মেঘাচ্ছন্ন

মেঘাচ্ছন্ন

আকাশে কালো ঘন মেঘ বিরাজ করে আছে।বইছে শীতল হাওয়া। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির সে মনোরম দৃশ্যে মুগ্ধ হতে ব্যস্ত নিধী। কিছুক্ষণ বাদে দুই কাপ কফি হাতে উপস্থিত হলো গালিব। নিধী উপ্পস্থিতি টের পেয়ে পেছন ঘুরে এক কাপ কফি নিয়ে বললো “এই মনে আছে?” গালিব বড় বড় চোখ করে জিজ্ঞাসা করলো “কি?”

– প্রথম তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভেজার কথা।
– না।
– ওহ্![অভিমানী কণ্ঠে]
– সেদিনও আজকের মতন আকাশে মেঘ ছিলো।
– হুহ্।

– হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছিলো।তুমি খুশি হয়ে নুপুর পায়ে ঝুমুরঝুমুর করতে করতে ছাদে চলে গেলে।নুপুরের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো আমার।রাগে আমিও দৌড়ে ছাদে গেলাম।তারপরি মুগ্ধতা।তুমি পুরো ছাদ জুড়ে নাচছো।এপাশ থেকে ওপাশ,ওপাশ থেকে এপাশ।মুখে তোমার চিতল হাসি।দেহ জুড়ে উল্লাস।কত না খুশি লাগছিলো তোমায়।যেমনটা লাগে খাঁচা থেকে মুক্ত করে দেওয়া পাখিকে।

– হুম।
– হঠাৎ আমায় দেখলে।থেমে গেলো তোমার ছন্দ,থেমে গেলে তুমি।লজ্জা মিশ্রিত চোখে চেয়ে রইলে আমার দিকে।আমি তখন ইচ্ছে করে হেসে দিলাম।দেখতে ইচ্ছা করছিলো আরো বেশি লজ্জা পেলে তোমায় কেমন লাগে।হাসি দেখে তুমি পুরো লাল হয়ে গেলে,যেমনটা নব বধু বাসর ঘরে প্রবেশের সময় লাল হয়ে থাকে।

– তারপর!
– দুহাতে মুখ ঢাকলে।অভূত দেখতে লাগছিলো তোমায়।যেন কোন সত্যিকারের বাংলার রূপসী সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
– তারপর!
– কেটে গেলো অনেকখানি সময়।এর মধ্যে লজ্জার রেশ তুমি কাটিয়ে উঠেছো।হয়তো মনে তৈরী করেছিলে আমার প্রতি জেদ।তাইতো কাছে এগিয়ে এসে বললে!
– কি?
<সাত বছর আগে>
– এই ছেলে!এভাবে এসে দাঁড়িয়ে থাকার মানে কি?
– আপনি যেভাবে ছাদ জুড়ে নৃত্য করছিলেন তাতে না দাঁড়িয়ে পারলামনা।
– আমার কাছে অনুমতি নিয়েছেন?
– কেন?
– সরাসরি নৃত্য দেখবেন আর অনুমতি নিবেন না?এটা কি টিভি পেয়েছেন!ইচ্ছে হলে অন করলাম দেখলাম অফ করে দিলাম।

– আপনি কি এটা আপনার রুম পেয়েছেন!পাবলিক প্লেসে নৃত্য করলে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক।
– মুখে মুখে তর্ক করছেন কেন?
– আজব!আপনি ঝগড়া করছেন কেন?
– কি বললেন!আমি ঝগড়া করছি?আজই আব্বুকে বলে আপনাদের বাড়ি ছাড়া করবো।
– ওহে ম্যাডাম!আমি আপনাদের কোন ভাড়াটিয়া না,ওকে।আমার আব্বু শেয়ারে কিনছে এই বাড়ি।
– ওহ্ মাই গড!আপনি লিমন আংকেলের ছেলে?
– আপনি তাহলে সাহিদুর আংকেলের!আংকেল কত ভালমানুষ,আপনি এরকম হলেন কিভাবে?
– মানে!কিরকম?
– খিটখিটে মেজাজের ঝগড়াটে।
– আপনার সাহস তো কম না।বান্দর ছেলে।
– নিজে পেত্নীর মতন দেখতে।ভূতে আপনায় দেখলে দৌড়ে পালাবে।
– নিজের চরকায় তেল দেন।কলা বাগানে গেলে বাগানের মালিক ভয়ে আপনায় বাগান দান করে দিবে।
– কাল থেকে বোরখা পরে বের হবেন।না হয় হার্টের রুগি গুলা মারা যাবে।
– আপনি প্লিজ একটু দূরে দাঁড়ান।খামচি বা কামর দিয়ে দিতে পারেন।

নিধী কফিতে চুমুক না দিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে।সে অবাক,এতোকিছু তারও মনে নেই। রফি বুঝতে পেরে জিজ্ঞাসা করলো “মনে আছে কিভাবে সেটা ভাবছো?ম্যাডাম,তোমার সাথে কাটানো প্রতি মুহূর্ত এই মনে লিপিবদ্ধ করা।” এমন সময় চারিপাশ আলোকিত হয়ে গেল।ভয় পাবার বদলে নিধী খুশি।সে হেসে দিয়ে বললো “ঝগড়ার একপর্যায়ে বিদ্যুৎ চমকালো।আমি ঘাবড়ে গেলাম।তুমি রোবটের মতন দাঁড়িয়ে।যেন কিছু হয়নি।দ্বিতীয়বার আবার বিদ্যুৎ চমকালো।এবার আর নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলাম না।সোজা তোমার বুকে আশ্রয় নিলাম।হয়তো নিয়তি সেটা চাচ্ছিলো।তুমি ফাজিলের মতন দুহাতে আমায় জড়িয়ে নিলে।

ভাগ্যের পরিহাসে খুজতে খুজতে আমাদের দুই পরিবার ছাদে হাজির।কি টাইমিং! তারা উল্টোটা বুঝে বসলো।ভেবে নিলো তোমার আমার রিলেশন আছে।আশ্চর্য বিষয় রাগার বদলে তখন তাঁরা খুশি।কাকতালীয় ভাবে আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো।আমি অপেক্ষায় ছিলাম তুমি মানা করে দিবে,তুমি অপেক্ষায় ছিলে আমি মানা করে দিবে। কিন্তু!হিহিহি।” গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরছে।আকাশ আরো বিকট রূপ ধারণ করেছে। গালিব একধেনে তাকিয়ে থেকে বললো “কিভাবে কিভাবে যেন বিয়ে হয়ে গেলো। জীবনে একটা চমক তুমি,যা প্রতিক্ষণে চমকে চলেছে আমায়। ভেবেছিলাম আমাদের বিয়েটা টিকবে না।তবে আমি ভুল।বিয়ের মন্ডবে যখন কবুল বললাম তখন থেকে মনে একপ্রকার দায়িত্ববোধ কাজ করতে শুরু করেছে।আর এখন তো!”

– ওই চুপ করবা।
– কেন?
– লজ্জা লাগে আমার।
– কোথায় লাগে?
– ধ্যাত,এই ভিজবো চলো।
– ঝরণায়?
– বৃষ্টিতে।
– তুমি ভিজো,আমার শীত করছে।
– প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
– পরে।
– না এখনই।
– মুড নেই।
– তাও চলো।
– না।
– প্লিজ একটু।
– বুঝোনা তুমি?কতবার বলবো ইচ্ছা করছেনা।

নিধী নিশ্চুপ।গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে।চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু পানি জমতে শুরু করেছে। গালিব নিজের কাছে অপরাধী বোধ করলো।মেয়েটা খুব কম কিছু চায়।যা চায় তা অতি সামান্য।যদি এই সামান্য চাওয়া পূর্ণ না করতে পারে তাহলে সে কিসের জীবন সাথী!

– এই ভিজবা না?
– <নিশ্চুপ>
– চলো।
– <নিশ্চুপ>
– সরি,প্লিজ চলো।
– <নিশ্চুপ>
– রাগ করেছো?
– <নিশ্চুপ>
– আচ্ছা বুঝেছি।

বলে সে নিধীকে কোলে তুলে নিলো। বালিকা যথারীতি মুখের হাসি চাপা দেওয়ার চেস্টা করে চলেছে। অত ঃপর দুজন ছাদে উপস্থিত হলো। বৃষ্টির বেগ বারছে।বেরে চলেছে। যা দেখে নিধী মুখ গম্ভীর করে রাখতে পারলোনা।প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে হেসে ফেললো। প্রিয় মানুষের হাসি দেখে গালিব জিজ্ঞাসা করলো “হাসছো কেন?” নিধী হাসতে হাসতে জবাব দিলো “তোমার অবস্থা দেখে।”

– কোন অবস্থা?
– বৃষ্টিতে ভিজবানা বলে?হিহিহি,এখন ঠিকি ভিজতেছো।সাথে কোলে করে নিয়ে আসলা।আহা আমার তো আরাম আর আরাম।
– পাগলী।
– হুহ্।
– আবার কি হলো?
– তুমি আমায় একটুও ভালবাসোনা।
– কে বললো?
– কেন আমি।
– ভাল না বাসলে নিধান পিউ ওরা আসলো কিভাবে?
– আমি কি জানি।
– আদর করতে হবে মুখে বললে পারো।
– হুহ্।

পাগলীর পাগলামো দেখে গালিব তাকে বুকে জড়িয়ে নিলো।তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কানে কানে বলতে লাগলো: “সাদা মেঘ ভাসিতেছে আকাশে, আসিছে ভাদ্র মাস। কোথাও রোদ্দুর কোথাও ছায়া, প্রকৃতির অবকাশ। সবুজ ঘন বনে যেথা নাই আলো, অন্ধকারে মাখামাখি। ফুটিছে চাঁপা ফুল বনের মাঝে, ঘ্রাণে জুড়ায় আসে আখি। তুমি ওগো প্রিয় এই ভুবনের, এমনি সে এক মায়া। তোমার তরে ভাসে মেঘ, স্পর্শে চাঁপা ফুলের আবেশ।”

– এই জানো?
– কি?
– আমি কখন সবচেয়ে বেশি সেফ ফল করি?
– কখন?
– যখন তুমি জড়িয়ে ধরো।

<সমাপ্ত>

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত