– আশিক!
– হুম। বলো।
-চলো রিকশা নেই। অটোতে না যাই।
আমিও এটাই চাচ্ছিলাম কিন্তু অবনিকে বলতে পারছিলাম না। যখনি অটো ঠিক করতে যাবো তখনি অবনি বললো রিকশা নিতে।
-হুম চলো। রিকশাতে করেই যাই।
গতকাল রাতে যখন মেসেজ এ অবনি বললো।
-শোনো কাল আমি আর তুমি একসাথে যাবো। সকাল ৮ টার দিকে আমাদের বাড়ির সামনে থাকবে।আবার অন্যদিক দিয়ে চলে যেও না যেনো?
-আচ্ছা। আমি পৌছে কল দিবো।
-হুম ওকে।
আসলে আমরা ফ্রেন্ডরা ঠিক করেছি যে আমরা সবাই মিলে পানাম নগর যাবো। যেহেতু এক এক জনের বাড়ি এক এক যায়গায় সে জন্য সবাই একটা যায়গায় একসাথে হবো।পরে সবাই ওখান থেকে গাড়ি রিসার্ভ করে পানাম নগর যাবো।
আর আমার বাসা থেকে ৩০ মিনিট এর পথ অবনির বাসার।
এই জন্যই অবনি আমাকে কাল মেসেজ এ বলল একসাথে যাবে। এতে আমি খুশিই হয়েছি। আমি যে এই মেয়েটাকে প্রচন্ড রকমের ভালবাসি।কিন্তু বলতে পারি না। কিন্তু আমার মনে হয় অবনি ও বুঝে আমার হাবভাব দেখে যে আমি ওকে ভালবাসি। অবনি ও যে আমায় লাইক করে এটা আমিও বুঝি। কিন্তু কেউই কারো কাছে প্রকাশ করি না।
-ঠিকভাবে বসো।
-হুম। ঠিকই তো আছি।
-কচু ঠিক আছো।এত অসস্তির কি আছে। আমার সাথেই তো বসেছো।
-না!মানে….আসলে
-হয়েছে থাক। এদিকে চেপে বসো।
-হুম।
-আচ্ছা বললে না তো আমাকে কেমন লাগছে?
-অনেক সুন্দর লাগছে।
-তাই?
– হুম।
রিকশা ভ্রমণ যে এত সুন্দর হতে পারে জানা ছিলোনা।
আমি কখনোই জ্যাম পছন্দ করি না।তবে কেনো যেন আজকে এই জ্যামটা কে খুব উপভোগ করছি।
হয়ত পাশে অবনি আছে তাই।
অবনি কথা বলেই যাচ্ছে।আমি মাঝে মাঝে হুম, হ্যা এসব করছি। ওর কথা শুনতে ও আমার কাছে বেশ লাগে।
ওই দিন আমার অবনিদের কলেজে ফার্স্ট ডে ছিলো। আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে এখানে ট্রান্সফার হয়ে এসেছিলাম। সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো। আমি ক্লাস এ গিয়ে ভাবলাম আজকে আসাটা ভুল হয়েছে।ক্লাসে তেমন কেউ ছিলো না।কয়েকজন এর একটা গ্রুপ দেখলাম। ক্লাসরুমে গিয়ে এক কোণায় বসলাম।আর ৪-৫ জন যারা আড্ডা দিচ্ছিলো তাদের মাঝে এক ছেলে বলল।
– এই ছেলে এদিকে আসো।
আমি চুপচাপ গিয়ে দাড়িয়ে থাকলাম।
– নতুন?
-হ্যা।
-তো ওখানে একা বসে থাকলে হবে?
-মানে?
– মানে হচ্ছে নতুন এসেছো। কোথায় আমদের সাথে মিশবে, কথা বার্তা বলবে। তা না ওখানে বসে আছো।
এখানে আমাদের সাথে বসো। ওই নিরা সরে বস। ওকে বসতে দে।
– আরে অসুবিধা নেই।ঠিক আছি আমি।
– ওই চুপচাপ বসো এখানে। আজ থেকে তুমি আমাদের গ্রুপ এর মেম্বার।
বাই দি ওয়ে আমি রাফি। তুমি?
-আশিক।
-ভালো নাম।এরা হচ্ছে নিরা,আরিফ,আবির,মিলি।
তখনি অবনি ক্লাসে প্রবেশ করে।হালকা ভিজা চুল মুছতে মুছতে।কেনো জানি তখনই ওকে খুব ভালো লেগে যায়।
রাফি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো
-আর এ হচ্ছে অবনি। অবনি এ হচ্ছে আশিক। আমাদের গ্রুপ এর নিউ মেম্বার।
-ও আচ্ছা। হ্যালো। নাইস টু মিট ইউ।
-হুম। মি টু।
এর পরে ওদের সাথেই আমার কলেজে দিনকাল যাচ্ছিলো। কিছুদিনের মাঝেই সবার সাথে তুই-তোকারির সম্পর্ক হয়ে গেলো। কিন্তু আমি অবনিকে তুমি করেই বলতাম।অবনিও আমাকে তুমি করেই বলত। এটা নিয়ে প্রথম প্রথম প্রচুর খোচাতো ওরা আমাকে।
আমি যে অবনিকে পছন্দ করি এটা ও কেনো রাফি,আরিফ,নিরা,
আবির,মিলি সবাই বুঝে গেছিলো।আমার আচরনে সবারই বুঝার কথা।
অবনিও আমার সাথে কথা বলতে একটু লজ্জা ভাব নিয়েই কথা বলত। আমিও বুঝতাম অবনি ও আমাকে লাইক করে।এভাবেই দিন যাচ্ছিলো।
জ্যাম ছুটলো প্রায় আধা ঘণ্টা পর।
এর কিছুক্ষণ পরেই আমরা গিয়ে পৌছালাম। গিয়ে দেখি ওখানে অলরেডি সবাই উপস্থিত। শুধু আমরাই লেট করে এলাম।
তারপর দিনটা বেশ চমৎকারই কাটলো। ঘুরা-ঘুরি, খাওয়া – দাওয়ায়। আসার সময় আবারো রিকশাই নিলাম। এবার অবনির বলতে হয়নি। আমি নিজ থেকেই নিয়েছি।
কিন্তু রিকশাতে উঠার পর থেকেই যেনো অবনির মুড অফ।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
-কি বেপার? মুড অফ কেনো?
-ওহ কিছুনা । এমনি।
– আহা। বলো না। এতক্ষণ তো হাসিখুশিই ছিলে।
– আমাদের এক্সাম এর আর মাস খানেক বাকি।তারপরেই যে তোমাদের ছেড়ে আমার চলে যেতে হবে অন্য দেশে। আর কখনো হয়তোবা এই সময় গুলা পাবোনা।
আমি কিছুই বললাম না। চুপকরে বসে আছি।আমারও যে মন খারাপ হয়ে যায় একথা মনে হলে।
ওদের সাথে বন্ধুত্তের প্রথম দিক দিয়ে।
একদিন আড্ডায় কি নিয়ে যেনো আমাদের এক্সাম এর কথা উঠেছিল। তখনই অবনির মন খারাপ হয়ে গেলো।
এ দেখে রাফি বললো
– কিরে তোর মুখ এরকম হয়ে গেলো কেনো।
-কিছুনা এমনিতেই।
– আরে বলনা?
-জানিস দোস্ত। আমরা আর এ দেশে থাকবো নারে।
আমার এক্সাম এর পর আমরা একেবারে বিদেশে স্যাটেল হয়ে যাবো আব্বুর সাথে। এটা ভাবলেই মন টা খারাপ হয়ে যায়।
ওইদিন ওর থেকেও আমার মন বেশি খারাপ হয়ে ছিলো। কিছু না বলে সেখান থেকে তখনই উঠে চলে গেছিলাম।
ভাবলাম এই মেয়েকে ভালোবেসে শুধু কষ্টই পেতে হবে।
ওর কথা আর ওরকম ভাবে ভাববো না।
কিন্তু কিসের কি! মন যে বড্ড বেহায়া।
ওকে ছাড়া কিছুই ভাবতে চায় না।
এক অদ্ভুতভাবেই যেনো ওর সাথে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে গেলাম।
ধীরে ধীরে ওর সাথে আমার যোগাযোগ বাড়তে লাগলো।
রোজ ফোনে কথা আর মেসেজ এর পরিমান বাড়তে লাগলো।
আমাদের আচার-আচরণ এ যেনো নতুন প্রেমে পড়া কিশোর – কিশোরীর মতো হয়ে উঠলো।
ওর সাথে বেশ ভালোভাবেই দিন কাটছিলো।
ওর চলে যাওয়ার কথাটা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।
আজকে আবার মনটাকে বিষন্ন করে আমাকে জানান দিলো যে ও আর বেশিদিন নেই আমার সাথে।
ওইদিন কেনো জানি রিকশায় আমরা কেউ-ই আর কোনো কথা বলিনি।
ওকে ওর বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আমি সোজা বাসায় চলে এসেছি।
আজ প্রায় দুদিন হয়ে গেছে। ফোন অফ করে রেখেছি।ওর সাথে কথা হয় না। কলেজে ও যাই না।
আমি মাঝে মাঝে অনুধাবন করার চেষ্টা করি।
কেনো আমি ওকে আমার ভালোবাসার কথা বলতে পারি না!
হয়তো সব ভালোবাসা প্রকাশ করার দরকার পরে না।
এমনিতেই অপর প্রান্তের মানুষটা বুঝে যায়।
অবনির বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছি ২০ মিনিট ধরে।
কিছুক্ষন আগেই ওকে কল দিয়েছিলাম।
কল রিসিভ করে একদম চুপ করে ছিলো।
আমিই বললাম।
– অবনি?
-(নিশ্চুপ)
– আজকের বিকেলটা কি আমাকে দিবে?
– না। তুমি খুব খারাপ। ফোন অফ করে কেনো রেখেছিলা?তোমার সাথে আমার কোনো কথা নেই।
-আমি তোমার বাসার সামনে।প্লিজ আসো না?
আবারও নিশ্চুপ।কিছুক্ষণ পরে হালকা গোংরানির আওয়াজ শুনলাম। হয়ত কেদে ফেলেছে যা এতক্ষণ ধরে আটকে রেখেছিলো।
-আচ্চা একটু ওয়েট করো।আসছি আমি।
-আচ্ছা।
অবনি ওর বাসা থেকে কি বলে বের হয়েছিল বলতে পারবো না। তবে বের হয়েছিল।
ওর সাথে ওইদিন বাইক দিয়ে ঘুরেছিলাম অনেকক্ষণ। বিকাল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত।
আজকে আমাদের এইচ,এস,সি লাষ্ট এক্সাম।সবার এক্সাম শেষ হওয়ার আগেই আমি বের হয়ে আসলাম। তখন আমার অবনির সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করছিলো না। হয়ত দেখা হলেই কেদে ফেলতাম।
ও হয়ত বলতো আর 2 দিন পরে আমার ফ্লাইট। তোমাকে খুব মিস করবো। ভালো থেকো।
যা আমি শুনতে পারবো না।
আমি বাড়ি যাচ্ছি এর মাঝেই কয়েকবার অবনির আর রাফির ফোন এসে হাজির। কিন্তু আমি রিসিভ করলাম না।
-একটু নিচে আসবে?
-(নিশ্চুপ)
এখন রাত ১২ টার একটু বেশি। কেনো যেনো আর থাকতে পারছিলাম না। তাই অবনিদের বাসার নিচে এসে ওকে কল দিলাম। সাথে সাথে রিসিভ করলো। যেনো ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিলো।
আমার কলের জন্যই কি ওয়েট করছিলো?
হয়ত বা?!
ও কিছু না বলেই কল কেটে দিলো।
তার ঠিক দুই মিনিট পরেই ও গেট দিয়ে বের হয়ে আসলো।
এসে সোজা আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এই ফার্স্ট ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এমন ভাবে ধরলো যেনো আমি কোথাও হারিয়ে যাচ্ছি। সত্যিই হারিয়েই তো যাচ্ছি।
জড়িয়ে ধরেই বললো।
-তুমি এমন কেনো? সবসময় আমার সাথে এমন করো। জানো আমি কলেজে এক্সাম শেষে আরও দুই ঘন্টা বসে ছিলাম। কিন্তু তুমি আসলে না।
– ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি।
-আমি বুঝি।তুমি না বললেও বুঝি।
-আরও একবার জড়িয়ে ধরো না একটু।
হয়ত আর তোমার সাথে কখনো দেখা হবে না।এটাই শেষ দেখা।
অবনি আমাকে এবার একটু অবাক করে দিয়েই আমাকে কিস করে বসলো। তার পরে আবার জড়িয়ে ধরলো।
-চলো একটু বসি।
-হুম।
আমরা রাস্তার ধারে ফুটপাথের উপরে বসলাম।
ওর হাত আমার হাতের মাঝে নিয়ে চুপচাপ বসে আছি।
তখন ও আবার বললো।
-এয়ারপোর্টে আসবে তো?
-জানিনা!
-কেনো?
-আমি দেখতে পারবো না তোমার চলে যাওয়া।
– আমার খুব কষ্ট হবে জানো। তোমাকে ছাড়া থাকতে।
-আমারো।
তারপরে আরও কিছুক্ষণ বসে থাকলাম।
কিছুক্ষন পরে ওকে বিদায় দিয়ে চলে আসলাম। আসার আগে ওকে এবার আমি একবার জড়িয়ে ধরলাম।পরে চলে আসলাম। আর পিছে ফিরে তাকাই নি।হয়ত দেখতাম ও তখন ও গেটের কাছে দাড়িয়ে আছে।
আমি মাঝে মাঝে অনুধাবন করার চেষ্টা করি।
কেনো ওকে ভালবাসলাম।
আমি জানতাম শুরু থেকেই জানতাম যে ও চলে যাবে।তবুও কেনো ওকে ভালবাসলাম? মনের উপরে কি আদও আমাদের নিয়ন্ত্রণ আছে? হয়ত না।মনই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে।মনের বাইরে আমরা কেউই কিছু করি না।
এই শহরে আরও অনেক মেয়েই আছে।
হয়ত জীবনে কেউ না কেউ ঠিকই আসবে।
হয়ত আবার কাউকে ভালো ও বাসবো। ঠিকই আবার অন্য কারো প্রেমে পরবো।অন্য কাউকে নিয়ে স্বপ্ন সাজাবো।
বাট ফার্স্ট লাভ! দেট ওয়ান অলওয়েজ গোনা বি হার।
মনের মাঝে ওর জায়গা টা শুধু ওরই থাকবে।
(গল্প এখানেই শেষ। কারো ইচ্ছা হলে পরের অংশ পড়তে পারেন।)
আমি চাইলে ও যাওয়ার পরেও হয়ত ওর সাথে যোগাযোগ করতে পারতাম।কিন্তু আমি চাই নি ও আমার জন্য কষ্ট পাক বা পিছুটান থাকুক।
অবনি চলে গেছে ৫ বছরের উপরে হবে।
রাফির কাছে কিছুদিন আগে শুনলাম ওর নাকি বিয়ে ও হয়েছে। একটা দেড় বছরের মেয়ে ও আছে।
আমার আর অবনির গল্পই রেস্টুরেন্ট এ বসে আমি রাত্রিকে বলছিলাম। রাত্রির সাথে আমার পারিবারিক ভাবে কথা বার্তা চলছে।এর আগে ও দুই জনকে আমার আর অবনির কথা বলেছিলাম। পরেই ওরা বাসায় গিয়ে না করে দিয়েছে।
রাত্রি আর একটু সময় বসে থেকে কিছু না বলেই চলে গেলো। আমিও কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে ফুটপাতে একা হাটছি।
রাত্রি কি করবে তা জানি না। হয়ত আজ রাতে কল করে রাত্রি ও না করে দিবে।
কিন্তু তা হলো না। মা রাতে এসে বলল মেয়ে নাকি বিয়েতে রাজি । এর কিছুক্ষন পরেই রাত্রির কল আসলো।
-কি করেন।
আমি প্রতুত্তরে বললাম
-বিয়েতে রাজি হলেন যে?
-যে মানুষটা কাউকে এতটা ভালবাসতে পারে আমি জানি সে আমাকেও ভালোবাসতে পারবে। আমি বলছি না অবনির জায়গা আমাকে দিন। আমি ওর জায়গা টা বাদে আপনার মনে পুরোটা জুড়ে থাকতে চাই।
-কি দিবেন তো?
আমি কিছু না বলে ফোন রেখে দিলাম।
অবনির পর আর কাউকেই মনে ধরেনি। এই মেয়েটাকেই যে কোনো এক গোধুলি লগ্নে হুট হাট করে চাই।খুব করেই চাই।
হয়ত বিয়ের পর ঠিকি রাত্রিকে ভালোবাসবো। ওর মাঝেই নতুন করে স্বপ্ন সাজাবো। ওর মাঝেই ভালোবাসার শহর বানাবো।না হয় ওইদিন এর অপেক্ষায় থাকলাম।
জীবনটা যে কারো জন্যে থেমে থাকে না।
সত্যিই থাকে না….!