ফিজিক্সের পনের নাম্বার সিট

ফিজিক্সের পনের নাম্বার সিট

– আচ্ছা আপনি একটা মেয়ে হয়ে একটা ছেলেকে বিরক্ত করেন লজ্জা করে না?
– আপনি একটা ছেলে হয়ে একটা মেয়েকে রিফইউজ করেন এটা আপনার কাছে খারাপ লাগে না?
– ধুরর তর্ক করার মুড নেই। ফোন রাখেন। আর কখনো ফোন দিবেন না।
– আমার বয়ফ্রেন্ড, আমি যখন ইচ্ছে কল দিব।
– হোয়াট?!! আমি কবে আপনার বয়ফ্রেন্ড ছিলাম?
– ছিলেন না, হবেন।

ফোন রেখে দিলাম। দুইদিন ধরে এই মেয়েটা খুব বিরক্ত করছে। জানিনা আমার নাম্বার কোথায় থেকে পেয়েছে। তবে খুব বিরক্ত করছে। আর এইসব বিষয় আমার একদম ভালো লাগে না। তাই ও যে নাম্বার থেকেই কল দেয় সেটাই আমার ব্লকলিস্টে।

২দিন পর। ময়মনসিংহ পার্কের একটা বেঞ্চিতে বসে আছি। এক বয়স্ক লোক এসে বললো, ‘মামা বাদাম দিব?’ আমি কিছুটা অবাক হলাম। এই লোকটির মুখে মামা ডাক একদম মানাচ্ছে না। সে যদি বলতো ‘বাবা বাদাম দিব।’ তাহলে মানাতো। বয়স্ক লোকদের মুখে বাবা ডাক ভালো মানায়।

১০টাকার বাদাম অনেক্ষণ সময় নিয়ে খাচ্ছি তবুও শেষ হচ্ছে না। কিছুটা বিরক্ত লাগছে। বাদাম খেতে বিরক্ত লাগে এটা খুব খারাপ কথা। খুব আনরোমান্টিক ব্যাপার। হঠাৎ আমার মোবাইলে অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে কল আসলো। রিসিভ করতেই পরিচিত সেই কন্ঠ! ঐ মেয়েটি, যে আমাকে বার বার ফোন দিয়ে বিরক্ত করে।
মেয়েটি আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠলো, ‘আপনার বাদামের ভাগ দিবেন? খেতে ইচ্ছে করছে!’ আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘আপনি কোথায়?’

– আপনার পিছনে।

পিছনের দিকে তাকাতেই দেখি হিমি! সে আমার খুব কাছে এসে বললো, – আমাকে চিনছো আবির?! আমি হতভম্ব হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। এমন মেয়েদের পৃথীবিতে থাকা উচিত না। তাদেরকে বেহেশতের জন্য স্টক করে রাখা উচিত। পৃথীবিতে এমন মেয়ে থাকলে অন্য সবার আফসোস বেড়ে যাবে। হিমি মেয়েটাকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি। ময়মনসিংহে ভার্সিটি ভর্তি কোচিংয়ে ক্লাস করার সময় ওর সাথে আমার পরিচয়। একদিন কোচিং শেষে সিড়ি দিয়ে ডপ ডপ করে নামতেছি এমন সময় পিছন থেকে হিমি ডেকে উঠলো, – এই যে আবির….!

– হু।
– ফিজিক্সের পনের নাম্বার সিটটা তোমার কাছে আছে?
– হুম।
– দিবা?

আমি ব্যাগ থেকে খুঁজে ফিজিক্সের পনের নাম্বার সিটটা বের করে ওর হাতে দিলাম। ও কিছু না বলেই দ্রুত হেঁটে চলে গেল। রাত ১২টার সময় আমার ইনবক্সে একটা মেসেজ! ‘থ্যাংক ইউ আবির’ আমি বললাম, ‘হো আর ইউ?’
সে বললো, ‘আমি হিমি।’

– নাম্বার কোথায় পেয়েছো?
– তোমার সিট-এ লেখা ছিলো।

এমন সময় মনে পড়লো এক ভয়াবহ ঘটনার কথা। কারণ এই সিটের পিছনের অংশে লেখা, ‘‘হিমি মেয়েটাকে আমার ভীষণ ভালো লাগে। তাই ওর থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে!’’ আমার একটা বদঅভ্যাস আছে আর তা হলো, নিজের পড়োশানার খাতা এবং বইগুলো ডায়রির মত ব্যবহার করি। এজন্য স্যারদের থেকে অনেক বকা খেয়েছি! কিন্তু লাভ হয়নি। এরপর থেকে ওর সাথে আর তেমন কথা হয়নি।

হিমি আমার পাশে বসে চুপচাপ বাদাম চিবিয়ে খাচ্ছে। আর মাঝেমধ্যে কাগজ থেকে একটু লবণ নিয়ে জিভে দিচ্ছে। কেমন যেন ছেলেমানুষি ভাব ফুটে উঠেছে ওর মধ্যে। অনেকক্ষন হলো হিমি কোনো কথা বলছে না। চুপচাপ বসে বাদাম খাচ্ছে। আমি নিরবতা ভেঙ্গে বললাম, – হিমি…! সে বাদাম খেতে খেতে আড়চোখে আমার দিকে তাকালো। কি ভয়ংকর সুন্দর সেই চাহনী!

– হু।
– ফোনে এসব করার মানে কি? পরিচয় দিলেই তো ভালোভাবে কথা বলতাম।
– দেখলাম।
– কি দেখছো?
– মেয়েদের প্রতি তোমার অবজ্ঞা।
– এটা মোটেই অবজ্ঞা না। নিজের পারসোনালিটি ধরে রাখা।
– ওহ আচ্ছা।

বলেই হিমি বাদামের ঠোংগাটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো। ’’নাও বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দাও।’’
আমি মুচকি হেসে ওর হাতে খোসা ছাড়িয়ে দিচ্ছি। সে হুট করে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘সারাজীবন এই কাজটা করতে পারবে?’  সুন্দরী মেয়েদের ভালোবাসাকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা কোনো সাধারন মানুষের নেই।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত