পৌষালীর দোল আর স্বপ্নপিয়োনের গল্প

পৌষালীর দোল আর স্বপ্নপিয়োনের গল্প

জানলার ধারে একা একা দাঁড়িয়ে রাস্তা দিয়ে রংমেখে হেঁটে যাওয়া লোক গুলোকে হাপুস নয়নে দেখছিল ও। সত্যি,!!বাবা কখনো মেয়ের এত শত্রু হয় কেউ শুনেছে কোনদিন।সারা এলাকা দোল খেলছে আর ওর বাইরে বেরোনো বারণ।গ্রাজুয়েশন ফাইনাল তাই দোল খেলা যাবেনা। বলেছে দোল খেলতে বেরোলে নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে হবে। ভাইও নিজের বন্ধুদের সাথে খেলতে বেরিয়ে গেছে। শুধু ওর বেলাতেই বারণ।

মাঝে মাঝে খুব সন্দেহ হচ্ছে ওর যে বাবা হয়তো অ্যান্টি ফেমিনিস্ট বা বজরং দলে যোগ দিয়েছে।নয়তো মেয়েকে দোল খেলতে দেয়না কোন বাবা।দূর দূর দোলের দিন এরকম বোর হতে কার ভালো লাগে। সকাল থেকে আশি খানা হ্যাপি হোলি উইশ পেয়েছে ।সারা ফেসবুক জুড়ে ওর বন্ধুরা দোল খেলে পিক আপলোড করছে।রাগ হচ্ছে খুব তাই নেট টা অফ করে দিল ও।

বসে থেকে থেকে কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছিল।ভাবলো একবার রান্নাঘর থেকে ঘুরে আসা যাক,দেখি মা আজ স্পেশাল কি বানালো।

কোল থেকে ফোনটা নামিয়ে সবে খাট থেকে নামতে যাবে ও তখনই মেসেজ টা এল।একটু অবাক হলো ও বাবা হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক বন্ধ বলে কে আবার মেসেজ করে উইশ করছে কে জানে। ফোনটা আনলক করে একটু অবাক হলো ও ….যাঃ বাবা এ কেমন নাম্বার সংখ্যা,অ্যালফাবেট সব মিশিয়ে । মেসেজ টা ওপেন করার পর আরেক দফা অবাক… তাজ্জব ব্যাপার এতো সোজাসুজি লিখেছে

“হ্যালো পৌষালী দোলের দিন এরকম মুখ ভার কেন তোমার”?

এবার একটু ভয় হলো ওর, কেউ হ্যাক করছে নাতো,ফোনটা। নইলে ওর মনখারাপ জানবে কি করে , নিশ্চয়ই হ্যাক করে হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাস পড়েছে…সকালে ঐ যে দোল খেলতে পারছে না লিখলো সেটাই পড়েছে হয়তো।এটা কোন বন্ধু করছে না শিওর কারণ তাহলে সেভ থাকুক বা না থাকুক এরকম অদ্ভুত নাম্বার কার হয়।!

রিপ্লাই করবে কি করবে না ভাবছে,এমন সময় আবার মেসেজ..“কই বললে নাতো মন খারাপ কেন??
এবার একটু সাহস করে ও,টাইপ করলো..কে আপনি.. আমার নাম্বার কে দিয়েছে আপনাকে”..যদিও গা শিরশির করছে একটু । হ্যাকারের সাথে চ্যাট বলে কথা। কিন্তু বেকার বোর হওয়ার চেয়ে তাও কারো সাথে কথা বলা ভালো।বাড়ির কারো সাথে আজ কথা বলবে না ও ঠিক করেছে।তাই অচেনা লোকই ভরসা।

কয়েক সেকেন্ড পরেই রিপ্লাই, “নাঃ কেউ দেয়নি। ওসব নাম্বার নেওয়া দেওয়া আমাদের এখানে নেই।আমরা যেকোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সাথে এমনিই কানেক্ট হতে পারি।

— ওহহ, তাহলে তো ঠিকই ভেবেছি, হ্যাকার আপনি।তা কেমন হ্যাকার আপনি যে যার ফোন হ্যাক করেন তার সাথে আবার কথাও বলেন।এসব তো লুকিয়ে করতে হয়।পুলিশে জানাবো নাকি? সাহস থাকলে বলুন কোথায় থাকেন।” বলেই বুঝলো কথাটা বোকার মত হলো, হ্যাকার কোনদিন নিজের ঠিকানা বলে?

আবার রিপ্লাই …“ছিঃ,ছিঃ ,আমি আপনার মন খারাপ কেন জানতে চাইলাম আর আপনি আমাকে অপমান করছেন এভাবে! হ্যাঁ মানছি অচেনা, কিন্তু কোন বাজে কথা বলেছি কি??

–অপমান !!আমি কোথায় অপমান করলাম??
– করলেন তো। হ্যাকার বলে অপমান করলেন তো। আচ্ছা আপনাদের সুন্দরী মেয়েদের এরকম বদ অভ্যাস কেন বলুন তো ?? কেউ ভালো কথা বললেও অহংকার দেখান।

–আপনি আমায় চেনেন না জানেন না অহংকারী বলে দিলেন।বাঃ আপনিই বা কোন ভদ্র।
– আপনিও তো না জেনেই ,হ্যাকার বললেন।সেই বেলা?শুনুন ওসব হ্যাক ফ্যাক আমাদের এখানে ১০০০ বছরের পুরনো টেকনোলজি। আমাদের ওসব লাগে না। যে কোন গ্যাজেট,সে ফোন রেডিও,টিভি যাই হোক তার ওয়েভ লেন্থ ধরে,আমরা তার আশেপাশে থাকা মানুষ দের মনের তরঙ্গ কে ট্র্যাক করতে পারি।আর আপনার ঐ গোটা পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সবাই মিলে খুঁজে খুঁজে রিটায়ার হয়ে গেলেও আমায় ধরতে পারবে না।

— ও,তাই নাকি তা আপনি এতঃ স্মার্ট তো বলুন না ঠিকানা টা।
– হেঁহেঁ, সে বলতেই পারি কিন্তু আপনি বিশ্বাস করবেন না,আই মিন কেউ ই করে না। সবাই পাগল ,মাতাল এসব বলে। পৃথিবীর মানুষের এই দোষ নিজেদের খালি সেয়ানা ভাবে।

— বাঃ ,তারমানে আপনি এলিয়েন,তা আপনারা তো খালি আমেরিকায় আসেন,তা আমার মত একটা সাধারণ মেয়ের মন খারাপ নিয়ে এত দরদ কেন? তা বলি আজ তো দোল,তা মদ, সিদ্ধি,গাঁজা সব একসাথেই হয়েছে মনে হচ্ছে ।নাহলে নিজেকে এলিয়েন ভাবা তো চাট্টিখানি কথা নয়..

–এই দেখলেন তো বিশ্বাস করলেন না। তাও বলে রাখি,আমি থাকি আপনার গ্রহ থেকে মোটামুটি ,তাও খুব একটা বেশি না এই ধরুন ২০৩ কোটি আলোকবর্ষ দূরে.. আমার গ্রহের নাম ফুরফুরে…। আচ্ছা আমি যে ভীনগ্রহের তার প্রমাণ দিচ্ছি দাঁড়ান। আজকে আপনার মন খারাপ কারণ আপনার বাবা আপনাকে কলেজে দোল খেলতে যেতে দেয়নি কাল,আর আজও ঘর থেকে বেরোতে বারণ করেছে তাই তো।

–ভীষণ ভাবে চমকে উঠলো পৌষালী এবার, অসম্ভব এটা হতে পারে না, নিশ্চয়ই আন্দাজে ঢিল ছুঁড়েছে।আবার টাইপ করলো ও“সত্যি করে বলুন তো কে আপনি,”?এসব জানলেন কি করে আমি স্ট্যাটাস এ দিইনিতো এসব।

–ঐ যে বললাম, ফুরফুরে গ্রহের বাসিন্দা।আপনার স্ট্যাটাস দিয়ে আমার ঘন্টা । বললাম তো ঐ আপনার মোবাইল দিয়েই আপনার ব্রেইন স্ক্যান করে নিচ্ছি।আরে হলিউড সিনেমা দেখেন না নাকি? আপনাদের যা এখনো কল্পনা আমাদের তাই বাস্তব।এসব টেকনোলজি এখানেও পুরনো হয়ে গেছে।

–দেখুন,আপনি যেই হন,আপনার কথায় আমি বিশ্বাস করি না,আমি ফোন সুইচ অফ করবো,দেখি কেমন পারেন স্ক্যান করতে।

–আহা,রাগলেন দেখছি তা রাগলে আপনাকে দেখায় ভালো। তা ফোন সুইচ অফ করলেও কিছু হবে না,আপনার ব্রেইনের ওয়েব লেন্থে এবার ডায়রেক্ট মেসেজ করতে পারবো একবার যখন স্ক্যান করে নিয়েছি।

–একমিনিট,আমি সুন্দর না বাজে দেখতে জানলেন কি করে,আমায় দেখতেও পাচ্ছেন?

— জানেন না, মস্তিষ্কই শরীরের সব।আপনার স্ক্যান রিপোর্ট তো বলছে আপনি বায়োলজির স্টুডেন্ট,হ্যাঁ ঐ স্ক্যান করেই আপনার থ্রিডি ইমেজ পেলাম একটা।মানে ঐ আপনাদের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজি আরকি,একটু উন্নত এই যা।…

–দেখুন যদি মেনেও নি আপনি অন্য গ্রহের তাহলেও খুব বাজে আপনি,খালি খালি আমাদের গ্রহ কে ছোট করছেন।
— না না,ছোট কেন করবো আপনাদের গ্রহটাকে আমরা খুব ভালোবাসি,কেন জানেন? আমাদের গ্রহে সবসময় খুশি,মজা, কোন ভ্যারিয়েশন নেই একঘেয়ে, আপনাদের গ্রহে কতরকম অনুভূতি। আমরা তাই আপনাদের গ্রহের নানা মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করি, স্পেশালি যাদের মনখারাপ থাকে।এই যেমন আজ আপনি..আসলে আমাদের গ্রহের কেউ না দুঃখ সহ্য করতে পারি না।যাকেই কষ্ট পেতে দেখি সারাই করতে চলে আসি,মন মাথা সবই তো যন্ত্র তাদের ও সারাই প্রয়োজন হয়।

— তা,আমার মনখারাপ কিভাবে সারাই হবে শুনি।

–এইতো কাজের কথায় এলেন এবার,মেলা বকালেন এতোক্ষণ।যাগ্গে .. প্রথমেই বলে রাখি যে বা যার কারণে মনখারাপ তার থেকে দূরে না গিয়ে তার কাছে চলে যান,দেখবেন দূরত্বের সাথে সাথে মন খারাপ উধাও। এই যেমন আপনি বাবার ওপর রাগ করে বসে আছেন ,কোনদিন দোল খেলবো না পণ করে।তার দিয়ে যান বরং একমুঠো আবির নিয়ে বাবার মুখে মাখিয়ে দিন,ব্যস হোলি শুরু।আপনার তো দোল খেলা নিয়ে কথা,না হয় এবার বাবার সাথেই হলো।আপনি যেমন মন খারাপ করে বসে আছেন আপনার বাবাও ঠিক ততটাই মন খারাপ করে আছেন আপনাকে বাঁধা দেওয়ায়।

–মোটেও না ঐতো ঐ ঘরে বসে টিভি দেখছে,আমার কথা কচু ভাবছে।ওসব করতে গেলে রাগ করবে

— হা,হা..নাউ ইউ আর বিহেভিং লাইক এ চাইন্ড।ভাবছে ভাবছে আপনার কথাই ভাবছে। পৃথিবীতে এমন কোন পাষন্ড বাবা নেই যে ছেলে মেয়ের সাথে দোল খেলতে আপত্তি করে।

আমি ওনাকেও স্ক্যান করেছি। সত্যি কথা কি মিঃ দত্ত মানে আপনার বাবা, আপনার এক্সাম নিয়ে যতটা না চিন্তিত তার দিয়ে বেশি চিন্তিত দোলের সময় যেসব অসভ্যতামি আপনাদের গ্রহে হয়,সেটা নিয়ে। বাবা হিসেবে উনি চিন্তিত হবেন সেটাই স্বাভাবিক।আর আপনার কলেজেও তো কয়েকটা ছেলে আপনাকে নিয়ে বাজে ইঙ্গিত করেছে,আপনি মাকে বলেছিলেন তাঁর কাছ থেকেই উনি জানতে পেরেছেন তাই চিন্তিত।

–আবার চমকালো পৌষালী,আপনি‌ এটাও জানেন,মাই গড..শুনুন আপনি যেই হন না কেন, বুঝতেই পারছি ঢপ নেশা করে আছেন ,নাহলে কেউ নিজেকে এলিয়েন ভাবে না। যাই হোক বিদায় হন..আমি স্নানে যাবো…কাজ আছে।আপনার সাথে অনেক বাজে বকেছি।আর জ্বালাবেন না।

মোবাইল টা সুইচ অফ করে রেখে দিল পৌষালী। তবে মনের মধ্যে কিরকম যেন অস্বস্তি হচ্ছে। যদি সত্যিই এলিয়েন হয়! তাহলে? দূর দূর এসব ভুলভাল কথা নিজেকেই কেমন মূর্খ মনে হচ্ছে… এসব কথা কলেজে বল্লে খিল্লি করে মেরেই ফেলবে সবাই ওকে।

খাট থেকে নেমে বসার ঘরে এলো,বাবা সেই টিভি চালিয়ে নিউজ দেখছে,কি করে দেখে রে বাবা কে সেই একঘেয়ে খবর গুলো। হঠাৎ করেই মনে হলো ফোনে ঐ পাগল লোকটা যা বলল করে দেখলে কেমন হয়।পা টিপে টিপে ঠাকুর ঘরে গিয়ে ঠাকুরের জন্য আনা আবির থেকে পছন্দের নীল আর গোলাপী আবির দু হাতের মুঠোয় নিয়ে আবার এসে বাবার পিছনে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে ডাকল ..বাবা।

টিভির দিক থেকে চোখ না সরিয়েই বাবা গম্ভীর হয়ে উত্তর দিল “কি হয়েছে”?
একটু জড়সড় ভাবে পৌষালী বলল “আমি দোল খেলবো,তুমি এভাবে আমাকে আটকে রাখতে পারনা”। এবার ঘার ফিরিয়ে সরাসরি মেয়ের মুখের দিকে তাকালেন মিঃ দত্ত, গম্ভীর ভাবেই বললেন..“তোকে আমি আগেই বলেছি আজ বাড়ি দিয়ে বেরোবি না,এরপর তুই কি করবি সেটা তোর ব্যাপার.আমি আর কথা বা… আরে আরে কি করছিস..মিঃ দত্তের কথা শেষ হওয়ার আগেই পৌষালীর হাতের আবির ওনার সারা মুখে। দুরকম আবিরে দুরকম রঙের হয়ে গেছে। রেগে উঠে বকা দিতে যাবেন , ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজের ছবিটা দেখে নিজেই হেসে ফেললেন এবার,মেয়ে তখন হাসতে হাসতে পাসের সোফায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। “কি হলো এটা শুনি? ছদ্ম রাগ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।

বেশ করেছি,আমায় হোলি খেলতে দাওনি বাইরে গিয়ে ,এবার তোমাকেই ভূত বানাবো।বলে বাবার মুখটা দেখে আবার হাসতে হাসতে বসে পড়লো। চেঁচামেচি শুনে ভেতরের ঘর থেকে মাও বেরিয়ে এসেছে…“কি ব্যপার কি!!এই বাপ মেয়ের মুখ দেখাদেখি বন্ধ,আবার এই হাসাহাসি?

হাসতে হাসতেই পৌষালী বলল ‘কিছু না তোমার গোমড়া মুখো বরটা আমায় দোল খেলতে দেয়নি তাই ভূত বানিয়েছি,এবার তোমার পালা।বলেই একছূটে গিয়ে আবির এনে মাকেও মাখিয়ে দিল। মিসেস দত্ত গেল গেল করে উঠলেন,“এই দিল দিল ঘর সোফা সবশেষ করে,এতবড় মেয়ে হয়েছে এখনো আক্কেল হলো না” পৌষালীর কানে তখন কিছু ঢুকছে না বকাঝকা, জানলা দিয়ে আসা একটুকরো রোদের আলোয় ভেসে খুশির মত রঙীন আবির এর ধুলোকণার দিকে তাকিয়ে থাকতে মনটা হাল্কা হয়ে যাচ্ছে ওর।কই আর তো সেই সকালবেলার গুমোট ভাবটা নেই ।ওর মনে হচ্ছে আস্তে আস্তে আবিরের কণাগুলো ছোটছোট খুশির পরাগরেণু হয়ে ওর মনটা দখল করে নিচ্ছে। বাবাকে আড়াল করে মাও বলেছে হাসতে হাসতে,“বেশ করেছিস রং মাখিয়ে,বচ্ছরকার দিনে অমন গোমড়া হয়ে থাকা কেন বাপু বুঝিনা”

মনে মনে আবার একপ্রস্থ অবাক হয়ে, সকালের সেই পাগল টাকে থ্যাংকস না জানিয়ে পারলো না। কি উদ্ভট কথা সব,কে জানে কোথা থেকে নাম্বার পেয়েছে,তবে যাই হোক নামটা বানিয়েছে ভালো “ফুরফুরে” আর সত্যিই তো ওর কথাটা তো মিললো মনটা এখন সত্যিই হাল্কা অনেক। পরে একটা থ্যাঙ্কস জানাতে হবে।তবে আপাতত স্নানে যেতে হবে কারণ মা চিল্লাচ্ছে ।বাবা বাথরুম থেকে বেরোলেই ঢুকবে ও।

অলস হাতেই টিভি চ্যানেল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিল ও, হঠাৎ সব কটা চ্যানেলে নো সিগন্যাল..এই হয়েছে এক জ্বালা আদ্ধেক সময়ে সিগন্যাল চলে যায়… বিরক্ত হয়ে টিভি বন্ধ করবে বলে রিমোট টা হাতে নিল পৌষালী।তখনি টিভির স্ক্রিনে ছোট ছোট কিছু লেখা ভেসে উঠছে দেখলো,আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে লেখাগুলো..ভালো করে পড়বে বলে টিভির দিকে একটু এগিয়ে গেল ও সোফা থেকে উঠে।

লেখাটা একটু স্পষ্ট হতেই শিড়দাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে গেল টের পেল।পা দুটো যেন আটকে গেছে মাটির সাথে। লেখাটা এখন টিভির স্ক্রিনে ঝকঝক করছে …

“কি ম্যাডাম করে দিলাম তো মন ভালো”।

নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিলো না পৌষালী।সবটাই ওর কাছে একটা উদ্ভট স্বপ্নের মত লাগছিল। কিন্তু তাই বা কি করে হয়!! এই তো এখনো হাতে আবিরের রং লেগে আছে ওর।

ঘোর লাগা অবস্থা তেই টিভিটা কোনমতে বন্ধ করে। সোফায় বসে পড়লো আবার। এসব কি হতে পারে সত্যিই!! নাকি কেউ বিচ্ছিরি রকমের প্রাঙ্ক করছে।… খুব ইচ্ছে করছিল ফোনটা অন করে আর একটা মেসেজ পাঠায়, কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছে না।আপাতত স্নানে যাওয়াই ভালো।মাথা পুরো ঘেঁটে আছে ওর।কাউকে বলাও যাবে না এসব , শুনলেই মা প্রথমে ফোনটা ফেলে দেবে।

রাত ৯:৩০ টা, বই নিয়ে বসে আছে পৌষালী সেই সাতটা দিয়ে,আজ কিচ্ছু পড়া হচ্ছে না, সকালের ঘটনা টা মাথা থেকে তাড়াতেই পারছে না। বিরক্ত হয়ে শেষে ৮টা নাগাদ লোকটাকে মেসেজ করেই ফেললো “আপনি কি তবে সত্যিই”!! সেই লাস্ট মেসেজের এখনো রিপ্লাই আসেনি।বসে বসে এসব কথাই ভাবছিল। আজ আর পড়া হবেনা বেশ বুঝতে পারছিল ও,বই টই গুটিয়ে ফোনটা চার্জে বসিয়ে একটু শুয়েনেবে ঠিক করলো।রাতে আরেক বার চেষ্টা করতে হবে পড়ার নয়তো কোন এলিয়েন কেন ভগবানও বাঁচাবে না ওকে পরীক্ষায়।

সবে লাইট টা অফ করে শুয়েছে তখনি,টিংটিং করে বেজে উঠল ফোনটা… একটু দোনোমোনো করে ফোনটা নিয়ে মেসেজটা আনলক করলো বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটায় শব্দ হচ্ছে স্পষ্ট।তবে ওপ্রান্ত থেকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই মেসেজ টা পাঠিয়েছে.

“ ওহঃ আপনার তো দেখছি , এখনো বিশ্বাস হয় নি।আর কিভাবে প্রমাণ করি বলুনতো.এই আপনাদের দোষ বুঝলেন।চোখের সামনে

সত্যিটা এনে দিলেও মানবেন না।”।

-পৌষালীর বেশ মজা লাগলো। ও লিখলো.
“যাক বাবা,একটা জিনিস ভেবে আনন্দ হচ্ছে,আমার নোবেল প্রাইজ বাধা , এলিয়েন কে রাগাতে পেরেছি বলে কথা।” তা আপনি এলিয়েন হলেও আচরণ তো পুরো মানুষের মতই। মেসেজ করার এতক্ষণ পর রিপ্লাই দেন।

-আহা, এলিয়েন বলে কি,আর আমাদের ছোট বাইরে বড় বাইরে পায়না,,তাই একটু দেরি আরকি।তা বলুন বাবার সাথে হোলি খেলে কেমন লাগলো?

–ওহঃ দেখেছেন ভুলেই যাচ্ছিলাম কথার ঝোঁকে,।আপনাকে থ্যাংকস জানবো বলে সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে আছি জানেন। সত্যিই ধন্যবাদ ,আপনি ভীনগ্রহের হোন আর যেই হোন আজ আপনার প্ল্যানে দিনটা দারুন চেঞ্জ হয়ে গেল।খুব ইচ্ছে করছে জানেন আপনাদের “ফুরফুরে” গ্রহটায় যেতে।কি মিষ্টি নামটা।নিয়ে যাবেন??

— এইতো সমস্যায় ,ফেললেন। আসলে কি জানেন আমরা মহাকর্ষীয় তরঙ্গের মাধ্যমেই অন্য গ্রহের সবার সাথে যোগাযোগ করতে পারি শুধু।গ্রহ ছেড়ে বেরোনোর উপায় নেই।

– কিন্তু সিনেমায় যে দেখায় আপনাদের মহাকাশযান যেখানে খুশি যায়।

— সব মানুষ যেমন সমান নয়,সব এলিয়েন ও সমান নয়।তা আপনি চাইলে ডায়রেক্ট আপনার মনের সাথে যোগাযোগ করে নেব নাহয়।মানে আপনি চাইলে আমাদের গ্রহের কিছু ফুটেজ আপনার স্বপ্নে পাঠাতে পারি।

— নাঃ,ডায়রেক্ট মাথায় আসবেন না বলে দিচ্ছি,ওতে মনে হবে কেউ সারাদিন আমার ওপর নজরদারি করছে।তার দিয়ে স্বপ্নেই ভালো।আর জানেন না মেয়েরা মনের গোপন কথা জানাতে চায় না।

— হু আপনি বেশ রোমান্টিক তো। তা নজরদারি করলে যদি খারাপ লাগে,তাহলে নয় আর আসবো না।আপনার গোপন কথাও আর জানবো না। সে নাহয় বস কে ম্যানেজ করে নেব ।আসলে এটাই আমাদের কাজ কিনা। কেউ দুঃখ পেয়ে মনখারাপ করলে মন সারাইয়ের প্রোজেক্ট।

–ওহঃ রাগ হলো বুঝি।আমি কি আস্তে না করেছি ,আসবেন তো রোজ আসবেন। মেসেজ করবেন। আর মাঝেমধ্যে ডায়রেক্ট মনের মধ্যেও আসবেন।এই দাঁড়ান এত কথা হলো আর আপনার নামই জানিনা।কি নাম আপনার?

–আমাদের তো আপনাদের মত নাম হয়না ,ঐ যেই নাম্বারটা দিয়ে মেসেজ করলাম এটাই আমার কোড বা নাম যাই বলুন।

-আমি ওসব ছাইভস্ম নামে ডাকবো না। আপনাদের গ্রহের নাম যখন “ফুরফুরে” আর মন ভালো করে দেওয়া আপনাদের কাজ তখন আপনার নাম দিলাম উমমমম.. হ্যাঁ হয়েছে আপনার নাম #অনিল,কেমন হলো বলুন।

-যাঃ বুঝলামই তো না। ফুরফুরে আর অনিলের কি সম্পর্ক!?
-এত জানেন আর এটা জানেন না অনিল মানে হাওয়া.. বা হাওয়ায় অন্য নাম অনিল।আপনি হলেন মন ভালো করে দেওয়া হাওয়া।এই আপনাকে কে প্রোজেক্টে রেখেছে বলুনতো।কিছুই জানেন না।

– সব। জানলে তো আর প্রোজেক্টই হতো না খোঁজাই তো কাজ।এই যে আজ নতুন শব্দ জানলাম এটা আমাদের ডেটাবেসে সেভ করে নেব।

-গুড ।ওকে এবার যাই।অনেক বকলাম। গুডনাইট বলছি,যদিও জানি না আপনাদের এখন সকাল না রাত।তাও বললাম।

–যাক শেষমেশ বিশ্বাস করলেন তাহলে।এই তো বড় পাওনা।

– হ্যাঁ মশাই, পৃথিবী অতটাও খারাপ না, আমরা বন্ধুদের অন্ধভাবে বিশ্বাস করি,ভালবাসি।ওকে টাটা ভালো থাকবেন আর অবশ্যই যোগাযোগ করবেন।প্রমিস!!

-হ্যাঁ আসব প্রমিস।টাটা…

অবশেষে — সেদিন রাতে পৌষালী একটা দারুণ স্বপ্ন দেখলো..একটা খুব সুন্দর মাঠে একা একা হাটছে ও।কি অদ্ভুত এখানে সবকিছু ঠিক ওদের পৃথিবীর উল্টো ঘাসগুলো ঘন নীল,আর আকাশ টা সবুজ।হাঁটতে হাঁটতে অনেক টা পথ চলে এসেছে ও ।কত ফুল চারদিকে দলে দলে প্রজাপতি।কত রং। কে জানে বাবা কোথায় এলাম তবে যাই হোক জায়গাটা বেশ। কিন্তু কেউ কি থাকেনা নাকি এখানে।

মাথার ওপর একটা আওয়াজ হতে মুখ তুলে ওপরে তাকালো ও, অদ্ভুত দেখতে একটা পাখি উড়ে যাচ্ছে এও খুব রঙিন।বাপ রে এতো গোটা দেশই মনে হয় হোলি খেলছে।চোখটা নামিয়ে নেওয়ার আগে আকাশের এককোণে নজর গেল ওর। কি অদ্ভুত এটা তো ওদের সেই চেনা পৃথিবীটা দেখা যাচ্ছে কত বড় আর কি সুন্দর রং।আরো অবাক করা ব্যাপার ও এখান থেকে ওর বাড়িটাও দেখতে পাচ্ছে পুরো পাড়াটা ও দেখতে পাচ্ছে।ঐ ..ঐ তো ওদের বাড়ির পিছনে পুকুরটা,ঐ তো মাঠের পাশে শ্যাম কাকুর চায়ের দোকান।এত কাছে ওর মনে হলো হাত দিয়ে সব ধরতে পারবে। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার মাঠটা ঐ যে দূরে যেখানে শেষ হয়েছে ওখান থেকেই কেমন সরু একটা সাঁকোর মত ওদের পৃথিবী অবধি চলে গেছে।একটু মন খারাপ হলো ওর ।ইশ এত কাছে এত সুন্দর একটা যায়গা বাবা,মা,ভাইকে দেখানো হলো না। সে হোক এরপর সবাইকে নিয়ে পিকনিক করতে এলেই হলো।এই তো রাস্তা আছেই।

আর একটু ঘুরে দেখে ফিরে যাবে ঠিক করে সামনে এগিয়ে গেল ও।আর তখনই বাড়িটা চোখে পড়লো ওর। বাঃ ভারি অদ্ভুত দেখতে তো।কেমন ডিমের মত,গায়ে হরেক রংয়ের আঁকিবুঁকি। বাড়িটার দিকে এগিয়ে গেল পৌষালী ।
নাঃ কেউ তো নেই কোথাও। শুধু সামনে একটা ছোট গেট আর তার গায়ে নেম প্লেট লাগানো। যাক এগিয়ে নাহয় দেখাই যাক কার বাড়ি ,পরের বার সবাই মিলে আসলে নাহয় আলাপ করা যাবে। এগিয়ে গিয়ে বাড়ির নাম পড়তে ভুলটা বুঝতে পারলো.. “ ও হরি,এতো একটা পোষ্টঅফিস বাড়ি কই। নামটাও অদ্ভুত পড়ে নিজের মনেই হেসে উঠল ও।

“ফুরফুরে সদর ডাকঘর”… তলায় আবার ছোটছোট করে লেখা…

“আপনার যাবতীয় দুঃখ,কষ্ট মনে মনে চিঠি লিখে জমিয়ে রাখুন, আপনার মুখে হাসি ফোটানোর দায়িত্ব আমাদের,আমাদের পোষ্টম্যান ঠিক যোগাযোগ করে নেবে”।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত