খেলা

খেলা

রোকসানার মেজাজ আজকাল এমন চড়া-ই থাকে, স্বাভাবিক কথাগুলোও কেমন যেন ঝাঁঝ মিশিয়ে উগরে দেয়। বাবুলের এইসব এখন আর সহ্য হয় না, গত পরশুদিন এই নিয়ে তুমুল একচোট হয়ে গেছে অবশ্য। বাবুল অতটা উত্তেজিত হয়ে পড়বে সেটা সে নিজেও ভাবে নি। খেসারত হিসেবে এরই মধ্যে দুই হাজার খসে গেছে। একফালি বাঁশের চটা দিয়ে সে মারতে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু কে জানত রোকসানা অমন করে মুখটা দ্রুত পায়ের কাছে নামিয়ে আনবে! তারপর থুতনির নিচে তিনটা সেলাই!

বাবুলের বিরক্তি লাগে, টেনশন হয়। আজকের খেলাটায় তার দলের জয় সে চাই-ই চায়। খেলাটা আজকে বাবুলের কাছে শুধু খেলাই না, আরেকটু বেশি কিছু।

ঘরে ফিরে হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসে বাবুল। দুইবার পানি চায়, রোকসানা খেয়াল করে নি অথবা শোনে নি। একটু পরপর মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠে, ঘন ঘন মিসড কলে বাবুল বিরক্ত হয়, খেঁকিয়ে বলে ওঠে, এত রাতে কল দ্যায় ক্যাডায়?

সে কি আমি জাইনা বইসা আছি? সারাদিন কত মাইনষে খোঁচায় তার কট্টুকু তুমি জানো? এত রাইতে বাসায় আইলে কখন কমু তোমারে?

দেশি মদের গন্ধে বাবুলের চেহারাটা কী রকমভাবে কুঁচকে যাচ্ছিল সেটা অন্ধকারে বোঝা যায় না। তুই ঘরের বাইরে খেলিস আমি ভেতরে… হে হে হে।

বাবুলের মেজাজটা আবার চড়ে যায়, কিন্ত সে জানে এখন আবার এখন মেজাজ চড়ানোর সময় না। সারাদিন অনেক ধকল গেছে। আজ সে রূপগঞ্জ গিয়েছিল। বকুল কয়েকদিন ধরেই বলছিল যে সে খুব সস্তায় কিছু জার্সি কেনার খোঁজ পেয়েছে। কয়েকদিন ধরে সে যাবে যাবে করছিল, টাকা ম্যানেজ করতে পারে নাই বলে আর যাওয়া হয়ে ওঠে নি।

বাবুল ফুটপাতে কাপড়ের ব্যবসা করে। গার্মেন্টের বাতিল মালগুলো সে সস্তায় কিনে সস্তায় বেচে। এটাই তার পেশা। বেগুনবাড়ি বস্তিতে এক খানা ঘর নিয়ে সে থাকে, ঘরটাও বাবুল সস্তায় নিয়েছে। সংসারে একজনই, সে রোকসানা। তার বাড়িও কীর্তনখোলার পারেই। বিয়ের পরেই বাবুল তাকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে।

বাবুল যেখানে দোকান নিয়ে বসে সেটা আসলে মানুষের হাঁটার জায়গা, তবুও পুলিশের কাছে আর এলাকার রাজনৈতিক বড় ভাইয়ের সুবাদে সে এখানে বসতে পেরেছে। বড় ভাইটি মোজাম্মেল ভাই। তিনি বেগুনবাড়ির রাজনীতিক। বাবুল যে ঘরে থাকে সেই ঘরসহ এই লেনের অনেকগুলো ঘরের মালিক তিনি নিজেই, এলাকায় তার খুব নাম যশ। শোনা যায় ঢাকার সরকারি দলের কোনো এক বড় নেতার ডান হাত তিনি। হাতিরঝিল হওয়ার পর বেগুনবাড়ির সাথে সাথে মোজাম্মেল ভাইয়েরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সে পরিবর্তন অনেকটাই অর্থনৈতিক।

তাতে অবশ্য বাবুলের কোনো লাভ-ক্ষতি নেই।

মেজাজটা কোনোরকম নিয়ন্ত্রণে রেখে খাওয়া শেষ করে বাবুল।

ভোরে উঠেই তাকে যেতে হবে রূপগঞ্জ। জার্সির চালানটা আনতে হবে। সাথে পাশের দোকানের বকুলও যাবে। ধার দেনা করে বহু কষ্টে ষাট হাজার টাকার মতো ম্যানেজ করতে পেরেছে সে। বাবুলের প্রত্যাশা একটাই—দলটা যেন শেষ পর্যন্ত ফাইনালে ওঠে। বাবুল জানে, আজকে জিতলেই কোয়ার্টার ফাইনাল। সে জানে মালটা আনতে তার একটু দেরিই হয়ে গেছে, আরো ৭/৮ দিন আগে আনলে ভালো হতো। এই চালানে বাবুলের হিসেব মতে ৮০-৮৫ হাজার টাকা লাভ হওয়ার কথা। শেষ মুহূর্তে টাকায় কিছু কম পড়ে যাচ্ছিল। মোজাম্মেল ভাইয়ের কাছে সুদে ১০ হাজার শেষ পর্যন্ত ম্যানেজ করেছে সে।

খাওয়া শেষ করে বিছানায় এলিয়ে পড়ে বাবুল।

রোকসানার দিকে পাশ ফিরে শোয়।

রাত বাড়লে হাতিরঝিলের গাড়িগুলো যেন ঘরের উপর দিয়ে ছুটে চলে। শব্দটা এখন অনেকটা সহনীয়, এখন অনেক রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে বাবুল সেই শব্দের মাঝে অনেক শব্দের মিল খোঁজে, মিল সে পেয়েও যায়। ঝড়ের শব্দের মতো, বৃষ্টির মতো অথবা গো গো করা লঞ্চ ঘাটের লঞ্চগুলো!

একটা হাত উঠিয়ে দেয় রোকসানার পেটের উপরে, তাতে রোকসানার কোনো বিকার হয় বলে মনে হয় না। কিছু একটা অনুরোধ করতে যাচ্ছিল বাবুল, বলতে পারল না।

ইদানীং রোকসানাকে যখনই দেখে তখনই সে মোবাইলে ব্যস্ত থাকে, হয়তো গান শোনে, গানের পর গান পাল্টে দিতে থাকে। ছবি তোলে অথবা আরো অনেক কিছু। ভালো মোবাইলটা সে রোকসানাকেই দিয়েছে, সারাদিন রোদে জলে ভিজে পুড়ে বাবুলের মোবাইল ব্যবহারের ফুরসত থাকে না। কিসব ভাবতে ভাবতে বাবুল ঘুমিয়ে পড়েছিল তা সে নিজেই জানে না। যখন ঘুম ভাঙল তখন তার ঘরের আশেপাশে তুমুল হইচই, গলিতে গলিতে তখন মিছিল নেমেছে। দল জিতেছে।

ব্রাজিল সেফিফাইনালে।

বাবুলের মাথা থেকে যেন একটা টেনশন নেমে যায়।

২.বাবুল ফুটবল খেলা খুব ভালো বোঝে এমনটা নয়। ১০ নম্বর জার্সির প্লেয়ারের নাম মুখস্ত করেছে আশেপাশের মানুষের কাছে শুনে। গত দুইদিন জার্সি যে খুব ভালো বিক্রি হয়েছে তা বলা যায় না, দলের খেলাটাও যে খুব ভালো হয়েছে লোকজন তাও বলছে না। সব মিলিয়ে বাবুল একটু টেনশনেই আছে, লগ্নি করা প্রায় সব টাকাই তার ধার-দেনা করে জোগাড় করা।

গত তিন চার দিন তার বাড়ি ফিরতে আরো দেরি হচ্ছে, ভালো করে খেতে বসতেও পারে না। তবুও খেতে বসতে হয়। খাবার খেতে খেতেই রোকসানা বলে ওঠে, সবার যখন জার্সি ব্যাচা শ্যাষ উনি তখন দোকানে জার্সি উঠাইছে! এখন যদি দুই দলের একটা হাইরা যায় তহন কী অইব? তুমি তো আবার সব ব্রাজিলের জার্সি আইনা উঠাইছ! আল্লাহই জানে!

বউয়ের আশঙ্কা বাবুলের মনের মধ্যে খচ খচ করে বেধে।

এই ব্যবসায় না আইলেই ভালো হইত। এত টেনশন আর ভালো লাগে না তার। বাবুল মনে মনে ভাবে, কী এমন এক জামা যার দাম খেলার হারজিতের উপর ওঠে নামে!!

সেমিফাইনাল খেলার আগের দুইদিন আবার বৃষ্টি; রমজান মাস। সন্ধ্যার আগে পরে বেচা-কেনা নাই বললেই চলে। বাবুল প্রমোদ গোনে, আল্লাহরে ডাকে। সবদিক দিয়েই যেন টেনশন তাকে ঘিরে ধরছে। বকুল তাকে সান্ত্বনা দেয়, আবহাওয়া ঠিক হয়ে গেলেই বেচা-কেনা বাড়ব। আর আইজকা জিত্যা গেলেই দেখিস কাইল বেইচা কূল পাবি না।

বাবুল বকুলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, হয়তো একটু আশ্বস্তও হয়।

বাবুল মিউ মিউ করে বলে ওঠে, তুই শিওর আইজকা জিতব?

কী কস তুই? মনে কু কথা আনিস না, এতগুলা টাকা দিয়া জার্সি কিনছত হুদাই? টেনশন নিস না, এইবার দেখিস চ্যাম্পিয়ন হবে।

রাতে খেলা, সেমিফাইনাল; একটু আগেই যেন রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে গেল। দোকান পলিথিনে মুড়িয়ে চাপা দিয়ে তারা বের হয়। বকুলের অনুরোধ, আজ যেন বাবুল তার সাথে খেলা দেখে। মধুবাগে তাদের একটা চেনা জায়গা আছে, স্থানীয় একটা ক্লাবের মাঠ—সেখানেই খেলা দেখবে।

বাবুল ফোন করে রোকসানাকে জানিয়ে দেয়, ফিরতে দেরি হবে।

এত বড় পর্দায় বাবুল আগে কখনও খেলা দেখে নি। অনেক লোকজন।

মোটামুটি সবাই টেনশনে। বাবুলও! বাবুলের টেনশনটা ঠিক খেলা নিয়ে নয়। অথচ খেলাটাই যেন বাবুলের কাছে আজকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। খেলার আধাঘণ্টার মধ্যে বাবুল ৯টা সিগারেট শেষ করে ফেলে। বকুল কোনো কথা বলে না। অনেকটা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বাবুল জিগ্যেস করে, কিরে, সত্যি করে ক’ না, জিতবে ত?

বকুলের মুখে হ্যাঁ বা না কোনো কিছুই বাবুল শেষ পর্যন্ত শুনতে পায় না।

বকুল কোনো কথা বলার মতো কিছু আসলে খুজে পায় নি, এই অবস্থা থেকে ফিরে এসে দলের জিতে যাওয়াটা একপ্রকার অসম্ভব। আর বাবুলকে সেটা বোঝানোও আরেকটা অসম্ভব কাজ। আশেপাশের মানুষের কথাবার্তা আর অভিব্যক্তির ভাষাটা বাবুল বুঝে গেছে।

বকুলকে না বলেই সে ধীর পায়ে ভিড় থেকে বেরিয়ে এল। বাসার দিকেই রওনা দিল সে। রাস্তায় অনেক লোকের হইচই, খুশিতে মেতে আছে, বাবুল বুঝল এরা যে দলকে সাপোর্ট করছে তাদের জার্সি তার কাছে নেই।

অন্ধ কানাগলির মতো অনেক কিছু পেরিয়ে ঘরের কাছাকাছি চলে এল, এই অন্ধকারেও বাবুল টের পায় সে ঘামছে।

দরজায় কড়া নাড়ে বাবুল।

রোকসানা ঘুমিয়ে পড়েছে। বাবুল আবার কড়া নাড়ে।

বাবুলের কাছে মনে হচ্ছে সে যেন অনন্তকাল ধরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

বাবুল আবার কড়া নাড়তে যেতেই দরজাটা খুলে গেল।

…কিন্তু দরজার সামনে যে দাঁড়িয়ে সে রোকসানা নয়।

দরজার চৌকাঠে পা লেগে মোজাম্মেল ভাই প্রায় পড়েই যাচ্ছিল। টাল সামলাতে সামলাতে মোজাম্মেল বিশ্রীভাবে চৌকাঠটাকেই গালি ছুড়ে দেয়। দেশি মদের গন্ধে বাবুলের চেহারাটা কী রকমভাবে কুঁচকে যাচ্ছিল সেটা অন্ধকারে বোঝা যায় না।

তুই ঘরের বাইরে খেলিস আমি ভেতরে… হে হে হে।

এতগুলা জার্সি কারে পরাইবিরে বাবুল? তুই ত আমার টাকাগুলা পানিতে ফেললি!

মোজাম্মেলের কথার প্রতিউত্তর অথবা যেকোনো উত্তর কিছুই বাবুলের কণ্ঠে আসে না। মাতাল যেভাবে বলে মোজাম্মেল ভাইও সেভাবেই বলে যাচ্ছে। মৃদু আলোয় শেষ রাতে বাবুল ঠিক কী শুনতে পাচ্ছে সেটা বাবুল কি জানে আসলে!

তুই কি বালের ফুটবল বুঝিস! এত ভালো ফুটবল ঘরে রাইখা তুই কী যে করস…

দারুণ। ডাসা ফুটবলরে বাবুল। হি হি হি।

শহরের বুক চিরে হেঁটে যায় জনৈক বাবুল, পেছনে পড়ে থাকে ফুটপাথ, বেশ কয়েক বছরের জীবন সংগ্রাম আর পলিথিনে মুড়ে থাকা অবিক্রিত জার্সির স্তূপ।
কাঁধে ঝুলানো মোজাম্মেল ভাইয়ের খোলা শার্টটা যেন টাটা দিতে দিতে দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে, রাজনীতিক যেমন উঁচু মঞ্চ থকে জনসভায় হাত নাড়ে।

বাবুল এই অন্ধকারে যেন তার থেকেও নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বাবুল নিজেই নিজের চোখ দেখতে পাচ্ছে। ঘিলুর মধ্যে কিসের একটা উত্তাপ টের পায়।

৩.
রোকসানা দরজার সামনেই বাবুলের পা ধরে বসে আছে।

মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে কাঁদছে, ছোট বেলায় অনেক রাতে এইরকম ডাহুকীর ডাক শুনত সে। ঘোর অন্ধকারেও শহরের একটা আলো থাকে, তার উৎস জানা যায় না, কিন্তু থাকে। বেগুনবাড়িতে এইরকম আলো কখনও আগে দেখে নি বাবুল, টিনের বেড়ার ফাঁক দিয়ে যে আলোটা ঘরের ভেতর এসে পড়ছে তাতে স্পষ্ট দেখা যায় রান্নাঘরের বটিটা। ধারাল অংশটা যেন মুখ ভেংচিয়ে বাবুলকে উস্কে দেয়, বিদ্রূপ করে। কখনও বটিটাকে পদ্মগোখরার মতো লাগে।

একটা ঝটকায় বাবুল পা থেকে রোকসানাকে সরিয়ে দিয়ে বটিটার দিকে ছুটতে থাকে। বটিটা হাতে নেয়। পাশের রাস্তা দিয়ে হেভিওয়েট কোনো ট্রাক ফোঁস ফোঁস করে ছুটে যায়। বটি হাতে সে রোকসানার কাছাকাছি চলে আসে। রোকসানার চোখদুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।

পৃথিবীর সমস্ত দ্বিধা নিয়ে বাবুল বটি হাতে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে, তারপর বটিটা ছুড়ে ফেলে সে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে সে হাতিরঝিলের রাস্তায় উঠে পড়ে। ভোরের আলোরা ঘুম চোখে স্থির, কর্পোরেশনের দামি আলোয় সুন্দর রাতের অন্ধকার যেন কিছুটা ম্লান।

বাবুল হাঁটে আর ভাবে, সে কি ফিরে যাবে কীর্তনখোলার তীরে! এতদিন ঢাকায় থেকেও তার কীর্তনখোলার কথা মনে আসে নি। বাবুল হাঁটতে থাকে, কিছুটা বিক্ষিপ্ত। সদরঘাটগামী যেকোনো একটা বাসের প্রথম যাত্রী হতে তার খুব ইচ্ছে করছে।

শহরের বুক চিরে হেঁটে যায় জনৈক বাবুল, পেছনে পড়ে থাকে ফুটপাথ, বেশ কয়েক বছরের জীবনসংগ্রাম আর পলিথিনে মুড়ে থাকা অবিক্রিত জার্সির স্তূপ।

পেছনে একটা ক্ষীণকায় নারীমূর্তিও তাকে অনুসরণ করে।

সে কে!

এই ভোরবেলায় হালকা কুয়াশায় হেডলাইট জ্বালিয়ে একটা সদরঘাটগামী বাস এফডিসির সিগনালে থামে, সে বাসে বাবুল উঠে পড়ে। ঘুম চোখে হেলপার হ্যান্ডেল ধরে আরো একজনকে ডাকতে থাকে, নারীমূর্তি ছায়াটা ক্রমশ বাসের কাছাকাছি হয়।

ড্রাইভার বিরক্তি নিয়ে হেলপারকে তাড়া দেয়।

বাসের চাকাটা কি একটু নড়ে উঠল!

বাবুল কি মনে মনে ভাবে বাসটা আরেকটু দাঁড়িয়ে যাক? বিভ্রান্তির এই শহরে কুয়াশার দেয়াল ভেঙে আরেকটা যাত্রী উঠে আসুক, নিঃসঙ্গ বাসের ভেতরে!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত