আপনি চাইলে আমি আপনাকে ডেকে দিতে পারি।
মানহার কথায় আমি এবারও কিছু বললাম না। কিছু বলতে চাইলেও কেমন যেন পারলাম না।ঘুমে চোখটা বারবার বন্ধ হয়ে আসছিল।আমি সদ্য হাতে নেওয়া প্লাস্টিকের বাটিটা পাশের টেবিলে রাখতে রাখতে বললাম,
-কেও ডেকে দিলে মন্দ হয় না।আমিও একটু ঠিক সময় সেহেরীটা খেতে পারি।
আমার কথায় মানহা কিছু বললো না।মুচকি হাসলো।
রোজার দিনে এই ঝামেলাটা আমার প্রতিবারই হয়। সেহেরীতে ঠিক সময় উঠতে পারিনা।এলার্ম দিয়ে রাখলেও কাজ হয় না।ঘুমের ঘোরে বন্ধ করে দেই।আজও ঠিক তেমনটাই হয়েছিল। কিন্তু অতিমাত্রায় কলিংবেলের আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙে গেলো।অবশ্য সেহেরীর তখনও পচিশ মিনিটের মত ছিল।
আমি আড়মোড়া ভেঙে দড়জা খুলতেই দেখি মানহা দাঁড়িয়ে।অবশ্য প্রথমে বুঝতে পারিনি,পরে যখন ভাল করে তাকালাম তখন বুঝতে পারলাম হ্যা এটাই মানহা।
মেয়েটা আমার পাশের ফ্লাটেই থাকে।তবে আমার মত একা নয়।আমি দড়জা খুলতেই মানহা বললো,
-এই নিন,আম্মু পাঠিয়েছে।
মানহার এগিয়ে দেওয়া বাটিটা আমি হাত বাড়িয়ে নিলেও তখনও আমার ঘুম পুরোপুরি কাটেনি।যেটা এখনও বেশ স্থায়ী আছে।অবশ্য কাল থেকে আমার আর এই সমস্যায় পড়তে হবে না।বেশ আগেই ঘুম ভাঙবে।আর ঘুম ভাঙতেই আমি দেখতে পাবো মিষ্টি মাখা একটা শান্তির মুখ।যেটাতে আমি শান্তি খুজি,খুজি ভালবাসা।অবশ্য এই ভালবাসার মুখটাও যে বারবার আমাকে দেখতে চায় সেটাও আমি বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারি।
আমি দড়জা লাগানোর আগে মানহার দিকে আরও একবার তাকালাম।মেয়েটা এখনও আগের মতই দাঁড়িয়ে আছে।আমি মানহার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-তুমি চাইলে আজ আমার সাথে সেহেরীটা করতে পারো।
আমার কথায় মেয়েটা এবারও মুচকি হাসলো।ভেবেছিলাম মেয়েটা বলবে, আজ না অন্যদিন।কিন্তু আমার ভাবনা ভুল প্রমানিত করে মানহা মুচকি হেসে বললো,
-দড়জার সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে ভেতরে যাব কিভাবে?হু কিভাবে?
আমি মানহার কথায় সড়ে দাঁড়ালাম।মেয়েটা সোজা গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়লো।অবশ্য মানহা এর আগেও বেশ কয়েকবার এসেছিল কিন্তু এভাবে নিজ থেকে বসেনি।মেয়েটা এবার আমাকে আরও একটু অবাক করে দিয়ে প্লেটে ভাত বেড়ে দিতে দিতে বললো,
-আপনি চাইলেই কিন্তু প্রতিদিন গরম গরম ভাত খেতে পারেন।এরকম ঠান্ডা ভাত না খাওয়াই ভাল।
মানহার কথায় আমি কিছু বললাম না।আসলে ও কি বুঝাতে চাইলো সেটাও ভালভাবে বুঝলাম না।তবে কথাটা মাথায় বেশ ঘুরপাক খাচ্ছিলো।আমি চেয়ার টেনে বসতেই মেয়েটা চোখ রাঙিয়ে বললো,
-যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।
মানহার কথায় আমি এবারও কিছু বললাম না।সত্যি ই তো,ফ্রেশ না হয়েই খেতে বসে গেছি।এটা বেশ অস্বস্থিকর।কেমন যেন।
মানহা খাওয়া শেষে যখন বাইরে বের হলো তখনও আমি দড়জার সামনে দাঁড়িয়ে।মেয়েটা ঘুরতেই আমি পেছন থেকে বললাম,
-আমি চাই কেও আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে চুমু একে দিয়ে মুচকি হাসিতে ঘুম ভাঙাক।কিন্তু সে কি এটা চায়?
আমার কথায় মানহা কিছু বললো না।তবে দাড়ালোও না।ও কি রেগে গেলো!নাকি অন্যকিছু।ও কি চায় না।আমি আর ভাবতে পারিনা।দড়জা আটকে রুমে আসতেই ফোনের মেসেজ টোনটা বেজে ওঠে।আমি চাইনা এসব কাস্টমার কেয়ারের মেসেজ দেখতে।তবুও ফোনটা হাতে নিলাম।আমি মেসেজটা দেখে মানহার মত মুচকি হাসলাম।কাস্টমার কেয়ার না,শ্বশুরবাড়ি থেকে মানহার মেসেজ।ছোট করে লেখা,আমিও চাই,খুব করে চাই।
আমি মানহার মেসেজ দেখে কিছু বলিনা।চুপ করে থাকি।ভাবি,গভীর ভাবে।যে ভাবনার পুরোটা জগৎ মানহার দখলে।অবাধ চলাফেরা,ছুটোছুটি। আমি আর কিছু ভাবতে পারিনা।চোখ বন্ধ হয়ে আসে।ঘুম ভাব আসতেই আবার মেসেজ টোনটা বেজে ওঠে।মানহার মেসেজ।খুব বড় নয়,ছোটও নয়।স্পষ্টভাবে লেখা,
এখন আর ঘুম নয়,যাও নামাজ পড়ে আসো।
আমি মেসেজটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।ভালবাসা আর আবেগ মাখানো মেসেজটা দেখে আমার চোখ সড়াতে ইচ্ছে করে না।কিন্তু এভাবে কতক্ষন,নামাজের সময় হয়ে গেছে।আর যাই হোক নামাজ বাদ দেওয়া যাবে না,কোন ভাবেই না,কোন মতেই না।