হলদিয়া এক পাখির নাম

হলদিয়া এক পাখির নাম

আমি নামি? না, খবরদার নামবি না।আশপাশ থেইকা কে কখন দেখে, তারপর কেলেঙ্কারি হইয়া যাইব। হলদিয়া কুচ্চে মুরগীর মত কটকটে চোখে ইব্রাহিমর দিকে তাকিয়ে রয়। ইব্রাহিম বৈশাখের ধানে লাগানো কাচির মত ক্ষীপ্র গতিতে শাপলা তুলে নেয়,শাপলার নলগুলো সাপের মত গলায় পেঁচিয়ে উপরে উঠে আসে। ইব্রাহিমের লোমশ বুকে জোঁকটা মাথা ঢুকিয়ে রেখে বাইন মাছের মত কুঁকড়ে আছে।

হলদিয়া আঁতকে উঠে বলল,ইয়া আল্লাহ! তোমার শইলে দেখি জোঁক লাগছে। ইব্রাহিম হাটুর দিকে তাকিয়ে বলল,কই রে জোঁক? হলদিয়া বাঁ হাতের দুই আঙুল দিয়ে হ্যাঁচকা টানে জোঁকটা ফেলে দিয়ে বলল,এই জোঁকের লাহান তোমার লোমে ভরা বুকটা কামড়ায় দিতে পারলে শান্তি পাইতাম। ইব্রাহিম পেছন ফিরে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করল,এখানে দাঁড়ালেই হলদিয়া তাকে জ্বালাতে থাকবে এ তার বেশ জানা। ইব্রাহিমের পেছন থেকে হাঁক ছেড়ে হলদিয়া বলল,চইল্যা যাও কেন? ইব্রাহিম শাপলার নল চিবুতে চিবুতে বলল,তোর তো লজ্জা শরম নাই।আমার আছে। হলদিয়া কিটকিটে হাসি দিয়ে বলল,এহ! যে পুরুষ যাত্রায় গিয়া মাইয়্যা মানুষের কোমর ধরে হের আবার শরম৷ হলদিয়া আবার কিটকিটে হাসি হাসতে থাকে। ইব্রাহিম বাড়ি ফিরেই শাপলাগুলোও বারান্দার কোণায় রেখে পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

ফজিলা বানু শাপলার নলগুলো আধ আঙুল সমান কেটে তা থেকে আঁশ ছাড়িয়ে বেতের ডালায় রেখে চলেছে।ঠিকমতো চোখেও দেখে না, নাহলে এই কটা নল কবেই বাছা হয়ে যেত। এই নিয়ে ফজিলা বানুর আফসোস হয়।আল্লাহর এই সংসারে যত আফসোস আছে তার প্রায় সবটুকুর মালিক তার সৃষ্টির নারীকুলের হাতে।হয়ত কোন এক আফসোসেই ইব্রাহিমের মা মধ্য যৌবনে পরপুরুষের হাত ধরে পৌষের শেষ রাত্তিরে উধাও হয়।অর্ধযুগের প্রেমিকা বউ হবার পর যখন পরপুরুষের প্রেমে মজে ঘরছাড়া হয় তখন বুকের ভেতর খানিকটা আফসোস জমা দোষের নয়। আফসোসের সংসারে মানুষকে আফসোস নিয়েই মরে যেতে হয়,তার ব্যতিক্রম হল না ইব্রাহিমের বাবার বেলায়।সেই থেকে দাদির হাতে মানুষ ইব্রাহিম।

ফজিলা বানু চুলোর ভেতর শুকনো ধঞ্চেগুলো গুঁজেই দিতেই তা দাউদাউ করে জ্বলে উঠেছে।উঠোনের এক কোণে খোলা আকাশে নিচে রাঁধতে বসেছে ফজিলা।চিটচিটে রোদে ঢিলে চামড়ার ভাঁজে ঘাম জমেছে। খয়েরি রঙের ব্লাউজের পিঠের দিক থেকে ভিজে চপচপ অবস্থা। কান্দি ভাঙা কড়াইয়ে সরষের তেল ঢেল দিয়ে ছেঁচা রসুন, পেয়াজ,নুন, শুকনো মরিচ আর সরষে বাটা দিয়ে বেশ মাখা মাখা করে নিয়েছে। শাপলার নলগুলো কড়াইয়ে দিতে যাবার আগেই ইব্রাহিমের গলা শোনা গেল।

ইব্রাহিম লুঙ্গী চিপে দড়িতে নাড়তে নাডতে বলল,কিরে দাদি এখনো রান্ধা হয় নাই? ফজিলা নলগুলো কড়াইয়ে ঢেলে দিয়ে বলল,তুই ত্যাল মাখতে মাখতে হইয়্যা যাইব। যা ত্যালডা মাইখ্যা নে,আইজ তো আবার পালা আছে৷ ইব্রাহিমের বেশ খিদে পেয়েছে,কথা না বাড়িয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে যায়। বাঁশের চটার বেড়া আর খড়ের চালার এ ঘরের দক্ষিণে ছোট ছোট দুটো জানালা। দু জানালার সাথে দুটো চৌকিখাট। জানালা দিয়ে কয়েক গজ দূরের যৌবনা খালের রুপোর মত চকচকে পানিগুলোর দিকে তাকালেই তৃষ্ণা মিটে আসে ইব্রাহিমের। মাথার দিকে জানালা হওয়ায় দখিনা ফুরফুরে বাতাসে চোখ বুজতেই ঘুমিয়ে পড়ে ইব্রাহিম। ইব্রাহিমের ঘুম ভাঙে বিকেল নাগাদ৷ ফজিলা বানু ইব্রাহিমকে ডাকেনি,সারা রাত জাগতে হবে নাতির এই ভেবেই নাতিটাকে নির্ভার ঘুমাতে দেয়া। খেয়েদেয়ে বেরিয়েছে ইব্রাহিম।

আজ পালা বসবে ফুলবাড়িয়াতে। হাজার মানুষের আয়োজন সেখানে। নেওয়াজ বাড়ি পেরিয়ে কুমোরঘেড়ের বিশাল ধান খেত পেরিয়েই ফুলবাড়িয়া । মুয়াজ্জিনের আযানে খালে বেড়ানো হাঁসগুলো পাছা দুলিয়ে দুলিয়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। পা দুটো পেছন দিক দিয়ে ডানা ঝাপ্টে নীড়ে ফিরতে শুরু করেছে অবাধ্য পাখিগুলো।বাঁশঝাড়ের শেষ মাথায় আসতেই হলদিয়া পেছন থেকে ইব্রাহিমের লাল রঙা ফতুয়া ধরে টান দেয়। ইব্রাহিম “এই কেডারে” বলে দু কদম পিছিয়ে যায়।হলদিয়া ব্যাঙ্গাত্মক সুরে বলে, আ রে আমার পুরুষ মানুষ! বলেই কিটকিটে হাসি শুরু করে।ইব্রাহিমের ভেতরটা ভিজে চপচপ হয়ে আসে এই হাসি দেখলে। সেটা কস্মিনকালেও হলদিয়া টের পাক সেটা সে চায়না তাই তো কপাল কুঁচকে বলল,এত কুয়ারা ভাল লাগেনা হইলদা। হলদিয়া ইব্রাহিমের খুব কাছে এসে দাঁড়ায়,চারদিকে অন্ধকার নামি নামি বলেই ইব্রাহিম আর পেছনে সরে না।

ইব্রাহিমের বুকের কাছে তুলতুলে ঠোঁট এনে থু থু শব্দ তুলে বুকে থু দিয়ে হলদিয়া বলে,বুকে থু দিয়া দিলাম গো। ইব্রাহিমের ভেতরে থাকা সত্তা চিৎকার করে বলছে হলদিয়াকে হ্যাঁচকা টানে বুকের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে। না, ইব্রাহিম সেটা করেনা। যন্ত্রের গলায় বলে,সইন্ধ্যা নামছে। বাড়ির দিকে যা,এই বলেই ইব্রাহিম হাঁটা শুরু করে। হলদিয়া কয়েক কদম এগিয়ে খপ করে ইব্রাহিমের হাত ধরে বলে,যাত্রার মাইয়্যাগোর কোমরে তো প্রতিদিনই হাত দেও আবার হেগো হাতও ধরো আমার কোমরটায় হাত দিলে হাত কি পঁইচ্যা যাইব? ইব্রাহিম হলদিয়ার হাতখানা ঝাড়া দিয়ে বলে,খালি জ্বালাস তুই৷ যা,সর। হলদিয়া ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,তুমি মিয়া মনে মনে আমারে খুব কইরা চাও সে কথা ভালাই জানা আছে। তাইলে খামাখা ন্যাকামি করো কেন? ইব্রাহিম বিরক্তির সুরে বলল,হ তোরে চামু আমি! আমার যেন ঠ্যাকা পরছে৷

তাইলে বঁটিতে আমার পা কাটছে হুইন্যা তেইল্যাপাতার রস পাঠাইছিলা কেন? সদর হাসপাতালে চোরের মত আমারে দেখতে গেছিলা কেন? আমাগো বাড়ির পাশ দিয়ে যাওনের সময় জানালার দিকে তাকাও কোন ঠ্যাকায়? ইব্রাহিমের কথা বেধে যায়, ভেতর দিয়ে কথা বের হয়না৷ ইব্রাহিম হনহনিয়ে হাটা শুরু করে।পেছন না ফিরেই বলে,বাড়িত যা আন্ধাইর নামছে। হলদিয়া গলা বাড়িয়ে বলে, মাইয়্যাগোর কোমরেই হাত দিয়ো হাত যেন উপরে না উঠে৷ এটুকু বলেই আবার কিটকিটে হাসি শুরু করে হলদিয়া। “না,না, না! এমন মিলনের চেয়ে বিরহই শ্রেয়!আমি চাইনা এই মিলন।প্রেমিক তুমি মোরে ক্ষমা করে। আমি বৃহন্নলা একলা রবো এ সংসারে তবুও তোমায় আর চাইব না। না, না, না! ” সংলাপ শেষ হতেই চারদিক থেকে করতালি ভেসে এলো৷

অনেকের চোখে পানি চিকচিক করছে,অনেকেই দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। এর মাঝেই যাত্রার নায়িকা বৃহন্নলা আর নায়ক মঞ্চ ছেড়েছে তবুও অনেকে মঞ্চের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে,তাদের ঘোর যেন এই মাঝ রাত্তিরে এসেও কাটছেনা। হ্যারিকেনের আলোয় দলবেঁধে সবাই বাড়ি ফিরছে। ইব্রাহিম তার পাওনা বুঝে নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করেছে। ইব্রাহিমের কানে একটা কথাই ঘুরছে, “মাইয়্যাগো কোমরের উপরে হাত দিও না” এ কথা মনে পড়তেই ইব্রাহিম অজান্তেই হেসে উঠছে।হলদিয়া জানে যাত্রায় পুরুষেরা মেয়ে সাজে তবুও সেই মেয়েদের নিয়েও তার আপত্তি! ইব্রাহিম জানে,মেয়েরা তাদের ভালোবাসার মানুষের পাশে নিজের ছায়াকেও সহ্য করতে পারেনা৷ মেয়েটা দুষ্ট প্রকৃতির হলেও বড্ড সাদা মনা। হলদিয়াকে ভালো না বেসে থাকা যায়না তবুও ইব্রাহিম সে অসাধ্য কাজটা প্রতিনিয়ত করে চলেছে তার নিজের দীনতা,অসামর্থ্যতা আর উঁচুনিচু ভেদাভেদটা অক্ষুণ্ন রাখতেই। বুকের ভেতর জমাট বাঁধা ভালোবাসার মাথায় হাত বুলাতে গেলেই বিপত্তি ঘটতে সময় লাগবেনা সে কথা ইব্রাহিম ছাড়া কে আর ভালো বোঝে?

বেশ কদিন ধরে ফজিলা বানু বিছানায় পড়া। আলু ভাতে রেঁধে খেতে হচ্ছে ইব্রাহিমকে। হলদিয়ার টই টই স্বভাবে লাগাম টেনেছে শমসের নেওয়াজ। বাবাকে যমের মত ভয় পায় বলেই বাবা বাড়ি থাকলে বের হবার সাহস পায়না৷
মধ্য রাত। খালের ধারের জারুল গাছের নিচে বসে আছে ইব্রাহিম । চাঁদের আলোয় চারপাশটা বেশ ফকফকা, টিপ টিপ করে আকাশ কেঁদে চলেছে ষোড়শী তরুণীর মত। আজকাল ইব্রাহিমের দিন ভালো যাচ্ছেনা৷ যাত্রাপালাও মাসে একটা হলে হয় না হলে না হয়।

জমি-জিরাত না থাকায় অন্যর খেতে সারাদিন গাধারখাটুনি যায় তার। দাদির রক্ত বমি,বাতের রোগ,বাতজ্বর ইব্রাহিমকে বেশ ভাবায়। বিদ্যুৎ চমকানিতে ইব্রাহিম কেঁপে ওঠে,ভেতরটাও কেঁপে ওঠে বাপ মা একসাথে হারাতে হবে এই ভয়ে। দাদি যে তার বাপ মা দুটোই ছিল। এই মুহুর্তে হলদিয়াকে খুব মনে পড়ছে ইব্রাহিমের,এই মেয়েটা ছাড়া তার কাঁধে হাত রাখার মত আর যে কেউ নেই।হলদিয়ার কিটকিটে হাসিখানাও অনেকদিন দেখা হয়না৷ আগে যাত্রায় যাবার সময় হলদিয়া পথ আঁকড়ে কি মধুর জ্বালাতনই না করত তাকে। মানুষের চোখে পানি আসে বিচত্র সব কারণে,কখনো তীব্র কষ্টে আবার কখনোবা অভ্যাসের অনাভ্যাসে।ইব্রাহিমের আজ অভ্যাসের এই অনাভ্যাস সহ্য হয়না বুঝি।

দাদি, কিরে দাদি। ঘুমাই গেছস? “নারে ভাই,ঘুম আহেনা”, ফজিলা বলল। কিছু খাইতে মন চায় রে তোর? ইব্রাহিম জিজ্ঞেস করল। হ,রে। লক্ষন ময়রার বানানো গরম গরম দুইডা রসগোল্লা খাইতে মন চায় রে ভাই। ইব্রাহিম ফজিলাকে জড়িয়ে শুয়েছিল।মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, শুক্কুরবার হাটের দিন। হেইদিন আইনা দিমুনে রে। ফজিলা ঘুমিয়ে পড়েছে,জবাব দেয় না৷

উঁহু! কেডা রে! ঘুমের ভেঙে তড়িঘড়ি করে ওঠে ইব্রাহিম।ইব্রাহিম বিরক্তির স্বরে চোখ মুছতে মুছতে বলল,এত জোরে কেউ চুল ধইরা টান দেয়? খোলা জানালা দিয়ে চোখ বড়বড় করে ইব্রাহিমের দিকে তাকিয়ে আছে হলদিয়া।ইব্রাহিম হাই তুলতে তুলতে বলল,এই ফজর ওয়াক্তে তুই আইলি কইত্তে(কোথা থেকে)।হলদিয়া চোখ পাকিয়ে বলল, ও! তাই তো বলি আমার দিকে ফিইরাও তাকাওনা কেন। ফজিলা বানুর লগে এক বিছানায় ঘুমাইলে বউ আনার দরকার কি! এটুকু বলেই প্রশস্ত ভেংচি কাটে হলদিয়া। ইব্রাহিম যন্ত্রের গলায় বলল,দাদির মেলা অসুখ। ফালতু কথা না কইয়া ভাগ। হলদিয়া অবাক হয়ে বলল,কি হইছে দাদির? ইব্রাহিম জবাব দেয় না৷ হলদিয়া ঘরের ভেতর ঢুকেই ফজিলার কপালে হাত দেয়,মাথায় আলতো করে হাত বোলাতে বোলাতে বলে,ডাক্তার দেখাইছো? ইব্রাহিম বলল,হু দেখাইছি।ওষুধ দিছে। হলদিয়া খানিক্ষণ ইব্রাহিমের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,আইচ্ছা এখন যায়। পরে আসবোনে৷ ইব্রাহিম প্রত্যুত্তরে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয়।

খাল পারে আসতেই হলদিয়া গুঙিয়ে কেঁদে ওঠে। চঞ্চল মেয়েটাও যে ব্যথা গোপন করতে জানে সে কথা ইব্রাহিমের জানা হয়না৷ মিয়া বাড়ির বড় ছেলের সাথে হলদিয়ার বিয়ে যেকোন সময় হয়ে যাবে এমনটাই জানিয়ে দিয়েছে শমসের নেওয়াজ।যে মানুষটার ঘরে একজন অর্ধমৃতা পড়ে আছে,যে মানুষটা কখনো একচিলতে ভালোবাসা নিয়ে তার দিকে হাত বাড়ায়নি সে মানুষটাকে কোন সাহসে নিজের ব্যথা জানাবে সে! বোবা খালের মত চোখ দুটোতেও আজ মেলা পানি,তফাৎটা স্বাদু আর নোনা পানির শুধু।

হলদিয়ার মা,মাইয়্যার লাইগ্যা গহনা যা আনোনের,লইয়া আইলাম। কাইল শুক্কুরবার।কাইল সকালেই বিয়া। হুনো,বেশি মানুষজন আইবোনা। বিশ-পঁচিশজনের রান্ধন তুমি একলাই রানতে পারবা,কি পারবা তো? হলদিয়ার মা জোহরা বেগম খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,হ পারুম না কেন! আপনে গোশত,চাইল,তেল আনাই দিয়েন সক্কাল সক্কাল।
সারা রাত বিছানায় ছটফট করেছে হলদিয়া। শেষ রাতের দিক চোখ বুজেছিল,ঘুম ভেঙে মসজিদের মাইকের আওয়াজে। ইব্রাহিমের দাদি মারা গেছে, সেই খবরই মুয়াজ্জিন জানান দিচ্ছিল। বাদ আসর জানাজা।হলদিয়ার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।শেষ রাতে ভেবেছিল ইব্রাহিমকে নিয়ে গঞ্জে যেয়ে বিয়ে পড়ে আসবে।গতরাতের লুকিয়ে রাখা ব্যাগটা আলমারিতে রেখে আসে,ব্যাগে রাখা গহনাগুলো খাটের উপর রাখতে ভোলেনা।
যন্ত্রের গলায় তিনবার কবুল বলেছে হলদিয়া। চোখ দিয়ে একফোঁটা পানিও পড়েনি। এই সংসারে তিনবার কবুল বলেই একটা মেয়ে হাজারটা মানুষকে খুশি করে,অথচ তিনবার কবুলে কতবার মেয়েটা মরে সে খবর কেউ রাখেনি।রাখেনা।

পালকি বহর হলদিয়াকে নিয়ে যাচ্ছে স্বামীর ঘরে। ছেলে বুড়ো সবার মুখে হাসি। পালকির পাশ দিয়ে খাটিয়ে কাঁধে নিয়ে গোরস্থানের দিকে যাচ্ছে গোটা বিশেক মানুষ। ফজিলা বানু টানটান হয়ে শুয়ে আছে খাটিয়াতে।হলদিয়া পালকির ছোট্ট জানালা দিয়ে ইব্রাহিমের এতিম হওয়া মুখখানা দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠে। হলদিয়া জানে,দাফন শেষে এই মানুষটা তাকে হন্যে হয়ে খুঁজবে। ততক্ষণে তার হলদিয়া অন্যর খাঁচায় বন্দি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত