আজ শুক্রবার। অফিসের ছুটির দিন। আমার বয়স ৩৫ বছরে ছুঁই ছুঁই অবস্থা এই বয়সে অনেক কিছু আমার জীবনে হয়ে গেল। বৈশাখী মেলাতে আমার আর সুস্মিতার দেখা হয়েছিল। সেদিন দিন টা ছিল অন্য রকম। আকাশে বৃষ্টি ছিল। সুস্মিতা আমার ছাতার ভিতর এসে নিজে কে রক্ষা করে ছিল। সুস্মিতা আমার চোখের একদম কাছে ছিল। আমি মিনমিন করে বললাম ” আমি দেখে নি কোনো অপ্সরী। অপ্সরী দেখতে কেমন আমি জানি না। কিন্তু আজ দেখলাম অপ্সরী। ”
মেয়ে টা লজ্জা পেয়ে আমার ছাতার ভিতর থেকে চলে গেল। মেয়ে টা কে কত জায়গায় খুঁজেছি কিন্তু খুঁজে পাই নি। একদিন মেয়েটা কে খুঁজে পেলাম। এরপর মেয়েটা কে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম। আমার খুব ভালো লাগত। মেয়েটা মাথায় মাঝে মাঝে গোলাপ ফুল দিয়ে আসত। আমি খুব অবাক হয়ে মেয়েটা কে দেখতাম। কিন্তু মেয়ে টা আবার কোথায় হারিয়ে যায়। আমি আবার মেয়েটা কে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ৫ বছর পর মেয়েটা কে খুঁজে পেলাম। মেয়েটার কাছে গেলাম। মেয়েটা কে বললাম ” আমাকে চিনতে পারছেন? ”
মেয়ে টা মাথা নাড়িয়ে বলল ” আপনি হিমু। ” আমি একটু মুচকি হাসি দিলাম। আমি মেয়েটার একটু কাছে গেলাম। আমি বললাম ” জানেন আপনি একটি কথা? ” মেয়ে টা নিচের দিকে চেয়ে ছিল। তারপর আমার দিকে চেয়ে বলে ” কি কথা? ” আমি বললাম ” জানেন আপনার অনেক রূপ। একেক সময় একেক রূপ। সে রূপ টা আপনি দেখতে পান না। ” মেয়ে টা লজ্জা পেয়ে বলে ” আপনাকে কে বলল? ” আমি চশমা টা ঠিক করলাম। চশমার ভিতরে একটা পোকা ঢুকে গিয়েছিল। মেয়ে টা আবার বলল ” কে আপনাকে বলেছে? ”
আমি বললাম ” কে আর বলবে আমি বলেছি। আপনি জানেন না আপনাকে আমি হাজার বার দেখতাম। হাজার বার আপনাকে নিয়ে কল্পনা করতাম। আপনি আমার কল্পনার রানী ছিলেন। রাজা ছিল হিমু। কিন্তু সে হিমু আমি ছিলাম না। একটা অজানা ছেলে ছিল। ” মেয়ে টা মনে হয় আমার কথায় কষ্ট ফেল। মেয়ে টা আমাকে বলে ” আমার বাবুটা এই স্কুলে পড়ে। ” আমি বুঝতে পারলাম মেয়ে টা আমার কথা শুনতে চায় না। আমি বললাম ” আচ্ছা আমি এখন যাই। ” মেয়ে টা বলল ” চলেন স্কুলে যাই। ”
মেয়ে টা বলল ” জানেন আমার বাবু টা খুব সুন্দর। আমাকে যখন মা বলে ডাকে আমি সব কিছু ভুলে যাই। ”
আমি উদাস হয়ে বললাম ” জানেন আপনাকে আমি যুগ যুগ ধরে চেয়েছিলাম। কিন্তু পাই নি। জানেন আমার না খুব ইচ্ছে হতো আপনাকে নিয়ে হাঁটতে। আপনার সাথে করে এক কাপে কফি খেতে। ” মেয়ে টা হয়তো আমার কথায় অভিমান করল। মেয়েটা হয়তো নিজের সাথে রাগ করে বসল। একটা ছেলে মেয়ে টা কে এতো ভালোবাসল। কিন্তু মেয়ে টা তার কিছু জানতে পারল না।
আমি একটু সময় পর বললাম ” জানেন আপনার জন্য আমি কত কদম ফুল কিনে আনতাম কিন্তু তার মধ্যে একটা ফুলও আমি আপনাকে দিতে পারে নি। সেটা আমার দোষ ছিল। আমি আপনাকে খুব ভয় করতাম। কিন্তু আপনার মন টা কে খুব ভালবাসতাম। আপনার রূপটা কে মাঝে মাঝে দেখতাম। আমার না ইচ্ছে হত আপনাকে ছুতে। কিন্তু জানেন আমার না আবার খুব ভয় করত। যদি আপনি অদৃশ্য হয়ে যান। সে ভয় নিয়ে রাতে ঘুমাতে পারতাম না। দাদি বলতেন ভালবাসার মানুষ কে আলোতে কল্পনা করতে হয়। আপনি দিনের বেলায় হারিয়ে গেলেন। ”
মেয়ে টা চোখের কণে পানি এনে বলে ” আপনি দেখতে যত বোকা তার চাইতে আপনি খুব গাধা। গাধা কেন বললাম জানেন? “আমি বললাম ” না।” আপনি জানেন না আপনি কত বড় ভুল করছেন। আপনি আমাকে গোপনে গোপনে ভালবেসেছেন সেটা আপনার ঠিক ছিল কিন্তু আমাকে জানিয়ে আপনি সব থেকে বড় ভুল করলেন। আপনার মনে কি আমি কিছু জানি না। সেটা আপনার মনের ভুল। আমি সব জানতাম আপনি আমাকে কলেজে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতেন। আমি শুধু ভাবতে ছিলাম আপনি আমাকে এসে বলবেন আপনার মনের কথা। কিন্তু আপনি বলেন নি। আমি একদিন চলে গেলাম এক অজানা শহরে। কিন্তু আপনাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে যেতাম। সেটা আপনি বুঝবেন না কারণ সে ক্ষমতা আপনার নেই। ”
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম। তারপর বললাম ” জানেন আপনাকে নিয়ে আমি একটি নতুন গল্প লিখতে চেয়েছিলাম। যেটি আজ অবধি কেউ করতে পারে নি। এখনও কেউ করতে পারে নি। আপনাকে নিয়ে আমি একি ছায়াতলে তাকতে চেয়েছিলাম। আপনাকে যুগ যুগ মন ভরে দেখতে চেয়েছিলাম। আপনার সেই বৃদ্ধা রূপ দেখে মুক্ত হতে চাইছিলাম। আপনার সাদা চুলের প্রেমে পড়তে চেয়েছিলাম। আপনাকে মাঝে মাঝে বলতে চাইছিলাম ” কি গো চুল তো সাদা হয়ে গেছে লাল মেহেদী দিবা কি? তুমি লজ্জায় মুখ টা আমার বুকের মাঝে রাখতে। আপনার প্রেমে আমি কালে কালে পড়তে চাইছিলাম। ”
মেয়ে টা এবার কান্না করে বলে থামেন আপনি। আমি দেখলাম মেয়ে টা চলে যেতে লাগল। মেয়ে টা স্কুলে গেল। আমি বসে তাকলাম। শুধু আকাশের দিকে চেয়ে আছি। রাস্তার দিকে একটি বার চাইলাম। দেখলাম একটা ছেলে পায়েল নিয়ে যাচ্ছে। আমার না এখন খুব মনে পরল। আমি একদিন একটা পায়েল কিনে ছিলাম। সে পায়েল টা মেসে এনে একবার বইয়ের মধ্যে রেখে ছিলাম। বইয়ের মধ্যে একটি মেয়ের ছবি ছিল। সে মেয়ের পায়ের মধ্যে পায়েল টা রেখে ছিলাম। কি অপরূপ সুন্দর লাগছিল। আমি না একটু আয়নার দিকে চেয়ে হেসে ছিলাম। আমি পায়েল টা রেখে কলেজে গিয়েছিলাম কিন্ত কলেজ থেকে এসে পায়েল টি কে পাই নি। আমি অনেক খুঁজে ছিলাম। একটু সময় পর আমার রুমমেট আসল সে দেখি মিটমিট করে হাসছে। আমি বুঝতে পেরেছিলাম। আমি রাগে তাকে অনেক সময় কানে ধরিয়ে রেখেছিলাম।
ভাবছি এই শহর ছেড়ে আজ চলে যাব। এলাকায় একটা বড় মেলা হয়। সেখানে আমি গেলাম । সুস্মিতাও আসছে। সুস্মিতা দাঁত বেরে করে হাসছে। আমি একটা অন্য রকম সুখ খুঁজে পাই। সুস্মিতার হাসিতে অন্য রকম অনুভূতি। সে অনুভূতি টা অন্য কোনো মেয়ের হাসিতে নাই। আমি এখনও ভালবাসি সুস্মিতা তোমাকে। তাইতো বছর যায় তোমাকে মন থেকে সরাতে পারি নি। তোমাকে দূর করতে পারি নি। তুমি এক মায়াজালে আমাকে বেধে রেখেছ। তোমার হাসি। তোমার চলাফিরা। সব কিছু আমার মন টা ছুঁয়ে যায়। জানো সুস্মিতা আমি আজও বিশ্বাস করতে পারি না। তুমি অন্য কারো হয়ে গেছ। আমি নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করি। কিন্তু আমি হেরে যাই। সুস্মিতা আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে তুমি কেমন আছ?
আমি সুস্মিতার সাথে কথা বলতে সুস্মিতার কাছে গেলাম। সুস্মিতা খুব অবাক হলো। আমি একটা হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে ছিলাম। সুস্মিতা শাড়ি পড়ে ছিল। সব কিছু ঠিক ছিল। কিন্তু একটা কারণ ছিল আলাদা। সব কিছুর থেকে আলাদা। সুস্মিতা এখন অন্য কারো। অন্য কারো হাত ধরে হাঁটে। অন্য কারো রাতের স্বপ্ন। আমি দেখতে পেলাম সুস্মিতার স্বামী সুস্মিতার কাছে আসল। আমি সুস্মিতা কাছে গেলাম না। দূরে চলে আসলাম। আমি ভুল। আমার ধারণা ভুল । আমার সব কিছু ভুল। কিন্তু একটা কথা সত্য আমি তোমাকে ভালবাসি সুস্মিতা।
মানুষ যখন একা হয়ে যায় তখন প্রিয়জন কে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে। আমারও দেখতে ইচ্ছে করে। সুস্মিতা কে নিয়ে। সুস্মিতা কে নিয়ে রাতের চাঁদ দেখতে ইচ্ছে করে। একটা চেয়ারে দু’জন বসে তাকব। সুস্মিতা মাঝে মাঝে আমার বুকে মাথা রাখবে। একটি চাদর নিয়ে দু’জন বসে থাকব। বসে বসে রাত কে নিয়ে গল্প করব।
সুস্মিতা আমাকে সকালবেলা ঘুম থেকে তুলবে। আমাকে বকাবকি করবে। আমি অভিমান করব। সে অভিমান টা এতো সহজে ভাঙবে না। সুস্মিতা আমার অভিমান ভাঙতে গিয়ে নিজে অভিমান করবে। আমি সুস্মিতার অভিমান ভাঙতে নিজে চা করে আনব। নিজের হাতে খাইয়ে দিব। সুস্মিতা কে নিয়ে হারিয়ে যাব এক অচিন দেশে। কিন্তু তা বাস্তব নয়। তা বাস্তব হবে না। কারণ সুস্মিতা এখন অন্য কারো। অন্যর হাত ধরে স্বপ্ন দেখে। সে স্বপ্ন টা শুধু সুস্মিতার।