স্মৃতিজাল

স্মৃতিজাল

ফাহাদ জানালার ধারে চেয়ারে বসে আছে সেই সকাল থেকে । এখন মধ্যদুপুর । আকাশ মেঘলা । সকাল থেকে মেঘ করে আছে । প্রতিমূহুর্তে মনে হচ্ছে, এই বুঝি বৃষ্টি নামল ! তা ওই মনে হওয়া পর্যন্তই ।বৃষ্টি আসি আসি করেও যেন ধৈর্য্যের পরীক্ষানেবে বলে আসছে না । ধৈর্য্যের অভাব ফাহাদেরকোনকালে হয়নি, আজও সে ধৈর্য্যের প্রতিমূর্তিহয়ে বৃষ্টির জন্য ছাতক-পাখির মত অপেক্ষা করেমেঘলা আকাশপানে তাকিয়ে আছে ।

শ্রাবনের দুই-দুইটা গোটা দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো শ্রাবন তার কান্না প্রকাশ করেনি । তবেফাহাদের মনে হচ্ছে আজই শ্রাবন তার সমস্ত ব্যাথা উগরে দেবে । তাই, ছুটির দিনের এই অলস দুপুরে ভীষন ব্যস্ত হয়ে ও বৃষ্টির অপেক্ষা করছে । শ্রাবনের প্রথম বৃ্ষ্টিতে ভেজা হয় না কতদিন হয়েগেল ! একটা দৃশ্য কিছুতেই পূর্ণতা পাচ্ছিলনা বলে এতদিন শ্রাবনের বৃষ্টিতে ভেজা হয়নি । আজ সেই অপূর্ণতা ঘুচবে বলেই বিশ্বাস ফাহাদের । একটা সময় ছিল যখন, প্রথম বৃষ্টিতে ওরা ভিজবেই ।ফাহাদের আব্বা করিম সাহেব যত কাজ থাক, যত দূরেথাকুন তিনি শ্রাবনের প্রথম জলকেলি তার ছেলের সাথেই করতেন । ফাহাদের বয়স যখন পাঁচ বছর, এমনই এক দুপুরে আব্বা তাকে ডাক দিয়ে বলেছিলেন

-“আব্বাজান, বৃষ্টিতে ভিজবা” ! এই সময় গুলোতে ফাহাদ দেখেছে, আব্বা কেমন জানি ঘোরে চলে যান । তার কথাবার্তা হয়ে যায় স্বপ্নালু, কাব্যিক । সেই পাঁচ বছর বয়সের মেঘলা দুপুরে ফাহাদ কিছু না বুঝেই,প্রচন্ড রোমাঞ্চ নিয়ে জোরে জোরে মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে দিয়েছিল । সাথে সাথে আব্বা বলেন, ‘চল তাইলে’ ।তারা তিনতলার বাসা থেকে রাস্তায় নামার মূহুর্তেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি চলে আসে । সেদিনের পর থেকে, সেই পাঁচ বছর বয়স থেকেই ফাহাদের জীবনের বাইশতম বসন্ত পর্যন্ত শ্রাবনের প্রথম বর্ষন তার আব্বার সঙ্গেই অঙ্গে ধারন করেছে ।শেষ বৃষ্টিতে ভেজার পর প্রায় দশ বছর গত হয়েগেল । মাঝখানের এই শ্রাবনগুলো ওর জন্য একরাশহতাশা, একগাদা দীর্ঘশ্বাস ব্যতীত আর কিছুই ছিলনা ।

আবারো সেই জলকেলির উচ্ছাস ফিরে আসার মূহুর্তে কেমন যেন নষ্টালজিক হয়ে পড়ে ফাহাদ । ওর মনে পড়ে আব্বার কথা । আব্বাই ওকে বৃষ্টিতে ভেজার অমৃত উচ্ছাসের সন্ধান দিয়েছিল । আব্বা একটা কথা প্রতি জলকেলিতেই বলতেন । শ্রাবনের প্রথম বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে কাঁপতে কাঁপতেবলতেন, “বুঝলি ফাহাদ, প্রতি বছর শ্রাবন মাসে প্রথম যে বর্ষন হয় চেষ্টা করবি যেন তাতে গোসল  করতে পারিস । এই সময় সারা বছরের সমস্ত কান্না শ্রাবন  উগরে দেয় । যদি এই কান্নাকে অঙ্গে নিতে পারিস, তাহলে জীবনে দুঃখ কম পাবি । সবার কান্না বুঝে নিজে আর কাঁদার সময় পাবি না । আর যদি কিছু কান্না থাকে, জমা করে রাখবি । শ্রাবন যখন আকাশ কাঁপিয়ে কাঁদবে, তুইও তার সাথে কেঁদে নিবি । কেউ বুঝতেই পারবেনা, তুই কাঁদছিস । হাঃ হাঃ হাঃ” ।

এরপর স্বগোক্তির মত উনার প্রিয় লাইনটা আওড়াতেন, ” I love to cry in the rain,because nobody knows I am crying.” চোখ ভিজে আসেফাহাদের । ফাহাদের মনে হয়, এইজন্যেই বুঝি ওর আব্বা জীবনের বড় বড়দুঃখগুলোকে হাসি দিয়ে ভুলিয়ে দিতে পারতেন । ওরমনে আছে, যেদিন আম্মা ওকে ছেড়েআব্বাকে ছেড়ে চলে গেলেন সেদিনও আব্বাহেসে হেসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলছিলেন,”আম্মা কারো চিরদিন থাকে না । একসময় না এক সময়তাকে চলে যেতে হয় । একেকজন একেকভাবেযায় । পার্থক্য শুধু এই, আর কিছু না ! তোর মা তো তোকে ছেড়ে চলে গেলেন নয় বছর বয়সে। আমার মা’টা যখন মারা গেল তখন তো আমি মাত্রহাটতে শিখেছি” । তখন হঠাৎই ফাহাদের মনেহয়েছিল, তার কঠিন মনের আব্বাও কাঁদেন । একটুখানিতারপরই সামলে নিয়েছিলেন নিজেকে । হেসেকোলে তুলে নিয়ে বলেছিলেন, “দুঃখ করিস নারেপাগলা ! আমি তো আছি” ।

ফাহাদ আব্বাকে কোনদিন প্রকাশ্য কাঁদতে দেখেনি। মধ্যরাতে কখনো ঘুম ভেঙ্গে গেলেদেখেছে, আব্বা জায়নামাজে সেজদারত অবস্থায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন । কিসের জন্য এত কান্না কারজন্য কান্না তখন না বুঝলেও পরে সবই বুঝেছিলবয়সকালে এসে । আম্মার ঘটনাটাও বিস্তারিতজেনেছিল বড় হওয়ার পর ।ফাহাদ আব্বাকে রাগতে, অভিমান করতে খুব একটা দেখেনি । আম্মা এত বড় ঘটনাটা ঘটানোর পরও আব্বাআম্মাকে এর জন্য দোষারোপ কিংবা গালমন্দ করতেশোনেনি । আম্মাও বোধকরি আব্বাকে ভালইচিনেছিল । নয়তো অমন সাহসী একটা কাজ, গোটাসমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে আপন পরিবারকে উপেক্ষাকরে কখনোই করতে পারতেন না । ফাহাদের দৃঢ়বিশ্বাস আড়াল থেকে আব্বাই আম্মাকে শেল্টারদিয়েছিল ।

ফাহাদ পুরোটা না জানলেও শেষের কিছু অংশ শুনেছিল। বাথরুমে যাবে বলে জামিল চাচ্চুকে ডাকতে যাবেঠিক এমন সময় আব্বা-আম্মার কথার আওয়াজ শুনেএগিয়ে যেতেই আলোচনার শেষ কিছু অংশ শুনেফেলে । তেইশ বছর আগের ঘটনার শুরুটা ছিলঅনেকটা এরকম -করিম সাহেব প্রতিদিনের মত ঘুমানোর আয়োজনকরছিলেন । মশারীর দুটা পাশ লাগানো শেষ আর দুটাবাকী । ফাহাদের আম্মা লোপা বিছানা ঠিক করছিলেন ।তখনি লোপা বললেন, “আমি আর তোমার সাথেথাকতে পারব না” । করিম সাহেব ধীরে সুস্থেমশারী টাঙানো শেষ করে স্ত্রীর পাশে এসে স্বভাব সুলভ রসিকতায় বললেন, তাই ! তা আমার অপরাধ !

-তুমি একটু পাগলা কিসিমের ।
-আমরা সবাই পাগল । কেউ একটু বেশী, কেউ একটুকম । এই তোমারও তো এক-আধটু পাগলামী আছে। আছে না ! নাটকীয় ভঙ্গিতে কথাগুলো বলেনকরিম সাহেব ।
-যেমন ? সরু গলায় জিজ্ঞেস করেন লোপা ।
-যেমন ! বাব্বা অংক করছো নাকি । কড়া ম্যাথ ম্যাডাম ।  উদাহারন-টুদাহারন এনে তো….. “দেখ, আজাইরাপ্যাচাল বাদ দাও, পাগলামী কি সেটা বল” । মাঝখানে কথাআটকে দিয়ে বলেন লোপা ।

-ওকে । তবে সত্যি বলছি, নিজের পাগলামীর প্রতি এতটা ইন্টারেষ্ট হতে আমি আর কাউকে দেখি নাই ।আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু লোপার চেহারা দেখে এর চেয়ে বেশী কিছু বলতে আর সাহসহয় না । তিনি বুঝতে পারেন, লোপা ঠাট্টা করছে না ।সিরিয়াস কিছু বলতে চায় । তবু পরিবেশ হালকা করার জন্য বলেন, বাদ দাও । আমি পাগল মানুষ । কত কথাই তো বলে ফেলি । রাত হয়েছে, এখন ঘুমাও ।

-পাগলামী কী আছে সেটা না শুনে তো আমি ঘুমাব না ।

-ওকে, ফাইন । তাইলে শোন, এই যে রাত দুপুরে তামাশা-মশকরা শুরু করছ এটাই হচ্ছে পাগলামী । ভিতরেভিতরে উত্তেজিত বোধ করেন করিম সাহেব ।সেটা চাপা দেন তার শান্ত স্বভাবের আড়ালে ।

-আমি ঠাট্টা করছি না ।
-তা কার সাথে থাকবে ! ফাহাদের সাথে ?
-বললাম তো ঠাট্টা করছি না । আমি জামিলের সাথে জার্মানী চলে যাব ।একটু যেন ধাক্কা খান করিম সাহেব । থতমত ভাবটা কাটিয়েউঠেন দ্রুতই ।

-জামিল জানে, ব্যাপারটা ?
-হুম, জানে ।
-অ । তা আমাকে কি করতে বল ।
-তোমাকে ব্যাপারটা জানানোর ছিল, জানালাম ।
-অ ।

কিছু সময় নীরব থেকে করিম সাহেব নিজেই বলে উঠেন, দেখ লোপা এসব খুবই সেনসিটিভ ইস্যু ।সমাজকেও তোমার মাথায় রাখতে হবে । খুব বেশী সমস্যা না হলে মানিয়ে নেয়া কি যেত না ! আরো সময় নিয়ে ভেবে দ্যাখা উচিত ।

-দ্যাখ, ভাবাভাবির আর কিছুই নাই । আমি গত চার বছর ধরে ভেবে, এবং গত তিনটি মাস যাবৎ গভীরভাবে চিন্তা করে আজ তোমার সম্মুখীন হয়েছি । আর মানিয়ে নেয়ার কথা বলছ ! সেটাও আমি চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি ।

-অ । তাইলে আর কি তুমি যা বলবে তাই হবে । তারপর অতি স্বল্প সময়ের মধ্যেই করিম সাহেব ও লোপার মাঝে সেপারেশন হয়ে যায় । জামিলকে বিয়ে করে লোপা চলে যায় জার্মানী । বিয়ের আগে এক রাতে হঠাত জামিল এসে উপস্থিত হয়েছিল । এই জামিল চুয়েটে পড়ার সময় থেকে ফাহাদদের বাসাতে থাকত । এই জামিলকেই করিম সাহেব হাত ধরে ধরে চট্টগ্রাম শহরের পথ-ঘাট চিনিয়েছিলেন । এমনকি চাকরি করার সময়ও নিজের বাসাতে থাকতে দিয়েছিলেন করিম সাহেব । জামিল ছিল করিম সাহেবের চাচাতো ভাই । তবে ভাব দেখে কখনোই মনে হয়নি তারা আপন ভাই নন । ফাহাদ ভীষনভাবে পছন্দ করত জামিলকে । জামিলও ফাহাদ বলতে অজ্ঞান ছিল । করিম সাহেব মনে মনে বিতৃষ্ণা বোধ করলেও জামিলের সামনে সেটা প্রকাশ করলেন না । “কি ব্যাপার, জামিল ?” জিজ্ঞেস করেন করিম সাহেব ।

-দাদাভাই, আমি যাব না । আপনি ভাবীকে ফিরায় নেন ।
-জামিল, তুমি কি মঞ্চ নাটক করছ নাকি যাত্রাদলে যোগ দিয়েছ ? রাত দুপুরে আমার সাথে ফাজলামো করতে এসেছ ?
-দাদাভাই, আপনি আমাকে মারেন । কাটেন । তবু এভাবে কথা বলবেন না ! আমাকে ক্ষমা করে দেন । ছুটে গিয়ে করিম সাহেবের পা ধরে জামিল । করিম সাহেব জামিলকে বাঁধা দিলেন না । শুধু ভারী স্বরে বলেছিলেন, “দূর পাগল, আমি তো সেই কবে ক্ষমা করে দিয়েছি” ।

-তাহলে, আপনি ভাবীকে আনছেন না কেন ?
-তা আর হয় না । তোরা সুখে থাকিস । ভাল থাকিস । আনন্দ-হাসিতে পূর্ণতা পাক তোদের জীবন । এই দোয়ায় আমি তোদের করছি ।
-দাদাভাই !
-জামিল, উল্টা-পাল্টা আর কিছু করিস না ।

যা হয়েছে ভাল হয়েছে । এমনিতে লোপার সামনে আমাকে বড্ড ছোট করেছিস, আর না ! ফাহাদ দেখেছিল সেদিন জামিল চাচ্চু কাঁদতে কাঁদতে চলে গিয়েছিলেন । পুরো দৃশ্য, সব কথা ডাইনিং রুমে থেকে ফাহাদ শুনতে পেয়েছিল । ফাহাদের নানাভাইরা লোপাকে দু-চক্ষে দেখতে পারতেন না প্রথম প্রথম । এখন আর সে অবস্থা নাই । বরফ গলে গেছে । ছোট মামা ওর কাছে ওর মায়ের নানা অবস্থা বলে যায় । ফাহাদ নিশ্চুপ হয়ে শোনে । হাঁ, না কিছুই বলে না । ছোট মামার কাছ থেকেই ফাহাদ জেনেছে ওর আম্মা, মাস ছয়েক ধরে চট্টগ্রামেই আছেন । জি,ই,সি’র কাছে নাকি ফ্ল্যাট কিনেছেন । জার্মানী থেকে পাঁচ বছর আগে এলেও এতদিন ঢাকায় ছিলেন । এখন পাকাপাকি ভাবে চট্টগ্রামে চলে এসেছেন । চট্টগ্রামে আম্মা আছেন শুনেও ফাহাদ কোন আগ্রহ দেখায় নি ।একটা সময় ও, জামিল চাচ্চুকে প্রচন্ড ঘৃনা আর আম্মার জন্য বিতৃষ্ণা বোধ করত । এখন দুজনের ব্যাপারেই উদাসীনতা বোধ করে । ওদের কোন কিছুতেই ফাহাদের কিছু যায় আসে না । সময় গড়িয়ে যায় । এখন দুপুরের শেষ-লগ্ন । বিকাল শুরু হবে হবে করছে । আকাশে মেঘ আরো ঘনীভূত হয়েছে । চারটা বাজতে না বাজতে মনে হচ্ছে সূর্য ডুবন্ত প্রায় ।

অধীর প্রতীক্ষায় অপেক্ষমান ফাহাদ । ফাহাদের স্ত্রী বেশ কয়েক বার দেখে গেছে ফাহাদকে । কোন প্রয়োজনআছে কি না জিজ্ঞেস করেছে । ফাহাদকে নীরব দেখে ফিরে গেছে । ফাহাদের স্ত্রী অতি মায়াবতী এক মহিলা । ফাহাদভেবে পায় না, ওইটুকুন শরীরে এত মায়া কিভাবেপুষে রাখে । মীরাকে ঠিক রুপবতী বলা চলে না । রং-টা শ্যামলা মত । একটু খাটো । তবে চেহারা ভর্তি,অঙ্গ ভর্তি মায়া নিয়ে দুনিয়াতে এসেছে মেয়েটা ।আর ফাহাদ, ঠিক এই জিনিসটার জন্যেই মীরাকে বিয়ে করেছে । মীরার মধ্যে এত মায়া যে, ওর দিকে তাকালেই যে কেউ সমস্ত অবসাদ, সমস্ত দুঃখ-ব্যাথা যন্ত্রনা নিমেষেই ভুলে যাবে । ফাহাদের অন্তত তাই মনে হয় । করিম সাহেব তার ছেলেকে আর যাই করেন না কেন, বড্ড মায়ার কাঙাল করে দিয়েছেন ।

ফাহাদ মাঝে মাঝে এজন্য জামিল চাচ্চু আর আম্মাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিয়ে থাকে । উনারা অমন কান্ড না ঘটালেতো ফাহাদ, আব্বাকে এভাবে পেত না । এমন করে ভালবাসাও হয়তো জুটত না । আর আব্বার মৃত্যুর পর ঠিক এরই সন্ধানে ছিল সে । সেটা তাকে দিয়েছে মীরা নামের মায়াবতী মেয়েটি । মায়া অনেকের কাছে বিভ্রম হতে পারে, ফাহাদের কাছে ভালবাসার অপর নাম । আর রুপবতী হল, বিপদের কারন । ফাহাদের আম্মা, ভীষন রুপবতী ছিল । ফাহাদ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় । মীরাকে বলে, “বাবুসোনা কৈ” ? -“ঐ তো ড্রয়িং রুমে খেলছে” । মীরা জবাব দেয় । আস্তে আস্তে ড্রয়িংরুমের দিকে এগিয়ে যায় ফাহাদ । দেখে, এক ছোট্ট তুলতুলে দেবশিশু পা ছড়িয়ে বসে খেলছে । ছেলেটা মীরার মত মায়াময় চেহারা পেয়েছে । দেখলেই বুক ভরে উঠে ফাহাদের । ছেলেটারবয়স পাঁচ বছর তিনমাস । কাছে গিয়ে ফাহাদ বলে, “বাবুসোনা বৃষ্টিতে ভিজবা” ?

-‘আম্মু বকা দিবে’ ! ভীষন ব্যস্ত মুখখানা তুলে জবাব দেয় শিশুটি ।
-না বাবা, বকবে না । আমি তো আছি !
-চল তাইলে !

চমকে উঠে ফাহাদ । ঠিক যেন ওর আব্বা কথা বলে উঠল । ছেলেকে নিয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ায় ফাহাদ কতদিন পর আজ বৃষ্টিতে ভেজা হবে ! চোখের কোন ভিজে উঠে ফাহাদের । আজ ঠিক ওর আব্বার জায়গা নিচ্ছে ওর সন্তান । আপন রক্ত । করিম সাহেবের উত্তরাধিকার । শুধু জায়গা বদল হচ্ছে, নয়তো আর সব যেন ঠিকই আছে । ফাহাদের মনে হচ্ছে ওর আব্বার শূন্যতা পূরনে ওর আব্বাই যেন নতুন রুপে নব আঙ্গিকে ওর কাছে ফিরে এসেছে ।

ছাদে পা রাখা মাত্র শ্রাবন অঝোর ধারায় কান্না শুরু করে দেয় । ফাহাদ ছেলেকে সাথে নিয়ে সে কান্না অঙ্গে ধারন করতে করতে দেখছে, ওর ছেলেটা কি তৃপ্তি নিয়ে, কি আনন্দের সাথেই না বৃষ্টিতে ভিজছে । ঠিক যেমন পরিতৃপ্তি দেখেছিল আব্বার মধ্যে । এটা কি বিভ্রম নাকি সত্যি ? ফাহাদের মনে হয়, ওর জীবন কানায় কানায় ভরে উঠেছে আজ । ওর চাওয়ার আর কিছুই নাই । ওর এই এক জীবনে অপূর্ণতা বলতে আর কিছুই রইল না ! ফাহাদের নয়ন গড়িয়ে জল নামে । আর স্বগোক্তি করে উঠে, ” I love to cry in the rain, because nobody knows I am crying .”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত