আমার একমাত্র ছোট বোন এসেই আমাকে বললো,
“ এই তাসলিমা আপা, তুই একমাস হয়ে গেলো বাপের বাড়িতে পড়ে আছিস! তুই কি তোদের বাসায় আর যাবিনা? ”
মেজাজ টা গরম হয়ে গেলো তাও শান্ত ভাবে বললাম,
“ বাড়ি টা কি একাই তোর বাবার, আমার বাবার বাড়ি যতদিন ইচ্ছে থাকবো।”
“ তুই একা যতদিন ইচ্ছে থাক! তোর বর এখানে একমাস থেকে পড়ে আছে কেনো? মনে হচ্ছে এই বাড়িতে ঘরজামাই উঠেছে! আচ্ছা আমার একটা প্রাইভেসির ব্যপার আছে নাকি!”
“ তুই গিয়ে বল, যেনো তোর দুলাভাই চলে যায়।”
“ ধুর, তোর বর কে আমি চলে যেতে বলতে পারি নাকি! যা পারিস কর তোরা, ভাল্লাগেনা তোদেরকে আর। তোরা গিয়ে আমাদের উদ্ধার কর। ”
মেজাজ গরম করে বসে থাকলাম, এভাবে আরোও তিনদিন পার হয়ে গেলো। এবার আম্মু এসে বললো,
“ কিরে তুই কি তোদের বাড়িতে যাবি না? ”
“ এমন করে বলছো যেনো তোমার মাথার বোঝা হয়ে গেছি!”
“ বোঝা হবি কেনো? বিয়ে দিয়েছি, তোর নিজের সংসার হয়েছে। তুই সেখানে থাকবি জামাই সহ। তা না করে এক মাস পার হয়ে যাচ্ছে, তোরা যাচ্ছিস ই না! পাড়ায় সবাই বলাবলি করছে, জামাই চাকুরী করেনা নাকি! এতোদিন ধরে কেনো শ্বশুর বাড়ি তে!”
“ তোমার জামাই কে গিয়ে বলো, আমাকে কেনো বলছো? সেই তো নিয়ে যাচ্ছেনা আমাকে, তো আমি কি করবো? ”
“ আরে জামাই কে কি আর আমি কিছু বলতে পারি, এক কাজ কর, তুই চলে যা একা একা, দেখবি জিহাদ ও তোর পিছু পিছু চলে গেছে। ”
নিজের মায়ের কাছে এইসব শুনে ধৈর্য আর ধরতে পারলাম না! জিহাদ কে মেসেজ লিখলাম, “ অফিস শেষে তোমার বাসায় ( ভাড়া বাসায়) আসবে। আমি এখন তোমার বাসায় আছি। ”
জিহাদের উপর খুব রাগ লাগছে, তবুও ঘর পরিষ্কার করলাম, রান্না করলাম। ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি, ফ্রেশ হলাম। জিহাদ এসেই বললো,
“ কি ব্যপার ম্যাডাম তাসলিমা, মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। আজ বাপের বাড়ি ছেড়ে হটাৎ এই বাড়িতে যে! তাড়িয়ে দিলো নাকি ওরা? ”
“ হুম আমি আর বাপের বাড়ি যাবোনা, ভুলেও যাবোনা! ”
“ বাহহ ভালোই তো হলো তাহলে, আবার তোমাকে রাগাবো, তুমি এবার বাপের বাড়ির ভয় দেখাতে পারবেনা। কি কষ্ট টা ই না করলাম এতো দিন, শ্বশুর বাড়ি তে পড়ে থেকে। অবশ্য তুমি শাস্তি পেয়েছো এটাই অনেক৷ ”
প্রচুর রাগ হচ্ছে এখন, বারবার জিহাদের সাথে রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যেতাম! আর ও মান ভাঙিয়ে নিয়ে আসতো। কিন্তু এবার রাগ করে বাপের বাড়ি গেলাম, আর ও কিনা ঘরজামাই হয়ে বসে থাকলো। এভাবে বাপের বাড়ি ছাড়া করলো আমাকে। খুব খুব রাগ হচ্ছে জিহাদের উপর, এদিকে জিহাদ কে দেখলাম নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে, আহা কি শান্তির ঘুম!
টুপ করে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, এবার বুঝবে ঠেলা।