“মা আসছি।”
ঘুমের ঘোরেও লাফিয়ে উঠে পরে তিথি,ঘুমাচ্ছন্ন শরীরেই চোখ রাখল জানলার বাইরে অনেক দূর নাহলেও ঝাপসা চোখেই ক্রাশকে দেখে মনে লাড্ডু ফুটিয়ে,মুচকি হাসিতে গোটা মুখ রাঙিয়ে,পাশ বালিশটাকেই জাপটে ধরে পুনরায় শয্যা নিল তিথি।
এ হলো তিথির রোজকার গল্প আর সেই সাথে তিথির ঘরে আড়ি পাতার কাজ বাড়ল তিথির মায়ের,বোঝার বাইরে কিছু না থাকলেও উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় নিজেকে থামিয়ে রাখলেন রমা দেবী।
“কী রে বাবু জানলার বাইরে উঁকি দিয়ে কী দেখছিস?”
“কই কিছু না তো হাওয়া খাচ্ছি”
“উঁকি দিয়ে?”
নাহ্ বেগতিক দেখে মেঘ কথা না বাড়িয়ে আড্ডা দিতে বের হলো।
স্বপ্না দেবী মেঘের মা ছেলের না থাকার সুযোগ নিয়ে জানলার বাইরে দিয়ে চোখ রাখলেন তিথির বাড়ির দিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে আটটা অফিস থেকে তিথির বাড়ি ফেরার সময় আর মেঘের জানলার কোণ খোঁজার।
ঘরের ভিতরকার গল্প মায়েরা জানলেও এই গল্প কিন্তু ক্রাশ আর ক্রাশিনীর সম্পূর্ণই অজানা।এমনভাবে চলতে লাগল বেশ অনেকদিন দুজন দুজনের গতিবিধি সম্পর্কে অবগত এবং আগ্রহী হলেও কেউই কারোর সাথে ঠিক সেইভাবে জমিয়ে কথা বলে উঠতে পারে না। দুজনে দুজনের ফেসবুক ফ্রেন্ড,একে অপরের পোস্টে লাইক করলেও ঠিক সাহস করে কমেন্টটা করা বা এসএমএস কোনোটাই হয়ে ওঠে না।মেঘ তো বার কয়েক একটা হাই স্টিকার পাঠাতে গিয়েও পারেনি তিথি মেঘকে অনেক রাতে অন থাকতে দেখে এনগেজ মানুষ ভেবে আগ বারায়নি। হয়ত দুজনের দুজনকে পিছন থেকে দেখাই এই দূরত্বের কারণ হয়ে দাড়ায়। সর্বোপরি দুজনেই দুজনের কাছে একটা প্রশ্ন চিহ্ন হয়ে যায়
“ও কি আর আমার মতো নাকি।”
এদিকে দুই বাড়িতেই বিয়ে দেওয়ার সভা বসে প্রায় ছেলের বয়স আছে এদিকে মেয়েদের তো জন্ম থেকেই বিয়ের বয়স শুরু।বিয়ে করার ব্যাপারে দুজনে আপত্তি জানালেও এবারে দুই মাই বেঁকে বসেছে,এই বছরেই বিয়ে ফাইনাল।
“তিথি ছেলের বাড়ি থেকে লোক আসবে চুপচাপ সামনে গিয়ে বসবে।এই সব নাটক এখানে হবে না।”
মায়ের ইঙ্গিত বুঝতে তিথির বেশী সময় লাগলো না। ঝাপসানো চোখটা আড়ালে রেখে
অগ্যতা নিরুপায় হয়েই শাড়ি জড়িয়ে সামনে গিয়ে দাড়ালো পাত্রপক্ষের সামনে।
“কি রে চিনিস তো আমায়?”
তিথির ঘরে যেন নেমে এসেছে উষার প্রথম আলোর পরশ মাখা রঙিন মেঘ।
হাসবে না কাঁদবে সেটাই তো বুঝে উঠতে পারছে না তিথি,মাধ্যমিকের অঙ্ক পরীক্ষাতেও এতো হাত কাঁপেনি।
“কি রে পাত্র পচ্ছন্দ?”
মেঘের সাথে তিথির কথা না হলেও মেঘের মায়ের রাস্তায় দেখা হলেই গল্প হয়, মেঘ আর তিথির বয়সের পার্থক্য লিঙ্গগত বৈষম্য সেই সাথে পূজোর প্যান্ডেলে মেঘের পাশের ফাঁকা চেয়ারে গিয়ে বসতেই মেঘের অকারণে উঠে যাওয়া সব মিলিয়েই মেঘকে ঘিরে তিথির তৈরি হাওয়া জড়তাই তিথিকে মেঘের প্রকাশ্যে আসতে দেয়নি আর অবুঝ মেঘও
এই অদৃশ্য পাঁচিলের হদিশ পায়নি। তিথি সেদিন নির্বাকই ছিল কারণ কি বলবে সেটাই বুঝে উঠতে পারেনি। যদিও এরপর থেকে মেঘ আর তিথির রাস্তা এক মোড়ে এসে মিশে যায়।বছর শেষে গোটা শহর যখন শীতের আবেশে মাতোয়ারা সেইরকমই এক শুভদিনে গোধূলী লগ্নে চারহাত এক করে নিশ্চিন্ত হলেন পাত্র-পাত্রী দায়গ্রস্ত বাবা মায়েরা।
পরে অবশ্য তিথি রমা দেবীর কাছ থেকে জানতে পেরেছিল তার বিয়ের আসল রহস্য।রমা দেবী মেয়ের কান্ড কারখানা সব বুঝলেও অপারগ ছিলেন।মেয়ের মা হয়ে সে কী করে আগে ছেলের মায়ের কাছে যাবেন আর যদি যানও সেই বা মেনে নেবেন কেন শেষে পাড়ার মধ্যে এক অশোভনীয় পরিবেশের সৃষ্টি,এই সব ভাবনা রমা দেবীকে সত্যিটা চাপতে বাধ্য করলেও স্বপ্না দেবী ছেলের ইচ্ছাকে ইচ্ছাকৃত ভাবেই আশকারা দেন। তিনিই প্রথম বিবাহ প্রস্তাব নিয়ে মেয়ের বাড়ি যান,মেয়ের মা হাতের মুঠোয় চাঁদ পাওয়ার মতোই রাজি হয়ে যান। স্বপ্না দেবী নিজের ছেলের সব সত্যি উদঘাটন করলেও রমা দেবী মেয়ের জানলার প্রেমকাহিনী এড়িয়ে যান যাতে মেয়ে জামাই কে উঠতে বসতে সেই সর্ব যুগের সকল স্ত্রীদের উল্লেখযোগ্য খোঁটাটি মারতে পারে –
” তুমিই আমার জন্য পাগল হয়ে আমাকে বিয়ে করতে গেছিলে আমি তোমার কাছে জাইনি, আমার তো তোমাকে পচ্ছন্দই ছিল না।”
সামনে বালে খিরকী পে সিরফ্ চান্দ কা টুকরা নেহী সুরিয়াকা গোলা ভি রেহিতে হ্যা অর লাড়কি লোগ ছুপ ছুপ কে লাইন ভি মারতি হ্যা।