে মাঝে মাঝে যাও সেখানের সবাইকে এই শাড়িগুলো দিবে। কালকেই তোমার আংকেল সহ কিনেছি এসব। খালাআম্মার কথা শুনে অনেক ভাল লাগলো। এরপর তাদের সাথে অনেক কথা হল। বাসা থেকে লাগেজ নিয়ে যখন বের হচ্ছিলাম তখন খালাআম্মা আমার কপালে চুমু একে দিলেন। আমি আংকেল আর খালাআম্মাকে জড়িয়ে নিয়ে বললাম, আর কষ্ট পাবেন না। এখন তো আমি আছি। তখন তাদের মুখের একটু হাসি আমার নিরেট বুকটাতে অনেকটা প্রশান্তি ঢেলে দেয়।
এরপর বৃদ্ধাশ্রমে আসলাম। এসেই সবার সাথে কুশল বিনিময় করলাম। অনেকে এগিয়ে এসে আদর করে বলল, কিরে, আমাদের তো দেখি ভুলেই গেছিস। গুনে গুনে তিনদিন পর আসলি। এতো তারাতারী পর করে দিচ্ছিস আমাদের? আর এতোটা শুকিয়ে গেছিস কেন? আমি তাদের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। বললাম, পর করে দিলে কি আর আসতাম। তারপর তাদের কে লাগেজ থেকে শাড়িগুলো দিলাম। সবাই অনেক খুশি হল। এক মা বলল, তুই এতো কিছু দিচ্ছিস আর আমরা যে তোকে কিছু দিতে পারিনা বাবা।
আমি বললাম, তোমরা যা দাও সেটা যে আমি কাউকে দিতে পারি না মা। আর তাছাড়া এসব আমি দেই নি। তারপর তাদেরকে খালাআম্মার সব কিছু বললাম। এসব শুনে এক মা বলল, এর মধ্যে আবার বাড়িওয়লিকেও মা বানিয়ে নিয়েছিস। এখন তো আমাদের ভুলেই যাবি। আমি হেসে বললাম, ভুলে গেলে কি আর তোমাদের জন্য এসব পাঠাতো? তারপর আগের মতই তাদের সাথে আমার মা বাবার কথা বলতে লাগলাম। তারা কি করত না করত? এরকম অনেক কথার আড্ডায় তাদের সাথে কিছু সময় পার করলাম। একটু পরেই আবার মৃধা আপু চলে আসল। আসলে বয়সে সে আমার থেকেও ছোট তবে জিসান ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড ছিল। একটু অবাক হচ্ছেন তাইতো। হ্যা এই জিসানই হল খালাআম্মার ছেলে জিসান। আচ্ছা একটু ভেঙ্গে বলি।
জিসান ভাই ভার্সিটিতে আমার দুই বছরের সিনিয়র ছিলেন। তার সাথে অনেক ভাল সম্পর্ক ছিল আমার। অন্য আরেক ডিপাটমেন্টে পড়ত মৃধা আপু। অনেক ভাল বড় ভাই হিসেবে আমি তাকে একক ভাবে মানতাম। কিন্তু কথায় আছে না যে সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। তেমনটাই হয়েছিল কিছুটা। মৃধা আপুর সাথে সম্পর্কের ছয় মাসের মাঝে সে হঠাত ডিসিশন নেয় বাইরে যাবে। মৃধা আপু অনেক বুঝালেও জিসান ভাই তাকে বলে যে সে পোস্ট গ্রাজুয়েটের জন্য বাইরে যাবে। মৃধা আপুও কিছু বলেনি তখন।
কিন্তু মুলত সে দেশের বাইরে গিয়েছিল কিছু খারাপ লোকের প্ররোচনায়। তারা জিসান ভাইকে বলেছিল যে এটা ইমপোর্ট এক্সপোর্ট এর ব্যবসা। আজ খালাআম্মার কথা শুনে বুঝলাম বাসাতেও সে পোস্ট গ্রাজুয়েটের কথাই বলেছে। জিসান ভাই বাইরে গিয়ে প্রথম প্রথম ভাল মনেই কাজ করত ব্যবসার। কিন্তু কিছুদিন পরেই সে বুঝতে পারল যে এটা ব্যবসা নয় অনেক অপদ্রব্য পাচারের মত। এক দেশ থেকে অন্য দেশে দ্রব্য পাচারের মত একটা ধোকা। এসব জানার পর সে দেশে ফেরার জন্য অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু কোনমতেই সেই লোকগুলো তাকে আসতে দিচ্ছিল না। কিন্তু চুপিচুপি যখন পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে দেশে আসল তখন দেশিও ওই ধরনের লোকেরা তাকে দেশেই ধরে ফেলল। জিসান ভাইয়ের তখন কিছু করার ছিল না। আর ওই লোকেরা ভেবেছিল যে ভাই তাদের সবকিছু ফাস করে দেবে।
তাই ভাইকে তারা চাকু দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কোপ বসিয়েছে। একসময় ভাই নিস্তেজ হয়ে গেলে তারা মনে করে যে মারা গেছে। তাই রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে যায়। কিন্তু ভাই তখনও বেঁচে ছিল। পরে কিছু লোক তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে তার ফোন থেকে আমার ফোনে কল আসে। আমি তখনই হাসপাতালে গেলে সে আমাকে এসব বলে। আমি শুধু কাঁদছিলাম সেদিন। সেদিন আরও বলেছিল, তার বাবা মাকে যেন এসব না জানানো হয়। তাদের অন্য এমন কিছু বলি যেন তারা তাকে ভুলে যায়। আর বলে আমার মা বাবা কে একটু দেখিস। সে চায়নি তার বাবা মা জানুক যে তার ছেলে এসব খারাপ কিছু করেছে। ধীরে ধীরে দুটো হাত দিয়ে আমার হাত ধরে বলে, মৃধাকে তুই আর কিছু বলতে পারে নি। ভাইয়া তখনি মারা যায়।
জিবনে মানুষ ভুল করে। কিন্তু কোন মানুষ যখন ভুল বুঝতে পেরে সেখান থেকে ফিরে আসে তখন সেই ভুলের দুনিয়া তাকে তিল তিল করে শেষ করে। জিসান ভাইয়াও ভুলের দুনিয়া থেকেই মৃত্যুর স্বীকার। খুব কেঁদেছিলাম সেদিন। তারপর থেকেই জিসান ভাইয়ার বাসায় চিলেকোঠার রুমে ভাড়া থাকি আমি। ভাইয়ার বন্ধুদের দিয়ে জিসান ভাইর মা বাবাকে জানাই যে ভাই বিয়ে করে বাইরেই স্যাটেল হয়েছে। কি করে এক সন্তানকে তার মা বাবার কাছে খারাপ হতে দিই। তখন থেকেই তাদের একটু দেখাশোনার চেষ্টা করি। তবে আমার কাছে ভাইয়া একজন ভাল মানুষ হিসেবেই পরিচিত থাকবে। তাই তাকে আমি কখনই কারো কাছে খারাপ ভাবে তুলতে চাই না। যাক মৃধা আপু এসেছে একটু কথা বলি।
– আপু কেমন আছেন?
– ( একটু তাকিয়ে থেকে) এইতো আছি। কখন এসেছো?(মৃধা)
– এইতো ঘন্টাখানেক হবে।
তারপর তিনি সবার সাথে অনেক কথা বললেন। এরপর আমি বৃদ্ধাশ্রম থেকে বিদায় নিয়ে একটা বীজের উপর ল্যামপোস্টের নিচে দাড়িয়ে অসীমের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাবছি মানুষের জিবন কতটা অসহায় তাই না? কেউই জানেনা সামনে জিবনে তাদের কি হতে চলেছে। আজ অনেকদিন পর জিসান ভাইকে একটা কথা খুব বলতে ইচ্ছে করছে। তুমি কেন এভাবে শেষ হয়ে গেলে? তোমার যাওয়াতে এতটা কেন কষ্ট পাচ্ছি আমি? তুমিতো আমায় অনেক দিয়েছো। এই ব্যস্ত শহরে এরকম অনেকেই আছে যাদের মা নেই বাবা নেই। তবে তুমি আমাকে এতোটা সৌভাগ্য কেন দিলে? আমার যে অনেক মা। আমার যে অনেক প্রশান্তি। আমি যে অনেক মা বাবার কোলে মাথা দিয়ে সুখের কান্না কাঁদতে পারি। তুমি কি পারতে না এসবের অংশীদার হতে। আজও যে তোমার মা বাবা তোমার চলে যাওয়া পথের পানেই চেয়ে আছে, তুমি ফিরে আসবে বলে। এসব যখন ভাবছিলাম তখনি চোখ দিয়ে কিছুটা পানি গড়িয়ে পড়ল। আর দেরী করলাম না।
বাসায় এসে রুমে ঢুকেই আমি অবাক। রুমে একটা কিছুও নেই। পিছনে হঠাত খালাআম্মা বললেন আজ থেকে আমাদের ফ্লাটেই থাকবে। আমি বললাম এসবের কি দরকার ছিল খালাআম্মা। উনি একটু অভিমান নিয়ে বললেন, আজ দুপুরেই মা বলেছো। আর এখনই প্রত্যাখ্যান করছো? তারপর তিনি অভিমান করেই নিচে চলে গেলেন। আমি একটু পরে খালাআম্মার বাসায় এসে দেখলাম দরজা খোলাই আছে। সামনে ছোফায় খালাআম্মা বসে আছেন। আমি পাশে গিয়ে বসে তার কোলে মাথা রেখে বললাম, মা ভুল বুঝোনা। আমি কখনই তোমাদের ছেড়ে যাব না। আমি জিসান তো হতে পারব না তবে কোন ছেলের থেকেও কমতি করব না। খালাআম্মা মাত্র তার হাত দিয়ে আমার চুলগুলো নাড়তে লাগলেন। গালে হঠাত এক ফোটা পানও গড়িয়ে পড়ল।
আমি বুঝলাম উনি কাঁদছেন। আমিও কাঁদছি। ভালবাসাটা একটা ছেলের জন্য তার মায়ের থেকে এটা বুঝি আমি। একটু পরে উনি আমার রুম দেখিয়ে দিলেন। জিসান ভাইর রুমের পাশেই আমার রুম। তারপর আমি তাদেরকে বলে শুয়ে পড়লাম। রুমে শুয়ে ভাবতে লাগলাম, আমার মায়ের সাথে দুদিন হল কথা হয় নি। মা বাবা কি জানে আমি এখানে কতগুলো মা পেয়েছি। আর এদিকে মৃধা মেয়েটা বিয়ে করছে না কেনো? যদিও আমি তাকে সব সত্যিটা বলেছি। শুধু শেষের জিসান ভাইর ওই অসম্পুর্ন কথাটা শুনে ও কেঁদে ফেলেছিল। মৃধাকে তুই… আচ্ছা ভাইয়া কি বলতে চেয়েছিল? সেকি চেয়েছিল মৃধা আর আমি একত্রে! না কি ভাবছি আমি এসব। এতসব ভাবতে ভাবতেই মনে হল আমি তাকে আপু বলছি না। কেন এমন হচ্ছে আমার। আমি কি তাকে? না এটা সম্ভব না।এসব কিছু ভাবতেই আমি ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালবেলা উঠে আমার ফোনটা খুজলাম কিন্তু পেলাম না। দেখলাম বাইরেই টি টেবিলে পরে আছে। ফ্রেশ হয়ে খালাআম্মার হাতের নাস্তা খেয়েই অফিসে গেলাম। অফিস থেকে যখন বাসায় এলাম তখন বাইরে থেকে শুনলাম খালাআম্মা কার সাথে যেন গল্প করছে। ভেতরে ঢুকতেই দেখলাম মা বাবা এসেছে আর খালাআম্মা আংকেলের সাথে গল্প করছে। আমি অবাক হয়ে যখন তাকিয়ে আছি তখন মা আমার দিকে বলল, এতগুলো মা পেয়েছিস আর তাই আমাকেই ভুলে গেলি। আমি তাকে জড়িয়ে নিয়ে বললাম, সন্তান মাকে ভুলে যেতেই পারে তবে মা কি সন্তানকে ভুলতে পারে বল? দুদিন ধরে তো আমার একটা খোজও নেও নি।
মা বলল, এজন্যই তো তোর এখানে অনেক মা রয়েছে। খালাআম্মা এসব শুনে হেসে ফেললেন। তারপর সবাই বসে গল্প করলেন। খালআম্মা মাকে কালকের কথা বললেন। কিভাবে আমি অগোছাল হয়ে থাকি। এসব বলতে বলতেই বললেন, এবার তবে আমরা সবাই মিলে মামুনের বিয়ে দিয়ে দেই। আমি তখন বললাম, না না। সবে মাত্র এতোগুলো মাকে পেয়েছি। এদের ভালবাসা থেকে বন্ঞ্চিত হতে চাইনা এতো জলদি। তখন খালাআম্মা বললেন, মায়ের ভালবাসা কি কখনও কম হয় রে পাগল। কোন সন্তানই ওটা থেকে বন্ঞ্চিত হয় না। তখন আমি বললাম, তাহলে আমার বাকি মায়েরা বৃদ্ধাশ্রমে কেন? তাদের ছেলেরা কেন তাদের ভালবাসা থেকে বন্ঞ্চিত? এই কথায় সবাই চুপ হয়ে গেলেন। বাবা বলল, দুনিয়াতে সবাই যদি মানুষ হত তাহলে এতো কিছুই হত না।
কেউ অমানুষ হয়েই চলে, আবার কেউ অমানুষ হয় এই দুনিয়ার বাস্তবতায়। তবে তোর মায়েদের জন্য তো তুই আছিস তাই না। ভাল লাগলো বাবার কথাটা। তখনি মোবাইল বেজে উঠলো। দেখলাম মৃধা আপু ফোন করেছে। ধরে বললাম, কেমন আছেন? ওপাশ থেকে উনি বললেন, আজ আপু বললে না যে? আমি উনার কথায় থেমে গেলাম। আসলে অনেক দিন ধরেই বলতে চাচ্ছি মৃধা আপুকে যে ভাইয়া মনে হয় চেয়েছিল যে তুমি আমি একসাথে জিবন পার করি। কিন্তু কোনভাবেই বলতে পারিনি। ভেবেছি যদি আমাকেও খারাপ ভেবে নেয় আপু। তবে নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না আমি। অনেকক্ষন চুপ করে আছি দেখে ওপাশ থেকে উনিই বললেন, বাসা থেকে ছেলে দেখা শুরু করেছে। তুমি কি এখনও কিছু করবে না? আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, আমি কি করব? আর বিয়ে হবে আপনার এটা তো ভাল কথা।
মনে মনে ভাবছি কি বলছি এসব আমি? আমি একটা গাধা। সরি গাধাকেও অপমান করা হচ্ছে। আমি একটা ইদুর। এরপর কিছু না ভেবেই আমি ফোনটা কেটে দিয়ে বন্ধ করে রাখলাম। আমি চাইনা জিসান ভাইর দেয়া কথা ফেলতে। তাকে আমি এরকমভাবেই দেখে রাখতে চাই। তাকে ভালবাসার কথা বললে যদি সে আমাকে ভুল বোঝে। তাই এসব না হওয়াই ভাল। হঠাত মা বলল, কিরে কার ফোন? খালাআম্মা বলল, আমার নতুন বউমার নাকি? আমি একটু হেসে বললাম, কি যে বল না তোমরা? তারপর ফ্রেশ হয়ে তাদের সাথে নাস্তা করলাম। মুখচোখের অন্তরালে এরা জানেই না ভেতরের অনেক কথা। বলতে গেলে খালাআম্মা আংকেল এর জানেই না যে তাদের সন্তান জিসান ভাই আমার কত আপন ছিল। তার জন্যই আজ আমি এখানে। অনেকবার বলতে যেয়েও পারিনি। কারন আমি যে কথা দিয়েছিলাম। তবুও তাদের হাসিমুখ গুলো দেখতে খারাপ লাগছে না। চলুক না এভাবেই। জিসান ভাইও নিশ্চয়ই তার বাবা মাকে এরকম হাসি খুশিই দেখতে চেয়েছিল।
নাস্তা শেষে রাতে বাইরে বের হলাম। ওই ব্রীজের উপর ল্যামপোস্টের নিচে। তবে ল্যামপোস্ট এর বাতিটা আজ নেভানো। সামনে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সামনে তাকিয়ে শুধু অসীমের দিগন্তটাকে অনুধাবন করতে পারছি। আশে পাশে তাকিয়ে কেউ নেই দেখলাম। তখনি একটু জোরেই বললাম, জিসান ভাই আমি মনে হয় আপনার কথা রাখতে পেরেছি। পেরেছি আপনার মা বাবাকে খুশি রাখতে। পেরেছি মৃধাকে… মানে তুমি হয়ত চেয়েছিলে ও আর আমি একসাথে জিবনটা কাটাই কিন্তু তোমার কথা রাখতে হলে আমি যে এটা করতে পারব না। সে যদি ভুল বুঝে আমায়। তবে তোমার কথারাখতেই আমি তৎপর। এই ল্যামপোস্ট যে তোমার আমার কত ভাল মুহুর্তের সঙ্গী তা কেবল আমিই জানি। কত সময় দুকাপ চায়ের হাসি আড্ডায় মেতেছি দুজন।
একটা দিনও যেন পুর্ন হত না এখানে না আড্ডা দিলে। এই মুহুর্তে তোমাকে কতটা মিস করছি বলে বোঝাতে পারব না। বলেই চোখ বন্ধ করে অনুভব করছি বাতাসটাকে। এর একটু পরেই পাশে থেকে কে জানি বলল, জিসান মনে হয় ওটাই চেয়েছিল। তুমি আমি একসাথে জিবনটা কাটাই। আর এখন আমিও এটাই চাই। আমি লক্ষ করলাম পাশই কে যেন দাড়িয়ে এসব বলছে। হঠাত করে ল্যামপোস্টের আলোটা জলে উঠলো। দেখলাম মৃধা সামনের দিগন্তে চেয়ে আছে। আমার কেমন যেন একটা শিহরন বয়ে গেল। হঠাত তার দৃষ্টি আমার দিকে পরল। আমি মাথা নিচু করে নিলাম। আমার সামনে এসে সে ব্রীজের রেলিংয়ে হাত দিয়ে দারালো। আমিও একটু পরে এভাবেই দাড়ালাম।
একটু পরেই দেখছি তার একটা হাত আমার হাতের দিকে আসছে। একসময় দেখলাম আমার হাতের পাঁচটা আঙ্গুলের মাঝে তার পাঁচটা আঙ্গুল ঢুকে যাচ্ছে। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। মৃধা বলল, আমি জোর করে কারও ইচ্ছে পুরন করতে চাই না। যদি তুমি আমাকে ভালবেসে এটা চাও তবে এই হাতটা আর ছেড়ে দিও না। আর যদি ভাল না বাসো তবে হাতটা ছাড়িয়ে নিও। একটু পরে আমি আস্তে করে হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম। দেখলাম মৃধার মাথাটা একটু ঝুকে গেল নিচের দিকে। আমি পেছন কয়েক পা পিছিয়ে আবার সামনে এসে বললাম, আসলে ল্যামপোস্ট বাতিটা কে জালালো দেখতে গিয়েছিলাম। এখন বাতিটা বন্ধ থাকলে একটু বেশিই ভালবাসতে পারতাম।
একথা বলতেই সে আমার দিকে কান্নামুখে তাকিয়ে দৌড়ে এসে বুকে ঝাপিয়ে পড়ল। আমি এখন হাসছি। দুহাত দিয়ে জড়িয়ে নিয়ে মনে মনে ভাবছি, জিসান ভাই তুমি আমাকে সবটা দিলে, শুধু আমি তোমাকে পেলাম না। তবে তেমার কথাগুলো রাখার আজিবন চেষ্টা করব। তুমি থাকলে আমিতো এতো মায়ের ভালবাসা পেতাম না। তবে কেন জানি মনে হচ্ছে তুমি বেঁচে থাকলে এরকম না হলেও এর থেকে ভাল কিছু হত। আবার হঠাত ল্যামপোস্ট এর বাতিটা নিভে গেল। মৃধা আরেকটু শক্তভাবেই জড়িয়ে ধরল। আর আমি তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে দিগন্তে তাকিয়ে ভালবাসার জোয়ার দেখছি। যেই জোয়ারে হাবুডুবু খেতেই অনেক বেশিই ভালো লাগে।
আজ এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে জোৎস্না তুমি চাইতেই পার, না হলে তোমার মুখের হাসিটা দিয়ে আমায় একটু জড়িয়ে ধরো। ছেড়ে যাব না যতদিন বেচে আছি ভালবাসব প্রানভরে তোমায়, কোন জোৎস্না রাতে একা না হেঁটে সঙ্গে নাহয় নিও আমায়।
বিঃদ্রঃ আজ কেন আমাদের মায়েরা বৃদ্ধাশ্রমে? ছোট থেকেই তো তারা তাদের সন্তানকে কত যত্ন করে ভালবাসা দিয়ে মানুষ করেছে। তবে কেন সেই সন্তানেরা আজ তাদের অবহেলা করেছে? এসবের জন্য আসলে সমাজ দায়ী নয়। দায়ী হল সমাজে বসবাসকারী কিছু নিচু মন মানসিকতার পশু গুলো। এত বড় অট্টালিকায় নিজের মায়ের জায়গা যে দিতে পারে না সে কিভাবে নিজেকে মানুষ মনে করে। তাই বলছি, আসুন আমরা নিজে সচেতন হয়ে এসব নির্মুল করি..