-ছেলেটা আমাদের বাসায় আসলেই হ্যাবলার মত তাকিয়ে থাকে আমার দিকে৷ ঘুষি মেরে নাকটা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে হয় আমার৷ আব্বুর বন্ধুর ছেলে বলে৷ নয়তো এতদিনে ইচ্ছেটা পূরণ করেই ফেলতাম৷ আমি আবার ইচ্ছের ব্যাপারে খুবই সচেতন একজন মেয়ে৷ আমার মনের কোনো ইচ্ছেই বাদ রাখি না৷ ইচ্ছে বাদ রাখাটা আমার পছন্দ নয়৷ কিন্তু এই ইচ্ছেটা আমি কিছুতেই পূরণ করতে পারছিনা৷
ছেলেটা নানা উসিলায় ঈদানিং বেশি আসা যাওয়া করছে৷ আর আমার আব্বু-আম্মুও মাথায় তুলে রাখে একদম৷ যেন তাদের মেয়ের জামাই৷
“মেয়ের জামাই”! কথাটা ভাবতেই গা জ্বলে উঠলো একদম৷ কি ভাবছি আমি? এই হ্যাবলাটাকে নিয়ে কিছুতেই এসব ভাবা যাবে না৷ একদম না৷
-বাবার মুখে কয়েকদিন ধরে বিয়ে বিয়ে শুনতে পাচ্ছিলাম আমি৷
আজকে সকালে আব্বু বলে দিয়েছে বিয়ের প্রস্তাব আসছে চারিদিক থেকে৷ আমার একটু রাগ হল৷ আরে এত তাড়াহুড়োর কি আছে? মনে মনে বললাম৷
আব্বুর সামনে গেলেই আমি কথা হারিয়ে ফেলি৷ গলাটা মিউ মিউ করে৷
আম্মাকে অনেক বোঝালাম৷ আমি এখন বিয়ে করতে চাই না৷ কিন্তু আম্মুরও কিছু করার নেই৷ ঘরে আব্বা যেটা বলবেন৷ সেটাই ফাইনাল৷ বিয়ের প্রস্তাবের কথা আমাকে শুনানো মানেই, অলক্ষ্যে বুঝিয়ে দেয়া “মামনি! বিয়ের জন্য তৈরী হও”!
মনটা খারাপ হল একটু৷ মনকে বোঝালাম, একদিনতো বিয়ে করতেই হবে৷ হয় আজ! নয় কাল৷
-আচ্ছা হ্যাবলাটা কি শুনেছে আমার জন্য প্রস্তাব আসছে? শুনলেই নিশ্চয় কষ্ট পাবে! চেহারাটা দেখার মত হবে একদম৷ মনে মনে দোয়া করলাম৷ হ্যাবলাটা যাতে শুনে কথাটা৷ আর শুনে কষ্ট পায়৷ ও কষ্ট পেলে আমার ভালোই লাগবে৷ যাক অন্তত একটা দিকে লাভবান হলাম৷ হ্যাবলাটার ঐ বিরক্তিকর চাহনিটা আর দেখতে হবে না৷
-সপ্তাহখানেক পর একদিন সকালে ঘুম ভাঙার পর দেখলাম, হ্যাবলাটা মা-বাবা সাথে নিয়েই আমাদের বাসায়৷ মনে কুহু ডেকে উঠলো৷ শেষমেষ হ্যাবলাটার সাথে!
নাহ! আর ভাবতে পারছিনা আমি৷ বেহুদা চিন্তা ভেবে ঝেড়ে ফেললাম মাথা থেকে৷ আন্টি-আংকেল কে সালাম দিতে গেলাম৷ হ্যাবলাটা তখনও আমার দিকে তাকিয়েই আছে৷ রাগ উঠলো আমার৷
হ্যাবলাটার শার্টের কলার খামচে ধরে বলতে ইচ্ছে করছিল” এই ছেলে! লজ্জা-শরম নেই দেখছি একদম৷”
কিন্তু পরক্ষণেই মনকে শান্তনা দিলাম৷ রেগে যাওয়াটা ঠিক হচ্ছে না৷
হ্যাবলাটা কিছুক্ষণ পর চলে গেল৷ অন্যদিন হ্যাবলার মত তাকিয়ে থাকতো শুধু৷ আজকে হালকা মুচকি মুচকি হাসছিলো দেখলাম৷
কিছুক্ষণ ঠান্ডা মাথায় ভাবলাম৷ মনে হল কিছু একটা ঠিক নেই৷
“মাাাাাাাা” বলে চিৎকার দিলাম৷ কিছুক্ষণ পরই মা হাজির৷
মা’র হাত ধরে বললাম,
-মা ওরা কেন এসেছে?
-ইমরানের নাকি তোকে খুব পছন্দ! বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে!
আম্মু হাসিমুখে কথাটাাবলে ফেলল৷ বুঝাই যাচ্ছে, মহিলা রাজি৷
মাথাটা একটু ঝিম মেরে উঠলো৷ ফ্রিজ থেকে হিম ঠান্ডা পানির বোতল বের করে ঢকঢক করে পানিটুকু গিলে ফেললাম৷ রাগের চোটে ঠান্ডাপানিগুলো ও মনে হয় গরম হয়ে গেল৷
পরক্ষণেই ভাবলাম, কিছুই করার নেই৷ বাবা যা বলেছে সেটাই ফাইনাল৷
-হ্যাবলাটা ঈদানিং বেশি বেশি আসা শুরু করেছে৷ চুন থেকে পান কষলেই এখানে চলে আসবে৷ মুচকি মূচকি হাসবে আমার দিকে তাকিয়ৈ৷ এই কয়দিনে বড্ড সাহস বেড়েছে৷ হেসে হেসে মজা নেয়া হচ্ছে৷ আমিও ছাড়ার পাত্রী নয়৷ বিয়েতো করতেই হবে৷ তার আগে আরেকটু প্রতিশোধ নেয়া যাক৷ প্রতিশোধ নিতে হবে! প্রতিশোধ নেয়ার ফন্দি ঠিক করতে হবে৷
কিছুক্ষণ ভাবার পরই পেয়ে গেলাম উপায়৷
রাঁধুনী মরিচের গুড়া দিয়ে শরবত খাওয়াতে হবে৷ একদম খাঁটি মরিচের গুড়ো৷ নিজের বুদ্ধির তারিফ করলাম একটু৷ মুখূ পৈশাচিক হাসি৷ হ্যাবলাটাকে বোঝাতে হবে যে, বিয়ের পর আমি তার জীবন তেজপাতা করে দিব”৷
হ্যাবলাটা পরেরদিন আবার আসলো৷ আমি চাইছিলাম সে আসুক৷ আমি বিরক্ত হলাম না আজকে৷ আডকে আমার আনন্দের দিন৷ যুদ্ধ জয়ের উল্লাস করবো আমি৷
শরবত বানিয়ে নিয়ে গেলাম হ্যাবলাটার সামনে৷ আমার হাতে ট্রে দেখেই মনে হল হ্যাবলাটা বেশি অবাক হয়েছে৷ আকাশ থেকে পড়েছে একদম৷ আমিও মনভোলানো হাসি দিলাম৷ আমার হাসিটা যথেষ্ট সুন্দর৷ গতকাল পুরো ৪ঘন্টা ধরে আয়নার সামনে হাসির ট্রায়াল দিয়েছি৷ কিভাবে হাসলে হ্যাবলাটা সন্দেহ করবেনা আমাকে?
মোটামুটি সফল হয়েছি মনে হচ্ছে!
হ্যাবলাটা হাসি মুখেই শরবতটা গিলে ফেলেছে৷
হ্যাবলাটার লাফালাফি দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলাম৷ কিন্তু সে এমন একটা ভাব ধরলো! যেন কিছুই হয়নি৷ শরবতটা খেয়ে মিষ্টি হেসে “ধন্যবাদ” দিল৷ রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছিল৷ মন চাইলো ঘুষিটা নাক বরাবর লাগিয়ে দিই৷
হ্যাবলাটা বিরিয়ানী পছন্দ খুব৷ এখন বাসায় আসলেই বিরিয়ানী রান্না করবো৷ রাঁধুনীর যে মরিচটা ঝালের কারণে খাওয়া যায় না৷ ঐ মরিচটা কিনে এনেছি৷ এবার আসুক মজা দেখাবো একদম৷
মরিচের শরবত খেয়ে দিন দু’য়েক আসেনি৷ ভাবলাম, কাজ হয়েছে নিশ্চয়৷ নিজেকে বাহবা দিলাম৷ বাহ! রিতু বাহ৷
ভেবেছিলাম আর আসবেনা৷ আমার আশায় পানি ঢেলে তার পরেরদিনই হাজির৷ আজকে বিরিয়ানী না খাইয়ে ছাড়ছিনা৷ পছন্দের বিরিয়ানী খাওয়াবো আজকে৷
ইচ্ছেমত ঝাল দিয়ে বিরিয়ানী রান্না করলাম৷ আম্মু সাহায্য করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু আমি দিই নি৷ আমার এক কথা “হবু স্বামীর জন্য নিজের হাতে রান্না করবো”৷ আম্মু একটু খুশি হলো মনে হচ্ছে৷ আমি হাসলাম একটু৷ পৈশাচিক হাসি৷
দুপুরে বিরিয়ানীর প্লেট নিয়ে ডাইনিং এর সামনে হাজির হলাম৷ আব্বুকে বুঝিয়ে বললাম৷ হবু স্বামী আমার সামনে বসেই বিরিয়ানী খাবে৷ টেবিলে আর কেউ থাকবেনা৷ শুধু আমি আর ও৷ হ্যাবলাটা নিশ্চয় ভাবছে, তার বৌটা খুব রোমান্টিক৷
হ্যাবলাটা আমার সামনে বসেই বিরিয়ানী খাচ্ছে৷ তৃপ্তি নিয়ে খেয়ে চলেছে৷ ঘামছে একটু একটু৷ পানির জগ আর গ্লাসটা আমার হাতের কাছে নিয়ে রেখেছি৷ চাইলেও পানি খেতে পারবেনা৷ কয়েক লোকমা খাওয়ার পর অসহায়ভাবে তাকালো আমার দিকে৷ চেহারাটা বলছে “একটু পানি হবে?” আমি ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছি৷ ঝালে মনে হয় কান দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে৷ আমার আনন্দ হচ্ছে প্রচুর৷
ঝালের চোটে চোখ দিয়ে পানি এসে গেল তার৷ তারপরও পানি দিচ্ছি না আমি৷ বুঝো এবার আমাকে বিয়ে করার মজা৷ আমাকে ফাঁদে ফেলে মুচকি মুচকি হাসা হচ্ছে? এখন কই গেল মুচকি হাসি? ” মনে মনে বললাম৷
পেছনে আব্বুর গলার আওয়াজ শুনতে ফেলাম৷ তড়িঘড়ি করে হ্যাবলাটাকে পানির জগ এগিয়ে দিলাম৷ একদম পুরোটা শেষ করে ফেলেছে৷
-আমার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে সে আসা বন্ধ দেয় নি৷ বরং আসা যাওয়াটা চলতেই থাকলো৷ আজ আবার তার বাবা-মা নিয়ে এসেছে৷ আমার মনে রাগের বদলে বিষন্নতা এসে ভর করেছে ততদিনে৷ মা কে বুঝালাম অনেক৷ লাভ হলো না৷ বাবাকে বলার সাহস হয়ে উঠেনি৷ বললেও খুব একটা লাভ হবে না৷ নিয়তি বলে মেনে নিয়েছি৷ তারপরও হ্যাবলাটাকে আমার সহ্য হচ্ছে না৷
মা কে রান্নার কাজে হেল্প করলাম৷ তার বাবা-মা আমার বাবার সাথে কথায় মগ্ন৷ আমি রুমে ঢুকেই অবাক হলাম৷ খুব বেশি অবাক হয়েছি৷ হ্যাবলাটা আমার রুমেই বসে আছে৷ সাহস তো কম না! কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারিনি৷ বাবা শুনলে খারাপ হয়ে যাবে৷ তাছাড়া তার বাবা-মা ও রয়েছে৷ দাঁতে দাঁত চেপে তার পাশে গিয়ে বসলাম৷ সে এক কথা দু’কথা বলে ভাব জমানোর চেষ্টা করলো৷ আমি অত সহজে গলছি না৷ চুপ করে রইলাম৷
হঠাৎ করে হ্যাবলাটা আমার হাত ধরে ফেলল৷ আমি হাতটা জোরে ঝাঁড়া দিলাম৷ ও একটু অপ্রস্তুত ছিল৷ সামলাতে না পেরে ফ্লোরেই পড়ে গেল৷
সেদিনই আমি ওর চোখে বেদনা দেখেছি৷ বিষাদে ভরে গিয়েছিল মুখটা৷ এর আগে এইরকম মুখ আমি দেখিনি ওর৷ আমার মনটা কেন জানি অপরাধ বোধ এ ভরে গেল৷ গলাটা ধরে এল আমার৷ কিছু বলতে গিয়েও পারিনি৷ ও নিজেকে সামলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল৷ আমি ধপ করে খাটে বসে পরলাম৷ আমি নিজের প্রতি নিজেই অবাক হলাম! কেন জানি মনে হল আমি ঠিক নেই৷
-সেদিন যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল “হাত ধরতে দিলে না তো? এই হাতেই আমি আংটি পড়াবো৷ এবং সেটা খুব শীঘ্রই”৷
ওর কথাটা শুনেই ভয়ে কুঁকড়ে গেলাম৷ কথাটার মাঝে জেদ ছিল৷ এতদিনে আমা বুঝে গিয়েছি৷ হ্যাবলাটা প্রচন্ড জেদী৷ এতকিছুর পরেও পিছু ছাড়লোনা৷
তারপরের দিনই সে এসে আংটি পড়িয়ে গেল৷ ভয়টা জোরে সোরেই ঝেকে ধরেছে আমাকে৷ এতদিনের অত্যাচারগুলোর প্রতিশোধ নিবে না তো?
“আচ্ছা ও তো আমাকে ভালোবাসে৷ তাইলে কষ্ট দিবে কেন”?
মনকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম৷ তারপরও স্বস্তি পাচ্ছি না আমি৷
আমি কি মানিয়ে নিতে পারবো সবকিছু?
ভয়ের সাথে সাথে অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরেছে আমাকে৷ আমার সকাল বিকেল দু’টোই বিষণ্ণ৷ সকালের সোনালি রোদের ছোঁয়াটা অনূভব করতে পারি না আমি৷ মেঘহীন নীল আকাশটাও বড্ড বিদঘুটে লাগে আমার৷
রঙিন সবকিছুই ধূসর মনে হয়৷ মন ভালো করে দেয়া গোধূলী বাতাসে ও আমি মন পোড়ার গন্ধ পাই৷ অনূভব করলাম “বড্ড অসুখী আমি”৷
নিজেকে আড়াল করে নিলাম সবকিছু থেকে৷ আপন মানুষগুলোর প্রতি অভিমানে ভরে গেল মনটা৷
-ও মাঝে মাঝে ফোন দেয়৷ আমি রিসিভ করি না৷ ফোনটা অফ করে রেখেছিলাম সপ্তাহখানেক৷ পরে আব্বুর জোরাজুরিতে অন করেছিলাম৷ ফোন আসলে রিসিভ করি৷ ও অবিরাম কথা বলে যায়৷ আমি হা, হু বলেই চালিয়ে দিই৷ ওকে বোঝানোর চেষ্টা করি আমি ভালো নেই৷ তোমাকে চাই আমি৷ ও হয়তো অনূভব করে না ততটুকু৷ বুঝতে পারলেও, মানতে রাজি নয়৷ ওর আমাকেই চায়৷
বাসায় আসলে ও সামনে যাই ৷ মাঝে মাঝে ঘুরতে নিয়ে যায়৷ ও সবকিছু সহজ করার চেষ্টা করলেও আমি সহজ হয়ে উঠতে পারছিনা৷ বিষণ্ণ মনে নির্বোধ এর মত হেটে চলি আমি৷ নিজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছি৷ প্রাণোচ্ছল হাসিটা ভুলে গিয়েছি আমি৷ আমার হাসিটা বিষণ্ণতা আর অনিশ্চয়তায় ভরপুর৷
-বিয়েটাও হয়ে গেল কিছুদিনের মধ্যে৷ নতুন জীবন শুরুর আনন্দটা আমাকে এতটুকুও ছুঁয়ে যায়নি৷ ঘোরের মধ্যে ছিলাম৷
পরের কয়েকদিন উৎকন্ঠায় কাটলেও, ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে উঠেছি৷ একটা ভালোলাগা অনূভব করছি আমি৷ সে প্রথমদিনই নির্ভয় দিয়েছিল আমাকে৷ হাত দু’টোর মাঝে ভরসা খুঁজে পেয়েছি আমি৷ শ্বশুর-শ্বাশুরি একদম মেয়ের মতই ভালোবাসেন৷
হ্যাবলাটার ডাকেই আমার ঘুম ভাঙে৷ মানুষটার প্রতি দিন দিন মোহিত হচ্ছি আমি৷ তার সরলতা, ধৈর্য্য, সহনশীলতা সবকিছুই প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করে আমাকে৷ আমার সাথে বলা প্রত্যেকটা কথায় এক মোলায়েম কন্ঠে বলে যায় মানুষটা৷ তার সবকিছুর প্রেমে পড়ে যাচ্ছি আমি৷ নিজের ভাবনায় নিজেই লজ্জা পাই আমি৷ বালিশের বুকে মুখ লুকোই৷
অনূভব করলাম, এই বোকা বোকা চাহনীর মানুষটাকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছি আমি৷ কিন্তু বলা হয়নি এখনো৷ কত কথা জমিয়ে রাখি মানুষটার জন্য৷ কিন্তু বলা হয় না আর৷ তার সামনে গেলেই কথাগুলো হারিয়ে ফেলি৷ এটাই বুঝি ভালোবাসা!
-এমনই এক শীতের সকালে ঘুমটা ভেঙে গেল৷ একটু তারাতারিই৷ মানুষটা তখনো ঘুমোচ্ছে৷ আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে তার দিকে৷ সাবধানে চুমু দেই মানুষটার কপালে৷ নাকটা টেনে দিই হালকা করে৷ নিজের অজান্তেই হেসে উঠি আমি৷
কুঁয়াশায় ঢাকা প্রকৃতির পুরোটাই৷ শরীরে চাদর জড়িয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াই আমি৷ হিম ঠান্ডা হাওয়া ছুঁয়ে যায় আমায়৷ সুখী একজন মানুষ মনে হল নিজেকে৷
পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে৷ ঢুলুঢুলু চোখ নিয়ে মানুষটা আমার পাশে এসে দাঁড়ায়৷ একটু ইতস্তত করে আমার হাতটা ছুঁয়ে দিল৷ আমি কিছু বলি না৷
হাতটা তার দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
-হাটবে আমার সাথে?
“এই শিশির ভেজা ঘাসে”
“হাতে হাত রেখে”
মুখ দিয়ে শব্দ বেরোই নাই আমার৷ চোখের কোণে জলের উপস্থিতি টের পেলাম৷ বাঁধা দিলাম না৷ জলগুলো গড়িয়ে পড়ছে৷ মানুষটা পরম ভালোবাসা আঙ্গুলের ডগা দিয়ে মুছে দেয় চোখের পানি৷ আমি জড়িয়ে ধরি৷
-শিশির ভেজা ঘাসে পৃথিবীর সেরা দু’টো সুখী মানুষ হাটছি পাশাপাশি৷ কারে মুখে কোনো কথা নেই৷ আমি থামিয়ে দিলাম তাকে৷ প্রশ্নের দৃষ্টিতে তাকায় আমার দিকে৷ হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম তার হাত থেকে৷ মানুষটা আহত দৃষ্টিতে তাকায় আমার দিকে৷
আমি মুচকি হেসে তার বাহুটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম৷
তার মুখে হাসি ফুটেছে৷ আমাকে পাওয়ার হাসি৷ বিশ্বজয়ের হাসি৷ এই হাসিটার সাথে আজকেই আমার প্রথম পরিচয়৷
বড্ড সুখী লাগছে নিজেকে৷ সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জানাই৷ পৃথিবীর সেরা মানুষটাকেই স্বামী হিসেবে আমাকে উপহার দেয়ার জন্য৷