এক.
ছেলেটা হাসছে। শুকনো কিন্তু মিষ্টি হাসি। নির্জন একটা পথ, সে একা দাঁড়িয়ে আছে বাসের অপেক্ষায়। খোলা রাস্তায় সন্ধ্যার আঁধার ছুটে আসছে। সেই আঁধারের পথ ধরেই সূক্ষ্ম তীরের ফলার মত হঠাৎ নেমে এল ঝমঝম বৃষ্টি। আশেপাশে কোন ছাউনি নেই। আধোয়া নোংরা লাল- হলুদ রঙা টি-শার্টটার আড়ালে কোমরে প্যান্টের ভেতর গোঁজা বইটার কাছে পৌছে যাচ্ছে বৃষ্টির পানি। ছেলেটা ভাবছে… তবুও হাসছে এবং সে থমকেই আছে। বইটির পাতায় পাতায় পানির ধারা নদীর মত এঁকেবেঁকে ছুটছে। হঠাৎ একটা হাত এসে ছেলেটার হাত ধরল। কেউ ছিলনা আশেপাশে, তবুও কেউ এসে হাত ধরল, সে হাতটা আমার। আমিই তাকে টেনে নিয়ে ছুটতে লাগলাম। হঠাৎ সামনে সেই স্বচ্ছ নদীটা, সেই বইয়ের পাতায় যার নাম ছিল, যে কাহিনীটি শেষ করব বলে বইটি কেনার মত পয়সা ছিলনা কাছে বহুদিন। নদীটির নাম ভেসে উঠল চোখের সামনে -ময়ূরাক্ষী।…
হঠাৎ কোন গর্তে চাকা পড়ে ভীষনভাবে দুলে উঠল বলেই ঝিমুনি কেটে গেলো। পয়সা খরচ করে রোলার কোষ্টারে চড়তে যেতে হয়না নন্দন কিংবা ফ্যান্টাসিতে। ঢাকায় লোকাল বাসে চড়লেই হয়। তারোপর যদি সিট না পাওয়া যায় তবে তো কথাই নেই। হিমু হওয়া সম্ভব হয়না বাস্তবে যদিবা কারোরই কিন্তু আমি হিমুর নদীটি দেখতে শুরু করেছি। রোলার কোষ্টারের দুলনী না হয়ে যদি সেই ময়ূরাক্ষীতে কোন নৌকার দুলনী হয়ে উঠত। হলোনা আর…
কেবল অবস্থানগত তফাতের কারনে দ্ইু মানুষে আচরণে কত পার্থক্য! এ বিষয়টা আমি খুব বুঝি। বাসে ঝুলে থাকার কঠোর কসরত নিয়মিতই করে চলছি আমরা এই ঢাকা শহরের খেটে খাওযা মানুষগুলো। মাঝে মাঝে কদাচিৎ সিটে বসার সুযোগ হয়। এই যেমন এখন বসে আছি। দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর বিরক্তির মাত্রা এবং সে মাত্রার ডালপালা আমার ঠিক বোঝা আছে। বর্ষাকাল, আকাল রাজধানীর পথে পথে অযুত নিযুত ধর্ষনের ফলে যে কাদাময় ক্ষত তার ছাপ জুতোয় জুতোয় ঘোরে ফেরে। দাঁড়িয়ে থাকা পাশের ব্যাক্তিটির কাঁধে একটা বড় আকারের ব্যাগ, বেচারা একটু ঘুরে মাংসপেশীগুলোকে শান্তি দেয়ার চেষ্টা করছিল, পাশেই কারও প্যান্টের উপর দিয়ে কাদামাখা স্যন্ডেলটা স্পর্শের দুঃখ ছোঁয়া লাগাতেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন-‘চোখের মাথা খাইছেন নাকি, বাস থাইমা রইছে আপনের ঘুরনের কি দরকার, ঘুরছেন ভালো , দেইখ্যা ঘুরবার…’
ওদিকে কান দিয়ে লাভ নেই, এসব রোজকার বিষয়। বসার সুযোগ হয়েছে সুযোগের সদ্ব্যবহার করা দরকার। একটু গতি আবার একটু অনঢ় অবস্থা-এইতো ক্রমাগত, মাথাটা দুলে ওঠে, লেখক প্রাণটা জেগে ওঠে। দাঁড়িয়ে থাকলে শরীরের পেশীগুলো ব্যালেন্স বজায় রাখতে এতটাই শক্তিক্ষয় কওে, মাথা আর তখন কাজ করেনা। বসে থাকলে কাজ করে। এখন কাজ করছে। নতুন একটা গল্পের ভেতর সে ঢোকার পরিকল্পনা করছে। চোখ দুটোও বন্ধ হতে চাইছে। ঝিমুনিটি উপভোগ করতে চাইছে মন। গল্প না আসুক , হিমুর নদীটও আসতে পারে , কিন্তু সাথে ছেলেটা যার কোমড়ে বইয়ের পাতা ভিজছিল, সে আসুক আমি চাইনা। অনেকদিন ভুলে ছিলাম। ইদানীং কেনো আবার সেই ছেলেটা আসছে আধোস্বপ্নে? আগে যখন আসত তখনই ভেবেছিলাম একটা গল্প লিখব, কিন্তু মন সাড়া দেয়নি। লিখবনা। বরং মন থেকে তাড়াব। তাড়িয়েছিলামও, লেখালেখির প্রতি ঝোঁক আর ভাবনা ক্রমাগত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। তা সে উভয় ক্ষেত্রেই- সাহিত্য চর্চা আর অফিসের গদবাধা রিপোর্ট আর চ্যানেলের স্ক্রিপ্ট। মিডিয়ার ব্যাপক প্রসারে যাক আমার মত বাউন্ডুলেদের খেয়ে পড়ে বাঁচার মত কিছু সুযোগ হয়েছে।
অকারণ হর্ণ বাজাচ্ছে গাড়িগুলো। ফ্লাইওভারের কাজে রাস্তার কিংদাংশতো অকেজোই , মড়ার উপা খড়ার ঘা হয়েছে দুধার দিয়ে পাইপ বসানোর হিড়িত পড়ে যাওয়ায়। গর্ত থেকে উঠানো মাটির সাথে বৃষ্টির পানি এসে মিশে থিকথিকে ক্ষীর রেঁধেছে। কি দুর্বিসহ কষ্টে, দূর্দান্ত কসরতে রাস্তা পার হচ্ছে সকলে। স্কুল ফেরত ছেলেমেয়েগুলোও। জীবন হাতের মুঠোয় সবার। মুঠো খুললেই প্রাণ বায়ু উড়ে যাবে। এইসব বিসদৃশ্য নিয়ে খুব লিখতে ইচ্ছে হয়। চেষ্টাও করেছি কত। তারপর এগুতে এগুতে বৃত্ত আর পূরণ হয়না।
আচ্ছা এই বৃষ্টিতে মানুষের কষ্ট নিয়েই একটা গল্পের প্লট শুরু করা যায়। বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়া পথের সমস্যা নিয়ে শুরু হবে। কিন্তু সাথে আসতে থাকবে রাস্তার বেহাল অবস্থার করুন চিত্র, রাস্তা মেরামতের নামে টাকা লুটপাটের এক মহোচ্ছব, বিদেশি অর্থ সহায়তা রাস্তার মেরামতে বাস্তবে সামান্যই ঢালা হচ্ছে আর আছে মন্ত্রী মিনিষ্টারদের শকনুী দৃষ্টি, দলীয় নেতা কর্মীদের আগ্রাসন–সমস্যার ডালপালা ছড়াতে থাকে, কোন স্থানে থামেনা, গল্পের নৌকা কোন নদীর ঘাটে ভেড়েনা। তাইতো শেষমেষে বরাবরই সমস্যা দিয়ে শুরু করেও গল্প প্রেমের জালে পা দেয়। গল্প লেখা হয়ে যায়, লেখা হয়ে যায় একসময় উপন্যাসও। প্রকাশকরা সমস্যা তুলে ধরার দিকে মাথা ব্যাথ্যা করেন না। প্রেমের উপন্যাস ভালো চলে, ‘পরকীয়ায় পঙ্তিহারা ’-উপন্যাস তাই প্রকাশের লগ্নির অর্থ উঠে আসার মত বিক্রি হয়। প্রকাশক আবারও সামনের বইমেলার জন্য দুটো প্রেমের উপন্যাস লিখে দিতে বলেছেন। পরকীয়া যেন থাকে সেটা বলতে ভোলেন নি। উনি শিক্ষিত প্রকাশক বলেই বই পড়েছেন। পরকীয়ার উৎকণ্ঠা বুঝেছেন। অনেক প্রকাশকতো লেখাপড়াই জানেনা। তারা আবার কেবল রগরগে বই চান। আমি লেখক হতে চাই। দু’একটা বই বেঁচে কিছু টাকা প্রকাশকের কাছ থেকে খসাতেও চাই। সমস্যা নিয়ে, দেশের মানুষকে বইগুলো আর লেখা হয়না, যা লেখা হয় দু’একটা বৃত্ত খোলা গল্পে, তাও পড়ে থাকে মেসের টেবিলে ডায়েরীর পাতায়।
দুই.
বড় লেখক হয়ে উঠতাম যদি কোনদিন সমস্যা নিয়ে লেখা গল্পগুলোও প্রকাশকদের দিয়ে ছাপানো যেত। সেদিন হয়তো মন উজাড় করে কিছু গল্প লিখে ফেলতাম। হিমুর ময়ূরাক্ষী নদীটা নিয়ে একটা গল্প লিখতে চেয়েছিলাম। স্বপ্নে দেখা সেই ছেলেটাকে ময়ূরাক্ষী নদীটিতে নৌকায় চড়াতে চেয়েছিলাম। গল্পটার সূচনা করতে পারিনি। ছেলেটা বারবার কষ্ট দেয়, চোখে পানি নিয়ে আসে। লেখক হবার যাতনা আর সুখ ঘিরে ধরে। প্রিয় লেখক হুমায়ূন স্যারের সাথে দেখা করব ভেবেছি। হিমুর মযূরাক্ষী নদীটি তাঁর কাছ থেকে চেয়ে নিতে হবে। তারপর ছেলেটাকে শিকলবন্দী করে গল্পটা লিখে ফেলতে হবে। স্যারকে দেখাতে হবে। কিন্তু স্যারতো এখন আমেরিকায় চিকিৎসারত। শুনেছি শরীরের অবস্থা খুব খারাপ যাচ্ছে ইদানিং। স্যারের জন্য পরাণ কাঁদে। দেশে এলেই এবার আমি ছুটে যাব। কিন্তু উনি কি আমার মত ছোট লেখকের সাথে দেখা করবেন? মযূরাক্ষী নদীটি কিছুটা ক্ষনের জন্য হিমুর কাছ থেকে নিয়ে ধার দেবেন? অবশ্যই দেবেন-উনি অনেক বড় হৃদয়ের মানুষ। আমি ওনাকে সেই ছেলেটির কথা বলব। বলব, স্যার সেই ছেলেটি আমি। আপনার ‘ময়ূরাক্ষী’ বইটি লুকিয়ে দোকান থেকে আমি বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলাম। দোকানের কর্মচারী ছিলাম, কাজের ফাঁকে বইটি শেষ করতে পারিনি। বৃষ্টি এলো তখনই । …স্যারকে বাকীটুকুও বলব। উনি নিশ্চয় আমার কষ্টটা বুঝবেন। উনি মানুষের সহজাত কষ্ট খুব ভালো বোঝেন বলেই তো সেগুলো এত সুন্দর প্রকাশ করেন লেখায়। অথচ আমি লিখি ঘোড়ার ডিম।
তবুও কেউ মজেছে। মজাও হতে পারে। তবুও আমি রিস্কটা নিতে চাচ্ছি। অতীত বড্ড কষ্ট দিচ্ছে। ইদানীং বৃষ্টি হলেই আমার অতীতের সেই সন্ধ্যা ফিরে আসছে। একজন নারীর সঙ্গ কি তবে আসলেই প্রয়োজন? সেটাও ভেবেছি। বন্ধনে বন্দী হতে চায়না আজও মন। কিন্তু তবুও বোধহয় প্রয়োজন।
সে আমার মোবাইল নম্বর যোগাড় করেছিল। বলেছিল, আমি আপনার ফ্যান। ‘পরকীয়ায় পঙ্তিহারা’ আমার দ্বিতীয় উপন্যাস। দ্বিতীয় উপন্যাসে সুকণ্ঠী নারী ফ্যানের ফোন। আমি মুহূর্তে আকাশে মেঘে চড়ে বসেছিলাম। কেনো জানি তবুও বলে ফেলেছিলাম, আপনি কি আমার বই পড়ে মনে কষ্ট পেয়েছেন, তিক্ত কোন বাক্য শোনাবেন বলে কি এই ফোন কল?
সুকণ্ঠী প্রতি উত্তরে বলেছিল, না, আমি মুগ্ধ হয়েছি , আমি আপনার প্রেমে পড়েছি।
আমি বোকার মত বললাম, প্রেমে!
হুম! তবে আপনার নয় কিন্তু , আপনার বইয়ের।
তারপর কিছুক্ষণ হাসাহাসি। অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল। কথা বৃষ্টির মত। যতক্ষণ ঘনীভূত মেঘ থাকে সে ঝরবেই। আমাদের দু’জন নরনারীর মস্তিষ্কে মেঘ দ্রুত এবং ক্রমাগত ঘনীভূত হচ্ছিলই। আমিও আমার প্রথম ফ্যানের প্রতি নিজেই মোহাচ্ছন্ন হচ্ছিলাম। প্রায়ই কথা হয় আজকাল।
নারী তার নাম বলেছে রূপা। বিশ্বাস করেছি আবার করিনিও বলা যেতে পারে। হিমুর ভক্ত নারী, হিমুর নায়িকা রূপার নাম সে কারনেই বলে থাকবে হয়তো। জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে ভূবন ভুলানো হাসি শুনিয়ে বলেছিল, নামটা নাকি সত্যিই। আমি বিশ্বাস করেছিলাম। নামটা আমাকে অগোচরে নারীর প্রতি আলাদা একটা মোহ সৃষ্টির ঘটনায় পর্যবসিত করেও থাকতে পারে। হুমায়ূন আহমেদ স্যারের সৃষ্ট রূপা চরিত্রটির প্রতি আমারও আলাদা একটা মোহ আছে। রূপা নামে মজব সেটাই তাই স্বাভাবিক।
রাতে কখনও কথা হয়নি। আমি ছ্যাবলামি করে একদিন রাতে মোবাইল বন্ধ রাখার কারন জানতে চেয়েছিলাম । অকপটে বলেছিল, পরকীয়া নিয়ে বইয়ে এত বিশ্লেষন করেছো আর আমি বিবাহিত সেটা বুঝলেনা।
ততদিনে আমরা দু’জন দু’জনার প্রতি তুমি সম্বোধনে চলে গিয়েছিলাম। বিবাহিত শব্দটা একটা প্রচন্ড নাড়া দিলেও আমি সামলে নিলাম। কেনো যেন এবার সত্যিকার ভাবে সম্পর্কটাতে একটা প্রশান্তি পেলাম। হতে পারে বন্ধনের বাধ্যবাধকতা মুক্ত হলাম বলে। তবে নিজের মাঝে নষ্ট একটা আপন ভূবন টের পেলাম। পরকীয়া নিয়ে উপন্যাস যখন লিখছিলাম, ভাবনার সূতো মুক্ত আকাশে অবারিত ছড়াচ্ছিলাম তখন এই ভূবনটা সাড়া দেযনি। এখন দিচ্ছে। রূপা বলেছিল, কী? বিবাহিত দেখে কি বন্ধুত্ব করবেনা? পরকীয়াতো করতে বলছিনা। শুধু লেখকের একটু সান্নিধ্য চাচ্ছি। সেটা কি খুব অন্যায়?
কেনো যেন আবার ছ্যাবলামি করে বলেই ফেলেছিলাম, পরকীয়া করতে চাইলেই কি করা যায়, সে যে হইয়া যায়…হো হো হো।
সম্পর্ক কতদূর কি এগিয়েছে ভাবিনি। একা মানুষ। মুক্ত বিহঙ্গ। কল্পনার জগত আমার জীবনের অনেকাংশ জুড়ে। তারোপর সেই বৃষ্টি ভেজা বই -সেই কষ্টের দৃশ্য। আমি ভুলতে চাই।
রূপা বলেছিল, দুপরের সময়টাতে বাসায় সে সবসময় একাই থাকে। লেখক চাইলেই এসে দেখা করে যেতে পারে।
থার্ড পার্সনে বলা বাক্যের সে আমন্ত্রণে সাড়া দিতেই ছুটেছি আজ।
তিন.
আমি এলাকাটা চিনি। দক্ষিণ দনিয়া । শুনে রূপা বলেছিল, তাই নাকি, আর কোন পরকীয়া সম্পর্ক আছে নাকি এদিকে …
থাকলে কি হবে?
নেই সেটা জানি, লেখায় তুমি যত পটু নারীদের সাথে কথা বলায় তত পটু কিন্তু নও।
তবে তুমি যে পটলে!?
পটেছি নাকি? আমিতো পটালাম।
…আমার কিন্তু চিরন্তন পুরুষালি আতে ঘা লেগেছিল। তারপরও কেনো আমন্ত্রনে ছুটে এলাম! জ্যাম এখন অসহ্য লাগছে। বোজা চোখে কত কিছু ভাবছিলাম। নেমে চলে যাব নাকি। যদি রূপার হাসবেন্ড চলে আসে। যদি ধরা পড়ে যাই। আসলেই কি আমার মনে কোন নষ্ট ইচ্ছে সাড়া দিচ্ছে, নাকি কেবলই কৌতূহল। লেখকদের কত পাগলামী থাকে। আমি লেখক হতে চাই, একটুখানি হয়েছিও বটে, একটু পাগলামী করলে কিই বা যায় আসে। তবুও…এতো ঠিক নয়। ফোনের সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ থাকনা। যদি দেখতে খুবই কদাকার হয়। যদি একাবর তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছে করে। যদি বেশ বয়স্কা হয়। যদি মজা করার জন্য আরও দু’চারটে বান্ধবীকে নিয়ে বসে থাকে…
মোবাইল বাজছে। কিন্তু পকেট থেকে এই চাপাচাপির সিটে বসে সেটা বের করাটাই কষ্টসাধ্য। পাশের লোকটির সাথে কুনইয়ের গুতো লাগায় আড়চোখে তাকালে সে একবার। সে তাকানোর উত্তরে আমার কি ভয় পেয়েছি এমন কোন ভাব করা দরকার? আচ্ছা হিমু হলে কি করতো…সে আমার ভাবনায় আসার নয়, হুমায়ূন স্যারই ভালো জানেন । স্যারের সাথে দেখা হলে জিজ্ঞেস করতে হবে। হিমুর পরকীয়া বিশ্বাস নিয়েও স্যারকে একটা বই লেখার অনুরোধ করতে হবে।
…রূপার কণ্ঠ ভেসে এল মোবাইলের তরঙ্গে, তোমার জন্য রাঁধতে রাঁধতে ঘেমে একাকার। তা কতদূর পৌঁছালে?
এই তো যাত্রাবাড়ী । প্রচন্ড জ্যাম।
সে জানি। বাস থেকে নেমেই দেখোনা। সকালের বৃষ্টিতে রাস্তার কি যে অবস্থা ভেতরে ঢুকলেই বুঝবা।
ভয় দেখাচ্ছ। অচেনা নারীর সাথে দেখা করতে তার বাসাতেই আসছ। কাদাপানির ভয় তুমি পাবে, সে আমি বিশ্বাস করিনা। তবে তোমার কণ্ঠ কিন্তু কাঁপছে।
সেটা কিন্তু বাসের দুলুনির কারনে রূপা। ভয় পেলে কি আর আসতাম!
সত্যি তুমি আসছো তো?
আসছি। এখন রাখ, বাস ব্ডড বেশি দুলছে। কখন যে উল্টেই যায়।
উল্টে গেলে আমার কি হবে, কে দেবে আমার বুড়ো হাবড়া বরের হাত থেকে মুক্তি?
হাসতে হাসতে ফোন কেটে দিলাম। আরেকবার ভাবলাম, সত্যি কি আমি যাচ্ছি। হ্যাঁ যাচ্ছিই।
জ্যামে থেমেছে বাস আবার। চোখ বন্ধ করলাম। অনেক নষ্টালজিক স্মৃতি মনে পড়ছে। প্রতিটি স্মৃতির পরতে পরতে ফিরে আসে সেই বৃষ্টি ভেজা বই। বইটির নাম ছিল ময়ূরাক্ষী। ১৯৯০ সালের কথা, সম্ভবত ঐটা ছিল হুমায়ূন আহমেদের হিমুকে নিয়ে লেখা প্রথম বই। জব্বার হোসেন সাহেবের লাইব্রেরিতে কর্মচারী ছিলাম। বস্তির ঘরে অসুস্থ মা। খুব কষ্টে আমার দু পয়সার আয়ে চলে যেত কিন্তু চিকিৎসা মার ঠিক মতো হতোনা। তারোপর রাতে নৈশ স্কুলে পড়তাম। পড়ালেখাটা ছাড়তে পারতাম না, কেনো জানি সেটা আমার নেশা ছিল। জব্বার সাহেবের সেই ভয়াবহ মার-এখনও যেন পিঠে ব্যাথা অনুভত হয়। অনেক কষ্টে কেটেছে চাকরিটা চলে যাবার পরবতী অনেকটা দিন। মা’ও মারা গেলেন সেই সময়। একর পর এক যাতনা। দনিয়া এলাকার বস্তি ছেড়ে চলে গেলাম। কৈশোরের স্মৃতি কত এই এলাকার। জব্বার হোসেনও তখন এই এলাকায় থাক%