বাসা থেকে আমার বিয়ে নিয়ে বেশ তোরজোড় চলছে। তারই প্রক্ষিতে আজ আমার চতুর্থ পাত্রের সাথে দেখা করতে যাওয়া৷ বর্তমানে আগে ছেলেমেয়ের দেখা সাক্ষাৎ হয়৷ তাই একটা রেস্টুরেন্টে দেখা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তো বরাবরের মতই নিজেকে হালকা সাজিয়ে উদ্দেশ্য সফল করতে বের হয়ে গেলাম৷ রেস্টুরেন্টে পৌঁছে দেখি ছেলে বসে আছে একাএকা। নীল শার্ট আর কালো প্যান্টের ফর্মাল বেশে কোনো সিনেমার নায়কের থেকে কম লাগছে না৷ চোখের চশমাটা চেহারায় একটা ভদ্র ভাব এনেছে৷ এমন একটা ছেলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে ভাবতেই নিজেকে মেহজাবিন মনে হলো৷ নাটকে নায়ক মেহজাবিনের জন্য রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করে এমন একটা দৃশ্য থাকবেই৷ যাই হোক মনের খুশি মনেই রেখে কাছে গেলাম “আসসালামু আলাইকুম। একটু দেরি হয়ে গেলো৷ “” ওহ্ এসেছেন? আমি তো ভাবলাম আসবেনই না৷ সমস্যা নাই। মাত্র ৪৫ মিনিট দেরি। বসেন। ”
বসার পর একটু কুশলাদি বিনিময় করেই ছেলে জানায় সে আমাকে বিয়ে করতে পারবে না৷ কারন তার অন্য কোথাও সম্পর্ক আছে৷ মেয়ে এখনো পড়াশোনা করছে বলে মেয়ের বাড়ি থেকে বিয়ে দিবে না এখন৷ আর পাত্র মহাশয় হলেন বাংলার বাঘ। থুরি, একটু ভুল বলা হয়ে গেছে৷ পাহাড়ি ছাগল৷ যার কিনা বাসায় বলার সাহস নেই যে সে প্রেম করে৷ তাই আমাকে বলতে হবে যে আমি বিয়েতে রাজি না৷ আর ছাগল মশাই নিরীহ প্রাণী সেজে থাকবেন৷ আমার মনের সকল আশা শুরুতেই শেষ হয়ে গেলো। নিজেকে বাংলা সিনেমার সাইড নায়িকা মনে হলো৷ যতটা না কষ্ট পেলাম তার থেকেও বেশি রাগ হলো। এসিতেও আমার ব্রেইন ১০০ ডিগ্রীতে ফুটতে শুরু করলো। চলে গেলাম অতীতে।
প্রথমবার পাত্র দেখতে যাই একটা পার্কে। পাত্র কালো শার্ট আর প্যান্ট পরে মোটরসাইকেল করে আসলো। আমার সামনে বাইক থামিয়ে দাঁড়ালো । চোখে ছিলো কালো চশমা৷ সেও কোনো নায়কের থেকে কম না। কিছুক্ষণ কথা বলেই বলে ফেললো তার অন্য জায়গায় সম্পর্ক। তাই আমি যেনো তার হয়ে বিয়েতে মানা করে দেই৷ রীতিমতো আমার পা ধরা অবস্থা৷ বেচারার উপর খুব মায়া হলো৷ অন্যের ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করে তো আমারও সুখ হবে না৷ তাই বাসায় গিয়ে বললাম বিয়ে করবো না৷ ছেলে পছন্দ হয় নি৷ আব্বা কিছু বললো না৷ আম্মা ছড়া কেটে বলে,
“যেইনা মেয়ের রূপের বাহার পাত্র খোঁজে রনভির কাপুর।” রাগ হলেও কিছু বললাম না৷ চুপচাপ সয়ে গেলাম। অন্যের উপকার করতে গেলে একটু সহ্য করতে হয়৷ তাও তো বেচারার ভালোবাসা রক্ষা পেলো।
দ্বিতীয় বার যে ছেলের সাথে দেখা করতে গেলাম সে দেখতে মোটামুটি। তবে সে আরো এক ধাপ এগিয়ে ছিলো। সে নাকি তার ক্লাসমেটকে বিয়ে করেছিলো আরো ২ বছর আগে। বাসায় কেউ জানে না। মেয়েকে তার মায়ের পছন্দ না। তাই বলতে ভয় পায়৷ এমন অবস্থায় আমাকে বিয়ে করা তার জন্য অসম্ভব। আমিও কোনো বিবাহিত ছেলেকে অবশ্যই বিয়ে করতে চাই না। ছেলে আমাকে কেঁদে কেঁদে বলে আমি যেনো বিয়েতে মত না দেই৷ সেটা অবশ্য সে না বললেও দিতাম না৷ তবে ছেলে যে তলে তলে এত জল খেয়েছে সেটাও বলা যাবে না৷ বললেই তার বিপদ। অগত্যা সেইবারও আমাকেই সব দায়িত্ব নিতে হলো। কারো সংসার বাঁচানোর জন্য না হয় একটু সহ্য করে নিলাম। বাসায় গিয়ে জানালাম এই ছেলেও চলবে না। আমার পছন্দ হয় নি। আব্বা এইবারও চুপ। আম্মা চোখ বড়বড় করে বলে, “কতই আর দেখবো ঢং কয়দিন পর মাথায় গজাবে শিং ভাবখানা তার এমন যেনো বিয়ের জন্য বসে আছে রনভির সিং।”
মেজাজটা খুব গরম হয়ে গেলো। কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না৷ মনে মনে ছেলেকে অনেক গালি দিলাম৷ মনের কথা মনেই থেকে গেলো। উপরন্তু আশেপাশে রটে গেলো আমি নাকি অহংকারী। ছেলে বেছে বেড়াই। এমন হলে বিয়ে হবে না। আরো অনেক কিছু।
এরপর আসলো তৃতীয়বারের পালা। এবার ছেলের কোনো সমস্যা নাই আমাকে বিয়ে করতে৷ কারন ছেলে বিয়ের জন্য প্রস্তুত৷ তবে ছেলের একটাই আবদার বিয়ের পরেও সে অন্য মেয়েদের সাথে সম্পর্ক রাখবে৷ আর সেটা আমাকে মেনে নিতে হবে। কথা শুনে আমি রীতিমতো আকাশ থেকে পরলাম । ছেলে বলে কি!! নিজেকে সিনেমার হিরো ভাবে নাকি৷ ভাবলেও একদম ঠিক ভাবে৷ চেহারা মাশাল্লাহ৷ কথা বলার ধরনও মাশাল্লাহ৷ শুধু চরিত্র নাউজুবিল্লাহ৷ ছেলের এক সাথে ৩/৪ টা মেয়ের সাথে সম্পর্ক থাকে।
একজনের সাথে প্রতিদিন থাকতে তার ভালো লাগে না৷ বাসা থেকে বিয়ের চাপ দিচ্ছে তাই বিয়ে করবে৷ বাসায় তো আর জানে না যে ছেলে তাদের রাজলীলা খেলে বেড়ায়৷ ছেলের এক কথা বিয়ে করতে তার কোনোই আপত্তি নাই৷ বাকিটা আমার উপর। এবার ছেলের কিছু বলতে হলো না৷ জেনে শুনে তো আর এমন ছেলেকে বিয়ে করা যায় না.। আর তার এইসব গুণের কথা কাওকে বলেও লাভ নাই৷ বাসার সবাই তাকে রাম ভাবে। তাই সে নিশ্চিন্ত। বাসায় ঢুকতেই আম্মা এসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। মুখ দেখেই বুঝলো এবারও হলো না। বরাবরের মতই কথা শোনাতে যাবে তখনই বললাম, “এবার একটু রনভির থেকে বের হও তো। বাংলাদেশে কি নায়ক নাই?” মা রেগে গিয়ে বলে,
“শাকিব এলো শুভ এলো মেয়ে বলে চলে যাক স্বপ্ন দেখে আকাশ ছোঁয়া এই বুঝি এলো রাজ্জাক।” মায়ের কথা শুনে আরো রাগ হলো। আমার সমবয়সী কোনো নায়কের কথা বলতো!!!
“আম্মা একটু কমবয়সী নায়কের নাম বলতে পারলা না?’
” চুপ থাক৷ তুই এসবের কি বুঝিস?”
আব্বা হেসে বলে, “তোর মায়ের যৌবনকালের ভালোবাসা। কিছু বললে খবর আছে।” এরপর থেকে সবাই জানে আমি নিজেকে অনেক সুন্দরী ভাবি। কেউ আমার যোগ্য না এমনটা আমার ধারনা । তাই ছেলে বেছে বেড়াই। ফিরে এলাম বর্তমানে। বেটাকে থাপ্পড় দিতে মন চাইলো৷ গালি দিতে ইচ্ছা হলো। পরে ভাবলাম এভাবে না৷ অন্যভাবে কাজ করতে হবে। ছেলের দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বললাম যে আমার তাকেই পছন্দ। ছেলে চোখ বড়বড় করে বলে,
“কি বলেন এইসব? আপনাকে তো আমি সব বললাম।’
” আপনি বলেছেন৷ আমি শুনেছি। আপনাকেই বিয়ে করবো।’
“পাগল নাকি আপনি?”
“এখনো তো প্রেমই হলো না৷ তবে কয়দিন গেলে আপনার প্রেমে পাগলও হতে পারি।”
“এই দেখেন বেশি বেশি হচ্ছে কিন্তু। আমি অন্য কাওকে ভালোবাসি।”
“সমস্যা নাই৷ আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দিবো।”.
” ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।”.
“মরতে দিলে তো!! সব সময় অক্সিজেন মাস্ক পরায়ে রাখবো।”.
” আচ্ছা বেহায়া তো আপনি। বিয়ের জন্য এত নিচে নামতে পারেন?”
“ওরপ আমার লাজুক পুরুষ। এতই লজ্জা নিয়ে ঘোরেন তো প্রেম করলেন কিভাবে?”
“মানে?”.
” মানে খুব সোজা।
বিয়ে আমি আপনাকেই করবো৷ এখনই বাসায় ফোন করে বলে দিচ্ছি। ”
সাথে সাথে ছেলে নিজের মোবাইলে বাপকে কল দিয়ে বলে, “আব্বা আমি শশীকে ভালোবাসি৷ ওকেই বিয়ে করবো।” শশী মনে হয় তার প্রেমিকা৷ যাই হোক আমার কাজ হয়ে গেলো। এবার আর নিজের উপর দোষ নিতে হলো না।
বাসায় গিয়ে দেখি আব্বা আম্মা বসে আছ। আমাকে দেখেও এগিয়ে আসলো না৷ বুঝে ফেললাম তারাও সব জেনে গেছে৷ তাই এবার আম্মা আর ছড়া বলার সুযোগ পেলো না। আমি আম্মা আব্বার সামনে দিয়ে নিজের ঘরে যাওয়ার সময় বললাম, “আকাশের চাঁদ খুঁজিয়া খুঁজিয়া মাতা পিতা মোর দিবে বিয়া দোহাই লাগে এরপরের বার সিঙ্গেল পোলা নিও আসিয়া।”