শুকনো পাতা

শুকনো পাতা

বহুত কষ্টে আব্বার কাছ থেকে বিশ টাকা নিয়ে মোবাইলে রিচার্জ করছি। অনেকদিন আলেয়ার (আমার গার্লফ্রেন্ড) সাথে কথা বলিনা। মনডাধারকান ধারকান শুরু করছে। তাই ভাবলাম একটুকথা বলা দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ।আলেয়ার নাম্বারে কল দিমু তখন-ই রুমেভাতিজার আগমন। আমি বললাম….

–কিরে কিছু কইবি?
-হ।
–ক কি কইবি?
-তোমার মোবাইল দেও?
–ক্যান?
-শান্তির(ভাতিজার গার্লফ্রেন্ড) লগে কথা কমু।
–তাই আমার কি?
-তোমার মোবাইল দেও?
–না দিমুনা যা, আগে আমি কথা বলে নেই।
-না আগে আমি কমু।
–মোবাইল কি তর বাপের?
-না,তোমার।
–তাইলে, এত্ত প্যাচাল পারোস ক্যা?
-না দিলি ভেজাল আছে কিন্তু।
–কিসের ভেজাল?
-কাক্কুডা ভালো, মোবাইল দেও?
–কইলামতো দিমু না যা ভাগ।
-আইচ্ছা গেলাম। তয় আমারও দিন আছে হুউউ।

এই বলে ভাতিজা চলে গেলো। আমি কল দিমু আবার পেটের মধ্যে চাপ শুরু হইছে। তাই চাপ কমানোর জন্যে টয়লেটে গেলাম। টয়লেট থেকে বের হয়ে দেখি বিছানায় মোবাইল নাই। বিছানার চাদর, তোষক, বালিশ উল্টিয়ে পাল্টিয়ে অনেক খুজলাম কিন্তু মোবাইল পেলাম না। দৌড়ে ভাতিজার কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি ভাতিজা আমার ভয়াতি গান গাচ্ছে। আমি বললাম….

–কিরে আমার মোবাইল কই?
-মোবাইলে প্রসাব করছি।
–মানে…? (ভ্রু-কুঁচকে)
-তুমি মোবাইল দেওনাই, তাই তোমারমোবাইলের মধ্যে প্রসাব করছি।
–এহন মোবাইল কই?
-বদনার মধ্যে সাতার কাঁটছে।
–তাড়াতাড়ি মোবাইল নিয়া আয় কইতাছি?
-কইলামতো মোবাইলে প্রসাব করছি। মোবাইল নষ্ট হইছে।
–আমি কিচ্ছু বুঝিনা,তুই এহনি আমার মোবাইল দে। নইলে থাপড়াইয়া তর কান লাল করমু।আমার কথা শুনে ভাতিজা উঠে চলে গেলো।তারপর বদনা নিয়া আমার কাছে এসে বলল….

-এই যে বদনার ভিতরে তোমার মোবাইল।

আমি তাকিয়ে দেখি বদনার মধ্যে পানি। অবশ্য পানি বললে ভুল হবে কারন বদনায় ভাতিজাপ্রসাব করছে আর সেখানে মোবাইল ডুবাইছে। আর আমার মোবাইল বাবাজি সেখানে আরাম মতো সাঁতার কাঁটছে। মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে। বললাম….

–এইডা কি করছোস,মোবাইল এই যায়গায় ক্যা…?
-কইলামতো প্রসাব করছি।
–মোবাইল দেই নাই বলে প্রসাব করবি? (অবাক)
-আমার রাগ উঠছিলো, ভাগ্য ভালো তোমার বিছানায় প্রসাব করি নাই।

অমনি ভাতিজারে দিলাম দৌড়ানি। ভাতিজাও দিলো দৌড়। আব্বাজান চেয়ারে বসা ছিলো। ভাতিজা গিয়ে সরাসরি আব্বারউপরে হুমড়ি খেয়ে পরলো। আব্বাজান চেয়ার থেকে ছিঁটকে পরে গেলো। ভাতিজা আব্বার শরীরের উপরে শুয়ে আছে। আমি দৌড় সামলাতে পারলাম না। সরাসরি ভাতিজার উপর হুমড়ি খেয়ে পরলাম। আব্বাজান ফ্লোরে শুয়ে আছে। তার উপরে ভাতিজা, ভাতিজারউপরে আমি শুয়ে আছি। আব্বাজান নিচেথেকে চিৎকার করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা। তার চোখ, মুখ লাল হয়ে গেছে।

অস্ফুট সুরে বলছে “উরি পোলা, উরি নাতি…উরি পোলা, উরি নাতি, তাড়াতাড়ি উঠ,আমার পেট গেলো ফাটি আইয়াম্মাআআ..কুককুক আমি তাড়াতাড়ি করে ভাতিজার উপর শোয়া থেকে উঠলাম। কিন্তু ভাতিজা উঠলো না। ও আব্বাজানের পেট জড়িয়ে ধরে ফ্লোরে শুয়ে আছে। মাঝে মাঝে আব্বার পেঁটে চাপ দিচ্ছে। আব্বাজান ভাষা হারিয়ে ফেলছে। মনে হচ্ছে হাই প্রেশারে চাপ দিছে। ভাতিজা পেঁটে চাপ দিচ্ছে আর বলছে “দাদার পেঁটে দিলাম চাপ দাদা কাক্কুর বাপ। দাদা আমারে কইরো মাপ তোমার পোলা যে আমার বাপ। দাদার পেটে বাচ্চা আমি খামু লাচ্চা। আহা দাদা…ওহো দাদা আমি একটানে ভাতিজাকে আব্বার উপরথেকে উঠালাম। আব্বাজান শোয়া থেকেউঠে সমানে হাঁপাচ্ছে। রাগে তার চোখ লাল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচেগেছেন। ভাতিজা বলল….

–থাতু আমার কোন দোষ নাই, খাক্কু তোমার পেঁটে চাপ দিতে কইছে। ভাতিজার কথা শুনে টাস্কি খাইলাম। বলে কি..? আমি বললাম….
-ঐ আমি তরে কখন চাপ দিতে বললাম?
–দেখছো থাতু এখন খাক্কু মিথ্যা বলতেছে। ইহহহহ….
-ঐ থাপড়া দিয়া কান ফাটামু,আমি তরে কখন…
–চুপ কর তুই। এখনি আমার বাসা থেকে বের হয়ে যা। (আব্বাজান)
-আসলে আব্বা হয়ছে কি….
–গেট লস্ট।
-আব্বা সরি…আমি কিচ্ছু বলি নাই।
–তোর কারণে দিনদিন শান্ত শয়তানের ওস্তাদ হচ্ছে। তুই এই মুহূর্তে আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যা। আব্বাজান আমাকে তার বাসা থেকে বের করে দেননি, শাস্তি দিয়েছে। শাস্তি টা হলো আমাকে গরু দিয়ে হাল চাষ করতে হবে।

জীবনে হাল চাষ করিনাই। তাও আবার গরু দদিয়ে। কি আর করার! গরু নিয়ে গেলাম খেতে।সাথে ভাতিজা আছে। আমার কাজের তদারকি করার জন্য আব্বাজান তারে পাঠাইছে। গরুর কাধে জোয়াল দিয়ে লাঙ্গল বাধলাম। কিন্তু গরু আগাচ্ছে না। হায়রে আব্বাএর চাইতে মনে হয় তোমার বাসা ছারাইভালো ছিলো। অবশেষে হালচাষ! হে মাটিতুম ফাক হো, ম্যা গর্তে ডুকুঙ্গি। এ জীবন মুইনেহি রাহুঙ্গি। গরু আস্তে আস্তে যাচ্ছে। আমি লাঙ্গল ধরে আছি। লাঙ্গল সমানে কাঁপছে। আমি পেশাদার লাঙ্গল চাষাদের মতো বলছি “বাহ বাহ, ঠাঠা ডাইনে ডাইনে,আরে পাপ্পাহ ডানডান..আরে যাইনিইই….” কিন্তু নাহ! কাজ হচ্ছে না। গরু যাচ্ছে না। ভাতিজা এসে গরুকে খোঁচান শুরু করলো। আমি বললাম….

–কিরে তুই গরুরে খোঁচাশ ক্যা..?
-তাইলে গরু যায় না ক্যান?
–যায় না,না যায় হেইডা আমি বুজমু তর কি?
-আমার কিছুইনা, তয় আমি খোঁচামু।
–থাবড়া খাবি। অমনি শান্ত গরুরে জোরে খোঁচা দিলো। খোঁচা খেয়ে গরু দিলো দৌড়।
-এইডা কি করলি?
–খোঁচা দিছি।
-ক্যান….?
–আগে গরু ধরো।

আমি গরুর পিছে পিছে দৌড়। গরুর সাথে কি আর দৌড়ে পারা যায়! একবার ডান দিকে দৌড়একবার বাম দিকে দৌড়। আমার পিছে ভাতিজাও দৌড়। কিন্তু ও গরুকে তাড়াচ্ছে। অবশেষে অনেক কষ্টে গরুর নেচ ধরতে সক্ষম হলাম। তবুও গরুর দৌড়ানি কমছে না বরং আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাতিজা গরুকে বলছে “দে দৌড়, পাগলা দে দৌড়.. হুররেএএএ..হুউউউ দে দৌড়” গরু তার ইচ্ছামত দৌড়। আমিও নেচ ধরে গরুর সাথে সাথে দৌড়।

–ভাইরে খারা।
-হাম্বাআআ…
–ওরে ভাই…প্লিজ ভাই। খালু খারাও না ক্যারেএএএ….

সাথে সাথে গরু দিলো ডানে দৌড়। আমি না পেরে গরুর নেচ দিলাম ছেড়ে। দৌড়ে গিয়ে গাছের সাথে বারি খেয়ে খেতের আইলে কাইত হয়ে পরে গেলাম। উরিম্মাআআ..কুউউউউ। ভাতিজা গরুর পিছে পিছে ‘হুররে হুররে’ বলছে আর দৌড়াচ্ছে। গরুও সমানে দৌড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। আমি খেতের আইলে বসে পরলাম। শার্ট ছিঁড়ে গেছে। কপাল ফুলে উঠছে। পা কয়েক জায়গায় কেঁটেছে। সূর্য মাথার উপরে। প্রচুর গরম লাগছে। সূর্যের কড়া রোদের আলোর নিচে বসে ভাতিজার উপর থাকা রাগ কমানের বৃথা চেষ্টা করছি। একটা মাত্র ভাতিজা। পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। ল্যাংড়িয়ে ল্যাংড়িয়ে বাসায় গেলাম। আব্বা আমাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন, বললেন….

-কিরে তোর অবস্থা কেনো? ল্যাংড়াচ্ছিস ক্যানো?
–…..(চুপ)
-কিরে কি হয়েছে? শান্ত কোথায়?
–দৌড়াচ্ছে।
-মানে?
–গরুর পিছে পিছে দৌড় দিছে।
-ভালো করে বল।
–শান্ত গরুরে খোঁচা দিছিলো,গরু দৌড় দিছে সাথে শান্তও দৌড় দিছে। এখন তাদের প্রতিযোগিতা চলছে।
-আর তুই?
–গরুর নেচ ধরে দৌড় দিছিলাম। পরে খেতের আইলে কাইত হয়ে পরে গেছি।
-বাসা থেকে বের হয়ে যা।
–আব্বা….? (করুণ দৃষ্টিতে)
-গেট লস্ট।
–ও আব্বাগো….?

মুখের উপর আব্বা ঠাসসস করে বাসার দরজা বন্ধকরে দিলেন। বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম। ল্যাংড়া পা,ফোলা কপাল কাটা গাল নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। বর্তমানে পৃথিবীতে একমাত্র অভাগা আমি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত