বাপ মরা ছেলে শুভম।বয়স যখন পাঁচ তখন না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছিল তার বাবা।এরপর থেকে মা ছেলে মামার বাড়িতে এসে থাকছে।শুভমের মামারা এতে কোনরূপ অাপত্তি জানায়নি।কারন ওনারা ছিলেন বেশ বিত্তশালী মানুষ।
শুভমের মামার ঘর থেকে দুই ঘর পরে শ্রুতিদের ঘর।শ্রুতি শুভম থেকে বছর তিনেক ছোট হবে।কিন্তু তারা একসাথে অনেক খেলেছে।খুনসুটিতে বেড়ে উঠেছে।একসময় শুভম শ্রুতিকে নিয়ে স্বপ্ন সাজাতে শুরু করে।ভালোবেসে ফেলে শ্রুতিকে।
শুভম যখন ক্লাস টেনে শ্রুতি তখন ক্লাস সেভেনে।শুভম মনে মনে ভাবে শ্রুতির বয়স বাড়ছে যেকোন সময় যে কাউকে ভালোবেসে ফেলতে পারে তখন ফেরানো অসম্ভব। তাই যত শীঘ্রই সম্ভব নিজের মনের কথাটা বলে দেওয়া উচিৎ।শুভম ঠিক করল এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরদিনই শ্রুতিকে মনের কথা জানিয়ে দিবে।
যেই ভাবা সেই কাজ।এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে একদমি সময় নেয়নি শুভম।শ্রুতিকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায় পাড়ার বড় পুুকুর ঘাটে।সেখানে ভীতু কন্ঠে জানিয়ে দেয় মনের অব্যাক্ত যত কথা।সঙ্গে সঙ্গে শুভমের গালে একটা থাপ্পর কষে দিয়ে শ্রুতি বলে- “দেখ অামি তোমাকে নিয়ে এসব কখনো ভাবিনি।কিন্তু তুমি ভেবেছ এটা অামার কাছে সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে।তোমাকে ভাইয়ের চোখে দেখেছি অামি।তার সঠিক মর্যাদা তুমি দিতে পারোনি।খুশি হব অামার সাথে যোগাযোগ না করলে।”এটুকু বলে শ্রুতি গদগদ পায়ে হেঁটে চলে গেল।মূর্তিকার গালে হাত দিয়ে শ্রুতির চলে যাওয়া দেখছে শুভম।চোখে তার অাষাঢ়ের বর্ষন।
ঘরে গিয়ে শ্রুতির মনে একটু হাহাকারের সৃষ্টি হয়।রুমের হুক লাগিয়ে একাকি শুয়ে থাকে কতক্ষণ।চোখ বন্ধ করে ভাবে ছেলেটাকে এতটা বকা দেয়া তার উচিত হয়নি।বাপ মরা ছেলেটা কতটা কষ্ট পেয়েছে কে জানে।অামিও তখন খুব বেশি ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম একটু বুঝিয়ে বললেই তো পারতাম।দূরররর ভাল্লাগেনা। ওদিকে শুভম বাড়িতে থাকার কথা অার বেশি ভাবতে পারেনা।সে তার মেঝ মামাকে বলে ভিসা তৈরি করতে।দেশে থাকবেনা অার।বিদেশ যাওয়া নিয়েও কেউ খুব একটা ভ্রুক্ষেপ করেনি।কারন এমনিতেই সুমন পড়ালেখায় খুব বেশি ভালো ছিলনা।পরীক্ষায় টেনে টুনে পাস করত।এবার গণিত পরীক্ষাও নাকি খারাপ হয়েছে।গণিতে খুব কাঁচা ও।ক্লাস নাইন থেকে টেনে উঠার সময়ও গণিতে ফেল করেছিল এমনকি টেস্টেও খারাপ করছে।অাজ পর্যন্ত গণিতে একবারও পাসের মুখ দেখেনি।এবার দেখবে কিনা সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ তার মামাদের মনে।কাগজপত্র সব ঠিক করে প্রায় দশ-পনের দিনের মাথায় শুভম ডুবাইয়ের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়।
বিদায় বেলায় একবার শ্রুতির মুখখানা দেখার তৃষ্ণা জাগলেও শেষ দেখা দেখতে পেলনা শুভম।কারন শ্রুতি সেদিন বাড়িতেই ছিলনা।সে গিয়েছিল তার মামার বাড়ি। এদিকে শ্রুতি ভেবে রেখেছিল মামার বাড়ি থেকে ফিরে শুভমকে একটা স্যরি বলবে।কিন্তু বাড়িতে এসে হাজার খুঁজেও শুভমের দেখা পেলনা শ্রুতি।পরে নিজের মার কাছে জানতে পারে শুভম বিদেশ চলে গেছে।কথাটা শুনা মাত্রই শ্রুতির মাথায় অাকাশ ভাঙ্গে।শ্রুতি মায়ের সামনে নিজেকে যত সম্ভব সামলে নেয়।পরে নিজের রুমে গিয়ে দরজার হুক মেরে বিছানায় অাড়াঅাড়ি শুয়ে পড়ে।শ্রুতি কোন কারনে কষ্ট পেলে কিংবা অানন্দ পেলে এমনটাই করে।দরজার হুক মেরে বাতি নিভিয়ে বিছানায় পড়ে থাকে সারাক্ষণ।কেউ ডাকলেও সাড়া দেয়না। ভাবে সব তার জন্যই হয়েছে।সেদিন এভাবে বকাঝকা না করলে অাজ এতকিছু দেখতে হতনা।একটা অপরাধবোধ কাজ করতে শুরু করে ক্রমশ তার মধ্যে।
অাজকাল শ্রুতি ভীষন মিস করছে শুভমকে।অথচ এতদিন এত কাছে থেকেও সেটা অনুভব করেনি সে।ছেলেবেলার মারামারি খুনসুটিগুলো খুব মনে পড়ে ওর।দূরত্ব গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়। দেখতে দেখতে তিনটা বছর কেটে গেল।শ্রুতি সরকারি কলেজে নাম লিখিয়েছে।কলেজ, প্রাইভেট, বন্ধু- বান্ধব সবকিছুর বাইরে শ্রুতি শুভমের কথা অালাদা করে ভাবে।শ্রুতি অপেক্ষা করতে থাকে শুভমের একটা ফোন কল কিংবা ছোট্ট মেসেজের।কিন্তু শুভম শ্রুতির অপেক্ষার অবসান ঘটাতে পারেনা।কারন সেদিন পুকুর ঘাটের কথোপকথন এখনো ভুলেনি সে।তাইতো বাঁধ ভাঙ্গা কষ্ট বুকে নিয়ে প্রবাসী জীবন অতিবাহিত করছে শুভম।তবুও দেশে ফেরার নাম নেয় না।শ্রুতির বিয়ে না হওয়া অবদি দেশে ফিরবেনা এমনি পণ করেছে নিজে নিজে।
এদিকে অারো দুটো বছর কেটে যায়।কলেজ শেষ করে শ্রুতি ভার্সিটি কোচিং শুরু করে দিয়েছে।মন দিয়ে পড়ালেখা করছে খুব।পাবলিক ভার্সিটিতে নিজের একটা সিট তার চাই-ই চাই।একই কোচিংয়ে পড়ে শাওন।তারা দুইজনের মধ্যে বেশ কম্পিটিশন চলে।দুইজনের মাঝে রেষারেষির শেষ নেই।কে প্রথম হবে কোচিংয়ের টেস্ট গুলোতে।শাওন খুব ভালো একটা ছেলে।সে পড়ালেখার বাইরে অন্যকিছু ভাবতে পারেনা।কিন্তু ইদানিং কিছু একটা নিয়ে সে ভাবনার জগতে তলিয়ে যাচ্ছে।ভাবনাটা এমন একজনকে ঘিরে যাকে ভাবতে তার একটুও খারাপ লাগছেনা।অাপনারা এতক্ষণে হয়ত বুঝে নিয়েছেন কাকে নিয়ে ভাবছে শাওন। হ্যাঁ। শাওন শ্রুতির মায়ায় অাটকা পড়েছে।তার ভাবনা জুড়ে ঘিরে রেখেছে শ্রুতি।
কেবল দেখার মুখে সুন্দর হলেই মানুষ তার প্রেমে পড়েনা।প্রেমে পড়ার জন্য চাই অালাদা কিছু গুন অার বৈশিষ্ট্য যা শ্রুতির কাছে গনহারে বিদ্যমান।শ্রুতির কথা বলার মাঝে একটা অালাদা স্বাতন্ত্র্যতা রয়েছে, হাসলে টোল পড়ে, চোখ দুটো মায়াবি, বেশভূষা অতি শালীন।তাই অল্প কিছুদিন ওর সাথে মিশলে প্রেমে পড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছুই না।
শাওন ভার্সিটি এডমিশন না হওয়া অবদি শ্রুতিকে এ ব্যাপারে বলেনি কিছু।শাওন অপেক্ষা করছিল ক্যারিয়ারটা একটু খাঁড়া করানোর জন্য।সৌভাগ্যবশত তারা দুজনেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে যায়।খুব কাছাকাছি রেংকিংয়ে অবস্হান করায় তারা একই সাবজেক্ট নেওয়ার সুযোগ পায়।অার তখন থেকেই ভালোবাসার রঙিন দিন শুরু হয়।দিনদিন তারা একজন অারেকজনের ভালো বন্ধু হয়ে উঠে।এখন অার তাদের মাঝে কোন কম্পিটিশন নেই।নেই কোন রেষারেষি।নিদারুণ ভার্সিটি লাইফ এনজয় করছে শ্রুতি।প্রতিদিন শ্রুতির জন্য শাটলের একটা সিট ধরে রাখে শাওন।রাতভর ফোনে কথা বলা, দুষ্টুমি, খুনসুটিতে মেতে থাকে তারা।শুভমের কথা অনেকটা ভুলিয়ে দিয়েছে শাওন।
তারপর অাসল মহাক্ষণ।সেদিন ছিল শাওনের জন্মদিন।ঠিক রাত বারটার সময় শ্রুতির কাছে প্রথম বার্থডে উইস পেয়ে শাওন খুশিতে অাত্মহারা হয়ে যায়।এতটা খুশি সে ভার্সিটি এডমিশনের রেজাল্ট দেখেও হয়নি।তারপর একে একে বন্ধু-বান্ধব, অাত্মীয়-স্বজন সবাই তাকে ফেসবুকে, মেসেজ দিয়ে উইস করতে থাকে।পরদিন ক্লাস শেষ করে ক্যাম্পাসের এককোণায় শ্রুতিকে টেনে নিয়ে যায় শাওন।তারপর একটু সময় নিয়ে শাওন বলে-
– শ্রুতি অামি তোকে কিছু কথা বলতে চাই।জানিনা তুই কথাটা কিভাবে নিবি।তবে অামার মনে হচ্ছে কথাটা বলতে পারলেই অামি হালকা হব। তখন শ্রুতি শান্ত কন্ঠে বলে- অামি জানি তুই কি বলবি এখন।তোর চেহারা দেখে সেটা বুঝা যাচ্ছে।
– জানলে বল তো শুনি।
– অামাকে ভালোবাসিস বলবি অার কি। কী ভুল বলেছি কিছু??
– না ভুল বলিসনি।
– অাচ্ছা তোরা সব ছেলেরা এমন কেন রে।। একটু হেসে খেলে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছি বলেই কি প্রেমে পড়তে হবে।এমন করলে তো দ্বিতীয়বার কোন মেয়ে কোন ছেলের সাথে বন্ধুত্বই করতে চাইবেনা।বন্ধু হয়ে বেশ অাছি সেটাকে প্রেম অবদি নিয়ে যাস না প্লিজ।
– ঠিক অাছে তুই যখন বলছিস বন্ধু হয়েই থাকব।কখনও ভালোবাসার হাত নিয়ে তোর সামনে অাসব না।
এটুকু বলে শাওন হেঁটে চলে যায় শ্রুতিকে রেখে।খানিকক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে শ্রুতি কি যেন ভেবে সেও হাঁটা দেয়। শ্রুতি বাসায় গিয়ে তেমনটাই করল যেমনটা সে অাগে করত।দরজার হুক লাগিয়ে বাতি নিভিয়ে অন্ধকার ঘরে মৃত অাত্মার মত শুয়ে থাকা।নিজের প্রতি নিজেরই অভিমান জমে তার।মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়া এত কষ্টের কেন।কোনদিকে নিয়ে যাবে তার জীবনটাকে।একদিকে শুভম অন্যদিকে শাওন।একটা মানুষের সাথে বেশকিছু দিন মেলামেশা,কথা-বার্তা বললে না চাইতে কিছু ফিলিংস নিজেদের মধ্যে জমে যায় এটা স্বাভাবিক।শ্রুতির ক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই হয়েছে।শাওনের জন্য নিজের মনে একটা অালাদা জায়গা ঠিকই তৈরি হয়েছে।তবে সেটা কোন কারনে প্রকাশ করবার সাহসটুকু পাচ্ছেনা।ছেলেটা শ্রুতির কষ্টের দিনগুলোতে হাসি ফুটিয়েছিল সেকথা ভুলেনি সে।
ছেলেরা ভালোবাসার অাগে কোন মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারে কিন্তু ভালোবাসার পরে নয়।শাওন তার ব্যতিক্রম হবে কেন।শ্রুতির সাথে কথা বলার মন উঠেনা অার তার।সে কয়েকদিন ধরে ভার্সিটি যাচ্ছেনা।ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্বে যেন ফাঁটল ধরছে।মাঝে মাঝে ফোনে ভদ্রতা দেখাতে একটু অাধটু কথা বলে।রাতভর ফোনালাপ অার চলেনা।তারপর একদিন সন্ধ্যা নাগাদ প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় অসুস্হ হয়ে পড়ে শাওন।তাড়াতাড়ি করে ওর বাবা হাসপাতালে নিয়ে যায়।শাওনের প্রায়সময় এভাবে মাথা ব্যাথা উঠে।ডাক্তারি চেকঅাপ চলছিল কয়েকদিন ধরে।শ্রুতিকে এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি শাওন।কোথ থেকে খবর শুনে হাসপাতালে হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটে অাসে শ্রুতি।ততক্ষণে শাওনের অবস্হা ভীষণ ক্রিটিকাল।শাওনের বাবা-মা ওয়েটিং রুমে বসে চোখের জল ফেলছিল।
খানিকক্ষণ পর হালকা জ্ঞান ফিরলে অাইসিউ রুমে ডুকে যায় সে।হাসি খুশি ছেলেটাকে প্রথমবারের মত এমন অসহায় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে শ্রুতির মায়া লাগে।চোখে জল চলে অাসে।শ্রুতি গুটিগুটি পায়ে শাওনের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।শাওন অাধখোলা চোখে ইশারা করে বলে মুখের উপর থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারটা তুলে নিতে।শ্রুতি শাওনের কথামত সিলিন্ডার তুলে নেয়।তারপর শাওন রোগা কন্ঠে বলে- অামি জানতাম তুই অাসবি।কারন তুই অামাকে বন্ধুর চাইতে একটু হলেও বেশি ভাবিস।ঠিক বলেছি না রে?? শ্রুতি মুখে কিছু বলেনা।শুধু কান্না সুরে মাথা নাড়ে।
– কখনো ভেবেছিস অামার এমন অবস্হা দেখতে হবে?ভাবিস নি।সত্যি বলতে অামিও ভাবিনি।খুব কষ্ট হচ্ছে রে কথা বলতে।অামাকে একটু জড়িয়ে ধরে কাঁদতে দিবি??
– কে বারণ করছে তোকে!(শ্রুতি)
তারপর দুজনে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদে কতক্ষন।কান্না শেষে শাওন বলে- এখন মরে শান্তি পাব।শ্রুতি জানিস, বেস্ট ফ্রেন্ড সবার থাকে।কিন্তু জড়িয়ে ধরে কান্না করার অধিকার সবাই পায়না।অামিতো পেয়েছি এটাই অামার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া। শ্রুতি কিছু বলেনা।কেবল টপটপ চোখের জল ফেলে।
– শ্রুতি মা দরজা খোল।দেখ অনেক বেলা হয়েছে।ভাত খেতে অায়।সেই কখন থেকে অামরা টেবিলে তোর জন্য অপেক্ষা করছি।তাড়াতাড়ি অায়। শ্রুতির মা এই নিয়ে কয়েকদফা ডেকে গিয়েছে মেয়েকে।শ্রুতি প্রতিবার হ্যাঁ হু করে রুম থেকে বের হয়নি।সকালে চা খেয়ে রুমে ডুকেছিল এখন অবদি বের হয়নি।এটা তার নিত্যদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।যাতে বাহির থেকে কেউ তার রুমে ঢুকতে না পারে সেজন্য ভেতর থেকে দরজার হুক টেনে দিয়েছে।কেঁদে কেঁদে চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।ঠিকমত খায় না।ভার্সিটি যায়না।নিয়মগুলো যেন উলটপালট হয়ে গেছে তার।সেদিন রাতের শেষভাগে শাওন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যায়।তারপর থেকে শ্রুতি এভাবে দিন পার করছে।
ছটপটে প্রাণচঞ্চল মেয়েটার এমন অযাচিত জীবন দেখে পাড়ার কারো ভালো লাগেনা।সবাই চায় শ্রুতি অাবার সুস্হ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে অাসুক।তারপর একদিন ফোনে শুভমের সাথে বলার সময় শ্রুতির কথা উঠলে শ্রুতির বর্তমান সময়ের কথা বলে তার মা।শুভম শ্রুতির থেকে দূরে থেকেছে ঠিকই কিন্তু কখনও এক মুহুর্তের জন্যও শ্রুতির কথা না ভেবে থাকতে পারেনি।বিদেশে এসেও তার ভালোবাসা এতটুকু কমেনি।সেই প্রথম দিনের মতই ভালোবাসে শ্রুতিকে।শুধু প্রকাশ করবার অধিকারটুকু তার কাছে ছিলনা।কিন্তু এবার মনে হচ্ছে সেই অধিকার পাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।
সেদিনই অার্জেন্ট ভিসা লাগিয়ে দেশে ফিরে শুভম।হাতে থাকা ল্যাগেজ, বস্তা সব মায়ের সামনে রেখে মাকে একটা সালাম করে অার সেখানে দাঁড়ায়নি।ওর মা পিছন থেকে বলছিল- শুভম কোথায় যাচ্ছিস বাবা।একটু জিরিয়ে নে অাগে বাবা।
– অামি এক্ষুনি অাসছি মা।
সেইদিনের সেই ছোট্ট শুভম অাজ কত বড় হয়েছে।চেনাই যাচ্ছেনা।গত সাত বছর ধরে বাইরে ছিল।অাজ কাছে পেয়েছে।হাসতে গিয়ে কেঁদে ফেলে শুভমের মা।
শুভম শ্রুতিদের বাড়িতে চলে যায় এক দৌড়ে।সেখানে শ্রুতিকে ঘরের মধ্যে খুঁজে না পেয়ে তার মাকে শ্রুতির কথা জিজ্ঞেস করে।জবাবে শ্রুতির মা বলে সে বড় পুকুর ঘাটে বসে অাছে।শুভম সেখানেও চলে যায়।গিয়ে দেখে শ্রুতি অানমনে পানির দিকে চেয়ে অাছে।হঠাৎ যখন শুভমের দিকে চোখ পড়ে তখন কিছু না বলে পাস কাটিয়ে চলে যাওয়ার সময় শুভম বলে-
– মোটা হয়েছি বলে চিনতে কষ্ট হচ্ছে।
– অামার কাউকে চেনার দরকার নেই।
– কোথায় যাচ্ছ। দাড়াঁও।কথা অাছে তোমার সাথে।
– অামার শুনার সময় নেই।
এটুকু বলে শ্রুতি দ্রুত হাঁটা দিল।শুভম এত করে পিছন থেকে চিল্লিয়ে যাচ্ছে কিন্তু শ্রুতি দাড়াচ্ছেইনা। শুভম ঘরে গিয়ে নিজের মাকে শ্রুতির ব্যাপারে বলে।তখন শুভমের মা শুভমকে যেটা বলে সেটা শুনার জন্য শুভম মোটেও প্রস্তুত ছিলনা।ওর মা বলে – তোর বাবা অার শ্রুতির বাবা একসময় বলেছিলেন তোদের মধ্যে বিয়ে করিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে নতুন সম্পর্কের সূচনা করবে। সেটা শুনে শুভম খুশি হয়।অার মাকে বলে- তাহলে অার দেরি করছ কেন মা।মামাদের সাথে কথা বলে শ্রুতির পরিবারে প্রস্তাব পাঠাও তাড়াতাড়ি।
শুভমের কথামত ওর মামারা শ্রুতিদের ঘরে বিয়ের কথা বলে।শ্রুতির বাবা-মা এককথায় রাজি হয়ে গেল।বাকি রইল শ্রুতি।সেও প্রথম প্রথম নাখোশ করলেও পরে সবার বিশেষ অনুরোধে রাজি হয়ে যায়।কিছুদিন পর তাদের বিয়ে হয়।বাসর রাতে ঘটে অাসল ঘটনা।শুভম একটু দেরি করে ঘরে এসেছিল।এসে দেখে যে, শ্রুতি ভেতর থেকে দরজার হুক মেরে দিয়েছে।শুভম জানত শ্রুতি কষ্ট পেলে কিংবা অানন্দ পেলে দরজার হুক মারে।অাজ বোধই খুশির ঠেলাই দরজার হুক মেরেছে। হাতে কয়েক সেকেন্ট সময় থাকলে অাপনার মূল্যবান কমেন্ট জুড়ে দিন।