–তুই সিমাকে মারলি কেন ?
–কে আপনি ?
–দেখ ইরা, একদম ন্যাকামী করবি না। যা বলছি সজাসোজি উত্তর দে।
–মেরেছি আমি, তোর তাতে কী ? ও বুঝেছি, তোর আর সিমার মধ্যে কিছু একটা চলছে।
–দেখ ইরা যা যানিস না। তা নিয়ে কথা বলবি না।
–তাহলে সিমাকে মারলে তোর ব্যাথা লাগে কেন।
–সিমা আমার ভালো বন্ধু, এর বেশি কিছু নয়। আজ থেকে সিমাকে আর মারবি না।
–একশবার মারব, দোস করলেই মারব।
–তুই গুন্ডা নাকি, যাকে খুশি তাকেই মারবি।
–ভুল বললি, গুন্ডা নয়…..গুন্ডি…।
–তোর লজ্জা করে না, এত বড় একটা মেয়ে হয়ে, অন্য একটা মেয়ের গাঁয়ে হাত তুলিস।
–তোর লজ্জা করে না, এত বড় একটা ছেলে হয়ে, মেয়েদের সাথে বলতে।
–তুই যদি মেয়েদের সাথে কথা বলতে পারিস, আমি কেন পারব না।
–আরে তোর আমার এক হল। আমি তো মেয়ে, মেয়েদের সাথে কথা না বলে। ছেলেদের সাথে কথা বলব নাকি।
–দরকার হলে তাই করবি। আমি যদি মেয়েদের সাথে কথা বলতে পারি , তুই ছেলেদের সাথে কথা বলবি। তাহলেই সোদবোদ হয়ে যাবে।
–যানি তোর সাথে কথায় পারব না, তাই আজ থেকে আগামি ৭ দিনের জন্য…..কথা বলার ব্রেকআপ।
–হু…ব্রেকআপ টু…।
–শোন, এই সাত দিনের মধ্যে,
যদি কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখি,এইবার মেয়েটাকে মারব না ডাইরেক গিয়ে তোকে ধরে মারব….কথাটা মনে রাখিস।(প্রচন্ডরেগে)এই কথা বলেই চলে গেল ইরা, আমি কিছুবললাম না। ওর চেঁহেরা দেখে খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম। এই যে মেয়েটার সাথে কথা বললাম ইনি হল অর্নাস ১ম বর্সে পড়ে, আমি তানভীর আমরা একই ইয়ারে পড়ি। আমাদের বাসা এক জায়গায় হওয়াতে…আমরা ছোট থেকে খুব ভালো বন্ধু। ক্লাস ওয়ান থেকে একসাথে পড়ি।আমি সাধারনত মেয়েদের সাথে কম কথা বলি শুধুই ইরার ভয়ে। অনেক দিন পর আজকে সিমাকে দেখতে পেলাম তাই একটু কথা বললাম। কীভাবে ইরা তা দেখে ফেলেছে বুঝতেই পারিনি। তাই সোজা গিয়ে সিমার চুল ধরে টেনেছে ইরা আর বলেছে আমার সাথে কথা না বলতে। কথা বললে নাকি আরও অন্য কিছু করবে। শুধুই সিমা নয়, আরও অনেক মেয়ের চুল ধরে টেনেছে ইরা।
এক কথায় আমি যারসাথেই কথা বলি। এখন অনেক মেয়েই আমার সাথে কথা বলতে ভয় পায়। শুধু যারা যানে না, তারাই কথাবলে। আর তাইতো আজকেই প্রথম ইরার সাথে একটু ঝগড়াকরলাম। তার প্রতিদানে সে আমায় কথা বলার ব্রেকআপ করে দিল। ও আর একটা কথা…ইরার আর একটা অবভাস আছে, আমি ভার্সিটি যেই করিনা কেন। বাসায় গিয়ে সব আম্মুকে বলে দিবে…যা করেছি তার থেকে বেশি বানিয়ে বানিয়ে বলবে। আমি একটা জিনিস বুঝি না, কেন ইরা এমন করে। এমন যদি হত যে, ইরা আমায় ভালোবাসে বলেই এমন করছে। তাও তো না। আর এই বিষয়টা আমি ২০০% গ্যারান্টি সহ বলতে পারি কারন এইচ.এস.সি পড়ার সময় থেকে প্রায় ৪৮ বার প্রপোজ করেছি, কোন পাত্তাই দেইনি মেয়েটা।
(হঠাৎ মনে হল, ইশ আর দুইবার করলেই তো ফিপটি হয়ে যেত, তার সাথে একটা রেকর্ড) ইরা রাজি হওয়ার কারনও আছে। তখন আমি ক্লাস সেভেন এ পড়তাম, ঐ সময় ইরা আমায় প্রপোজ করেছিল। আমি কিছুই বলি নি শুধু হেসে ছিলাম। ইরা শুধু আমার তাকিয়ে ছিল, ইরাও কিছু বলেনি।(আসলে তখন অতটা বুঝি লাভ জিনিসটি কী, আর মেয়েরা তো ছোট থেকেই বুঝে) এখন বুঝেছি আমার ভুলটা কথায় আরএটাও বুঝেছি যে, ইরা তারই প্রতিশোধ নিচ্ছে আমার কাছে। ভার্সিটি থেকে বাসায় আসলাম, দেখি ইরা আম্মুর সাথে গল্প করছে। ইরা আমায় দেখে মুখ দিয়ে ভেঙ্গছি কাটল, মেয়েরা এই জিনিসটা বেশি পারে। কয়েক দিন ধরে লক্ষ করছি, ইরা আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করেছে ঠিকি। কিন্তু আমার পেছনে আঠার মত আছে। কী করি, সারা দিন কার সাথে থাকি সব এসে আম্মুকে বলে দেয়। আজ পঞ্চম দিন ব্রেকআপ হওয়ার ভাবলাম আজ একটু কথা বলব। কথা না বললে কেমন যানি লাগে। হঠৎ জুয়েলের ফোন।
–কিরে কেমন আছিস, এত সকাল সকাল (আমি)
–ভালো…দোস্ত আজকে পার্টি দিছি দুই তারাতারি আয়।
–পার্টি কেন রে।
–আজ আমার জম্মদিন।
–আরে আগে বলবি তো। আগে জানলে কাল রাতে গিয়ে হাজির হতাম।
–হু তারাতারি আয়।
কাউকে কিছু না বলে বেড়িয়ে পরলাম, সেখানে গিয়ে সারাদিন অনেক মাস্তি হল বন্ধুদের সাথে। কখন যে রাত হয়ে গেছে টেরও পেলাম না। রাতে বাসায় এলাম আম্মু বলল….কথায় গিয়েছিলি তুই। আম্মু এক বন্ধুর জম্মদিনের পার্টিতে। ঠাসসস…(দুইটা চড় মারল আম্মু) কোন দিন তোর গায়ে হাত তুলিনি আজকে তুললাম। কেন যানিস, তুই নাকি তুলি নামেরমেয়েটাকে ডিস্টাব করেছিলি। বিকেলে মেয়ে টা কাঁদতে কাঁদতে আমাদের বাসায় এসেছিল। ভাগ্যিশ ইরা মেয়েটা বুঝিয়ে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
এত দিন ইরা শুধু বলত আমি কিছু মনে করতাম না আজ নিজের চোখেদেখলাম। ছি মানিক ছি তুই এত নিচে নেমে গেছিস। তোকে নিয়ে আমাদের কত সপ্ন আর তুই কিনা আরও কিছু বলত আম্মু….আমিই কিছু না বলে চলে আসলাম, যানি আমি যা বলব আম্মু বিস্বাস করবেনা। আর আম্মু যা বলল সব ঠিকি বলেছে আমি বাবা মার একমাত্র সন্তান, আমায় নিয়ে তাদেরঅনেক সপ্ন।আম্মু আমায় চড় মারল তাতে কোন দুঃখনেই, আম্মু তো, মারতেই পারে। আমার প্রচন্ড রাগ হল কোন দোস করিনি অথচ অনেক কিছু হয়ে গেল। কে করতে পারে এই কাজ, মনে হল ইরার কথা, ওরে কাজ এইটা। চলে গেলাম তার বাসায়…আন্টি(ইরার আম্মু) ইরা কথায়…ও রুমে আছে। গিয়ে দেখছি শুয়ে আছে আর হাতে কী যেন লাগাচ্ছে ইরা। আমায় দেখে আবার ওর কাজে মন দিল।
–তুমি আম্মুকে কী বলেছ। (রেগে বললাম)
–কই কিছু না তো। (ঠাসস করে চড় বসিয়ে দিলাম ওর গালে)
–মিথ্যে বলছ কেন।
–আমি তো শুধু মজা করে আন্টিকে বলেছিলাম। (গালে হাত দিয়ে, কান্না সুরে, )
–তোমার এই মিথ্যে জন্য আম্মু আমার গায়ে তুলেছে।
–সত্যি বলছি এসব আমি আমার বান্ধবি তুলি মজা করে বলেছিলাম। আসলে তোমায় সারাদিন দেখতে পায়নি, তাই মিথ্যে বলেছিলাম।
–তোমাদের কথায় আম্মু সত্যি মনে করেছে।
–আমি আন্টিকে বুঝিয়ে বলব।
–তার দরকার নেই বলেই চলে আসলাম, রাগ করে না খেয়ে শুয়ে পড়লাম।
একটু পরে রুমে আম্মু আসল, আম্মুকে দেখলাম আম্মুও কান্না করে। পরেনিজের হাতে খাইয়ে দিল। আমি কিছু বললাম না। সেদিনের পর থেকে, ইরা আমাদের বাসায় আসে খুব কম, আসলেও আমার সাথে কথা বলে না। আম্মু সাথে কথা বলে চলে যায়। কয়েক দিন ভার্সিটিও যায় না, ভালোই লাগে না। মনে হচ্ছে কিছুএকটা মিস করছি, হ্যা ইরাকে। কেন যে সেদিন হাত তুলতে গেলাম। ইরাকে সরি বলতেই হবে। আজ হঠাৎ ইরা শাড়ী পড়ে এসেছে আমাদের বাসায় খুব সুন্দর লাগচ্ছে ইরাকে।
–ইরা সেদিনের ঘটনার জন্য সরি।
আমার সাথে কিছু না বলে, আম্মুর সাথে কথা বলেচলে গেল। পরে আম্মুর কাছে জানতে পারলাম। আজ ইরাকে বর পক্ষ দেখতে আসবে। কথাটা শুনা মাত্র বুকের বাম পাশে ব্যাথা অনুভব করলাম। সেদিনের পর থেকে ইরার সাথে দেখা হলেও কথা বলতাম না। যদিও মন চায় কথা বলতে। কিন্তু, ইরার তো বিয়ে ঠিক হয়েগেছে। সামনে ০৫ অক্টবর ইরার বিয়ে।
আজ ইরার বিয়ে মনটা খুব খারাপ, তাইরুমে বসে আছি। ঠিক করলাম আজ কথাও যাব না। সারাদিন রুমে বসে থাকলাম। সন্ধার দিক বাবা আসলেন রুমে আর বললেন তারাতারি রেডি হয়ে নে বিয়ে বাড়িতে যেতে হবে। যাওয়া ইচ্ছে না থাকলেও যেতে হবে কিছু করার নেই। বাড়ীটা কি সুন্দর করেই না সাজিয়েছে, সারা বাড়ী অনেক রকমের লাইট। হঠাৎ চোখ ইরার দিকে, বধুসেজে আছে ইরা, আজ অসম্ভব সুন্দর ইরাকে। বেশ হাসিখুসিতে আছে ইরা। হেসে হেসে কথা বলছে বন্ধুদের সাথে।
মনে হল আগের দিন গুলির কথা তাহলেকি ইরা এত দিন আমায় বন্ধু ভেবেছিল। অন্য কিছু নয়, ভাবতেই যত সব কষ্ট আছে আমার বুকে এসে বন্যা বইছে। একটা চেয়ারে গিয়ে বসলাম একটু পরে, ইরা আমার দিকে একটু তাকিয়ে আবার মুখ ঘুড়িয়ে নিল। আগের থেকে বেশি কষ্ট পেলাম। চলে আসতে চেয়েছিলাম বিয়েবাড়ী থেকে। পারলাম না বাবার জন্য।বসে রইলাম মন খারাপ করে। ঘন্টা খানিক পর যা ঘটল, তা কল্পনাওকরতে পারিনি। কেননা বর আমিনিজেই, খুব ধুমধাম ভাবে বিয়ে হল,কোন টের পেলাম না, কীভাবে যেনসব কিছু গুছিয়ে বিয়েটা হল।পরে বুঝলাম সব প্লান করা আম্মু আর ইরার। পরে আমাদের বাড়ীতে…
–কিরে শালা তোর বিয়েতে আমাদের বলার প্রয়োজন মনে করলি না (জুয়েল, আরও কয়েক জন বন্ধু)
–বিস্বাস কর দোস্ত আমি নিজেই যানি না।
–শালা একদম মেয়েদের মত কথা বলবি না। ভাগ্যিস ইরা আমাদের বলেছিল।
–সত্যি বলছি দোস্ত যানি না।
–রাখ তোর ডায়লগ।
এভাবে অপমান, কী বলব, কিছুই বুঝতে পারছি না। রেগে মেঘে ইরার কাছে গেলাম। ইরা বন্ধবিদের সাথে গল্প করেছে। আমি একটু রেগে বললাম….
–তুমি এমনটা কেন করলে।
–কেমনটা বাবু (মিষ্টি সুরে) (বাবু বলাতে..থ হয়ে গেছি)
–এই যে না যানিয়ে বিয়েটা করলে (নরম সুরে)
–ও তাই বুছি, আহারে ব্যাচারা (বলেই সাবই একসাথে হেসে উঠল)
–গুন্ডি একটা।
–কী বললে।
–গুন্ডি বলেছে (সিমা)
–হু আজকে বাইরে শুতে হবে।(ইরা)
–কিরে প্রথম দিনেই (তুলি) (বলেই আবার সবাই হেসে উঠল) আমি পরাই থ আর কিছু বললাম না।
সমাপ্ত