বেয়াদব

বেয়াদব

ছায়াকে ঠাস করে এক চড় মেরে রহিমা বেগম হনহন করে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন। “মাইয়া তো না,একটা অসভ্য পয়দা করছি। হে আল্লাহ,হয় ওরে তুইল্ল্যা নাও নাহলে আমারে তুইল্ল্যা নাও”। পেপার হাতে করিম সাহেব চুপচাপ বসে আছে। এ ঘটনা তার পরিবারে নিত্য ঘটে,নতুন কিছু না। তাই এ নিয়ে ব্যাস্ত হওয়ার কিছু দেখলেন না তিনি। করিম সাহেবের তিন মেয়ে,ছায়া,মায়া এবং রিয়া। তিন মেয়ের মধ্যে ছায়া বড়। করিম সাহেব আজীবন শুনে এসেছেন বাসার বড় মেয়েরা শান্ত হয়,লক্ষী হয়।

কিন্ত করিম সাহেবের বড় মেয়েটা একদমই তার উল্টো। সে অশান্ত,এই কথাটাও ঠিক না। তবে তার ভেতর পুরুষ বাতিক আছে। অর্থ্যাৎ,সে পুরুষদের মতো আচরন করে। ছোটোবেলা থেকে ছায়া মেয়েলি খেলাধুলা করতো না,বরং মেয়েলি খেলায় তার আগ্রহ অত্যান্ত কম ছিলো! উল্টো পাড়ার রমিজ ভাইদের ক্রিকেট খেলা,ফুটবল খেলা কিংবা কাবাডিতে তার আগ্রহ তুঙ্গে থাকতো! প্রথম সন্তানের প্রতি আদর বাবা মায়ের একটু বেশী থাকে। তাই করিম সাহেবও তার মেয়ের আবদার ফেলতে পারেননি। রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে মেয়ের জন্য সুন্দর একটা ব্যাট আর একটা বল কিনে নিয়ে চলে আসলেন। ছায়া দেখতে একটু নাদুসনুদুস টাইপের বলে পাড়ায় তাকে স্নেহ করার মানুষের কমতি ছিলো না অথবা তার মুখে মানুষ দুর্বল করার মায়া ছিলো। দুটোর একটি ধরাই যায়,কারন তাদের পাড়ায় তাকে অপছন্দ করে এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যেতো!

বিপত্তি ঘটলো সেদিন শুক্রবার। দুপুরের খাবার একঘন্টা পরই মহল্লার সবাই মিলে ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করেছে। ছায়ার বয়স তখন সবেমাত্র বারো! সে খেলায় অংশগ্রহন না করলেও ব্যাট নিয়ে যথারীতি হাজিরই ছিলো। যদিবা তার সুন্দর ব্যাটের দিকে আকর্ষিত হয়ে বড় ভাইরা তাকে দুই একটা বল করার পরমিশন দেয়! যাই হোক,ভদ্রমেয়ের মতো বসে বসে খেলা দেখাকালীন সে হঠাৎ খেয়াল করলো তাদের পাড়ার মজনু গোলাপি ড্রেস পরা একটা মেয়ের পিছু নিচ্ছে। প্রথমে সে ততটা গুরুত্ব দেয়নি,কিন্ত পরে খেয়াল করলো মজনু মেয়েটার পেছন পেছন ডানদিককার গলিতে ঢুকে পরেছে। ছায়া ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারেনি।

সেও মজনুর পেছন পেছন ডানদিককার গলিতে ঢুকে পরেই দেখতে পেলো মজনুর সাথে সেই গোলাপি ড্রেস পরা মেয়েটার রীতিমত হাতাহাতি হচ্ছে। হঠাৎই মজনু এক টান দিয়ে মেয়েটির শরীর থেকে ওড়না নিয়ে পাশে ফেলে দিলো। মেয়েটি বারবার মজনুকে বলছিলো, “কাছে আইবিনা,তোর বাপেরে নালিশ দিমু কইলাম!” অথচ এত থ্রেডমুলক কথা বোধহয় মজনুর কানের পাশ দিয়েই উড়ে গেলো। কি ঘটতে যাচ্ছে ছায়া সেই ব্যাপারটা বুঝতে না পারলেও সে খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলো মজনু গোলাপী ড্রেস পরা মেয়েটির ক্ষতি করবে। সে কিছু না ভেবেই হাতের ব্যাটটা দিয়ে ধ্রাম করে দিলো এক বারি বসিয়ে। বারিটা মজনুর মাথায় পরলো! ছোটো মানুষ শরীরে তেমন জোর নেই বিধায় সেদিনকার মতো মজনু বেঁচে গিয়েছিলো। কিন্ত ছায়ার ক্রিকেট খেলা সেদিনকেই সারাজীবনের মতো ঘুঁচে গেলো।

এমন টুকটাক অদ্ভুত কর্মকান্ড ছায়া প্রায়ই করে থাকে। তাই ছোটোবেলার ছায়াকে সবাই যতটা স্নেহ করতো এখন বাইশ বছরের ছায়াকে সবাই ততটাই আকথা কুকথা বলে এবং আড়ালে বেয়াদব বলে ডাকে। এইতো সেদিনই,পাশের বাসার সাজেদা খালা ছায়ার মাকে বলছিলো, “কিছু মনে কইরোনা বইন! তোমার এমন ব্যাডাইত্তা গোছের মাইয়ারে কেডা বিয়া করবো? তোমার বাকি দুইটা তো মাশাআল্লাহ ফুলের মতো! এইডা এমন হইলো ক্যান! নাকি আল্লাহ পোলা দেয় নাই,তাই পোলার শখ পূরন করো!”

রহিমা বেগম এমনিতে খুবই শান্ত শিষ্ট মানুষ। কিন্ত ছায়ার এমন অভদ্রতামি সে মোটেই সহ্য করতে পারে না। আজ হয়েছে এক ঘটনা। পত্রিকা দিতে আসা লোকটা কতদিন ধরেই ছায়ার মেঝো বোনটাকে বিরক্ত করছিলো। লোকটা পেপারটা সবসময় ‘মায়া’র জানালাতেই মারতো,এমনকি প্রায়ই বিকেলে মায়ার রুমের আশেপাশেই ঘুরঘুর করে। জানালা খোলা দেখলেই শিষ দেয়! ব্যাপারটা অনেকদিন নোটিশ করেও সে কিছুই বলতে পারে নি। কাল অনেকটা বাধ্য হয়েই ছায়াকে বলেছে সে। তার ফলাফল আজকের ঘটনা। বিকেলবেলা লোকটা যখন মায়ার বাসার আশেপাশে ঘুরঘুর করছিলো তখন পাড়ার ছোটোবড় কিছু ভাই ব্রাদার এনে দিলো লোকটাকে ইচ্ছেমতো মার। যাকে বলে তুলাধুনা করা! লোকটার এমনই অবস্থা হলো চিকিৎসার জন্য কচকচে ১০০০ টাকার নোট করিম সাহেবের পকেট থেকেই গেলো!

তাও যাক লোকটার শিক্ষা হয়েছে এই ভেবে গো বেচারা করিম সাহেব খুব আয়েশ করেই পেপার পড়তে বসেছিলেন। কিন্ত রহিমা বেহম মাথায় মোটামুটি একটা চুলা জ্বালিয়ে রান্নাঘরে বসে বকবক করতে লাগলেন। ছায়া এই, ছায়া সেই। বাঙালি মায়েরা যেমন হয় আরকি! কিন্ত বঙ্গ মাতার সব বৈশিষ্ট্য রহিমা বেগমের মধ্যে বিদ্যামান থাকলেও বঙ্গ কন্যার কোনো গুনই ছায়ার মধ্যে বিদ্যমান ছিলো না এ জিনিসটা আমরা উপরেই পড়েছি। তাই হঠাৎই সে যথারীতি তার মা এর উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললো, “হ্যা হ্যা,আমি খারাপ আমি বেয়াদব তাহলে আমাকে জন্মদিলা কেনো! জন্মদিয়েই নুন খাওয়ায় মাইরা ফালাইতা!” হঠাৎ এমন একটা কথা রহিমা বেগমের সহ্য হলো না। তাই রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে এসে ছায়ার গালে ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দিলেন। এবং তখন থেকে রাত আটটা অব্দি চললো মিসেস রহিমা বেগমের দ্বিতীয় দফা চিৎকার-চেঁচামেচি!”

ছায়ার মেঝো বোনটা দেখতে অনেকটা হেমা মালিনীর মতো। গোলগাল মুখ ফর্সামতো চেহারা। বাসার মেঝো সন্তানেরা একটু ধুরন্ধর প্রকৃতির হলেও ‘মায়া’ একদমই শান্তশিষ্ট ভদ্র প্রকৃতির মেয়ে। তার ডেইলি রুটিন রোজ কলেজে যাওয়া কলেজ থেকে আসা। এ ছাড়া তার জীবনে আর কোনো কাজই নেই। কিন্ত ইদানীং তার রুটিনের হেরফের দেখা যাচ্ছে। প্রাইভেটের দুঘন্টা আগেই সে বেড়িয়ে যায়। বাসায় ফেরেও মিনিমাম আধা ঘন্টা পর। আহে সে বলতো তার নাকি স্পেশাল ক্লাস,কিন্ত প্রত্যেকদিনই তার স্পেশাল ক্লাসের দোহাই দিয়ে বাইরে বের হওয়াটা মিসেস রহিমার ঠিক সুবিধার ঠেকলো না। তাই একদিন কাজের দোহাই দিয়ে তাকে বাসায় আটকে রেখে দিলেন। ওদিকে বাইরে বের হওয়ার জন্য মায়া’র প্রান ওষ্ঠাগত! যতই হোক মা। মেয়ের কি সমস্যা তা সবারই আগে মা-ই টের পাবেন এটাই প্রকৃতির নিয়ম। মেয়ে যে কোনো বিপদে পরেছে তা বুঝতে মোটেও দেরী হলোনা রহিমা বেগমের। কিন্ত কি বিপদ তা আঁচ করতে পারলেন না এবং মায়া’ও মুখে কুলুপ এটে বসে রইলো।

সকাল থেকেই ছায়া অ্যাসাইনমেন্ট করতে ব্যাস্ত। তার ভার্সিটির গাঁদা গাঁদা অ্যাসাইনমেন্ট করে দিব্যি ব্যাস্ত সময় পার করছে সে। ওদিকে রিয়াটার সামনে জেএসসি পরীক্ষা। সে কিছুক্ষন পরপর ছায়ার কাছে আসছে আর জিজ্ঞেস করছে, “আপা,H২SO4 এর সাথে পানির কি বিক্রিয়া হয়! আচ্ছা ৯৯% H2SO4 মানে কি?” আপা,F=ma এর সুত্রে a এর বদলে কি ত্বরনের সুত্র বসাবো?”-এ ধরনের হাজারো প্রশ্ন রিয়ার মুখের সামনে জমে আছে। সে কিছুক্ষন পরপর ছায়ার কাছে আসে আর একটা একটা করে বুলি আওড়ায়! ছায়া কেবল হু,হা করে কোনোমতে ম্যানেজ করছে। অ্যাসাইনমেন্টটা এদিক সেদিক হলে কপালে শনি ঝুলছে!

ওদিকে মায়া বিছানায় শুয়ে আছে। তার শরীরটাও ভালো ঠেকছে না। সকাল থেকে দু’তিনবার বমি হয়েছে তার। জিনিসটা নজরে পরলো রহিমা বেগমের। কোনোমতে চুপচাপ দিনটা কেটে গেলো। রাতের বেলা সবার খাওয়াদাওয়া শেষে রহিমা বেগম মেয়ের পাশে এসে বসলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন তার কোথায় সমস্যা হচ্ছে। এমনিতে খুব চিৎকার চেঁচামেচি করলেও আজ রহিমা বেগম খুব শান্ত হয়েই জিজ্ঞেস করলেন, “কি হইছে মা?” কিন্ত মায়া মুখ খুললো না। শেষমেষ রহিমা বেগম পাশের রুম থেকে ধর্মীয় গ্রন্থ এনে বললেন, “এটা ছুঁয়ে বল তোর কি হইছে! মিথ্যা বললে কিছুই সমাধান হবে না রে মা! সব ঘেটে যাবে। একসময় দেখবি ভুল শোধরানোর পথ পাবিনা!” – সাথেই সাথেই মায়া হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো!

মায়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে পাশের পাড়ার আকিজ মেম্বারের ছেলের সাথে। বাপের সম্পত্তি থাকলেও ছেলেটা বেকার। এমন একটা ছেলের সাথে মায়া’র কেনো বিয়ে হচ্ছে এ কথাটা কিভাবেই যেনো পাড়ার অনেকেই জেনে গেলো। এই তো সেদিনই,রিয়াকে তাদের পাশের বাসার এক মহিলা জিজ্ঞেস করলো “কি মা? তুমিও প্রেম ট্রেম করো নাকি? দেখিও,ভালোবাসলে আমাদের আইসা বলিও আমরা তো আছি নাকি? পেটে বাচ্চা নিয়ে আসিওনা। দেখোই তো তোমার বোনের অবস্থা!”

রহিমা বেগম এখন আর কারো সাথে মেশেন না। করিম সাহেবও কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। মায়া পাঁচ মাসের গর্ভবতী। পাড়া প্রতিবেশীদের কথার ভয়ে রিয়াটাও প্রাইভেট পড়া ছেড়ে দিয়েছে। ক্লাসটা না করলেই নয় বলে সে কলেজে যায়। ছায়া একটু উগ্র ধরনের,হয়তো তাই ছায়াকে কেউ খুঁচিয়ে কথা বলার সাহস পায় না। মায়া’টা সেদিন গলায় দড়ি দিতে চেয়েছিলো। ভাগ্যিস রিয়া দেখে ফেলে। এর পরও সে দু’তিনবার সুইসাইড এটেমপ্ট করার চেষ্টা করেছিলো। রাজুর বাবা আকিজ মেম্বার খুব প্রভাবশালী ব্যাক্তি। মায়া’র বাবা অনেকবার রাজুর বাবার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে কিন্ত তিনি সরাসরি না করে দেন। শেষমেষ উপায়ান্তর না দেখে, রাজুকে ধরে এনে বেধে রাখা হয়। কয়েকবার লাঠির বারি পরতেই গলগল করে সব স্বিকারোক্তি দেয় সে। মুলত স্বিকারোক্তি নেয়ার পর তাকে ভয় দেখানো হয়,যদি সে মায়া’কে বিয়ে করতে রাজি না হয় তবে তার পরিবারের সবার বিরুদ্ধে মামলা করা হিবে। স্ট্রং এভিডেন্সের কারনে রাজুর বাবাও রাজি না হয়ে পারলেন না।

-যাই বলেন। আপনার বড় মেয়েটা অতিরিক্ত বেয়াদব। বড়দের সাথে নুন্যতম কেমন ব্যাবহার করতে হয় তাও শিক্ষা দেননি! করিম সাহেব সামান্য হাসলেন। তারপর বললেন,
-ভাই,ছেলেকে আমরা আমাদের ছেলের মতোই রাখবো। কোনো অসুবিধা হবে না। বিয়েতে যা যা লাগবে শুধু বলবেন।
– এমন একটা মেয়ে ঘরে নিচ্ছি! কুবেরের ধন দিলেও তো কেউ অমন মেয়ে নেবে না।

“কুবেরের ধন না চাচা,আপনার ছেলের জবানবন্দিটা পুলিশের হাতে তুলে দিলেই এক পয়সাও আর ছেলের বাবা দাবী করবে না!” এই বলে ছায়া সামনে এসে দাড়ালো। আকিজ মেম্বার চুপ হয়ে গেলেন। সে কেবল আড়চোখে ছায়ার দিকে তাকাচ্ছিলেন। যেনো পান থেকে চুন খসলেই ধ্রাম করে মাথায় এক বারি পরবে! বিয়ের কথা শেষ না হওয়া অব্দি ছায়া সেখানেই দাড়ানো ছিলো। শেষমেষ বিয়ের কথা শেষ করে পাত্রপক্ষ রাত ন’টার দিকে বিদায় হলো। আজ মায়া’র বিয়ে। সে লাল শাড়ি পরে খাটের কোনে চুপটি করে বসে আছে। এ ক’দিনে মেয়েটা অস্বাভাবিক রকম বড় হয়েছে। মুখে ক্লান্তি দেখা যাচ্ছে। বিয়েটা অত ধুমধাম করে হলো না। পারিবারিকভাবে একরকম লুকিয়েই বিয়েটা হয়ে গেলো মায়া’র।

মায়া শ্বশুড় বাড়ি চলে গেলো। রহিমা বেগম দরজায় হেলান দিয়ে কাঁদছেন। মায়া’টা আজই চলে যাচ্ছে। রিয়ার খুব খারাপ লাগছে। মোটামুটি তারা দুজন পিঠাপিঠি ছিলো। একসাথে খেলা করতো। আজ সে চলে যাচ্ছে।
ছায়া গিয়েছে তার বাবার সাথে। মায়াকে গাড়িতে তুলে দিলো বাবা। ছায়া শক্ত হয়ে আছে। মায়া’র ওপর তার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আবার কেমন যেনো বুকের ভেতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। বাবা চোখের জল মুছতে মুছতে মেঝো মেয়েকে বিদায় দিলেন। বাবা মেয়ের কান্নায় কিছু সময়ের জন্য পরিবেশ ভারী হয়ে উঠলো। কিন্ত মায়াদের গাড়ি ছেড়ে দেবার সাথে সাথে আবার সব নিস্তব্ধ! মেয়েকে গাড়িতে তুলে দিয়ে করিম সাহেব এবং তার বড় মেয়ে বাসায় ফিরছিলেন। হঠাৎই পেছন থেকে আক্কাস মিয়া ডাক দিলেন। লোকটা তাদের অঞ্চলেরই।

-ও করিম ভাই! শোনেন শোনেন।
হঠাৎ এমন ডাক শুনে করিম সাহেব দাড়িয়ে পরলেন। পেছন ফিরে দেখলেন আক্কাস সাহেব।
-তা ভাই,মেয়েকে বিয়ে দিলেন, দাওয়াত দিলেন না!
-না ভাই। বড় অনুষ্ঠান করি নি। টাকা পয়সার সমস্যা।

-বড় অনুষ্ঠান করেননি? নাকি অন্য কেস? শুনলাম মেয়ে নাকি বিয়ের আগেই পোয়াতি হইছিলো!
শুনেই করিম সাহেবের মাথাটা লজ্জায় নত হয়ে গেলো। গো বেচারা করিম সাহেব কি বলবে ভেবে না পেয়ে উল্টো দিক ধরলেন চলে যাওয়ার জন্য। তখনই ছায়া তার বাবার হাতটা ধরে বসলো। তারপর আক্কাস মিয়ার সামনে এসে বললো,

-হ্যা। আপনি ঠিক শুনেছেন। আমার বোন গর্ভবতী ছিলো।
-এগুলা আবার মুখ নাড়ায় বলো মা? লজ্জাও করে না! বেয়াদব দেখি ভালো হইছো!

-হ্যা আমি বেয়াদব! আর আপনারা? আপনারা কি খুব সাধু? ভুল মানুষই করে গরু ছাগল করে না। আমার বোন ভুল করেছে এ কথা ঠিক তেমনি একথাও ঠিক যার সাথে তার সম্পর্ক ছিলো বিয়েটা তার সাথেই হয়েছে। এখন আপনাদের সমস্যা কি?

-তোমার বাপে জানাইলো না। তাই বললাম। আমরা সমাজে থাকি না? বলতে হবে না?
– কেনো বলতে হবে? আমার বোনটাকে এই ঘটনার আগে আপনি চিনতেন? জীবনে খোঁজ নিছেন? নাকি আমাদের ফ্যামিলির কেউ আপনার এক টাকা নিছে কখোনো। কোনটা? তাহলে আপনারে বলতে হবে কেনো? আমাদের পরিবারের ব্যাপার আমরা বুঝবো। আপনি কে? আলতু ফালতু কথা না বলে রাস্তা মাপেন।

-করিম ভাই,আপনার বড় মেয়েটা এত বেয়াদব কেনো? শিক্ষা দিক্ষা দেন নাই?

-হ্যা,আমি বেয়াদব! বাবা মায়ের শিক্ষা আছে দেখেই এখোনো খালি সব মুখের কথাতেই শেষ করছি। নাহলে এই মাঝ রাস্তায় সবার সামনে থাপরিয়ে আপনার মুখ সোজা করে দিতাম! আক্কাস মিয়া আশেপাশে তাকিয়ে দেখলেন কেউ কেউ মুখ টিপে টিপে হাসছে আবার কেউ কেউ চোখ বড় বড় করে আক্কাস মিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মান সম্মানের ভয়ে তিনি আর কথা না বাড়িয়ে উল্টা পথে হাঁটা ধরলেন। করিম সাহেবের চোখ বেয়ে টুপ করে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো। হঠাৎই তিনি ছায়াকে বুকে জড়িয়ে বললেন,
“মা’রে! আজীবন তুই বেয়াদব-ই থাকিস!”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত