নৃশংস খুন

নৃশংস খুন

আমি একটা খুন করেছি।
ভুল বললাম,একটা নয় দু’জন কে। নৃশংস খুন যাকে বলে,ঠিক তেমন।তবে খুন টা বড় কথা নয়। খুন তো যে কেউ করতে পারে।আমার মনে হয়েছিল,ওদের দু’জনের বেঁচে থাকা উচিত নয়, তাই খুন করেছি।কিন্তু মজার ব্যাপার হল,পুলিশ আমাকে ধরতে পারছে না। প্রতিদিন পুলিশের সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি,খুনি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও বলে দিচ্ছি, কিন্তু তার পরে ও পুলিশের ধরার ক্ষমতা নেই।এই দেখুন,এখন থানায় এসে বসে আছি….।

(১)

গল্পটা তাহলে একটু আগে থেকেই বলি।বছর খানেক আগের কথা।সেদিন আমাদের বিবাহবার্ষিকী।এক বছর পুর্ন হল আমাদের বিয়ের।সকাল থেকে মন টা বেশ ভালোই।এদিন সবারই মন ভালো থাকে।আমারও আছে।এ দিন এলেই বিয়ের সেই কথা মনে পড়ে।বাড়ি জুড়ে কত মানুষ জন,আলোর রোসনাই,সানাই এর সুর, মেয়েদের উলুধ্বনি,সাত পাকে ঘোরা,শুভদৃষ্টি, কান্নাকাটি আরও অনেক কিছু।সবেমাত্র এক বছর,তাই হয়তো আমার এত কিছু মনে আছে। পুরানো হলে হয়তো থাকবে না।আবার থাকতেও পারে।

ভোর থেকে উঠেই ব্যস্ত অসিত।আমার দিকে তার থাকানোর সময় নেই।ঘড়িতে আট টা বাজে। এখনো পর্যন্ত শুধু একটা মাত্র চুমু।ভালো লাগে এরকম! রাতে অসিত কে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করেছিলাম,-“কাল কি গিফট দেবে আমাকে?”
-“এখন বলবো না।কাল যখন দেবো দেখতে পাবে।সারপ্রাইজ এটা।” বলেছিল অসিত।

সব কিছুরই কারন থাকে।তেমনি অসিতের ব্যস্ততার কারন আছে। আমাদের বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে একটা পার্টির আয়োজন করেছে অসিত।বড় পার্টি নয়।তার অফিসের বস আসবে। তাই এত ব্যস্ততা। দক্ষিন কলকাতার বাঘাযতীনের কাছে একটা ফ্লাটে থাকি আমরা। অফিসের কাছাকাছি হওয়ার কারনেই,এই ফ্লাট টি পছন্দ হয়েছিল তার।মন্দ নয়! আমারও খারাপ লাগেনি।জানালা দিয়ে বাইরের দখিনের খোলা আকাশের অনেক টা দেখা যায়।সামনে ট্রেনের যাতায়াত।নতুন বিয়ের পর এখানে এসে খুব একা একা লাগতো।তখন নীল আকাশ দেখতাম।অসিত সারাদিন কাজের ব্যস্ততায় বাইরে কাটাতো।শুধু রাত টুকু আমাকে সময় দিত।আমি হেসে জিজ্ঞেস করতাম,-“তোমার সারাদিন আমার কথা মনে পড়ে না?আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে না?”

অসিত হেসে আমার গাল টিপে দিয়ে বলতো,-” তোমাকে দেখি তো সারক্ষন।” কথাটা বলে,ওর বড় ট্যাব থেকে আমার একটা ছবি করে দেখালো।আমার হাসি পেত ওর কান্ড দেখে।
ঘড়িতে ন’টা বাজে। অসিত হাঁকলো,-” রিয়া,কি করছো তুমি! কি কি বাজার করতে হবে বলো? একটা জিনিষ যেন বাদ না পড়ে।”

আমি কিচেন থেকে বেরিয়ে এসে বললাম,-“আরে বাবা! বাজারের লিস্ট করে দিয়েছি। টেবিলের উপর রাখা আছে দেখো।”
অসিত বাজারের লিস্ট নিয়ে আমার কাছে এল।কাছে টেনে নিয়ে বলল,-“আমার বস কে বলেছি, আজ আমার বউ নিজে হাতে রান্না করে খাওয়াবে।”
-“এক জন লোক আসবে,তার জন্যে এত কিছু!” বললাম আমি।
অসিত ব্যাগ টা নিয়ে বেরিয়ে গেল।আমি গিয়ে বেডরুমে ঢুকলাম।অনেক কাজ।ঝেড়ে মুছে সব কিছু পরিষ্কার করা চাই।ঝকঝকে লাগে যেন। এমনিতে অনেক দিন পরিষ্কার করা হয় না।এই উপলক্ষে যদি সেটাও হয়,তো মন্দ কি!

(২)

আমার নাম রিয়াশ্রী সেন।প্লেন বি.এ পাশ।পাঁচ ফুট,তিন ইঞ্চির মতো লম্বা।চেহারা মোটার দিকে হলেও ততটা মোটা আমি নই।চলনসই। গত মাসে পঁচিশ তম জন্মদিন পালন হয়েছে। নদীয়া জেলার কল্যানী শহরে আমার বাড়ি।এই হল মোটামুটি আমার ব্যাকগ্রাউন্ড। অসিত কে আমার প্রথম দেখায় ভালো লেগেছিল।ছ’ফুটের মতো লম্বা চেহারা,ফর্সা,টিকালো নাক, একটু লম্বাটে মুখ,জোড়া ভুরু, মাথায় ছোটো ছোটো করে কাটা কালো চুল।চোখের সাদা কাচের চশমা।আমাকে সব থেকে কাছে টেনেছিল ওর চোখের চাহনি।আর মুখের মুচকি হাসি।আমার বাবার বন্ধুর ছেলে অসিত। সেবার আমার দিদির বিয়ে ছিল।বিয়ের নিমন্ত্রনে অসিত আর বাবা,ও মা এসেছিল। সেই প্রথম দেখা! তারপর ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা। লাভ এট ফার্স্ট সাইট!সিমপল লাভস্টোরি।
কোন দিক দিয়ে পরিষ্কার শুরু করবো বুঝতে পারছি না। উপর টা এখন থাক।অসিত এলে দেখা যাবে। নীচের দিক থেকে পরিষ্কার করা শুরু করলাম আমি।দু’ঘন্টা বাদে অসিত এল। দু’হাতে দু’টো বড় বড় ব্যাগ।আমার মনে হল, বাজারের সমস্ত জিনিষ একাই অসিত একাই তুলে এনেছে।এসেই হাঁফাতে হাঁফাতে বলল,-“ব্যাগ গুলো ধরো।”
-“এত কি এনেছো?”আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
-“শুধু বাজার নয়,তোমার গিফট ও এনেছি।” হেসে বলল অসিত।
-“কি গিফট!”আমি ঝুঁকে পড়লাম ব্যাগের উপর
ব্যাগের ভেতর থেকে একটা প্যাকেট বের করলো অসিত।আমি কেড়ে নিলাম ওর হাত থেকে প্যাকেট টা। এক টানে খুলে ফেললাম।যত উচ্ছ্বসিত হয়ে প্যাকেট টা খুলেছিলাম,ততটাই মনটা দমে গেল।পোষাক টা প্যাকেটের উপর রেখে দিয়ে শোকাহত মনে বললাম,-“এরকম পোষাক আনতে হল! তুমি তো জানো,আমি এত ছোটো পোষাক পরি না।”
-“কেন! অনেক খুঁজে তোমার জন্যে আনলাম। আজ সন্ধ্যাবেলা এই ড্রেস টা পরবে তুমি।” অসিত বলল।
-“কি বলছো! আমি ওনার সামনে এই ড্রেস পরতে পারবো না।”বিস্মিত হয়ে বললাম আমি।
হঠাৎ রেগে উঠল অসিত।বলল,-” ন্যাকামো ছাড়োতো!তুমি কি চাও আমার সন্মানহানি হোক? অত বড় বড় লোকের সামনে শাড়ি পরবে!”
-“কিন্তুু!”
আমার কথা শেষ হল না।তার আগেই অসিত হেসে বলে উঠল,-” আর কোনো কিন্তু নয়, সোনা। তুমি এটাই পরবে।খুব ভালো দেখাবে তোমায়।”
ওর হাসি আমার খুব ভালো লাগে। সব কিছু ভুলে যাই ওর হাসি দেখলে।-“আচ্ছা,তুমি যখন
চাইছো, পরবো।”
ব্যাগ গুলো নিয়ে আমি কিচেনে ঢুকে যাই।দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়।ঘরের কাজ সবই শেষ। অসিত নিজেই একা হাতে করেছে প্রায়।সারা ঘরে রুম ফ্রেশনার ছড়িয়ে দিয়েছে।তার একটা গন্ধ ভুর ভুর করে ঘুরপাক খাচ্ছে। রঙিন আলো লাগিয়েছে।কেকের অর্ডার দেওয়া আছে।সন্ধ্যা বেলা ঠিক সময়ে চলে আসবে।বিকাল থেকেই দুজনে কিচেনে।অনেক কিছুর আয়োজন। আমার সাথে তাল মিলিয়ে অসিত ও হাত লাগিয়েছে।

(৩)
সন্ধ্যা হতেই,ফ্লাটের ছোট্টো ঘরটিতে রঙিন আলো জ্বলে উঠে।সাউন্ড সিস্টেমে হালকা সফট গান চলছে। কেক এসে গেছে অনেক আগেই। শুধু গেস্ট আসতে বাকি।অসিত বার বার ঘড়ির দিকে চাইছে।আমি আয়নার সামনে দাড়িয়ে লাস্ট ফিনিশিং টানছি।ড্রেস টা বড্ড ছোটো। আমার সারা শরীরের উপর যেন আঠার মতো সেঁটে আছে।হাঁটুর কিছুটা উপরে উঠে আছে নীচ টা।কয়েকবার নিচে টানলাম। কিছুতেই গেল না।বিরক্ত হয়ে অসিত কে বললাম,-“ড্রেস টা না পরলেই নয়! অন্য কিছু পরি,না!”
হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অসিত বললো,-“তাড়াতাড়ি পরো তো। ওনার আসার সময় হয়ে গেল।”
কিছুসময় পর দরজায় কলিং বেলের শব্দ হল। অসিত ছুটে গেল দরজা খুলতে।এক জন লোক দাঁড়িয়ে।বেশ লম্বা।স্মার্ট।মধ্যবয়সী।লোকটি ঘরে ঢুকলো। খুব অস্বস্তি হচ্ছে আমার।আস্তে আস্তে সামনে গিয়ে বললাম,-” হ্যালো! বসুন।”
লোকটি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল-“হাই!নাইস ড্রেস।সেক্সি লেডি।”

বুকটা কেঁপে উঠল আমার।হাত দু’টো বুকের কাছে এনে,নমষ্কার করলাম।লোকটি মুচকি হাসলো।অসিত কেক আনলো।আমি কেক কাটলাম।অসিত কে খাইয়ে দিলাম। লোকটিও পরে খেল। কিছু সময় কাটলো।আমি কিচেনে গিয়ে খাবার রেডি করতে লাগলাম। অসিত এসে ঢুকলো।আমার পাশে এসে বলল,-“রিয়া,চলো, উনি তোমাকে ডাকছেন।”
-“কেন?” বললাম আমি।
-“জানিনা।”
অসিত আমার হাত ধরে প্রায় জোর করে নিয়ে গেল।আমার বুকটা দুরু দুরু করছে।লোকটি এখন আমার বেডের পাশে সোফার উপর বসে আছে।পাশে ড্রিঙ্কের বোতল।অসিত কখন এসব আনলো!আমাকে দেখেই লোকটি বলল,-“বসুন, আপনার সাথে একটু গল্প করা যাক।”

হাসলাম আমি।ফ্যাকাসে হাসি। তারপর লোকটির পাশে গিয়ে বসলাম।একটা ছোটো প্যাকেট বের করলো লোকটি।সেটা খুলতেই চকচক করে উঠল।হিরের আংটি! হঠাৎ আমার হাত ধরে আংটি টা আমাকে পরিয়ে দিতে দিতে বলল,-“এটা আপনার জন্যই এনেছি।আর আপনাকে চিন্তা করতে হবে না,এবার আপনার স্বামীকে আমার কোম্পানির বিজনেস পার্টনার বানাবো।কিন্তু সব কিছু তো আর এমনি এমনি হয় না!”

কখন অসিত বাইরে চলে গেছে আমার খেয়াল নেই।ঘরের দরজা ও বন্ধ।লোকটি একটু একটু করে আমার খুব এসে পড়েছে।আমি চিৎকার করলাম,-“অসিত!”
কোনো উত্তর এল না।

(৪)

আমার কান্না পাচ্ছে।ঘেন্না লাগছে। তবু রাগ হচ্ছে না।অতিরিক্ত আঘাত পেলে কি,মানুষ রাগতে ভুলে যায়?
লোকটি চলে গেছে অনেক আগেই।খাটের উপর বসে আমি কাঁদছি। কাকে ভালোবেসেছিলাম আমি?এ কি সেই অসিত?উপরে উঠতে গিয়ে,এত নিচে নামতে পারে মানুষ।শেষ পর্যন্ত নিজের স্ত্রী কে ও!

না,তখন খুনের কথা আমার মাথায় আসেনি।শুধু ভেবেছিলাম,আমি আর এক মুহুর্তে এখানে থাকবো না।থাকিও নি।ভোর হতেই ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।বেরোনোর আগে,আলমারি থেকে আমার বাবার দেওয়া সমস্ত সোনা গহনা, একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম।আমার হাতেও হিরের টা কে নিলাম। বিপদের সময় এ গুলোই কাজে লাগবে।তারপর বেরিয়ে পড়লাম।

মুম্বাই তে আমার এক ছোটো বেলার বান্ধবী থাকে।বিয়ে-থা করেনি। একাই থাকে।চাকরী করে।আমি ও কে ফোন করে জানালাম,ক’দিন তোর কাছে একটু থাকতে দিবি!

ও রাজী হয়ে গেল।বলল,-“কেন দেব না! চলে আয়,আমার আর একা একা সময় কাটে না। তবুও গল্প করার একটা লোক পাব।”

ট্রেনের টিকিট কেটে মুম্বাই চলে গেলাম আমি। বেশ কিছুদিন কাটলো।শকড অনেকটা কমে গেছে। কিন্তু মনের মধ্যে এবার প্রতিশোধের একটা আগুন জ্বলল।একটাই লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ালো, ওদের দু’জন কে খুন করার।না,এসব মানুষদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। মনে মনে মুম্বাই তে বসে প্লান টা ছকে নিলাম। তারপর এক বছর পর আবার কলকাতায় ফিরলাম। একবছর! আপনারা ভাবছেন,খুন করতে একবছর সময় লাগলো?হ্যাঁ, আমার তাই লেগে গেল।কারন আমি যে সে খুনি নই।
কলকাতায় ফিরে দেখতে পেলাম,অসিত এখনো সেই ফ্লাটেই আছে। আমাদের রুমের পাশের একটা রুম ফাঁকা পেয়ে গেলাম। সেটাই নিয়ে নিলাম। কিছুদিন ওর গতিবিধি লক্ষ্য করলাম। কিছুই টের পেল না অসিত।ওর অফিস কোথায় আমি জানতাম। সেখানে গিয়ে সেই লোকটির ও অ্যাড্রেস জোগাড় করে ফেললাম। আলিপুরের কাছে কোথায় যেন থাকে!

দু’জন কে খুন করতে আমার একদিন টাইম লেগেছিল।সন্ধ্যায় ওই লোকটিকে খুন করে এসে রাতে আমার বেডরুমের উপর অসিত কে খুন করলাম।ছুরি দিয়ে কুচিয়ে কুঁচিয়ে খুন।সেদিনের কথাটা যতবার মনে পড়ছিল,ততটা ছুরির দাগ বসে যাচ্ছিল ওর শরীরে। কাজ কমপ্লিট করে বেরিয়ে এলাম। সকাল বেলা পুলিশ এল।ফ্লাটের অন্যরা সবাই অবাক। সারা ঘর ভালো করে দেখলো পুলিশ।লাশ টি কে ও। একজন পুলিশ বলল,-” আমার মনে হয়,কেউ রাগে প্রতিশোধ নিতেই এ খুনটা করেছে। নইলে এত গুলো ছুরির দাগ কেন থাকবে!”

অন্য পুলিশটি মাথা নাড়লো।তারপর সবার দিকে তাকিয়ে বলল,-” আপনারা রাতে কোনো কিছুই দেখতে পাননি! কোনো আওয়াজ, চিৎকার…..।”
সবাই দু’দিকে মাথা নাড়লো।আমি হাত তুলে বললাম,-“হ্যাঁ,আমি দেখেছিলাম।”
পুলিশ টি আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,-“কি দেখেছিলেন বলুন?”
-“অনেক রাতে একটা মহিলাকে সঙ্গে করে এনেছিলেন ইনি।ফ্লোরে দাঁড়িয়ে বেশ জোরে জোরেই কথা বলছিলেন।আমি একবার দরজা খুলে দেখেছিলাম।দুজনেই বেশ উত্তেজিত। অন্যের ব্যাপারে আমার তেমন ইন্টারেস্ট নেই। তাই আমিও ওটা নিয়ে মাথা ঘামাইনি।নিজের ঘরে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।আর কিছু জানি না।” বললাম আমি।
-“কি রকম দেখতে ছিল মহিলা টি বলতে পারবেন?” পুলিশে চোখে বিস্ময়।
আমি একটু ভেবে,নিজেরই বর্ননা দিলাম,-“পাঁচফুট তিন কি চার ইঞ্চি হবে উচ্চতা। লাইটের আলোয় ফর্সা দেখাচ্ছিল,গোল মুখ।দেখতে বেশ ভালোই।চেহারা একটু মোটার দিকে,তবে খুব মোটা নয়।”
পুলিশ সব লিখে নিল।তারপর ঘরের চারিদিকে ঘুরলো।ড্রয়ার,খাট, বিছানা,সব দেখল।একটা ফোটো বের করে আমার কাছে এল পুলিশ টি।-“দেখুন তো,ফোটোর এই মহিলাটি কি না?

আমি ফোটো টি হাতে নিয়ে ভালো করে দেখে, বিস্ময়ে বললাম,-“হ্যাঁ! এই তো সেই মহিলাটি।” ফ্লাটের অন্য সবাই ফোটোটা দেখে বলল,-“ইনি তো,ওনার স্ত্রী।এক বছর হয়ে গেল,ওনার স্ত্রী আর এখানে থাকেন না।সম্ভবত অন্য কোথাও চলে গেছেন।”
পুলিশ ছবিটি কাছে রাখলো।তারপরলাশ টি নিয়ে চলে গেল।আপনারা অবাক হচ্ছেন তো! অবাক হবারই কথা।আরেকটু পড়ুন তবে।

(৫)

মজার ব্যাপার হল এটাই। প্রতিদিন পুলিশের সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি,খুনি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও বলে দিচ্ছি,কিন্তু তার পরে ও পুলিশের ধরার ক্ষমতা নেই।এই দেখুন,এখন থানায় এসে বসে আছি।পাঁচ মিনিট বসে থাকার পর ভেতর থেকে আমার ডাক এল।আমি ভেতরে গেলাম। একটা চেয়ার দেখিয়ে পুলিশ টি বসতে বলল। বসলাম আমি।দু’টো চায়ের অর্ডার হল।চা খেতে খেতে পুলিশ টি বলল,-“দেখুন,আরেকটা খুনের কেস এসেছে আমাদের কাছে।আর ঘটনাটা হল, যে দু’জন খুন হয়েছেন, তারা পরষ্পর বিজনেস পার্টনার ছিল।তাদের অফিসে গিয়ে,তেমন ই রিপোর্ট পেলাম।আমাদের মনে হচ্ছে,এই দুটো খুনের একটা যোগসূত্র আছে।এবং খুনি একজনই।”
আমি হেসে বললাম,-“সেটা তো আমি জানি না।”
পুলিশ টিও হাসল।বলল,-“সেটাও ঠিক।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। কিছুটা তো সাহয্য করলেন আমাদের।”
একটা ধন্যবাদ জানিয়ে আমিও বাইরে বেরিয়ে এলাম। বাইরের পরিবেশ টা ঝকঝকে।রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে হাসি পেল আমার।নিজের বর্ননা দিলাম, অথচ পুলিশ বুঝতেই পারলো না। কি করে পারবে?আমি তো নিজেকেই চিনতে পারি না,আর পুলিশ কি করে পারবে! কারন আমি তো আর রিয়াশ্রী সেন নই। আমি একটা ছেলে।মুম্বাই তে গিয়ে সমস্ত সোনার গহনা,হিরের আংটি বিক্রি করে টাকা জমিয়ে, সেক্স রিসাইগমেন্ট সার্জারির মাধ্যমে আমি এখন ছেলে হয়েছি।কারও না চিনতে পারাটাই স্বভাবিক।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত