তৃতীয় পক্ষ

তৃতীয় পক্ষ

হোসাইন ভাই, সামনে বটগাছের মোড়ে যে চায়ের দোকান গুলো দেখছেন ওখানে একটু থামান গাড়িটা। সকাল সকাল এখানেকার চায়ের মজাই আলাদা। হোসাইন ভাই ঠিক আছে স্যার বলে গাড়িটা মোড়ের এক পাশে থামালেন। গাড়ি থেকে নেমে জানালা দিয়ে হোসাইন ভাইকে বললাম, আপনিও নেমে আসুন। একটু চা খাওয়া যাক।

হোসাইন ভাই বের হয়ে একটু আমতা আমতা করে বললেন, স্যার, উনি চা খাবেন না? এটা শুনে আমি গাড়ির দিকে তাকিয়ে বলি, এসব দোকানে চা খেয়ে উনি অভ্যস্ত নয়। তখনি গাড়ির পেছনের সিটের জানালা টা খুলে গেলো। জানালা দিয়ে মাথা বের করে দিয়ে রিশা চারপাশটা দেখে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, আমরা কি পৌছে গেছি? আমি হোসাইন ভাইর দিকে তাকিয়ে রিশাকে বললাম, না পৌছাইনি। হোসাইন ভাই সারারাত ড্রাইভ করেছে আর মাঝখানে উনাকে বিশ্রাম দিয়ে আমি নিজেও ড্রাইভ করেছি। তাই শরীরটা একটু ক্লান্ত লাগছে। এখানকার এক কাপ চা খেয়ে আবার রওনা দিবো। রিশা গাড়ির দরজা খুলে আমাদের দিকে আসতে আসতে বলল, আমাকে ডেকে দাওনি কেনো? আমার কি চা খাওয়ার ইচ্ছা নেই নাকি আমি চা খাইনা? হোসাইন ভাই এসব শুনে কিছু বলতে চেয়েও বললেন না। আমি বললাম, গ্রামের মোড়ে টঙ্গের চা আপনি খেতে পারবেন? এটা শুনে রিশার চোখে বিষ্ময়। হঠাৎ ও দোকানের সামনে গিয়ে বলল, মামা কাপ গুলো ভাল করে ধুয়ে আদা দিয়ে তিন কাপ চা দিন তো। তারপর মগে পানি নিয়ে বটগাছের পাশে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। আমিও একটু পানিতে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
চা খেতে খেতে রিশা বলল, আর কতোক্ষন লাগবে যেতে? আমি বললাম, বেশিক্ষন না। পৌঁছে গেছি প্রায়। হোসাইন ভাই তখন বলল, আরও দুই ঘন্টার মত লাগবে স্যার। রিশা তখন আমার দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম, আমি তো বলেছিলাম বিমানে আসতে। কিন্তু আপনি তো মানা করলেন। আপনার জেদের সাথে যুদ্ধ করার কোন ইচ্ছে নেই তাই গাড়িতেই আসতে হল। এখন খারাপ লাগলে আমার কিছুই করার নেই। রিশা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি কি বলেছি যে আমার খারাপ লাগছে? এতো বেশি বুঝো কেন? আমি চায়ের কাপটা রাখতে রাখতে বললাম, চোখ দেখলেই বোঝা যায় কেমন লাগছে। রিশা তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, আসলেই কি আমার চোখের ভাষা বোঝো তুমি? এটা শুনে ওর দিকে তাকাতেই দেখি ও স্থির দৃটিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর এরকম ভাবে তাকিয়ে থাকার মানে আমি বুঝি আবার বুঝি না তবে কেমন যেন অস্বস্তিকর লাগে। তখনই রাতুলের ফোন। রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে রাতুল বলল, কিরে তোরা কতদুর? আমি বললাম, এইতো বটতলিতে আছি। আর একটু সময় লাগবে। ও বলল, রিশার খবর কি? ওর সমস্যা হচ্ছে নাকি? আমি বললাম, নে কথা বল উনার সাথে বলে ফোনটা রিশাকে দিলাম। রিশা ফোনটা নিয়ে একটু দুরে গিয়ে কিছু কথা বলে ফোনটা আমাকে দিল। আমি ফোনটা নিয়ে বললাম, আপনার সত্যি কি সমস্যা হচ্ছে না, নাকি আপনি বলছেন না, কোনটা? এই কথাটিকে পাত্তা না দিয়ে ও বলল, আমায় নিয়ে এতো ভাবনা কবে থেকে শুরু করলে? এতো ভাবতে হবে না আমি ঠিক আছি। কথাটা কেমন যেন গায়ে লাগলো। রাগ নিয়েই বললাম, আমি ভাবতাম না যদি আপনার দায়িত্ব আপনার বাবা আমাকে না দিতো। এখন গাড়িতে উঠুন বলেই আমও সামনের সিটে বসে দরজা লাগিয়ে দিলাম। হোসাইন ভাই পেছনে দরজা খুলে অপেক্ষা করছে রিশা কখন গাড়িতে বসবে। গাড়িতে বসতেই লুকিং গ্লাসে দেখলাম ও কেমন যেন করুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আবারও এসব উপেক্ষা করে সামনে তাকালাম।

আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি সামনে।রাতুল আমার ছোটবেলার বন্ধু। রিশার সাথে ওর পরিচয় হয় ভার্সিটিতে। একই ডিপার্টমেন্টে পড়তো তারা। আমি অন্য ভার্সিটিতে পড়লেও আমাদের পড়াশুনা এক সাথেই শেষ হয়। চাকুরী জিবনে ঢুকতেই আমি পরে যাই বাস্তবতার বিরুপ চক্রে। অনেক ঘুরেও যেখানে আমি চাকরী পেলাম না সেখানে রাতুল রিশার বাবার কোম্পানিতে চাকুরী পেয়ে গেলো। চাকুরী পাওয়ার সুবাদে আমায় ডেকে নিয়ে যখন সে এক রেষ্টুরেন্টে খাওয়ালো সেদিনেই রিশার সাথে আমার পরিচয় হয়। রাতুল আমার ব্যাপারে সব কিছু জানতো তাই রিশাকেও সে কিছু কিছু বলল। রিশা এসব শুনে ওর বাবার অফিসেই আমাকে প্রথম চাকুরীটা করার প্রস্তাব দেয়। আমি শুনে একটু খুশিই হয়েছিলাম কিন্তু পরোক্ষনেই আবার বলি, আমি কি এই চাকুরীর জন্য যোগ্য? তাছাড়া রাতুলও ওখানে জব করছে আর আমিও যদি প্রথম কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই ঢুকি তবে অফিসের তো ক্ষতি হয়ে যাবে। রিশা এটা শুনে বলল, আসলে রাতুল ওখানে জব পেয়েছে নিজের যোগ্যতা থেকে। আমি শুধুই ওকে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থাটা করে দিয়েছি। তোমাকেও আমি শুধুই তিনমাসের জন্য একটা সুযোগ করে দিতে পারি। সেখানে কাজ শিখে ভালভাবে কাজ করে যদি সবাই তোমাকে সিলেক্ট করে তবেই তুমি জবটা পেয়ে যাবে। আমি সবটা শুনে করুন মুখে শুধু এটুকু বললাম, আমার এরকমি একটা সুযোগ দরকার। আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিব বুঝতে পারছি না। রিশা বলল, আমাকে আপনি করে বলছো কেন? আমরা বন্ধু না? আমি একটু হেসেই বললাম ঠিক আছে। রাতুল কেন যেন মুচকি মুচকি হাসছিলো। এরপর আমি ওদের অফিসে তিনমাসের জন্য কাজ শিখছি। দুমাস পার হওয়ার কিছু দিন পরেই আমি সিলেক্ট হয়ে যাই। সেদিন রাতুল খুশিতে পার্টি দিয়েছিল। রিশা অভিনন্দন জানিয়েছিল। রিশাকে বলেছিলাম, অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি না হলে হয়তো এসব কিছুই হতো না। মৃদু হেসে বলেছিল, তুমি তোমার যোগ্যতায় জবটা পেয়েছো। আমি শুধু তোমাকে সুযোগটা দিয়েছি। আর ধন্যবাদ দিতে হলে রাতুলকে দাও। ও না হলে কিন্তু আমার সাথে পরিচয় হতো না। আমি হাসলাম। বললাম, ও আমার অনেক ভাল বন্ধু। ওকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না। পেছন থেকে রাতুল বলল, তোর জন্য যাই করি তবুও তোর ঋন শোধ করতে পারব না রে। আমি রাতুলকে জরিয়ে ধরে বলি, ভাইয়ের কাছে আবার কিসের ঋন বলতো? পাশে রিশা একটু গলা পরিস্কার করে বলল, আচ্ছা তুমি আমাকে আপনি করে বলছো কেন? আমি কি তোমার বন্ধু নই? আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে হেসে বললাম, না আসলে তেমন কিছু না। এদিকে রাতুল হাসতে হাসতে অন্যদিকে চলে গেলো। আর রিশাকে দেখলাম সামনে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

এখন যাচ্ছি রাতুলের বাসায়। আমার বাসাও অবশ্য একই জেলায় তবে রাতুলদের পাশের থানাতে। খুব একটা দুরে নয়। তাই অনেকটা নিজ শহরের আমেজ পাচ্ছি। ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে। প্রেমের বিয়ে। ওরা নাকি চারবছর প্রেম করে তারপর বিয়ের পিড়িতে বসতে চলেছে। আমিও এসবের কিছু জানতাম না। কিন্তু সেদিন যখন ওর হবু বউ একেবারে অফিসে এসে রিসিপশনে রাতুলের কথা জিজ্ঞেস করলো তখন আর কিছুই গোপন থাকেনি। পুরো অফিস জেনে গেছে। আমি আর রাতুল তখন অফিস ক্যান্টিনে কফি খেতে এসেছি। আর তখনি মেয়েটা চলে আসে। রাতুল তো পুরো হতভম্ব হয়ে গেছে। মেয়েটা রাতুলকে দেখতে পেয়েই দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। পাশে যে আরও মানুষজন আছে এটা ভুলেই গেছে। কাঁদতে কাঁদতেই মেয়েটা বলছে, এতো রাগ হয়েছে। আমার ফোনটাও ধরা যাবে না। জানো কাল সারারাত আমি ঘুমাই নি। কত কষ্ট পেয়েছি তুমি জানো? এদিকে রাতুল বারবার বলছে, এই শশী কি করছো, সবাই দেখছে, এই ছাড়ো তুমি। মেয়েটা আরও জোরে জরিয়ে ধরলো। তখন রাতুলও ওকে জড়িয়ে নিল। পাশে থেকে আমি বললাম, ওই মেয়েটা সারারাত ঘুমায় নি কাল। কি করেছে না জিজ্ঞেস করে তুই চুপচাপ আছিস কেন? মেয়েটা এটা শুনে ওকে ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে রাগী চোখে তাকালো। বলল, কি করেছি মানে? সারারাত কেঁদেছি জানেন। ও আমার ফোনটাও ধরছিলো না। আমি বললাম, সারারাত কত কষ্ট করে কেঁদেছেন আর আজ সকালে না ঘুমিয়ে এখানে কেন এসেছেন? এখন তো আপনার ঘুমানোর কথা। মেয়েটা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আমি রাতুলকে বললাম, আমি কি ভুল কিছু বলেছি? মেয়েটিও রাতুলের দিকে তাকিয়ে আছে জবাবের জন্য। রাতুল কিছু বলছে না দেখে মেয়েটা বলল, এই কিছু বলছো না কেন? কি আবল তাবোল বলছে এই লোকটা? রাতুল কিছুটা তোতলাতে তোতলাতে বলল, হ্যা এই তুই কি বলছিস বলতো? পুরো দৃশ্যটা দেখে রিশা দরজা থেকে দাড়িয়ে হেসে ফেলল। শশীর দিকে তাকিয়ে রিশা রাতুলকে বলল, কবে থেকে কি চলছে বলতো? রাতুল আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, শোন, আমি সব বলছি তোদের। কিন্তু এখানে না, বাইরে চল।

শশী মেয়েটা রাতুলের হাত ধরেই হেঁটে চলেছে। এক মুহুর্তের জন্য ছাড়ছে না। আর আমি পেছন থেকে বলছি, চুইংগাম এর আঠা লাগলে পরে ছাড়ে না। রিশা আজ আমার সাথে হাঁটছে। ও কোন কারন ছাড়াই হেসে চলেছে। অফিসের পাশেই একটা কফিশপে বসে গল্প করছি আমরা। অনেক আগে থেকেই তারা একে অপরের সাথে সম্পর্কে জড়িত। এবার আমি মেয়েটার দিকে তাকালাম। অনেকটা বিদ্ধস্ত মনে হচ্ছে। চোখগুলো ফোলা ফোলা মানে আসলেই কেঁদেছে অনেক। রাতুল শশীকে আমাকে দেখিয়ে বলল, মামুনের কথা বলেছিনা তোমাকে। এই হল মামুন আর ও হল রিশা আমার বন্ধু। মেয়েটা কিছু না বলে মাথা নিচু করে থাকলো। রিশা মেয়েটিকে বলল, নাম কি তোমার? রাতুল বলল, ওর নাম শশী। রিশা রেগে বলল, তোকে জিজ্ঞেস করেছি? ও কথা বলতে পারে না? মেয়েটি রিশার এমন ধমক শুনে রাতুলের হাত ধরে মাথা নিচু করে কেঁদে ফেলল। রাতুল আমাদের জন্য ওকে শান্তনাটাও দিতে পারছে না। রিশা রাতুলকে আমার পাশে বসতে বলল। রাতুল উঠে এলে রিশা মেয়েটার পাশে বসলো। মেয়েটার মাথা উঠিয়ে দেখলো ওর নাখে মুখে পানি গড়িয়ে পরছে। রিশা হেসে ফেলে বলল, শেষমেশ এই মিস কান্দুরীকে বিয়ে করতে হবে তোকে? এটা শোনার পর শশী রিশার দিকে তাকালো। কি মনে করে যেন ও রিশাকে বলল, ও পরশু থেকেই সামান্য একটা কারনে রাগ করে কথা বলে না তাই বাসায় কাউকে না বলে একেবারে চলে এসেছি। ওর সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারি না। রিশা বলল, তো এখন কি করবে? শশী বলল, ও যেন আমার সাথে রাগ করে না থাকে। সবকিছু যেন আগের মত করে নেয়। আমি রাতুলকে রেগে বললাম, সব কিছু যেনো ঠিকঠাক থাকে বুঝছিস। রাতুল কেমন যেন করুন চোখে তাকালো আমার দিকে। শশী তখনি রিশাকে মাথা নিচু করে বলল, আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে। আমি কাল থেকে কিছু খাই নি। রিশা শশীর মাথায় হাত বুলিয়ে রাতুলের দিকে তাকিয়ে খাবার অর্ডার করলো। রাতুল তখন আমার হাত ধরে বলল, বাসায় কেউ জানে না। আমার বলার সাহস নেই। তুই কিছু একটা কর। রিশা বলল, ও কি করবে? বিয়ে তুই করবি তাই তোকেই বলতে হবে। রাতুল বলল, আরে তুই বুঝছিস না। বাড়িতে আমার থেকে মামুনকে বেশি মানা হয়। ও বললে কেউই না করবে না। রাতুল আবারও আমার হাত ধরে অনুরোধ করলো বাড়িতে বলে সব কিছু মেনে নেওয়ার জন্য। আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম, পার্টি কোথায় কখন দিবি বল? শশী হটাৎ করে আমাকে বলল, আপনার যেখানে ইচ্ছা সেখানেই পার্টি হবে। দরকার হলে আমি রান্না করে খাওয়াবো। তারপরও কিছু একটা করুন। কান্নামুখে মেয়েটার হঠাৎ চাঞ্চল্লতায় আমি আর রিশা হেসে ফেললাম। তারপর তো আজ যাচ্ছি ওদের বিয়েতে।

রাতুলের বিয়ে তাই ও একটু আগে ছুটি নিয়ে চলে গেছে। আমি বিয়ের আগে আগেই চলে যাবো। রিশাও যাবে জানতাম তবে আমার সাথে যাবে এটা জানতাম মা। সেদিন অফিসে রফিক ভাইর সাথে অফিসিয়াল ব্যাপারে কথা বলছিলাম। নতুন প্রজেক্ট নিয়ে হাফিজ ভাইর সাথে একটু ঝামেলা হয়েছে তার এ ব্যাপারেই দুজনের সাথে মিটমাট করার জন্য কথা বলছিলাম। হুট করে বড় স্যার আমায় ডেকে পাঠালেন। বড় স্যার বলতে রিশার বাবা। আগে থেকেই রিশা পরিচয় করিয়েছিল তাই একটু বেশি সুবিধা নিয়ে থাকি। উনার রুমে যেতেই উনি আমার জন্য কফি অর্ডার করলেন। তারপর রিশার যাওয়ার ব্যাপারে কথা বলা শুরু করলেন। বললেন, তুমি তো জানো যে রিশা এর আগে একা কোথাও যায়নি। ওকে সবসময়ই আমার চোখে চোখে রেখেছি। এবার তো আর ওর সাথে আমি যেতে পারছি না। যেহেতু তুমি যাচ্ছোই তাই আমি চাই এই কদিন ওর দায়িত্ব তুমি নাও। আমি একটু চিন্তিত মুখে বললাম, আমি কিভাবে কি করবো স্যার বলুন? রিশার বাবা একটু হেসে বললেন, আমি কি বলেছি এটা তুমি ঠিকি বুঝতে পেরেছো। একটু চুপ থেকে আবারও বললেন, ওর যেনো কোন সমস্যা না হয়। আমি বিশ্বাস করি তোমাকে তাই বিশ্বাসের মর্যাদাটা রেখো। কি, দেখে রাখবে না ওকে? আমি মাথা নাড়িয়ে জি স্যার বলে চলে আসলাম। পরেরদিনে উনি গাড়িতে রিশাকে তুলে দিয়ে আমাকে বলল, সাবধানে যেও আর বিশ্বাসটুকু রেখো। আমি শুষ্ক একটা হাসি দিয়ে গাড়িতে উঠলাম।

সারাটা রাস্তা মনে হয়েছে কত বড় একটা দায়িত্ব নিয়ে আছি। কাছের বন্ধুটার বিয়েতে ভাল করে একটু মজাও হবে না এটাও একটা কষ্ট। তবে আর যাই হোক, চাকরীটা ওর জন্যই পেয়েছি তাই এতোটুকু তো করাই যায় ওর জন্য।

রাতুলের বাসায় পৌছাতেই রাতুলের বাবা মা আমাদের বরন করলো। রাতুল একটু পরে এসে কুশল বিনিময় করে বিয়ের আয়োজনের ব্যাপারে জানালো। এর মাঝে রাতুলের বোন এসে আমায় বলল, মামুন ভাই আজ কিন্তু হলুদ শেষে আমার সাথে নাচতে হবে। আপনি কিন্তু কথা দিয়েছিলেন। আমি মৃদু হেসে বললাম, বলেছি যখন তখন তো নাচতেই হবে তবে নাচের প্রাকটিস কিন্তু তোকেই করাতে হবে। আমি এসবের কিছুই পারিনা। এর মাঝে রিশা বলল, তা মশাইর বুঝি নাচার খুব শখ? রাতুল হেসে বলল, কাকে কি বলছিস? এতো এতো অনুষ্টান করেও ওকে কোনদিন নাচাতে পারিনি তবে আজ ছুটকি(রাতুলের বোন) ওকে নাচিয়েই ছাড়বে। রিশা মুচকি হেসে বলল, তাহলে তো আজ প্রথম সারিতে বসতে হয় কারও নাচ দেখার জন্য। আমি রিশার এই মুচকি হাসি দেখে অনেকটা লজ্জা পেলাম। না জানি কি হয় আজ রাতে?

রাতে কনেপক্ষ হলুদ দিতে আসলো রাতুলকে। সুন্দরীদের বিচরনে মুগ্ধ হয়েও যখন ওয়েটার বয় এর কাজ করতে হচ্ছে তখন নিজেকে উপর আলাকে বললাম, বিধি তুমি কার বলে দাও! এর মাঝেও যখন কিছু রমনির মাঝে জমিয়ে গল্প শুরু করলাম তখনি ছুটকি আর রিশা আসলো। রিশাকে দেখে তো আমি থো! হলুদ শাড়িতে লাল পাড়, কপালে টিপ সাথে হালকা মেকাপ আর চুল ছেড়ে দিয়ে কেমন যেন মহনীয় লাগছে ওকে। এমনিতেই লম্বা চুলের মেয়ে অনেক পছন্দ আর রিশার চুল তো আরও লম্বা। যদিও এতোদিন খেয়াল করিনি তবে এখন মনে হচ্ছে আমাকে ওর দায়িত্ব দেয়া আছে আর সেটা খুব ভালভাবে পালন করতে হবে। অবাক দৃষ্টিতে রিশার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছি এমন সময় রিশাও আমার দিকে তাকালো। আমি সাথে সাথেই অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম। এমন সময় ছুটকি ডাকছে। ওদের দিকে তাকাতেই দেখলাম রিশা আমার পাশে বিচরনকৃত রমনি গুলোর দিকে তাকিয়ে আমার দিকে তাকালো। ওর চোখ যেন কিছু একটা বলছে যেটা আমি পড়তে পারছিনা। তবে মনে হল, সে আমাকে এই রমনিদের মাঝে আশা করে নি। আমি তখনি সেখান থেকে চলে আসতে গেলে পেচন থেকে কনেপক্ষের মেয়েরা বলল, বেয়াই সাহেব কোথায় যান? পেছনে না তাকিয়েই বললাম, আপনার বেয়ানির কাছে। বলেই ছুটকির পাশে এসে দাড়ালাম। রিশাকে দেখলাম এখনো তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ছুটকি হঠাৎ গুতো দিয়ে বলল, ওখানে কি করছিলেন বেয়াই মশাই? আমি থতমত খেয়ে বললাম, কোথায়, আমি তো দেখাশুনা করছিলাম যে পরিবেশন কেমন হচ্ছে। কনেপক্ষের লোকদের আপ্পায়নে যেন কোন ত্রুটি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে না? ছুটকি বলল, তা আপ্পায়ন বুঝি ঐ মেয়েদেরকেই করানো হচ্ছে, আর অন্যরা বুঝি নেই। এটা শুনে আমার গলায় কি যেন আটকে গেলো। কাশতে কাশতে বললাম, আরে তেমনটা না। হঠাৎ রিশা বলল, তো কেমনটা তাহলে? বলেই মুখ ফিরিয়ে নিল। আমি মাঝে মাঝে এই মেয়ের কথা বুঝি না। প্রতিটা কথাতেই কেমন যেন অধিকার থাকে। আমি এরকম কিছু বললেই তখন সেটা পাত্তা না দিয়ে উল্টো বলে, আমায় নিয়ে এতো ভাবতে হবে না। আমি বুঝিনা কি বলব সেসময়। যাই হোক এসব চিন্তা বাদ দিয়ে রিশাকে বললাম, আপনি খেয়েছেন কিছু? রিশা কিছু বলছেনা দেখে ছুটকিকে বললাম, এই তোর আপু খেয়েছে? ও মুখে ভেঙচি কেটে বলল, আমায় কেন জিজ্ঞেস করছো? তুমি যাও, ওই মেয়েদের সাথে লুইচ্চামি করো। রিশা আর ছুটকি আমার সামনে থেকে বরের স্টেজের পাশে চলে গেলো আর আমি সারাটা সময় একটু দুরে থেকে সবকিছু দেখতে থাকলাম। অনুষ্ঠান শেষে যে যার রুমে চলে গেলে আমি ছাদে চলে আসি। ভাবলাম রাতুলকে একটা ফোন দিব কিন্তু কি মনে করে দিলাম না। ঘুমোচ্ছে ঘুমাক, অনেক ধকল গেছে ওর উপর দিয়ে। দুটো সিগারেট এনেছিলাম ওর সাথে খাবো বলে কিন্তু এখন একাই শেষ করতে হবে। আসলে আমরা সিগারেট খাই না। আমার মতে সিগারেট খাওয়াটা চার ধরনের হয়। প্রথম হল পেশাদার, মানে যারা সবসময় সিগারেট খায়। তারপর আসে আনুষ্ঠানিক মানে যারা কোন স্পেশাল দিন ছাড়া খায় না। তারপর আসে ডিপ্রশনাল মানে যারা ছেকা খেয়ে বেকা হয়ে সিগারেট ধরে আরকি। আর বাকিটা অন্যান্য যারা হুদাই সিগারেট খায় মাঝে মাঝে। আমরা আমাদের আনুষ্ঠানিক সিগারেট খোর বলি। যারা কোন স্পেশাল দিন ছাড়া খাই না।

সিগারেটটা ধরিয়ে দুটো টান দিতেই পেছন থেকে কে যেন বলল, তুমি স্মোক কর? পেছনে তাকিয়ে দেখি রিশা দারিয়ে। সিগারেটটা ফেলে দিতে চেয়েও দিলাম না। কিছু বলছিনা দেখে ও বলল, তোমাকে আমি ভাল ভেবেছিলাম কিন্তু ভেতরে তোমার এতো কিছু তা জানতাম না। এবারও চুপ করে আছি। ও আবারও বলল, রাতুল কে তো দেখিনি কখনও সিগারেট খেতে? বাইরের ভাল মানুষি খোলশটার ভেতরে একটা কালো আত্মা বাস করে এটা তো বুঝতেই পারিনি। আমি সিগারেটে আরেকটা টান দিলাম। এটা দেখে বিরক্ত হয়ে ও রেগে বলল, কথা বলছেন না কেন? ওর কথার মাঝে কেমন যেন কান্না মিশ্রিত রাগ আছে বুঝতে পারলাম। কেন যেন কিছু বলতে ইচ্ছে করলো না। কিছু বলছিনা দেখে যখন ও চলে যাচ্ছিল তখন বললাম, তো এই সিগারেট টা বুঝি একটা খারাপ মানুষের পরিচয়? ও ফিরে তাকালো। আমি আবারও বললাম, মানুষ সবাই সমান হয় না বুঝলেন। আর যে ভাল সে ভালই তবে আমি নিজেকে কখনও ভাল ভেবে বিচার করিনি। রাতুলকে বললেই আপনি সব জেনে যাবেন। আর হ্যা, একটা কথা। আমার, সরি আমাদের আরও একটা পরিচয় আছে। আর সেটা হল, আমরা তৃতীয় পক্ষ। অনেকেই বলে আমরা শয়তানের উত্তরসূরি বা ডানহাত আবার অনেকে বলে আকাশ থেকে নেমে আশা এন্জেল। আমাদের মত লোকদের কোন আশা থাকতে নেই। একান্তই নির্বিকারভাবে জিবন কাটিয়ে দিতে পারি আমরা। তবে বেঁচে থাকি মানুষের কষ্ট আর সুখের মাঝে। আমরা মানুষকে বোঝার চেষ্টা করি না তবে সময়ের গতিতে প্রবাহিত হই। আমরাই কোন সম্পর্কের সুত্রপাত আবার কোন নষ্টের মুলহতা। খুব কম মানুষই আমাদের হাতে হাত রেখে সারাজিবন কাটিয়ে দিয়েছে। তবে হ্যা, আমরা সবাই কিছুর অভাব পুরনে এভাবে চলি। সমাজে এরকম অনেক মানুষ আছে তবে তারা খুবই একা এই সমাজের ভিড়ে বাস করেও। তাই সামনে যা দেখলেন তা বিশ্বাস করলে অনেক খেত্রেই ভুল হতে পারে। এসব বলে তার সামনেই সিগারেট দুটি ফেলে দিয়ে নিচে চলে এলাম।

রাতুলের বিয়ে শেষ হল পরেরদিন। রিশার পাশে সবসময় থেকেছি তবে একটা কথাও বলিনি। ও কেমন যেন বেশিরভাগ সময় আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। বুঝতাম অনেক কিছুই তবে কোন কিছুকে তোয়াক্কা করতে ইচ্ছা করে না। রিশাকে সাথে নিয়ে আবারও এই ব্যস্ত শহরে এসে ওর বাসায় রেখে আসি। রাত হয়েছিল বলে ওর বাবা খেয়ে যেতে বলেছিল তবে আমি চলে এসেছিলাম। জানিনা, কি কারনে যেন চাপা এক অভিমান কাজ করছিল। অদ্ভুত সব চিন্তা কাজ করছে। ভাবছিলাম যদি রিশা এসে খুব করে জড়িয়ে নিয়ে বলে তোমায় নিয়ে সারাটা জিবন কাটাতে চাই, অনেক অনেক ভালবাসি তোমাকে। নেবে না আমায় তোমার করে? তবেই মনে হয় অভিমান টা একটু কমে গিয়ে ভালবাসাটা বেরে যেতো। হ্যা ভালবাসা, যেদিন প্রথম শাড়ি পরে আমার সামনে এসে বলেছিল কেমন লাগছে? আমি শুধু তাকিয়ে ছিলাম। পরেই আবার কফিশপে ওকে আপনি বলে ডাকতেই তার মুখে মৃদু অভিমান নিয়ে বলা কথা, আমি কি তোমার বন্ধু না? রাতুল না থাকলেও যখন একসাথে লাঞ্চ করাটাও হয়ে যেতো তখন আমি তার কথার মাঝেই জমে যেতাম। খুব একটা কথা বলতাম না দেখে কত করে যে খেপাতো। ও যে আমাকে ভালবাসতো এটা বুঝতে পেরেই ওকে ভালবেসে ফেলি তবে চাঁদ হয়ে তো আর বামুনে হাত দেওয়া যায় না। আরে উল্টো হবে, মানে বামুন হয়ে তো আর চাঁদে হাত দেওয়া যায় না। তাই মায়া কাটাতে সিদ্ধান্ত নিলাম চাকরীটা ছেড়ে দিব। এই ব্যস্ত শহর থেকে দুরে কোথাও চলে যাবো। আবারও একাকিত্বের রাজত্যে একচ্ছত্র রাজা হবো আমি। তাই পরেরদিন রিজাইন লেটার টা লিখে বড় স্যারের রুমে যাবো তার আগেই ঐ রুম থেকে ডাক আসলো আমার। ভেতরে ঢুকতেই রিশার বাবা বলল, অভিনন্দন মামুন, তোমার প্রমোশন হয়েছে। আমি মুচকি হেসে সামনে রিজাইন লেটারটা দিয়ে বললাম, তার আর দরকার হবে না স্যার। আমি এই চাকরিটা আর করতে পারছি না। আমি দুঃখিত। রিশার বাবা অবাক হয়ে বললেন, কেন, এখানে কি সমস্যা হচ্ছে তোমার? আমি একটু হেসে বললাম, না স্যার তেমন কিছু না। আমার কিছু নিজস্ব সমস্যার কারনে আমি এখানে থাকতে পারছি না। রিশার বাবা আবারও বললেন, আরেকবার ভেবে দেখো। আমি বললাম, আমি ভেবেছি স্যার। অনেক ভেবেছি। ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনি শুধু দোয়া রাখবেন স্যার বলেই বের হয়ে এসেছি আমি।

সিলেটের জাফলঙ্গে এখন একটি টি স্টেটের ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে আছি। জবটা মোটামুটি ভালই। চারপাশে সবুজের সমারোহ। থাকার জায়গাটাও বেশ। চা বাগানের পাশে রাস্তার ওপাশেই একটি বাড়িতে আমার থাকার ব্যবস্থা কোম্পানি থেকেই করা হয়েছে। নাইট গার্ড আর সিকিউরিটি আর কয়েকজন কলিগ মিলিয়ে সারাটাদিন ব্যস্ততায় কেটেই যায় তবে রাতে আবারও যে যার নীড়ে একা। তিনমাস সতেরো দিন হতে চলল আমি রিশার থেকে দুরে চলে এসেছি মানে অনেকটা পালিয়ে বেড়াচ্ছি আরকি। এখানে আমি আছি এটা ছুটকি ছাড়া রাতুলও জানে না। ছুটকি হঠাৎ করে ফোন দিয়ে একদিন সবটা শুনে ফেলে। এমনভাবে বোনের অধিকার খাটালো না বলে পারলাম না। তবে প্রমিজ করেছিলো কাউকে কিছু জানাবেনা। বিকেলে কাজ শেষ করে বাজার থেকে কিছু তরিতরকারি কিনে বাসায় ফিরছু এমন সময় দেখি বাসার সামনে একটা গাড়ি দার করানো। কেয়ার টেকার নিশ্চয়ই ভেতরে বসতে দিয়েছে। কিন্তু এই সময়ে কে এলো ভেবে পেলাম না।

ভেতরে গিয়ে দেখি রাতুল ও ওর স্ত্রী শশী, রিশা আর ছুটকি এসেছে। আমি তাদের দেখে ভিষনভাবে অবাক হয়েছি। ছুটকি মুখ নিচু করে বলল, সরি মামুন ভাই। রাতুল এসে কিছু না বলে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে থাকলো। একটু পরে ও বলল, আমার কথা বাদ দিলাম কিন্তু রিশা কি করেছিলো? তুই কেনো ওর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিস বল? বাজারের ব্যাগটা রেখে সামনে এগিয়ে যেতে ধরলে হাতটা ধরে রাতুল আবারও ওর সামনে নিয়ে এসে বলল, উত্তর দে আমার কথার? আমি হাতটা ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে জোর গলায় বললাম, ভালবেসে ফেলেছি ওকে যেদিন থেকে ওর চোখের ভালবাসা পড়তে পেরেছি। কিন্তু বিশাল এই সবুজের সমারোহে হারিয়ে যাওয়া একটা সুঁই খুজে পাওয়া অসম্ভব নয় কি? রিশা পেছন থেকে বলল, অনেক সহজ এবং সম্ভব। শুধু বুদ্ধি করে একটা চুম্বক জোগাড় করতে পারলেই হবে। তাহলে সুঁইটা চুম্বকের টানেই চলে আসতো। মাথা নিচু করে বললাম, সেটাই তো করেছি। রিশা অবাক হয়ে বলল, মানে? আমি বললাম, ভালবাসো কেমন সেটাই একটু দেখলাম আরকি।

তোমার চোখের ভাষা পড়লেও মুখের কথা অনেক বিরম্বনা তৈরী করেছিল। তাই নিশ্চিত হওয়ার জন্যই। আর তাছাড়া শ্বশুরের অফিসে জব করে তো আর তার মেয়েকে আশা করতে পারি না তাই না? রাতুল মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, রিশার বাবা আসছে। রিশা ভেবেছিল ওর বাবাই তোকে চাকরি থেকে বের করে দিয়েছে। কারন তুই চলে যাওয়ার আগের দিনেই রিশা ওর বাবাকে তোর ব্যাপারে বলেছিল। আর এরপর থেকে ওর বাবা তোকে কত খুজেছে জানিস? রিশা তো ওর বাবার উপর রাগ করে একঘোরে হয়ে গিয়েছিল। ও অন্যদের থেকে একটু আলাদা তবে ওরও তো মান অভিমান আছে তাই না? আর তুই তো এখানে ফাটিয়ে জিবন পার করছিস। একটু সাইডে নিয়ে আরও বলল, রিশা তো তোকে অনেক আগে থেকেই ভালবাসত। তুই কি বুঝিস নি এসব, সত্যি করে বলতো? আমি হাসলাম, বললাম, হ্যা রে চলে যাচ্ছে। জিবন কি আর থেমে থাকে বল? তবে এখন ওর বাবা এসে কি করবে? উনার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিবে নাকি উনার মেয়ে আমাকে স্মোকার ভেবে বিয়েই করবে না, কোনটা? এটা শুনে রাতুল হাসতে হাসতে ছুটকি আর ওর বউকে নিয়ে বাইরে ঘুরে আসবে বলে চলে গেলো।

রিশার কাছে গিয়ে বললাম, রেগে আছেন? কিছু বলছেনা তাই বললাম, রেগে আছো কি? এবার ও বলল, রেগে থাকলে কার কি আর হঠাৎ তুমি করে বলে কি বুঝাতে চাচ্ছো? জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিয়ে বললাম, এটাই বুঝাতে চাচ্ছি যে আমাকে নিয়ে সারাটাজিবন কাটানোটা তোমার অনেক কঠিন হবে তবে তুমি আমি দুজনে মিলে ঠিক মানিয়ে নিতে পারবো। রিশা কিছু বলছে না। আমি বললাম, ভালবাসো তো নাকি? যদি না বাসো তাও বলো, আমি চা নিজের হাতে বানিয়ে খাওয়াবো। আর যদি বেসে থাকো তাও বলো, এবারও চা টা আমিই বানাবো। এটা শুনে রিশা আমার দিকে তাকালে আমি বললাম, কিছু করার নেই। এখানে চা ই হলো স্পেশাল। মেয়েটা মাথা নিচু করে আছে আর চোখে ফোটাজল গড়িয়ে পরবে পরবে ভাব। এমন সময় খুবি শান্ত কন্ঠে বললাম, ভালবাসি তোমাকে। ভালবাসবে আমাকে? কথা দিচ্ছি, সপ্তাহে একবার চা বানিয়ে খাওয়াবো। মেয়েটা কেঁদেই দিলো। আমি বললাম, ভালবাসি বলো নয়তো ঐ যে তোমার বাবার গাড়ি দেখা যাচ্ছে, এসেই নিয়ে চলে যাবে। যদি ভালবাসও বলো তবে তোমাকে আমার করে রাখবো আর নিয়ে যেতে দিব না। মেয়েটা এটা শুনে কাঁদতে কাঁদতেই একটুও ভালবাসিনা বলেই আমার বুকে মাথা রাখলো। মাথায় হাত বুলিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, গোধুলির আলোতে দুর রাস্তায় একটি গাড়ি এগিয়ে আসছে। হয়তো দুটি জিবনের মুল্য একসুত্রে গাঁথা হবে বলে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত