ছোট বেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিলো আমি অনেক বড়লোক হবো! কিন্তু কাজ না করে ফ্রিতে বড়লোক হওয়া যায় কেমন করে সেটাই ভাবতাম। আমার স্বপ্নটা ঠিক এমন ছিলো! কোনো বিরাট ধনী একজন ব্যক্তি বিপদে পড়বে আর আমি গিয়ে তাকে বাঁচাবো! এরপর সেই ধনী ব্যক্তি আমাকে অনেক টাকা দিবে আর আমি বড়লোক হয়ে যাবো! প্রায় অনেক রাতেই আমি স্বপ্ন দেখতাম আমার কাছে অনেক টাকা, আমার চারিপাশে অনেক সুন্দরী রমনী! তারা ছোট ছোট জামা কাপড় পড়ে আমার সাথে খেলা করছে! কিন্তু এমন স্বপ্ন দেখে যখন চোখ খুলতাম দেখতাম আমার প্যান্ট ভিজা!!
একদিন এমন স্বপ্ন দেখে চোখ খুলতেই দেখি আমার বিছারার চাদর ভিজে গেছে! তাই তাড়াতাড়ি সেটা ধোয়ার জন্য বাথরুমে নিয়ে যাবো তখনই আম্মু বলে উঠলো” কিরে আফরান কখনো তো নিজে থেকে নিজের জামা টাও ধুস নাই। আজকে হঠাৎ বিছানার চাদর ধুচ্ছিস কেনো!? আম্মু কথাটা শুনে মুখ থেকে আর কোনো কথা বার হলো না! তাড়াতাড়ি বাথরুমে গিয়ে সব ধুয়ে দিলাম। এমনি মাঝে মাঝে আমার বড়লোক হবার স্বপ্ন আমি দেখেই থাকি!! ইচ্ছে হয় কোনো ধনী ব্যক্তিকে বাঁচাবো আর তিনি আমাকে অনেক টাকা দিবেন!!
হঠাৎই একদিন একা একা রাস্তা দিয়ে হাঁটছি! এমন সময় লক্ষ্য করলাম একটা বয়স্ক ব্যক্তি রাস্তা পারাপার হতে যাচ্ছে! কিন্তু বয়স্ক ব্যক্তিটি রাস্তার মাঝক্ষাণে যেতেই দেখি একটা ট্রাক তার দিকে ধেয়ে আসছে! সেটা দেখে আমি স্বপ্নের নায়কের মতো,চাচায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া বলে একটা চিৎকার দিয়ে লোকটিকে বাঁচিয়ে দিলাম। আমার এমন উপকারে লোক টি খুবই খুশি! বয়স্ক লোকটিকে দেখে ভালোই বড়লোক মনে হচ্ছে! আজই মনে হয় আমার কপাল খুলবে!! আজই মনে হয় আমার বড়লোক হবার স্বপ্ন পূরন হবে! আজ থেকেই মনে হয় আমার পাশে অনেক সুন্দ্রী রমনী থাকবে! আহা আজ থেকে আর স্বপ্ন দেখে বিছানা ভিজাতে হবে না! এরকম আরো অনেক চিন্তা আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো!!
আমাকে এমন ভাবতে দেখে বয়স্ক লোকটি বলে উঠলো” কি ভাবছো বাবা!? লোকটির কথাতে আমার ঘোড় ভেঙে গেলো, আমি একটু নোড়েচড়ে বললাম” আসলে হয়ছে কি আংকেল আমার ছোট থেকেই একটা স্বপ্ন ছিলো! আচ্ছা তোমার কথা রাখো! তুমি আমার জীবন বাঁচিয়েছো এজন্য আমি তোমাকে একটা জিনিস উপহার দিবা! যেটার মাধ্যমে তুমি কাজ না করে বসে থেকে বড়লোক হয়ে যাবা! আমার কথাটি পুরোপুরি না শুনেই বয়স্ক লোকটি এটা বলে উঠলো!! লোকটির কথা শুনে তো আমার মনের সব গুলো লাড্ডু ফুটতে থাকলো! আমিও কখনো জানতাম না আমার মনে এতো গুলো লাড্ডু আছে! আমি বললাম” কি দিবেন যার ফলে আমি বড়লোক হয়ে যাবো! আমার কথায় লোকটি তার পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে আমাকে দিয়ে বললো এই ঠিকানায় কাল চলে এসো তাহলেই দেখতে পারবে!!
সেদিন সারারাত খুশিতে ঠ্যালায় আর ঘুম আসলো না! কখন সকাল হবে সেটা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি তারও খেয়াল নেই। ঘুম থেকে চোখ মিলতেই দেখি এগারোটা বাজে! তারাতাড়ি ফ্রেস হয়ে না খেয়েই বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। ভাবলাম বড়লোক হবার পরেই খাবো! আজ গরীব বলে ভাত খায় বড়লোক হলে বিরিয়ানি খেতাম। কথাটি আজ মনে পড়তে লাগলো! আহা আজকে বড়লোক হতে যাচ্ছি আমি! ফ্রিতে বড়লোক হবো! আজ থেকে আর ভাত খাবো না বিরিয়ানি খাবো! আহা এতো দিনের স্বপ্ন আমার পূরন হবে! ম্যানিব্যাগ থেকে বয়স্কলোকটির দেওয়া কার্ডটি বের করে সেই ঠিকানায় রওনা হলাম।
কিছুক্ষন খোজাখুজি করার পর ঠিকানাটি পেলাম! আহা কতো সুন্দর একটা বাড়ি লোকটির। বাড়ি দেখলেই বুঝা যাচ্ছে কতোই না বড়লোক মানুষ! সচারাচর এরকম বাড়ি দেখা যায় না! আমিও এরকম একটা বাড়ি করবো! অনেক গুলো বিয়ে করবো আমি! এতো টাকাতো আর একটা বউ খেয়ে ফুঁড়াতে পারবে না! এরকম আরো কিছু ভাবতে ভাবতে বাড়িটির সামনে যেতেই দেখি অনেকে বাড়িটি থেকে বের হয়ে আসছে! তাদের প্রত্যেকের হাতে একটি করে থালা! দেখেই বুঝা যাচ্ছে তারা সবাই ভিক্ষা করতে আসছে! আহা বয়স্ক লোকটি কতোই না মহান, মতোই না দানশীল, এতো ভিক্ষুক কে ভিক্ষা দিয়েছে!! আহা না জানি আমাকে কত টাকা দিবে! হয়তো আমার চৌদ্দপুরুষ বসে খেলেও এই টাকা ফুঁরাবে না!!
এরপর বাড়িটির ভিতরে ঢুকতেই দেখি সেই বয়স্ক লোকটি চেয়ারে বসে বসে পা দুলাচ্ছে! আমি তার কাছে যেতেই তিনি বলে উঠলো “আরে বাবা তুমি এসেছো! বসো বসো! লোকটির কথায় আমি একটু ঢং করে বললাম” না আংকেল ঠিক আছে! আমাকে কি যেনো উপহার দিতে চাইছিলেন!? আমার কথাটি শুনে বয়স্ক লোকটি চেয়ার থেকে উঠে আমার হাতে একটি থালা ধরিয়ে দিলো! থালাটি হাতে নিয়ে বললাম, থালা নিয়ে আমি কি করবো আংকেল!? আমার কথায় তিনি বললেন, সামনে যেই মোড় টা দেখছো ওখানে গিয়ে এই থালা নিয়ে বসো, দেখবে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবে! ফ্রিতে বড়লোক হয়ে যাবে, বসে বসে বড়লোক হয়ে যাবে! আমি তো এই ভিক্ষা করেই এতো বড়লোক হয়েছি! আমার আন্ডারে দুশো লোক ভিক্ষা করে!!
বয়স্ক লোকটির কথাটি শুনে মাথার মধ্যে ধুপ করে একটা চক্কর মেরে দিলো! মনে হয় এখনো আমি হাসপাতালে সুয়ে আছি! সেদিনের পর থেকে আর কিছু মনে থাকে না!!