অভিমানি এবং রাগী

অভিমানি এবং রাগী

“তুমি সত্যিই আজ কিছু খাবে না? দেখো আমার সাথে রাগ করেছো ভাল কথা। তাই বলে না খেয়ে থাকতে হবে এটা কোন দেশের নিয়ম? নাও তাড়াতাড়ি হা করো।” জিন্নি গাল ফুলিয়ে আবিরের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আবির কথাগুলো বলতে বলতে ভাত মেখে এক গ্রাস ভাত এগিয়ে নিল জিন্নির মুখের দিকে। আর অমনি জিন্নি তার মাথাটা একটু পেছনে সরিয়ে নিল। ”

আচ্ছা এখন কি তোমার পায়ে ধরে সরি বলতে হবে নাকি? আচ্ছা এই নাও পায়ে ধরছি।” কথাটা বলেই আবির নুয়ে পড়লো জিন্নির পায়ের দিকে। আর তখন জিন্নি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ” এই কি করছো তুমি? পাগল হয়ে গেছো নাকি? স্বামী হয়ে স্ত্রীর পায়ে ধরছো কেন? ” অভিমানি এবং রাগী সুরে কথাটা বললো জিন্নি। আবির তখন হালকা একটু হাসি দিয়ে আবারো চেয়ারে বসে পড়লো।

” বউ যখন ঘাউড়া হয় তখন স্বামীকে মাঝে মাঝে পায়ে ধরতে হয়। আচ্ছা এবার বসে পড়ো। আসো তোমাকে খাইয়ে দেই।”
” নাহ আমার খিদে নেই। তুমি খাও, আমার খাওয়া নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না।”

” ও আচ্ছা তাই বুঝি? ”

আবির নিজেও এবার কিছুটা রাগ করে বেসিনে চলে গেল হাত ধোয়ার জন্য। এই পাগলী মেয়েটাকে বড্ড ভালবাসে সে। তাই প্রায় প্রতিদিনই অফিস থেকে সে তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরে। আসলে এই ইট পাথরের শহরে জিন্নি ছাড়া আর কেউ আপন নেই আবিরের। আবিরের বাবা মা থাকেন গ্রামের বাড়ি। আবিরের মতই জিন্নি এই শহরে বড় একা। আবির যখন অফিসে চলে যায় তখন রান্না করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না তার। বড় একা একা লাগে তার। তাইতো আবিরকে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসতে বলে সে। আবির প্রতিদিন তাড়াতাড়ি বাসায় আসলেও মাঝে মাঝে কাজ গোছাতে গোছাতে দেরী হয়ে যায়। আর যেদিন দেরী হয় সেদিনই জিন্নি অভিমান করে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। আসলে আবির ইচ্ছে করেই দেরী করে। কারণ জিন্নির এই অভিমানি মুখটা দেখতে আবিরের বড্ড বেশি ভাল লাগে। আর সবচেয়ে ভাল লাগে জিন্নির রাগ ভাঙ্গাতে।

” এই কি ব্যাপার তুমি হাত ধোয়া শুরুকরলে কেন? ভাত খাবে না? ”

” আমার খাওয়া নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না।” ” আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছো? ”

” কেন তোমার কথা তোমাকে ফিরাতে যাবো কেন? আমি কি নিজে কথা বলতে পারি না? ”

” আসো টেবিলে আসো। আমারো অনেক খুদা লেগেছে।” এবার আবিরের মুখে স্ফীত হাসি দেখা গেল। পাগলীটার অভিমান অর্ধেক গলে গিয়েছে। এবার বাকী অর্ধেক গলিয়ে ফেলতে পারলেই হলো।

” একি তুমি আবার আলাদা প্লেটে ভাত নিচ্ছো কেন? বললাম না আজকে আমি তোমাকে খাইয়ে দিব? ” জিন্নিকে আলাদা প্লেটে ভাত নিতে দেখেই অাবির কথাগুলো বললো। জিন্নিকে ভাত খাইয়ে দেওয়ার মত তৃপ্তি আর কিছুতেই পায়না আবির। যখন জিন্নি ভাত চিবোয় তখন ওর চোখগুলো আরামে কেমন যেন ছোট ছোট হয়ে যায়। তখন জিন্নিকে দেখতে একেবারে বাচ্চা মেয়েদের মতই লাগে। তাই আবির মাঝে মাঝে জিন্নিকে বাচ্চা বুড়ি বলে ডাকে। ” হুহ আসছে পিরিত দেখাতে। আমার কি হাত নেই? আমি নিজের হাতে খেতে পারি। ”

ঝাঁঝালো কন্ঠে কথাগুলো বললো জিন্নি। সে আবার মন দিলো ভাত বাড়ায়। ” আচ্ছা তাহলে তুমি আমাকে খাইয়ে দাও। নয়তো আমার হাতে খেতে হবে। তোমার কাছে এই দুইটা রাস্তাই খোলা আছে।”

” আমি নিজের হাতে খাবো আর তুমি তোমার হাতে খাও। বেশি কাহিনি করলে আমি খাবোই না।”

” নাহ তোমাকে আমার হাতে খেতেই হবে আমার বাচ্চা বুড়ি।” আবিরের মুখে বাচ্চাবুড়ি নামটা শুনেই ফিক করে হেসে দিল জিন্নি। আবির এমন এক ভঙ্গিমায় বাচ্চাবুড়ি বলে ডেকে উড়ে যে কেউ শুনলেই হেসে দেবে। জিন্নিকে হাসতে দেখে আবির ভাত মাখিয়ে আবারো জিন্নির মুখে তুলে দিল। এবার জিন্নি কালবিলম্ব না করে ভাত মুখে নিলো এবং আলতো করে আবিরের আঙ্গুলে কামড় বসিয়ে দিল। ” আউচ! এই তুমি আমার হাতে কামড় দিলা কেন? ব্যাথা পাইনা বুঝি? ”

” আমাকে খাইয়ে দিলে এমন কামড় খেতে হবে। যদি খাওয়াতে মন চায় খাওয়াও নয়তো নাই।”
” ঠিক আছে আমার সমস্যা নাই। এই ব্যাথার শোধ উঠাবো একদিন।” আবির জিন্নিকে খাইয়ে দিচ্ছে আর একটু পরপরই জিন্নির আরামদায়ক কামড়গুলো হজম করছে। সত্যি জীবনটা কতই না সুন্দর। জিন্নি হঠাৎ করেই কেঁদে দিল। এটা কোন কষ্টের কান্না না। এটা অানন্দের কান্না, এটা স্বপ্ন পুরনের কান্না। এমন একজন স্বামীর স্বপ্নই দেখে এসেছে জিন্নি। বিয়ের কিছুদিন আগে জিন্নি সবসময় চিন্তা করতো তার হবু স্বামীর ব্যাপারে। তার স্বামী কি তাকে আপন করে বুঝতে পারবে? পারবে তার দুষ্টুমিগুলোকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে? ”

আরে আমার বাচ্চা বুড়িটা কাঁদে কেন? তরকারিতে কি ঝাল বেশি হয়েছে? দেখো তরকারিতে ঝাল কিন্তু তুমি দিয়েছো। এখানে আমি নির্দোষ।” আবিরের কথাগুলো শুনে জিন্নি আরো জোরে কেঁদে উঠে। হয়তো জীবনে অনেক বড় কোন ভাল কাজ জিন্নি করেছিল। নয়তো এমন ভাল একজন স্বামী জিন্নির ভাগ্যে আসার কথা তো নয়। আবির জিন্নির মুখ মুছিয়ে দিল। নিজেও হাত ধুয়ে মুখ মুছে নিল।

তখনও জিন্নি কাঁদছিলো ” পাগলী, তোমার চোখের পানিতে তে ভাতগুলো নোনতা হয়ে গিয়েছিল। এত কান্না করার কিছু তো দেখছি না। এই আমি কানে ধরছি। আর কখনো দেরী করবো না।” একথা বলেই আবির তখনই কান ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তখন জিন্নি এক ঝটকায় আবিরকে নিজের বাহুডোরে বেঁধে নিল। জীবনে বেঁচে থাকতে আর কিছুর কি দরকার আছে? জিন্নি হু হু করে কাঁদছে আর আবির জিন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ” এই আমার বাচ্চাবুড়ি চলো ছাদে যাই। আকাশে আজ চাঁদ উঠেনি। মশারা ছাদে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। ওদের পার্টিতে আমরা দুজন যোগ দেই।”

” যাহ শয়তান।” ধীরে ধীরে সিড়িতে পা ফেলে আবির আর জিন্নি ছাদে উঠছে। আবির জিন্নিকে মিথ্যা বলেছে। আজ আকাশে থালার মত বড় একটা চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় আবির আর জিন্নির মনের মতই সবকিছু আজ আলোকিত।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত