অবশেষে একটা টিউশনি পেয়ে গেছি। ছাত্র ক্লাস ফাইবে পড়ে বেতন ৪ হাজার টাকা। তবে একটা শর্ত আছে, ছাত্র যদি সমাপনী পরীক্ষায় A+ পাই তাহলে আমার যতদিন ইচ্ছা ততদিন ছাত্রকে পড়াতে পারবো আর আমার বেতন দিবে ৮ হাজার টাকা। প্রথম দিন রাফিকে(আমার ছাত্র) বললাম,
— রাফি, তোমার যে কোন প্রশ্ন আজ থেকে আমাকে করবে। তুমি যা বুঝো না তা আমি সব বুঝিয়ে দিবো। তুমি শুধু মন দিয়ে আমার কথা গুলো শুনবে। ছাত্র মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,
~স্যার গতকাল আম্মুকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম। আম্মু আমার প্রশ্ন শুনে আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলো। আমি মুচকি হেসে ছাত্রকে বললাম,
–তোমার আম্মু উত্তর জানে না তো তাই তোমায় মেরেছে। তা প্রশ্নটা কি???
~মেয়েদের বাচ্চা হয় কিভাবে স্যার?
ছাত্রের মুখ থেকে প্রশ্নটা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। শহরের ছেলেগুলো এমনিই। অল্পতেই পেকে যায়। আজ যদি আমাদের গ্রামের কোন ছেলে আমায় প্রশ্ন করতো তাহলে মাথায় তুলে আছাড় মারতাম। আমি ছাত্রের কাঁধে হাত রেখে বললাম,
— তোমার আম্মু তোমার কোন গালে থাপ্পড় মেরেছিলো?
~ স্যার ডানগালে
— আরেকবার যদি এই প্রশ্ন করো তাহলে আমি তোমার বাম গালে থাপ্পড় মারবো। এখন মন দিয়ে পড়ো কয়েকদিন ছাত্রকে পড়ানোর পর বুঝলাম সে এক নাম্বারের ফাঁকিবাজ। সেদিন রাফিকে যখন পড়াচ্ছি তখন খেয়াল করলাম শ্যাম বর্ণের খুব মায়াবী একটা মেয়ে আমাকে আড়চোখে দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। মেয়েটাকে আগে এই বাসায় খেয়াল করি নি। আমি রাফিকে বললাম,
— তোমাদের বাসায় কি কোন মেহমান এসেছে?
~ জ্বী স্যার আমার মামাতো বোন এসেছে।
মনে মনে ভাবতে লাগলাম মেয়েটা আমাকে এইভাবে আড়চোখে দেখছে কেন? হয়তো আমার ফিটনেস দেখছে। কয়েক মাস হলো আমি জিমে ভর্তি হয়েছি।ইদানীং আমার হাতের পেশীগুলো জন আব্রাহামের মত ফুলে থাকে। আমিও মেয়েটার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলাম।। ছাত্রকে পড়ানো শেষ করে যখন বের হয়েযাবো তখন দেখি ছাত্রের মা আর মেয়েটাড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছে। আমি একটু ভাব দেখিয়ে ছাত্রের মাকে বললাম,
— আন্টি আপনার সাথে একটু কথা ছিলো?
~ হে বলো কি বলবে
— আন্টি রাফি খুব ফাঁকিবাজ একটুও পড়াশুনা করে না। আপনি একটু খেয়াল রাখবেন। আমি আন্টিকে কথাগুলো বলছিলাম আর বারবার মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছিলাম। আর যখনি আমাদের চোখাচোখি হয়ে যেত তখনি মেয়েটা মুচকি হাসি দিতো।
রাত ১১ টার দিকে আমি শুয়ে শুয়ে ফেইসবুকে খুব রোমান্টিক একটা গল্প পড়ছি এমন সময় খেয়াল করলাম মৌমিতা নামের একটা মেয়ে আমায় ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। মেয়েটার প্রোফাইলে ঢুকে দেখি সেই মেয়েটা যে আমাকে আড়চোখে দেখতো।ক্লাসে সবচেয়ে বাজে চেহারারমেয়েটা যে ছিলো তাকেও আমি প্রপোজকরেছিলাম কিন্তু সে আমাকে পাত্তা দেয় নি। আর আজ কি না এত সুন্দর একটা মেয়ে আমাকে নিজ থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। আয়নাতে তাকিয়ে দেখি জিম করে আসলেই আমি অনেক সুন্দর হয়ে গেছি। আমি সাথে সাথেই রিকোয়েস্ট কনফার্ম করলাম। কনফার্ম করার পরেই sms আসলো,
– আপনি আমাকে দেখে এইভাবে হাসছিলেন কেন? আমি রিপ্লাই দিলাম,
— আপনি কেন আমায় আড়চোখে দেখছিলেন?
– আসলে সাদা টিশার্টে আপনাকে খুব সুন্দর লাগছিলো। তাই বারবার দেখছিলাম। আচ্ছা আপনি জিম করেন?
— হে প্রতিদিন ৩ ঘন্টা জিম করি।
– আপনার বডি কি সিক্স প্যাক?
— সিক্স প্যাক হয় নি তবে হবার পথে..
– আমাকে একটু আপনার বডি দেখাবেন?
মেয়ের কথা শুনে আমার মাথা নষ্ট হয়েগেলো। এই মেয়ে শিওর আমার প্রেমে পড়েগেছে। আমি তাড়াতাড়ি রুম মেটের নতুন হাফপ্যান্টটা পড়ে আমার খালি গায়ের কয়েকটা ছবি মেয়েটাকে দিলাম। মেয়েটা আমার পিক গুলো দেখে ওয়াও রিয়েক্ট দিয়ে বললো,
– আপনাকে একদম ওয়ান্টেড মুভির সালমান খানের মত লাগছে। আপনি যদি সালমান খানের মত লাল প্যান্ট আর হলুদ গেঞ্জি পড়েন আপনাকে খুব মানাবে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমি মার্কেটে চলে গেলাম। অনেক কষ্ট করে একটা লাল প্যান্ট জোগাড় করলাম। তারপর বিকালে লাল প্যান্ট আর হলুদ গেঞ্জি পড়ে ছাত্রের বাসায় গেলাম। আমাকে দেখেই মেয়েটা আবার মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো আর আমিও হাসতে লাগলাম। কিন্তু রাফির দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মনটা খারাপ। মুখ গোমড়া করে বসে আছে। মনে হয় কালকে বিচার দিবার কারণে আন্টি ওকে মেরেছে। আমি ছাত্রের মাথায় হাত রেখে বললাম,
— আন্টি মেরেছে দেখে মন খারাপ করছো?
~না স্যার মার খেয়েছি দেখে মন খারাপ হচ্ছে না। আপনার জন্য মন খারাপ হচ্ছে।
— আমার জন্য কেন মন খারাপ করবে?
~ আপনার কপালে শনি আছে তাই মন খারাপ করছি।
— মানে?
~ মানেটা হলো।
কাল রাতে আপু আপনার সাথে চ্যাট করে নি, করেছি আমি। আপু ঘুমিয়ে গেলে আমি চুরি করে তার মোবাইলটা এনেছিলাম। আপনার সব এসএমএস আমি স্কিনশট দিয়ে রেখেছি আর আপনার পিক গুলো সেইভ করে রেখেছি। আপনি যদি আজ থেকে আমার কথা মত না চলেন তাহলে আপনার এই আলু মার্কা বডির ছবি গুলো ভাইরাল করে দিবো। আর আমার মামা আর্মির কর্নেল থাকে ছবি গুলো দেখিয়ে বললো আপনি আপুকে এইসব কাপড় খুলে নোংরা নোংরা ছবি দেন। ছাত্রের কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেলো। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
— বাবা শিক্ষকের সাথে এমন করে না।
ছাত্র মুচকি হাসি দিয়ে বললো, এখন বুঝেন আমাকে মার খাওয়ানোর মজা আর আয়নায় আপনি নিজেকে দেখেছেন লাল প্যান্ট আর হলুদ গেঞ্জিতে আপনাকে হিরু আলমের মত লাগছে সেদিনের পর থেকে ছাত্র আমাকে দিয়ে তার স্কুলের সব বাড়ির কাজ করাতো আর সে আমার ফোন দিয়ে গেম খেলতো। আর মাঝে মাঝে আন্টি যখন জিজ্ঞেস করতো ছাত্র কেমন পড়াশুনা করে তখন আমাকে বলতে হতো রাফি খুব মেধাবী ছাত্র ও সমাপনীতে A+ পাবে নিশ্চিত। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার একটা বোকামির জন্য আমি পুরো শিক্ষক জাতিকে কলঙ্কিত করে দিলাম সমাপনী পরীক্ষার রেজাল্টের দিন একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই একটা লোক চিৎকার করে বলতে লাগলো,
~ হারামজাদা তকে বলেছিলাম আমার ছেলে যেন A+ পাই আর তুই কি না আমার ছেলেকে এমনি পড়া পাড়াইলি যে কি না ৬টা বিষয়ের মাঝে ৫ টাতে ফেল। তকে আমি গুলি করে মারবো শহরের লোকদের বিশ্বাস নেই। ছেলের এমন খারাপ রেজাল্টের জন্য আমাকে সত্যি সত্যি গুলি করে মারতে পারে। তাই কাঁথা বালিশ নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। গ্রামে ৩০০ টাকার টিউশনি করবো তারপরেও এই শহরে আর না…