“তুমি কাল গ্রামে চলে যাবে? আফরিনের কথাটা শুনে আমি ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। ওর মনে যে কি চলছে আমি কিছুটা হলেও বুঝতে পারছি। মেয়েটার যে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে ওর চেহারার মাঝে স্পষ্ট ধরা দিচ্ছিলো। কি করবো! প্রতি বছর গ্রামে যাওয়ার জন্য রোজার ঈদ আর কোরবানি ঈদেই সময় পাই। এই বার রোজার ঈদেও গ্রামে যাওয়ার সময় আফরিন ঠিক এরকম করুণ ভাবেই আমাকে এই কথাটাই বলেছিলো। খুব খারাপ লেগেছিলো। তার উপর গ্রাম থেকে মা বার বার ফোন দিয়ে বলছিলো ফায়সাল কবে আসবি গ্রামে।
কিন্তু আমি আফরিনের জন্য কিছু করতে পারি নি। ওর প্রশ্নের উত্তরে আমি শুধু চুপ করে ছিলাম। যাওয়ার সময় আমি বার বার ওর দিকে তাকাচ্ছিলাম। মেয়েটার চোখে যে পানি জমে যাচ্ছিলো, তা দেখেও আমি কিছু করতে পারি নি। কি করবো! বাসায় না জানিয়ে আরিনকে বিয়ে করে ফেলেছি। বাসায় জানালে যে কি হবে সেইটা শুধু আমিই জানি। ঢাকায় আসা শুধু চাকরীর জন্য। আর ওইদিক দিয়ে গ্রামে মা একের পর এক আমার জন্য মেয়ে দেখেই যাচ্ছে। আমি শুধু না করেই যাচ্ছি। মুখ ফুটে বলতেও পারছি না আমি বিয়ে করে ফেলেছি। মা আমাকে নিয়ে খুব স্বপ্ন দেখেছে। যেই স্বপ্ন আমার ছোট ভাইটাকে নিয়েও এক কোনা দেখে নি। এখন যদি বলি আমি তাদের না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছি তাহলে যে মা’র মনের অবস্থাটা কি হবে সেইটা একমাত্র খোদা জানে।
আফরিনের সাথে আমার পরিচয় লালবাগ থাকা কালিন থেকে। ঢাকায় চাকরিটা হওয়ার পরেই লালবাগ একটা পুরানো বাড়ির ছাদের উপর একটা ছোট রুম খালি পেয়েছিলাম। সেইখানেই আমার মতো এই একা মানুষটার থাকার ঠাই গুঁজেছিল। ভালোই দিনগুলো কাটছিলো। সকালে বেশি করে ভাত রান্না করে রাখতাম কাজে যাওয়ার সময় কোনো দিন ডিম ভাজি,ডিম ভুনা,আলু ভর্তা রান্না করে নিয়ে যেতাম। আবার রাতে এসে পাতিলা থাকা ভাত গুলো ছোট খাটো রেসিপি বানিয়ে খেয়ে নিতাম। আর বন্ধের দিন গুলোতে বাসায় থেকে ভালোমন্দ খাবার বনিয়ে খেতাম।
একদিন চুলায় রান্না বসিয়ে গোসল করতে ঢুকেছিলাম। আমার একটুও খেয়াল ছিলোনা আমি চুলাটা বাড়ানো অবস্থায় রেখে এসেছি। সেইদিন গোসলখানার ভিতর থেকে আমি শুনতে পাচ্ছিলাম মেয়েলি কণ্ঠে কে যেনো আওয়াজ করে বলছে,কেউ কি আছেন? তরকারী পুরে যাচ্ছে।
তারকারী পুরে যাওয়ার কথাটা শুনে আমি তাড়াহুড়া করে গোসল শেষ করে রান্নাঘরে যেয়ে দেখি তরকারী অনেক খানি পুরে গেছে। আমি চুলাটা বন্ধ করে ভাবলাম আওয়াজটা কোথা থেকে আসলো! তারপর রান্নাঘর থেকে বেড় হয়ে সোজা পাশের বাড়িটার দিকে চোখদুটো গেলো। সেই বাড়িটার ছাদে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝতে আর বাকি রইলোনা তরকারী পুরে যাচ্ছে বলে এই মেয়েটাই ডাক দিয়েছিলো। এই পুরান ঢাকার বাড়ি গুলো জানি কেমন! একটা বাড়ির সাথে আরেকটা বাড়ির দূরত্ব এক হাতের বেশি জেনো থাকেনা! মেয়েটা একদম ওদের ছাদের রেলিং এর সামনে ছিলো বিদায় উনার চেহারাটা খুব ভালো ভাবে দেখতে পাচ্ছিলাম। নাকে একটা নথ পরনে ছিলো বুঝতে অনেকটা কষ্ট হচ্ছিলো, এইটা মেয়ে নাকি বিবাহিত মহিলা! আর তাছাড়া এখনকার মেয়েরাতো ফ্যাশনের জন্যেও নথ পরে। তবে আমার মনে হচ্ছিলো অবিবাহিতা। আমি আমাদের ছাদের রেলিং এর কিছুটা সামনে যেয়ে আনমনে বলে উঠলাম, আপনি কি আমাকে ডাক দিছিলেন?
মেয়েটা একটু হেসে বলে উঠলো, জ্বি!
“আপনি না ডাক দিলে আজ সব তরকারী আমার পুরে ছাই হয়ে যেতো।
“বেশি পুড়ে গেছে?
“হুম। তবে যতটুক আছে দুপুরে আর রাতে আমার হয়ে যাবে। আমার কথাটা শুনে মেয়েটা আমাকে বলে উঠলো, আপনি এইখানে একাই থাকেন?
“জ্বি।
“আপনার ফ্যামিলি?
“গ্রামে থাকে। চাকরীর জন্য এইখানে আসা।
“ওহ! কি চাকরী করেন?
মেয়েটার কথাগুলো শুনে বুঝা গেলো খুব ফ্রি টাইপের একটা মেয়ে। এই পুরান ঢাকায় এরকম মেয়ে খুজে পাওয়া খুবি কষ্টকর। কারন পুরান ঢাকায় থাকা বেশিরভাগ মেয়েগুলোর ভাবের কমতি নেই। এদের একদম গোড়া থেকে ভাব। আমি আর চুপ করে না থেকে বলে উঠলাম, নরমাল একটা কম্পানিতে টি.এস.আর পোস্টে আছি। আপনি?
আমার কথাটা শুনে মেয়েটা একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে উঠলো, এই বাড়ির বাড়িওয়ালীর কাজের মেয়ে।
মেয়েটার কথাশুনে আমি কিছুতেই মানতে পারছিলাম না! এই মেয়ে এই বাড়ির বাড়িওয়ালীর কাজের মেয়ে! কারণ মেয়েটার চেহারাটা সেইরকম ছিলোনা।
কাজের মেয়ে না বলে যদি এই বাড়ির বাড়িওয়ালীর মেয়ে বলতো তাহলে আমি এইটাই বিশ্বাস করে নিতাম। আর তাছাড়া ঢাকার কাজের মেয়েগুলোও রূপে একদম টসটসা হয়ে থাকে। আর যদি তাদের মালিকীনির একটু যত্ন পায় তাহলেতো আর কোনো কথাইনা। হয়তো মেয়েটার মালিকীনি মেয়েটাকে খুব যত্ন নেয়! আমাকে এরকম ভাবতে দেখে মেয়েটা হুট করে বলে উঠলো, কি ভাবছেন? আমি আর কিছুনা ভেবে বলে উঠলাম, কই কিছুনা! আমার কথাটা শুনে মেয়েটা আবার একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে উঠলো, আসি। আমি মাথা হিলিয়ে বুঝিয়ে দিলাম ঠিক আছে।
প্রায় সময় সন্ধ্যায় কাজ শেষে বাসায় আসলে দেখতাম মেয়েটা ওদের ছাদে এসে আকাশপথে তাকিয়ে আছে। আমি নিজ ইচ্ছায় মাঝেমধ্যে মেয়েটার সাথে কথা বলতাম। একটা সময় জানতে পারলাম মেয়েটার নাম আফরিন। ফ্যামিলি সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলে কিছুই বলতে চাইতোনা। আফরিনের এই জিনিসটা আসলেই আমাকে খুব ভাবাচ্ছিলো। প্রায় সাপ্তাহখানিক যাওয়ার পর একটা বয়স্ক মহিলা আফরিনদের ছাদের থেকে আমাকে ডাক দিয়ে বলে উঠলো, বাবা তুমি আফরিনকে চিনো? মহিলার কথাটা শুনে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেছিলাম। তারপর কিছুটা সাহস নিয়ে আমি বলে উঠলাম, তেমনভাবে চিনিনা কিন্তু ও ছাদে আসলে মাঝে মাঝে কথা হয়।
“ওহ! আমি দুইদিন ওকে তোমার সাথে কথা বলতে দেখছিলাম তাই ভাবলাম চিনো না কি!
“না না আন্টি আমি আফরিনকে তেমনভাবে চিনিনা। আপনি কি ওকে চিনেন?
“হ্যা! আমাদের বাড়িওয়ালীর বড় মেয়ে।
মহিলার কথাটা শুনে আমি খুব অবাক হোলাম! আফরিন তাহলে সেইদিন মিথ্যা বল্লো! আমি আর কিছু না বলে মহিলাটার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আস্তে করে আমার রুমে ঢুকে গেলাম। এর পর আমি আফরিনকে দেখলেও ওর সাথে খুব কমি কথা বলতাম। বাড়িওয়ালীর মেয়ে! যদি ব্যাপারটা ওর মা-বাবার কানে যায় তাহলে এই শান্তিময় থাকার ব্যবস্থাটা আমার আর গুছবেনা।
পরের সাপ্তাহের শুক্রবার বন্ধের দিন ছিলো বিদায় বাড়িতেই ছিলাম। বিকেল দিকে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। ঠিক সেই সময়েই শুনতে পাচ্ছিলাম আফরিন আমাকে ডাকছে। আমি কিছুটা অবাক হয়ে রুম থেকে বেড় হয়ে দেখলাম আফরিন ওদের ছাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই বলে উঠলো, কি ব্যাপার কেমন আছেন? জ্বি ভালো। আপনি? ভালো। আচ্ছা এই বাড়ির কোনো মহিলা কি আপনাকে কিছু জিজ্ঞাস করছিলো? কেন? নাহ! বাসায় যেয়ে আপনার কথা সবার সামনে বলছিলো। আফরিনের কথাটা শুনে আমি একটু চুপ করে থেকে বলে উঠলাম, আপনি এই বাড়ির বাড়িওয়ালীর কাজের মেয়ে তাই না?
আমার কথাটা শুনে আফরিন মাথা হিলিয়ে,হ্যা সূচক ইশারা করলো। তারপর আমি কিছুটা জোর দিয়ে বলে উঠলাম, তাহলে বাড়িওয়ালীর বড় মেয়ে কে শুনি? সেই মহিলাটা আমাকে বলছিলো আপনি নাকি এই বাড়িওয়ালীর বড় মেয়ে কথাটা কি সত্যি! আফরিন এইবার আমার কথাটা শুনে লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে বল্লো, হ্যা আমি এই বাড়ির বড় মেয়ে ছিলাম। তবে এখন না! আর এই বাড়িওয়ালীর বড় মেয়ে আমি না। আফরিনের কথাটা শুনে আমার ওর এরূপ কথাটার ব্যাখ্যাটা যেনো পুরোপুরিভাবে জানতে ইচ্ছে হলো। তারপর আমি আর চুপ করে না থেকে বলে উঠলাম, বাড়িওয়ালীর বড় মেয়ে না মানে?
আমার কথাটা শুনে আফরিনের মুখখানা খুব মলিন হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মেয়েটা বলে উঠলো, মা মরলে বাবা হয়ে যায় তালুই! আমার বেলায় ঠিক তাই হয়েছে। পাচঁ বছর হয়ে গেছে আমার মা মারা গেছে। তখন আমার বয়স ছিলো ষোলো বছর। মা মারা যাওয়ার এক বছর যেতে না যেতেই দাদী,চাচারা মিলে বাবাকে তার চাচাতো বোনের সাথে বিয়ে দেয়। বাবার চাচাতো বনেরো আগে বিয়ে হয়েছিলো। তার ডিভোর্স হয়ে যাওয়ায় সেই সুবাদে বাবার সাথে বিয়ে হয়। তো আমার নতুন মায়ের আগের ঘরের এক মেয়ে ছিলো। তখন সেই মেয়ের বয়স দেড় বছর হবে। সেই মেয়েকে সাথে করে নিয়েই তার আমাদের ঘরে প্রবেশ। আমি স্কুল থেকে আসলেই সারাটাক্ষণ খালি অডার দিতো আফরিন এইটা করো আফরিন সেইটা করো।
এমনকি আমার এস.এস.সি এক্সামের সময়টাতেও ঠিক মতো পড়াশোনা করার সুযোগ দেয় নি। এই নিয়ে বাবাকে অনেক বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ওই যে বল্লাম না। মা মরলে বাবা হয়ে যায় তালুই। তিনি ভুল ভাল বুঝিয়ে বাবাকে আমার বিরুদ্ধে করে ফেলেছিলো। খুব কষ্ট করে এইচ.এস.সি টা কমপ্লিট করেছিলাম। তারপর আর পড়াশোনা করতে দেয়নি। এখন তো ঘরের কাজের মেয়ে আমি।তিনি সারাদিন ঘরে বসে থাকে। আমাকে দিয়েই সব কাজ করায়। কোনো প্রতিবাদ করতে পারিনা। আমার সমস্ত পাখনা সে ভেঙ্গে ফেলেছে। মন খুলে একটু উড়তেও পারিনা। ফ্যামিলির সবার চোখে আমাকে খারাপ করে তুলেছেন। বাহিরের সবাই ভাবে আমি কত সুখি! কিন্তু আমার সুখটা যে কি পরিমাণ আমাকে সুখ দেয় সেইটা আমিই জানি।
আফরিন কথাটা বলেই থামলো। মেয়েটার চোখ বেয়ে পানি পরছিলো। কান্না থামিয়ে আফরিন আবার বলে উঠলো, জানেন! মা মারা যাওয়ার পর তার এক জোড়া চুড়ি আমার কাছে রেখেছিলাম। সেই চুড়ি জোড়াটাও আমার কাছ থেকে নিয়ে গেছে। বাবাকে বলেও কোনো লাভ হয়নি। “আপনার নানী বাড়ির মানুষরা কই? “নানা-নানী মারা গেছে। আর দুই মামা আমেরিকা থাকে। আমার মা আর বাবার লাভ ম্যারেজ ছিলো নানী বাড়িতে মামারা সেইটা মেনে নেয় নি। এখন মামাদের সাথে যোগাযোগ করার কোনো ওয়ে পর্যন্ত নেই। আমি আর কিছু জিজ্ঞাস করার সাহস পেলামনা মেয়েটাকে। আফরিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটু হেসে বলে উঠলো, আজকে তরকারী পুড়ে যায়নি? আমিও একটু হেসে বলে উঠলাম, নাহ!
“কি রান্না করছেন আজকে?
“মুরগীর বিরিয়ানি।
“তাই নাকি! আমার ফেভারিট।
“খাবেন নাকি?
আফরিন এইবার একটু হেসে বল্লো, খাওয়া যায়। নিজের রান্না খেতে খেতে খুব বোর হয়ে গেছি। তারপর আমি রুমে যেয়ে আফরিনের জন্য বিরিয়ানি নিয়ে আসলাম। মেয়েটা বিরিয়ানি টুকু খেয়ে বল্লো বিরিয়ানিটা নাকি খুব ভালো হয়েছে। হাতে নাকি জোশ আছে আমার।
দিন দিন মেয়েটার উপর খুব মায়া জমতে লাগলো। আমি মেয়েটাকে তুমি করেই বলতে লাগলাম। খুব ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে উঠেছিলো আমাদের মধ্যে। মাঝে মাঝে ওর নিজের হাতে বানানো তরকারী, বাটিতে করে আমার জন্য নিয়ে আসতো। আমিও ভালো কিছু রান্না করলে ওকে দিয়েই খেতাম। খুব ইচ্ছে জাগছিলো ওর দুঃখগুলোর কিছুটা ভাগিদার হই। ওকে খুব আপন করে নেই। যাতে করে ওর দুঃখটার অবসান ঘটে। কিন্তু আফরিন যদি ব্যাপারটা করুনা হিসেবে নেই তাই আর বলতে পারছিলামনা।
পরবর্তীতে একদিন সাহস করে এলিয়ে বেলিয়ে বলেই ফেলেছিলাম। আমার কথাটা শুনে আফরিন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা কথাই বল্লো, দেখেন অযথা আমার জীবনের সাথে জড়াতে আসবেন না। আমি যেমন আছি খুব ভালোই আছি। আমার ভাগ্যে যা লেখা ছিলো সেইগুলোই আমার সাথে ঘটছে এবং ঘটবে। এই নিয়ে আপনার মায়া দেখানোর কোনো প্রয়োজন মনে করিনা। ওর কথাটা শুনে আমি একটা কথাই বলেছিলাম, আচ্ছা আমি যদি তোমার ভাগ্যে লিখা থাকি তখন কি হবে? আমার কথাটা শুনে আফরিন কিছুনা বলে ছাদ থেকে নেমে গেছিলো। পরের দিন! সেই দিন ছিলো শুক্রবার। মেয়েটা হাতে বাটি করে মুড়িঘণ্ট রান্না করে নিয়ে এসে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বল্লো, আপনার না মুড়িঘণ্ট পছন্দ। আজ বাসায় মুড়িঘণ্ট রান্না করেছি। এই নেন আপনার জন্য নিয়ে আসলাম।
কথাটা বলেই আফরিন ওর সাথে নিয়ে আনা বাটিটা আমার কাছে বাড়িয়ে দিলো। আমি এক দৃষ্টতে ওর দিকে তাকিয়েছিলাম। গতকাল ওর চলে যাওয়াটা দেখে ভেবেছিলাম আমার সামনেই হয়তো মেয়েটা আর আসবেনা। কিন্তু রাত পুহিয়ে দুপুর হতেই চলে আসলো। আসলেই মেয়েটা অন্যসব মেয়েদের থেকে কিছুটা হলেও আলাদা। নাহলে কি এমনটা কখনো করতো! আমি আর কিছুনা ভেবে ওর হাত থেকে বাটিটা আমার হাতে নিলাম। ঠিক সেই সময়টাতেই দেখলাম একটা মহিলা এসে আফরিন কে একটা বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়ে কয়েকটা কথা শুনিয়ে নিচে পাঠিয়ে দিলো। আমার আর বুঝতে বাকি রইলোনা এই মহিলাটা কে? হুম! আফরিনের সৎ মা! মহিলাটা আমার দিকেও রাগ নিয়ে তাকিয়ে বলে উঠলো, ওই এইসব কি চলতাছে হ্যা!! মানুষ চিনো! দাড়াও ফজলু মিয়াঁরে কইয়া তোমারে সামনের মাসের মধ্যেই এই বাড়ি ছাড়া করাইতাছি।
কথাটা বলেই মহিলাটা চলে গিয়েছিল। আমি মহিলাটাকে জবাবে কিছুই বলতে পারছিলামনা। ফজলু মিয়া আমাদের বাড়িওয়ালার নাম। লোকটা আমাকে খুব ভালো ভেবে রুমটা ভাড়া দিয়েছিলো। আর হয়তো লোকটার চোখে ভালো থাকতে পারবোনা। পুরো ব্যাপারটা এখন আমার কাছে ক্লিয়ার হয়ে উঠেছে! আসলেই মহিলাটা খুব জঘন্য। নাহলে আমার সামনে আফরিনকে এরকম একটা গালি দিতে পারতো! কিভাবে সহ্য করছে আফরিন এগুলা! কথাটা ভাবতেই আমার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।
পরের দিন কাজে বেড় হওয়ার সময় বাড়িওয়ালা খুব সুন্দরভাবে আমাকে বলে দিলো আমি যেনো সামনের মাসে এই বাড়ি ছেড়ে দেই। আমি আর তাকে কিছু না বলে কাজে বেড় হয়ে গেলাম। আমার এই নিয়ে যেনো কোনো চিন্তা লাগছিলো না। আমার সব চিন্তা আফরিনকেই নিয়ে হচ্ছিলো। মেয়েটাকে যেনো বাসা থেকে কত কথায় না সহ্য করতে হচ্ছে!
পনেরো দিন কেটে গিয়েছিল। আর চার দিন পরেই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। এই পনেরোটা দিনে আফরিনকে একটাবারের জন্যেও আমি দেখতে পাইনি। আমার মনের অবস্থাটা যে কি পরিমাণ জ্বলসে যাচ্ছিলো তা শুধু আমি নিরবে অনুভব করে যাচ্ছিলাম। মেয়েটাকে নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছিলো! কিছু হলো না তো আবার! সেই চিন্তাটা যেনো আরো তিন দিন চলে যাওয়ার পর অবসান ঘটলো। রাত দেড়টা হবে আমি রাতে কাজ শেষে বাড়িতে এসে রুমের সব কিছু গুছাতে ছিলাম। সকালেই এইবাড়ি ছেড়ে মালিবাগে ঠিক করা ম্যাচে উঠতে হবে। ঠিক তখনি আফরিনের আওয়াজ পেলাম। মেয়েটা আমাকে ডাকতেছে। আমি সব কিছু রেখে রুম থেকে বাহিরে বেড় হয়ে দেখি আফরিন এতো রাতে ছাদে। আমাকে দেখেই মেয়েটা বলে উঠলো, কাল সকালে চলে যাবেন? “হুম! তুমি কার থেকে শুনলা? আর তুমি এই কয়টা দিন কেন দেখা করতে আসলা না? “সেইদিন মা যখন বলছিলো আপনাকে এই বাড়ি ছাড়া করাবে তখনি বুঝে নিয়েছিলাম আর আমাকে এই কয় দিন রুম থেকে বেড় হতে দেয়নি। পালিয়ে আপনার সাথে দেখা করতে আসছি। তাড়াতাড়ি আপনার ফোন নাম্বারটা একটা কাগজে আমাকে লিখে দিন।
আমি আর দেড়ি না করে রুমে ঢুকে আমার নাম্বারটা লিখে এনে আফরিনের হাতে দিলাম। কেন যেনো নাম্বারটা ওর হাতে দিয়ে ওর হাতটা একটু ধরতে ইচ্ছা করছিলো। আমি কিছুনা ভেবে আস্তে করে ওর হাতটা চেপে ধরলাম। আফরিন আমাকে এরকম কাজটা করাতে কিছুই বল্লোনা। প্রায় মিনিট খানিক পাড় হওয়ার পর আফরিন বল্লো, বাসায় যেতে হবে। কেউ বুঝে ফেললে আমার খুব সমস্যা হবে। আমি আর দেড়ি না করে ওর হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলাম, যাও। তারপর মেয়েটা আর দেড়ি না করে চলে গেছিলো।
মালিবাগ আসার পর কোনোমতেই মনটা টিকছিলোনা। আশায় বসে ছিলাম কখন আফরিনের ফোনটা আসবে। প্রায় এক সাপ্তাহ পর মেয়েটার ফোন আসলো।বাড়ি থেকে নাকি ওর মোবাইটাও নিয়ে নিছে। তাই প্রতি সাপ্তায় ওদের বাড়ির এক ভাড়াটিয়া ভাবির নাম্বার দিয়ে আমার সাথে কথা বলবে তা ঠিক করলো। কিন্তু প্রতি সাপ্তাহ বল্লে ভুল হবে! আফরিন দুই দিন পর পরেই আমাকে ফোন দিতে লাগলো। খুব করে যেনো আমার খোজ খবরটা নিতে লাগলো। আমার প্রতি যে ওর কিছু একটা হতে যাচ্ছে আমি স্পষ্ট তা বুঝতে পারছিলাম।
প্রায় দুই মাসের মধ্যে আফরিনের সাথে মোবাইলে যত কথা হয়েছে একটা বারের জন্যেও ওকে হাসিমাখা কণ্ঠ ছাড়া কথা বলতে শুনীনি। কিন্ত কয়েক দিন যাবৎ দেখছিলাম আফরিনের কথা বলার মাঝে আর সেই রকম হাসিমাখা কণ্ঠটা খুজে পাইনা। এই নিয়ে অনেকবার বলেছি ওকে, কেন আগের মতো হাসিখুশি ভাবে কথা বলোনা। এর জবাবে মেয়েটা আমাকে অনিচ্ছা থাকা স্বত্বেও হেসে বলেছিলো, কই সবসময় যেইভাবে কথা বলি ঠিক সেইভাবেইতো কথা বলছি। কিন্তু আমার মন বলছিলো কিছু একটা হয়েছে। সত্য যে কখনো লুকানো থাকে না তার প্রমাণ পেয়েছিলাম আরো কিছুদিন পর। আমি আর আমাদের কোম্পানির আর.এস.এম স্যার কাজ শেষে বিকেলবেলা চা খাচ্ছিলাম। ঠিক সেই সময়টাতেই আফরিনের ফোন আসলো। ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই আফরিনের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেছিলাম। মেয়েটা কান্না থামিয়ে বলে উঠলো, আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলছে। আমার অনিচ্ছা থাকা স্বত্বেও। বাসা থেকে খুব চাপ দিচ্ছে। কাল নাকি কাবিন করাবে। আমাকে আপনি নিয়ে যান।
আফরিনের কথাটা শুনে আমি কি বলবো কিছুই জেনো বুঝতে পারছিলাম না। আমাকে চুপ করে থাকা শুনে আফরিন আবার আমাকে বলে উঠলো, আমাকে বিয়ে করতে পারবেন না? আমার এইখানে থাকতে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আপনি এখনি আমাকে আপনার সাথে করে নিয়ে যান।
আফরিনের মুখে এইরকম কথাটা শুনে আমি একদম স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এখন আমি কি করবো কিছুই যেনো মাথায় আসছিলোনা। আমার মুখ দিয়েও যেনো কোনো কথা বেড় হচ্ছিলোনা। মেয়েটা আমাকে এতোটা আপন করে ফেলেছে তা ভাবতেও আমার অবাক লাগছে। আমার কোনো কথার আওয়াজ না পেয়ে আফরিন কিছুটা রাগ হয়েই ফুপাতে ফুপাতে বলে উঠলো, ওহ! পারবেন না আমাকে বিয়ে করতে তাই না? এতো দিন শুধু মায়া দেখিয়ে আমার সাথে কথা বলছেন তাই তো! ঠিক আছে আমার রাস্তা আমি বেছে নিতেছি।
মেয়েটার এই কথাটা শোনার পর আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। যা হওয়ার হবে ওকে আমার কাছেই নিয়ে আসবো। আমি ওকেই বিয়ে করবো। তারপর আমি বল্লাম, তুমি গুলিস্তান স্টার হোটেলের সামনে চলে আসো আমি আসতাছি তোমাকে নিতে।
“তাহলে এতোক্ষণ চুপ করে ছিলেন কেন?
“তোমার কথা শুনে।
“তাড়াতাড়ি আসেন আমি এখনি বেড় হচ্ছি।
“আচ্ছা ঠিক আছে।
কথাটা বলেই ফোনটা রেখে আমাদের কোম্পানির আর.এস.এম এর সাথে আফরিন আর আমার সব কথা শেয়ার করলাম। তিনি কাহিনীটা শোনার পর তার বউকে ফোন দিয়ে বল্লো রেডি হয়ে থাকতে তিনি ফোন দিলেই জেনো তাদের যেই কাজি অফিসে বিয়ে হয়েছে সেইখানে চলে আসে। কথাটা বলেই আর.এস.এম স্যারকে নিয়ে গুলিস্তান যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। বাসে উঠার পর আর.এস.এম স্যার বল্লো তাদেরও নাকি পালিয়ে বিয়ে হয়েছিলো। তবে তাদের কাহিনীটা অন্যরকম ছিলো।
গুলিস্তান আসার পর স্টার হোটেলের সামনে যাওয়ার সাথে সাথেই দেখলাম আফরিন দাঁড়িয়ে আছে। তারপর ওকে নিয়ে সোজা নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। সেইদিন রাতেই আফরিনকে নারায়ণগঞ্জের এক কাজী অফিস থেকে বিয়ে করে আর.এস.এম স্যারদের বাসায় উঠেছিলাম। আর.এস.এম স্যারের বউ মহিলাটা খুবি ভালো একটা মানুষ ছিলো। তিনি বলেছিলেন ভালো রুম না পাওয়া পর্যন্ত আমরা জানি তাদের বাসাতেই থাকি। সেই দিন রাতে আফরিন আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিল। আমি মেয়েটার কান্নটা কিছুতেই থামাতে পারছিলামনা। বার বার একটা কথাই মেয়েটা বলছিলো, আমি আপনার কাছে কিছুই চাই না, শুধু একটু শান্তিতে থাকতে দিয়েন।
একটু সুখ দিয়েন আমি আর কিছুই চাই না। সেইদিন সারাটা রাত মেয়েটা আমার বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে যাচ্ছিলো। মনে মনে সেইদিন একটাই প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছিলাম। এই মেয়ের চোখে আমি কোনো দিন পানি আসতে দিবোনা! কখনোই না! আমাকে ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে আফরিন আমাকে আবার বলে উঠলো, তো কাল কয়টা বাজে রওনা দিবে গ্রামে? আমি আর চুপ করে না থেকে বলে উঠলাম, সকাল নয়টায়।
আফরিন আমার কথাটা শুনে রুম থেকে বেড় হয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো। নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো। গ্রামে যেয়ে কি করে এই মেয়েটাকে ছাড়া থাকবো। এইবার রোজার ঈদে গ্রামে যেয়েও মনটা এই মেয়েটার দিকেই পড়ে ছিলো। শান্তিতে যেনো একটা মুহূর্তেও থাকতে দেয়নি। এইবার কি করে থাকবো ওকে ছাড়া। এইবার রোজার ঈদে কি বেইমানের মতোই না কাজটা করেছিলাম আমি। মেয়েটার চোখে পানি দেখেও কিছু করতে পারিনি। তবুও গ্রাম থেকে আসার পর কোনো অভিযোগ ছিলোনা মেয়েটার। কি পাগলামিটাই না করলো গ্রাম থেকে ফিরার পর। কথাটা ভাবতে না ভাবতেই আফরিন খাবার নিয়ে রুমে হাজির হলো। আমাকে ভাত বেড়ে দিয়ে নিজেও ভাত নিয়ে খেতে লাগলো। আমি খেতে খেতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার মুখটা খুব মলিন হয়ে উঠেছে।
রাতে খাওয়াটা শেষে দুইজনেই শুয়ে পরলাম। কেন যেনো চোখদুটো মিলাতেই পাচ্ছিলামনা। কি করবো আমি! ওকে একা রেখে গ্রামে কি করে যাবো! কিভাবে থাকবে ও আমাকে ছাড়া! বার বার যেনো মাথায় এই কথাগুলো ঘুরপাক খেতে লাগলো। আমি আর কিছুই ভাবতে পারছিলাম না। নাহ! ওকে একা রেখে গ্রামে যাবোনা গ্রামে গেলে ওকে সাথে করেই নিয়ে যাবো। কথাটা ভেবেই রাতের আধারে ওর দিকে তাকালাম। আফরিন আমার পিছু ঘুরে শুয়ে আছে। আমি আস্তে করে ওর কোমরে হাত রাখতেই খেয়াল করলাম ওর হাতটা ওর চোখের দিকে নিয়ে চোখটা মুছে আমার দিকে ঘুরে বলে উঠলো, কি ব্যাপার তুমি ঘুমাও নাই?
আমার আর বুঝতে বাকি রইলোনা এতক্ষণ ও কেঁদেছে। আমি আর কিছুনা ভেবে বলে উঠলাম, ঘুম আসতেছে না।
আমার কথাটা শুনে আফরিন আমার কিছুটা সামনে এসে আমার গালে একটু হাত রেখে মাথা বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলো, চোখ বন্ধ করো এখনি ঘুম চলে আসবে। আমিও ওর কথামতো চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইলাম। ভোর পাঁচটা কি সাড়ে পাঁচটা হবে সূর্যটাও এখনো উঠেনি ঠিক তখন ঘুমে থাকা অবস্থায় অনুভব করলাম আফরিন শোয়া থেকে উঠে আমার কপালে একটু হাত রেখে বিছানা থেকে নামতে যাচ্ছে। আমি আস্তে করে ওর হাতটা ধরে বলে উঠলাম, কি হইছে কই যাও? আমার কথাটা শুনে আফরিন বল্লো, নাস্তা বানাতে হবে না! একটু পর না তুমি চলে যাবা?
“নাস্তা বানাতে হবে না। শোও তুমি।
“পাগল হইছো! নাস্তা না বানালে খাবো কি?
“বাসে উঠার আগে হোটেল থেকে খেয়ে নিবো দুইজন। আমার কথাটা শুনে আফরিন কিছুটা অবাক হয়ে বলে উঠলো, মানে!!
“মানে কিছুনা। আটটা বাজে দুইজন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে। কাপড় চোপড় গুছিয়ে ডাইরেক্ট কুমিল্লা।
“আমাকেও নিয়ে যাবে তোমার সাথে করে!
“হুম!
আমার উত্তরটা শোনার পর আফরিনের মুখে যেনো তৎক্ষণাৎ এক খুশির আভা দেখতে পেয়েছিলাম। আমি আস্তে করে ওর হাতটা ধরে টান দিয়ে আবার বলে উঠলাম, শোও তো এখন তুমি। আফরিন এইবার আমার খুব কাছে এসে আমার গলাটা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো, মা কি আমাকে মেনে নিবে? কথাটা বলেই আফরিন আমার চোখের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকালো। ওর কথাটা শুনে আমি বল্লাম, হুম নিবে।
“যদি না নেয়?
“তাহলে দুইজন মা’র দুই পা ধরে বসে থাকবো। এমনিতেই পড়ে মেনে নিয়ে বাপ ডাকবে।
আমার কথাটা শুনে আফরিন কিছুক্ষণ হেসে মুখটা মলিন করে বলে উঠলো, আমার মা’র মতো করে কি ভালবাসবে আমাকে? “নিজের মেয়ের মতো করে ভালবাসবে! জানো! মা তার ছেলের বউয়ের জন্য যত্ন করে অনেক কিছু জমিয়ে রাখছে। প্রথমত একটু কষ্ট পেতে পারে। ব্যাপারটা বুঝোই তো! এ নিয়ে তুমি চিন্তা করোনা। সব কিছু আমি ম্যানেজ করে নিবো। হুম! তারপর আমি গ্রামে থেকে যাবো কেমন? কথাটা বলেই আফরিন মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। আমি ওকে একটু চেঁচিয়েই বল্লাম, কি! দরকার নাই। আমি একা থাকতে পারবোনা।
“আগে কিভাবে থাকছো?
“আগের দিন বাঘে খাইছে। এখন তোমাকে নিয়ে থাকার অভ্যাস হয়ে গেছে।
“ইশ! আসছে আমার অভ্যাস ওয়ালা।উঠো ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নেই।
“আরেকটু শুই না ভালোই লাগতাছে।
“আর ভালো লাগতে হবে না উঠো তুমি।আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।
কথাটা বলেই আফরিন শোয়া থেকে উঠে ওর চুল গুলো ভালো করে বেধে আমার দিকে তাকিয়ে খুব যেনো খুশি হয়ে আমার কপালে জড়তে একটা চুমু দিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। ওর এরকম খুশিটা দেখে আসলেই নিজের কাছে অন্যরকম লাগছিলো। আল্লাহ আল্লাহ করে মা ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিলেই চলে। ইশ! তখন যে আফরিন কতটা খুশি হবে! তখন শুধু আমি আনমনে ওর খুশিগুলো অনুভব করবো।
সমাপ্ত