ঈদের বিশেষ গল্প

ঈদের বিশেষ গল্প

এই রমজান মাসে রোজা রেখে দুইটা টিউশনি করা খুব কষ্টকর।তবুও নিয়মের তাগিদে করতে হচ্ছে। আমার জন্য না হোক অন্ততপক্ষে নিজের পরিবারের জন্য করতে হবে।পরিবারের সকল মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কিছু দিন বাদেই আসবে ঈদ।কেনা কাটার একটা ধুম পড়ে যাবে চারদিকে।তার জন্যই রোজা রেখে দুইটা টিউশনি করে যাচ্ছি।

নিজের ছেড়া শার্ট,ছেড়া প্যান্ট,ছেড়া একজোড়া স্যান্ডেল আছে।সাথে আছে গততিন বছর আগে খাদিজার দেওয়া একটা পাঞ্জাবি।এটা দিয়েই এই বছর কোনো ভাবে ঈদ কাটিয়ে দিব।দিব্যি হয়ে যাবে আমার ঈদ।এখন শুধু পরিবারের জন্য চিন্তা হচ্ছে।ছোট একটা ভাই এবং ছোট একটা বোনই শুধু।তাদের আবদার টুকু যদি পূরণ নাকরতে পারি তাহলে কিসের বড় ভাই আমি। লেখা পড়ার পাশা পাশি টিউশনি করেথাকি।কোন রকম ভাবে নিজ খরচ আর পরিবারে সামান্য অনুদান দিতে পারছি। এটাই যেন সবচেয়ে বড় পাওয়া।বাকি শুধু একটা চাকরি জোগাড় করে পরিবারের মুখে হাসি ফুটানো।তবেই আমার জীবনের সবস্বপ্ন পূরণ হবে। বিকেল বেলার টিউশনিটা করাচ্ছি।এমন সময় খাদিজার ফোন আসল।আমি ফোনটা কেটে দেই।দুই তিন বার কেটে দেওয়ার পর আর ফোন দেই নি খাদিজা। টিউশনি শেষ করে রাস্তায় এসে খাদিজাকে ফোন দিলাম।

– হ্যাঁ, বলো
– ফোন কেটে দিচ্ছিলে কেনো
– টিউশনি তে ছিলাম
– এখন দেখা করতে পারবে
– না
– কেনো
– কাজ আছে
– কি কাজ
– যে কাজই থাকুক,এখন দেখা করতে পারব না
– ওহ

ফোনটা আমি নিজেই কেটে দিলাম।এই রোজার দিনে এত গরমে টিউশনি করাই। তার ভিতরে আবার দেখা করা।প্রচুর অসহ্যলাগে এসব।খাদিজার মাঝে মাঝে এসব আবদার ভালো লাগে না।কিসব আবদার করে থাকে।মাথাই আসে না।খুব অসহ্য লাগে। বাসায় যেতেই ছোট ভাই টা বলল,

– ভাইয়া এই ঈদে কি কাপড় দিবে” ঈদ আসতে এখনো অনেক দিন বাকি।তার মধ্যে কাপড় কেনা কাটা নিয়ে ব্যস্ত।কি বলব আমি, কি বলার আছে আমার।বললাম,

– আগে ঈদ আসুক,তারপর
– আচ্ছা ভাইয়া

নিজের ছেড়া শার্ট, ছেড়া প্যান্ট,এক জোড়া স্যান্ডেল আর খাদিজার দেওয়া পাঞ্জাবিটা। পাঞ্জাবিটা এদিকে ধুয়ে ইস্ত্রি করে আলমারির এক কোণাই যত্ন সহকারে রেখে দিয়েছি।এই বছর কোনো ভাবে পাঞ্জাবিটা দিয়ে নামাজ পড়তে পারলেই চলে।সামনে বছর এক খানা নতুন পাঞ্জাবি কেনার চেষ্টা করব।জুতাদ্বয় গুলোকে একটু মুছির কাছ থেকে মেরামত করে নিলে ভালো হবে অনেক।

কিছু দিন যাবৎ খাদিজার সাথে ভালো ভাবে কথা হয় না।মেয়েটি আমাকে অনেক ভালোবাসে।কিন্তু আমি একটুও মেয়েটিকে  বুঝি না,সময় দেই না,ঘুরতে নিয়ে যাই না। রাগ করেছে হয়তো অনেক।আর আমারই বা কি করার আছে।এমন পরিস্থিতিতে কি করতে পারি আমি। মেয়েটিকে যে আমি কম ভালোবাসি তাও না।আমিও তো অনেক ভালোবাসি।সময়ের অভাবে আর ব্যস্ততার কারণে মেয়েটিকে একটু সময় দিতে পারি না।একদিন মেয়েটিকে সময় দিতে হবে।তা না হলে নিজের প্রতিই একটা খারাপ ভাব সৃষ্টি হবে।

আর কিছু দিন বাদে ঈদ। চারদিকে ঈদের আমেজ লেগে গেছে।শপিং আর কাপড় কেনাকাটা নিয়ে সবাই ব্যস্ত। আর আমি কেবল ব্যস্ত পরিবারের মুখে এক চিতলি হাসি ফুটাব।বাবা হারা এই ছোট পরিবারটা কে নিয়ে রাত না জাগা স্বপ্ন গুলো নিমিষেই ধ্বসে যাচ্ছে।ছুটে চলছিকেবল দু মুঠো ভাত জোগাড় করতে। টিউশনির টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য কিছুকেনাকাটা আর ছোট দুইটা ভাই-বোনের ঈদের কাপড় কিনে দিলাম।মা’র জন্য এক আমার পরিবারের মুখে হাসি ফুটালাম।খুবভালো লাগছে অনেক।শান্তি তে নীড়ে যেতে পারব।ঘুমের ঘরে এখন স্বপ্ন দেখতে পারব অজস্র।বাধা আসবে না কেউ বা কোনো বিপত্তি। যে মাত্র খাদিজা কে ফোন দিব সেই মাত্রই খাদিজা আমাকে ফোন দিল.

– কোথাই তুমি
– বাসায়
– একটু আসতে পারবা
– আচ্ছা আসছি

দীপ্তময় সূর্যটা যখন ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পশ্চিম দিগন্তে লুকিয়ে যাওয়ার খেলাতে ব্যাস্ত।তখন আমার আগমন ঘটল খাদিজার পাশে।চার দিকে হালকা অন্ধকার বয়ে আসছে।ইফতারির সময়ও গনিয়ে আসছে। পাশে বসতেই খাদিজা বলল,

– এই ঈদে আমাকে কি শপিং করিয়ে দিবে”

এমন আবদার শুনে আমার চোখ জোড়া যেন কপালে ওঠে গেল।বাংলায় একটা প্রবাদ আছে ঘোড়ার কাছে তরকারি খুঁজলে কি লাভ হবে.? ঠিক তেমনি আমার কাছে খাদিজা শপিং খুঁজলে কি লাভ হবে।যেখানে এত কষ্ট করে টিউশনি করিয়ে নিজ পরিবারের মুখে হাসি ফুটালাম।নিজের জন্য কিছুই কিনতে পারলাম না।সেখানে খাদিজাকে শপিং করিয়ে দিতে হবে।ভাবতেই কেমন যেন গা ছমছম করে ওঠে।

– কি ভাবছ” খাদিজার কথাই ভাবনার ছেদ থেকে বেরিয়ে আসলাম।
– না কিছু না মুখটা ঘুরিয়ে যখন আকাশ পানে পলক দিয়ে বিরামহীন তাকিয়ে আছি ঠিক তখনি খাদিজা বলল,
– এই নাও এটা তোমার জন্য,এই ঈদে আমার পক্ষ হতে তোমার জন্য এই সামান্য উপহার”

মেয়েটি আমার কাছ থেকে নেওয়ার বদলে আমাকেই উল্টো দিল। খাদিজার পানে তাকিয়ে ব্যগটা হাতে নিতেই চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল।অন্তত খাদিজা আমার মনের কথা গুলো বুঝে।আমাকে বুঝে।আমার অস্তিত্ব কে বুঝে।আমি এটাই চাই খাদিজা যেন আমার পাশে সারা জীবন থেকে আমার সব স্বপ্ন গুলো বুঝে এবং তা পূরণ করতে যেন আমার পাশে থাকে।সত্যিকারের ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়।

খাদিজা আজকে ইফতারি নিয়ে এসেছে। দুজনে মিলে এই খুলা আকাশের নীচে,তিতাসের পাড়ে নীরব নীরবচ্ছন্ন জনমানবহীন পরিবেশে ইফতারি করব।কিছু সুখ প্রকৃতির সাথে ভাগা ভাগি করে নিতে হয়।প্রকৃতির মাঝে থেকে এমন সুখ গুলো অনুভব করা প্রয়োজন আর এমন সুখের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা একান্ত বাঞ্চনীয়।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত