রংনাম্বার

রংনাম্বার

হঠাত মোবাইলের রিংটোনের ঘুম ভেঙে গেল।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত এগারোটা বাজে।এত রাতে আবার কে ফোন দিল।আমার তো গার্লফ্রেন্ড নাই যে এত রাতে ফোন দিয়ে মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনাবে।তো চোখ দুটি ডলে মোবাইলটা হাতে নিলাম।দেখি অপরিচিত নাম্বার।তাই ফোন ধরলাম না।কিন্তু দুইমিনিট পর আবার ফোন আসায় রিসিভ করলাম।রিসিভ করার পর ওপাশ থেকে একটা মেয়েলী কন্ঠ শুনতে পেলাম,,,,

-ভাইয়া আপনার মোবাইলে ভুল করে আমার ১০০টাকা চলেগেছে।।
-তো আমি কি করব?
-যদি টাকাটা ফেরত দিতেন তাহলে খুব ভাল হত।
-আপনি কি পাগল নাকি এত রাতে আমি আপনাকে কোথায় থেকে টাকা ফেরত দিব।
-আমি কি আপনাকে এখনই দেওয়ার জন্য বলছি নাকি।
-আচ্ছা টিক আছে দিয়ে দিব।
-ধন্যবাদ ভাইয়া।।
-ওয়েলকাম আন্টি।

-এটা কি? আপনি আমাকে আন্টি ডাকলেন কেন?আমার কন্ঠটা কি আপনার কাছে আন্টির মত টেকছে?
-তাহলে আপনি আমাকে ভাইয়া ডাকলেন কেন।আমার কন্ঠটা কি আপনার কাছে ভাইয়ার মত টেকছে?
-আসলে হয়েছে কি আপনি অপরিচিত ত তাই ভাইয়া ডাকলাম।আর অপরিচিত কাওকে আমি ভাইয়াই ডাকি।।
-আমিও অপরিচিত কাওকে আন্টি ডাকি।

-কি আজিব মানুষরে!
-কি আজিব মানুষরে!
-আচ্ছা ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দেন।।
-আচ্ছা ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দেন।
-দূররররর,,,

ফোন কেটে গেল।যাই হোক ভালই হল।আমিও শান্তিতে ঘুমাতে গেলাম।কি শান্তির ঘুম আবার ভেঙে গেল রিংটোন এর শব্দে।আমি,,,

-এত সকালে ফোন দেওয়ার মানে কি?
-কি এখনও সকাল নাকি।১০টা বাজে দেখেন নাই।
-তো কি হয়েছে।আমার কাছে ১২টার আগে সকাল শেষ হয়না।তো বলেন এত সকাল ফোন দেওয়ার কারন কি?
-টাকাটা যদি ফেরত দিতেন।
-আমি কি আপনার টাকা খেয়ে ফেলব নাকি।বললাম তো পাবেন।কি আজিব মেয়েরে বাবা।বলে ফোন কেটে দিলাম। তো বিকেলে ওই নাম্বারে ৮০টাকা ফ্লেক্সিলোড করলাম।কিছুক্ষন পর ওই নাম্বার থেকে আবার ফোন আসল।

-কি হল টাকাতো পাটিয়েছি।তো আবার কি প্রেমেটেমে পড়েন নাই তো।দেখেন আমি কিন্তু এসব ভাল পাইনা।।

-এহহ,,আপনার সাথে প্রেম করতে আমার বয়েই গেছে।আসলে আপনার নাম্বারে তো আমি ১০০টাকা দিয়েছিলাম আর আপনি ৮০টাকা -এহহ,,আপনার সাথে প্রেম করতে আমার বয়েই গেছে।আসলে আপনার নাম্বারে তো আমি ১০০টাকা দিয়েছিলাম আর আপনি ৮০টাকা দিলেন।।

-অহহ,,এই কথা গাড়ি ভাড়া কেটে রেখেছি।
-আচ্ছা আপনি এমন কেন?
-কেমন?
-যাই হোক।আপনার নামটাই তো জানা হলনা।
-আমি আবির,অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছি।
-আমি মেঘলা,,ইন্টার দিত্বীয় বর্ষে পড়ছি।আপনি আমাকে তুমি করেই বলতে পারেন।যদি আপনার কোনো সমস্যা না হয়।
-হুম বলতে পারি,যদি আপনি তুমি করে বলেন।
-অকে বলব।

তখন তেকেই আমাদেত নিয়মিত যোগাযোগ হতে থাকে।আমি ওকে ভালবেসে ফেলি।কিন্তু ওকে কখনো বলার সাহস পাই নাই।যদি সে আমাকে একচেপ্ট না করে সেই ভয়ে।কিন্তু এভাবে আর কতদিন তাকা যায়।তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ওকে সব বলব যা হবার হবে।তাই একদিন ওকে দেখা করার জন্য বললাম।।

দেখা করার পর আমি ওকে আমার মনের কথা বলে দিলাম।কিন্তু সে আমাকে হতাস করে দিয়ে কোনো কিছু না বলেই চলে গেল।আমিও ভেবে পাচ্ছি না এখন আমার কি করা উচিত।এ কি হয়ে গেল।পুড়োনো সৃতিগুলো বারবার মাথা নাড়া দিয়ে উঠছে।তো আমি বাসায় ফিরে গেলাম।কিন্তু এসময় আমার বাসায় যাওয়ার কোন ইচ্ছাই ছিল না।।মনে হচ্ছিল যেন জীবন টাকে এখানেই খতম করে দেই। রাত বারোটা বাজে,,আমার চোখে ঘুম নাই।ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি আর খোলা আকাশের তারা গুলিকে দেখছি।।এমন সময় মোবাইলটা টোন করে বেজে উঠল।মোবাইল টা হাতে নিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।তাতে লেখা,,,

-আমি তুমার কাছে একটা জিনিষ লুকিয়েছি।জান আমিও না তুমাকে অনেক ভালবাসি।অনেক স্বপ্ন ছিল তুমাকে নিয়ে ঘর বাধার।কিন্তু দেখ আমার কপালে সেই সুখ লেখা নেই।আমার ক্যাঞ্চার ধরা পড়েছে।।আমি চাই না আমার জন্য তুমি সাড়া জীবন কষ্ট পাও। তাই সেখানে তুমাকে কিছু না বলেই চলে আসি।কিন্তু এখন না বলে আর তাকতে পারছি না।।আমি চাই না তুমি আমাকে ভুল বুঝ।হয়ত আমি আর বেশিদিন এই পৃথিবীতে থাকব না তাই সব বলে ফেললাম।।ম্যাসেজ টা পড়ে মনে হল আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সড়ে যাচ্ছে।আমি ততকনাত ওকে ফোন দিলাম।ও ফোন রিসিভ করার পর বলল,,,

-কি বল?
-আমি তুমাকে বিয়ে করতে চাই।
-তুমি কি আমাকে করুনা করছ নাকি পরিহাস?
-যাকে ভালবাসা যায় তাকে করুনা বা পরিহাস কোনোটাই করা যায় না।
-তুমি ভেবে দেখেছ তুমি কি বলছো।আমি এই পৃথিবীতে আর কিছুদিন আছি মাত্র।তারপরও কেন তুমার জীবন টাকে নষ্ট করতে চাইছ?
-তুমার সাথে সাড়াজিবন না হোক একটি মুহুরত হলেও কাটাতে চাই।
-এ বিয়ে কেও মেনে নিবে না।
-এটা আমি দেখব।শুধু তুমি বল রাজি কিনা?
-কিন্তু।
-কোনো কিন্তু নয়

অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমি মা-বাবাকে রাজি করালাম।তারপর তাদেরকে মেঘলাদের বাড়িতে পাটালাম বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।।মেঘলার বাবা নেই।তার মা প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না।কারন তিনি জেনেশুনে একটি ছেলের জীবন নষ্ট করতে চাইছিলেন না।অনেক বুঝানোর পর তিনি রাজি হলেন।তা দেখে আমি অনেক খুশি হলাম।যাইহোক সারাজিবন না হোক কিছুমুহুরত তো আমি মেঘলার সাথে কাটাতে পারব।।আর সে সৃতি নিয়েই হয়তো বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।

আজ মা,মেঘলা আর মেঘলার আম্মু বিয়ের শপিং করতে গেলেন।শপিং এর এক মুহুরত্রে মেঘলা মাথা ঘুরে পড়ে যায়।ততকনাত তাকে হাস্পাতালে ভর্তি করা হয়।তাকে আই চি ইউ তে রাখা হয়েছে।ডাক্তার বললেন রুগির অবস্তা বেশি ভাল নয়।। আমি বাবাকে বললাম কাজী আনতে।বাবা কাজী নিয়ে এলেন।।রুগির এই অবস্তায় ডাক্তার কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না।।পরে অনেক বুঝানোর পর রাজী হলেন।অতঃপর কাজী সাহেব আমাদের বিয়ে পড়িয়ে দিলেন।। তারপর সবাই বেড় হয়ে যাওয়ার পর মেঘলা আমাকে বলল,,,

-এটা কেন করলে?
-তুমার মত মেয়েকে এক মুহুরতের জন্য কাছে পাওয়াও সৌভাগ্যের ব্যাপার।
-আবির তুমার বুকে আমাকে একটু জড়িয়ে নিবে?

আমি মেঘলাকে বুকে জড়িয়ে নিলাম।তার কিছুক্ষন পর দেখি ওর নিশ্বাসবন্ধ হয়ে গেছে।।আমার পাখিটা আমার বুকেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে দূর আকাশের তারা হয়ে গেল।।আর আমি মন্ত্রমুগদ হয়ে ওর চাঁদমাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত