যেদিন লাবণী কেঁদেছিল

যেদিন লাবণী কেঁদেছিল

একটু আগে লাবনী গেলো । রিকশায় করে , লাল জামা পড়ে । প্রতিদিনই অরণ্য দারিয়ে থাকে লাবনীকে এক ঝলক দেখার আশায় । তবে ভাব করে যেন কোথাও যাচ্ছে । এই নিয়ে ৭ম বার হল , মুখ ফুটে “কোথায় যাও” ছাড়া আর কিছু বলতে পারলনা । অনেক কিছু বলার ছিল লাবনীকে , এক ঝলক দেখলে অরণ্য মন কেমন অশান্ত হয়ে উঠে । অশান্তিকে তো খারাপ লাগার কথা । কিন্তু এই অশান্তিকে অরণ্যর ভালই লাগে । কেমন যেন একটা মধুর জ্বালাতন থাকে সারাটাদিন । হয়ত একেই ভালবাসা বলে।

আজ পহেলা বৈশাখ , ১৪ই এপ্রিল । হিসাবমতে আজ বাংলা নববর্ষ । কিন্তু এই দিনকে আজকাল কেন জানি অরণ্যর কাছে ভ্যালেন্টাইন্স ড্যা এর মত মনে হয় । মা – বাবার চোখ ফাকি দিয়ে মেয়েরা লাল শাড়ি পড়ে আর ছেলেরা পাঞ্জাবি পড়ে রিকশায় করে ঘুরাঘুরি করে । এই দিনে আপনি রিক্সার দিকে তাকান , দেখবেন ৪টা রিক্সার মধ্যে ৩টাতেই একজন তরুন এবং একজন তরুনি হাত ধরে একজন আরেকজনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । দুইজনের চোখ দিয়েই অনেক কথা বলা হয়ে যায়। সব প্রেম প্রকাশ হয়ে যায় চোখের পাতায় বেড়িয়ে আসার আপ্রান চেষ্টায় থাকা দু ফুটা চোখের জল । এই প্রমের দৃশ্যগুলা দেখতেও একটা অন্যরকম আনন্দ আছে । কেও মনে হয় সত্যি ই বলেছেন ” প্রেম স্বর্গ থেকে আসে ” ।

অরন্য তাই এই দুই নম্বর ভালবাসা দিবসকেই ভালবাসা নিবেদনের জন্য পছন্দ করে নিলো । সে হ্যা করুক আর নাই করুক । অরন্যর হাতের লাল গোলাপ ছুড়ে মারুক মুখের উপর , বাম হাত দিয়ে সবার সামনে চড় মারুক তবুও শুধু লাবনীকে জানাতে চায় যে এই পৃথিবীতে একজন আছে যে তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লাবনীকে ভালবাসবে । বুকের গভিরোতম অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হবে শুধু তার ভালবাসার জন্য ।

লাবনীকে অরন্য হয়তো কখনও ভালবাসি বলত নাহ । ওর ভয় যদি লাবণী ওকে ভুল বুঝে ? ও যদি বলতে না পারে যে ও লাবনীকে কি রকম ভাবে ভালবাসে তাহলে তো ওর প্রেম বৃথা যাবে । হয়তো লাবণী বুঝবেনা অরন্যের এই হৃদয়ের প্রতিটি হৃদস্পন্দন কেমন করে ভালবাসি ভালবাসি করে হাহাকার করে । কিন্তু সেদিন আমি ওকে বললাম যে এইরকমে লুকিয়ে লুকিয়ে আর কতদিন ভালবাসবি ? এই রকম “কেহ দেখিবে না মোর গভির প্রণয় , কেহ জানিবে না মোর অশ্রুবারিচয় ” আর কত করবি ? গিয়ে বলে দে না গাধা । এত ভয় কিসের ?
অরন্যঃ “কিন্তু তানিয়া , ও যদি না করে তাহলে ?”
আমি বললাম (তানিয়া) “না করলে করবে । কিন্তু মনের কথা এর জন্য গোপন রাখবি?”
অরন্যঃ “তর কথাও ঠিক । বলতে হবে আমাকে । আমার প্রেম সত্যি হলে অবশ্যই হ্যা করবে । ”
এই হল অরন্যর প্রেম নিবেদনের সাহসের জোগান । জোগানদাতা হলাম আমি , তানিয়া ।
” আমি তোমাকে ভালবাসি” , পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বলা কথা । সবচেয়ে কঠিন কথাও মনে হয়। এবং অবশ্যই সবচেয়ে সুন্দর কথা । যতই ভালবাস না কেন , ভালবাসি বলা ততটাই কঠিন । যত বেশি ভালবাস, তত বেশি হারানোর ভয় । আজকের জন্য অরন্যর সব ভয় দূরে থাক । আজকে অরন্যকে বলতেই হবে , হয়তো কাল কখনো আসবেনা ।

লাবনীকে দেখা যাচ্ছে । পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে নৌকায় পা দুটো দুলিয়ে খিলখিলিয়ে হাসছে । কতো সুন্দর হাসি । শুধু এই হাসিটা সারাজিবন দেখার জন্য অরন্য নিজের জীবন দিয়ে দিতে পারবে । এই হাসির জন্য অরণ্যর জীবন দিতেও কনো আফসোস নেই। অরণ্য পাঞ্জাবির পকেট থেকে লাল গোলাপটা বের করল । লাবণী এখন নৌকা থেকে নামল । অরন্যকে এখন সেই তিনটা শব্দ বলা লাগবে । লাবণী নৌকা থেকে নেমে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে মাঠের সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে । গোলাপ হাতে নিয়ে অরণ্যও আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে লাবনীর দিকে । ধুপপপপ !!! কাহিনিতে নতুন চরিত্রের প্রবেশ ! রোহিত ।
লাবণী অরণ্যর কাছাকাছি আসার আগেই রোহিতের হাত ধরে চলে গেলো । হয়তো একেবারেই চলে গেলো । অরন্যর হাতের লাল গোলাপ নিচে পড়ে গেলো । শরীর ভরশুন্য হয়ে গেলো । গোলাপটা তুলতে চাইল অরণ্য । আর যাই হোক প্রথম প্রেমের প্রথম গোলাপ তো । লাবণীকে ভালবাসার স্মৃতি জড়িয়ে আছে এতে । হয়তো এই গোলাপ নিয়েই সারাজীবন বেঁচে থাকতে হবে , সারাজীবন ।

তিন দিন পরঃ
তো কি হয়েছে লাবণী অন্য কাওকে ভালবাসে ? অরণ্যও বাসে । সবচেয়ে বেশি বাসে । লাবণী অন্য কাউকে ভালবাসে তারমানে এই না যে অরন্যকে ভুলে যেতে হবে । অরন্যর ভালবাসা অরন্য অবশ্যই প্রকাশ করবে । লাবণী হ্যা করুক আর নাই করুক , শুধু জানাতে চায় যে এই পৃথিবীতে অরন্যর শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত অরন্য লাবনীকে ভালবাসবে । প্রেম নিবেদনের জন্য সেই সাহস এখন আর অরন্যর মনে নেই । তাই এক বোতল ভোদকা গলাধঃকরণ করলো ।

অরন্য এখন লাবনির দুইতালা বাসার বারান্দার গ্রিলে ধরে দাঁড়িয়ে আছে । চোখ লাল হয়ে আছে , মাথার চুল উশকোখুশকো হয়ে আছে । হাত এবং শরীর ক্রমাগতভাবে কাপছে । যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারে দুইতালা থেকে নিচে । আগে থেকে কুড়িয়ে আনা ঢিল লাবনীর কাছের আলমারিতে মারলো । সরাসরি লাবনীর গায়ে মারতে পারতো কিন্তু লাবনীকে আঘাত করা অরন্যর পক্ষে সম্ভব না । লাবণী ঘুম থেকে উঠলো । তারপর চিৎকার দিতে গিয়েও মুখ সামলিয়ে আস্তে আস্তে বারান্দায় চলে আসল ।
লাবনিঃ এত রাতে বারান্দায় ঝুলতেছ কেন ? সমস্যা কি ?

অরন্যঃ সমস্যা একটাই । তোমার কথা কখনই ভুলতে পারি না ।তোমার প্রেমে পড়ে গেছি । যেখানেই তাকাই শুধু তুমি আর তুমি । যেখানেই যাই শুধু তোমার হাত খুঁজি ধরার জন্য । পড়তে বসলে তোমার কথা মনে পরে । আর যখন সবকিছু বাদ দিয়ে ঘুমাতে যাই তখন তুমি স্বপ্নে এসেও হানা দাও । এসে সেই ভুবন ভুলানো হাসি দাও আমার দিকে তাকিয়ে , আমি তো তখনই প্রেমে পড়ে যাই ।

লাবণীঃ অরন্য তুমি জানো রোহিতের সাথে আমার রিলেশন আছে । তাহলে এই পাগলামির মানে কি ?
অরন্যঃ কারন আমি তোমাকে ভালবাসি । ওই রোহিত থেকে অনেক বেশি ভালবাসি । সবার থেকে বেশি । তোমাকে প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাই । তুমিই প্রথম প্রেম , তুমিই শেষ ।
লাবনিঃ প্রথম প্রেম বলতে কিছু নেই । প্রেম বারবার হতে পারে ।
অরন্যঃ তাও ঠিক । আমার জীবনে প্রেম একটাই । কিন্তু ফিরে আসে বারবার । যতবার তোমাকে ভুলে যেতে চাই , ততবার আরো বেশি করে প্রেমে পড়ি ।লাবনিঃ অরণ্য , তুমি আমার ভাল বন্ধু । তোমার ভালর জন্যই বলছি । আমাকে ভালবেসে কোন লাভ হবে নাহ । শুধু কষ্টই পাবে । তাই ভাল হয় যদি ভুলে যেতে পারো ।

অরন্যঃ দি লাভ ক্ষতি হিসাব করে প্রেমে পড়তাম তাহলে তো আর তোমাকে ভালবাসতাম না । তোমার ওই চোখ দুটা , ওই হাসিটা আমাকে প্রেমে ফেলে দিয়েছে । এই প্রেম থেকে আমি কি পাব তা কখনো চিন্তা করি নি । চিন্তা করতে চাইও না । আমি শুধু জানি যে লাবণী নামের একটা মেয়েকে আমার জীবনের সব প্রেম , ভালবাসা দিয়ে দিয়েছি । পারলে আমার এই জীবনটাও দিয়ে দিতাম । একবার এই প্রান চেয়ে দেখো , জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে তোমার হাতে এই প্রান তুলে দিব ।
লাবনিঃ বাসায় গিয়ে একটা ঘুম দাও । সকালে উঠে দেখবে সব পাগলামি চলে গেছে । এই এইজে প্রেম হয় না , এটা শুধু কিছুদিনের ইমোসন । কয়েকদিন পরে চলে যাবে ।

অরন্যঃ ( লাফ দিয়ে নিচে নেমে , চিৎকার করতে করতে ) লাবণী , শুধু জানাতে এসেছিলাম আমার মনের কথা । শুধু জানাতে এসেছিলাম যে এই পৃথিবীতে কেউ একজন তার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে ভালবাসবে । তুমি চাও না চাও আমি তোমাকে ভালবাসব । এর কারন এই না যে অন্য কোন মেয়ে পাই না । এর কারন এই যে তুমি আমার প্রথম প্রেম , এবং শেষ । মরার আগ মুহূর্তেও বলব “লাবণী আমি তোমাকে ভালবাসি” , আই প্রমিস ।
লাবনিঃ টাটা।
অরন্যঃ নেভার স্যা নেভার লাবণী । এই জীবন অনেক বড় । একবার না একবার তো দেখা হয়েই যাবে ।

তিন বছর পরঃ
আমরা পিকনিকে যাচ্ছি । কক্সবাজার থেকে এখন সেন্ট মার্টিন যাচ্ছি । ৩০ জন ছাত্রছাত্রী এবং ২০ জন শিক্ষক । সাথে আমি, অরণ্য , রোহিত এবং লাবণী । হ্যা , লাবনীকে অরণ্য এখনো ভালবাসে । এখনো লাবনীর রোহিতের সাথে সম্পর্ক আছে । কিন্তু এখন আরো অনেক বেশি ভালবাসে । এখনও এক মুহূর্তের জন্য লাবণী অরণ্যর মন থেকে যায় না । ও অরন্যকে ভালবাসুক না বাসুক অরণ্যর ভালবাসা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে ।

রোহিত আর লাবনীকে দেখা যাচ্ছে । লঞ্চের ছাদের উপর । ওরা টাইটানিকের পোজ দিতে চাইছে । অরন্য আমাকে বলল ” গাধায় এটাও জানে না যে টাইটানিকের পোজে ছেলেকে পিছনে দাড়াতে হয় ” । আরে ওরা কোথায় যাচ্ছে ? একেবারে লঞ্চের উপরের ছাদে চলে গেলো ওরা । কেউ নেই ওইখানে । জায়গাটা একটু বিপদজনক ।

লাবনীর হাত ধরে রোহিত একবার ওকে ঘুরাল । ওরা নাচছে । আস্তে আস্তে নাচার গতি বাড়তে থাকল । রোহিত লাবনীর হাত ধরে ঘুরিয়ে বামদিকে নিলো তারপর অন্যহাত দিয়ে আবার সামনে আনলো । তারপর একহাত দিয়ে দূরে ঠেলে দিয়ে আবার কাছে আনলো । কাছে এনে লাবনীকে কোলে নিতে চাইলো । রোহিত ভারসাম্য রাখতে পারলনা । রোহিত ধাক্কা খেয়ে পিছনে সরে গেলো । তারপর রোহিত ঘুরে গেলো । ওর সামন চলে গেলো রেলিঙের দিকে । লাবণী এখনও রোহিতের কোলে । রেলিঙে রোহিতের হাত ঝারি খেলো । রোহিত হাতে ব্যাথা পেয়ে লাবনীকে হাত থেকে ছেড়ে দিলো । নাহ !!! লাবণী সোজা তিনতলা থেকে একেবারে নিচে পানিতে পড়ে গেলো । “রোহিত” , রোহিত” , বলে চিৎকার করতে থাকল । রোহিত নিচে নেমে গেলো । ৩০ জন ছাত্র ছাত্রি এবং ২০ জন শিক্ষকের সবাই রেলিঙের পাশে চলে এল । লাবণী শ্বাস নিতে পারছেনা । একবার ডুবছে আবার ভাসছে । এখনও লাবণী “রোহিত , রোহিত” বলে চিৎকার করছে । আর রোহিত চিৎকার করছে “কেউ লাবনীকে বাচাও, কেউ একজন বাচাও” । তারপর আরেকটা ঝাপের শব্দ শুনলাম । দুইতলা থেকে কেউ একজন ঝাপ দিয়েছে । হয়তো রোহিতের চিৎকার শুনেই লাফ দিয়েছে । নাহ , যে লাফ দিয়েছে সে রোহিতের চিৎকার শুনে লাফ দেয় নি । সে লাফ দিয়েছে তার ভালবাসার জন্য । অরন্য দুইতলা থেকে লাফ দিয়েছে পানিতে । আর আমার মাথায় শুধু একটা কথাই এল “অরণ্য সাতারের কিছুই জানে না” ।

৭ দিন পর: অরণ্য এখনো কোমায় আছে । ডাক্তার বলেছেন ওর ফুসফুসে নাকি পানি ঢুকেছে । পানি না বের করলে ওর শ্বাস নিতে সমস্যা হবে । আবার কোমায় থাকলে অপারেশনও করা যাবে না । যখন কোমা থেকে ফিরে আসবে ঠিক তখনই অপারেশন করা লাগবে ।

লাবণী এই সাত দিন ধরে হাসপাতালে বসে ছিল । আমি যখন খাবার নিয়ে ওর কাছে আসলাম , ও আমাকে বলল , ” আমি একটু অরণ্যকে দেখতে পারব ? ” । আমি কিছুক্ষন ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম । ওর চোখে যা দেখলাম তা কখনও আগে ওর চোখে দেখিনি । রোহিতের সাথে থাকার সময় তো কখনোই দেখি নি , দেখেছিলাম শুধুই বিভ্রান্তি । আজকে দেখলাম অন্য কিছু , পবিত্র ।

লাবণী অরণ্যের বেডের পাশে বসে আছে । অরণ্য জীবন মৃত্যুর মধ্যে । আর লাবণী নেই ওর নিজের মধ্যে । লাবণী কথা বলা শুরু করল ।

অরণ্য , জানি না তুমি কোন সময় জেগে উঠবে । যত দেরিই কর না কেন , আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব । তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে , অনেক কিছু অরন্য । ৩ বছর আগে তুমি বারান্দায় ঝুলে যে কথা গুলো বলেছিলে আর আমি হেসেছিলাম সেই কথা গুলো আজকে তোমাকে বলতে চাই । এই রকম অনুভূতি আমার কখনও হয় নি । কি রকম একটা ব্যাথা মনের ভিতর । কিছু একটা হারানোর ভয় সারাক্ষন । আমি এই ব্যাথা নিয়ে ২ দিনও থাকতে পারবনা । তুমি ৩ বছর ধরে কিভাবে থাকলে ? এই অরন্য , শুনছো ? শুধুমাত্র ভালবাসলেই এই ব্যাথা সহ্য করা যায় । আমি কি করতে পারব ?
অরন্য জেগে উঠল । আস্তে আস্তে বলল , ” লাবণী ভাল আছো ? ”
লাবণী কেঁদে ফেলল । অশ্রু লোকানোর কোনো চেষ্টা করলনা ।
অরন্যঃ আমি তো শুধু কেমন আছ জিজ্ঞেস করলাম । এতে কাঁদার কি হল ?
লাবনীঃ ( নিশ্চুপ ) ।
অরন্যঃ “লাবনী , আমি বলেছিলাম না আমি তোমাকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভালবাসবো ? আমি আমার কথা রেখেছি লাবণী । আমি এখনও তোমাকে ভালবাসি । লাবণী শেষবারের মত বলি , আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি । যাই লাবণী , ভাল থেকো ” , বলে অরণ্য লাবণীর গালে আস্তে করে একটু হাত দিয়ে ছুঁতে চাইল । লাবণী গাল বাড়িয়ে দিলো । কিন্তু অরণ্যর হাত লাবণীর গাল স্পর্শ করার আগেই থেমে গেলো । অরণ্যকে মরে গিয়ে প্রমাণ করতে হল যে সে ঠিকই লাবণীকে ভালবাসে ।
তিন দিন পরঃ আমি লাবনীর বাসায় গেলাম । লাবণী ওর রুমে দরজা লাগিয়ে বসে আছে । আমি ঢুকলাম রুমে । ” লাবণী , অরন্য মারা যাবার পর ওর বেডে এই ডায়রিটা ছিল । এর শেষ পৃষ্ঠায় লেখা ছিল যে ডায়রিটা যেন তোমাকে দেয়া হয় । তাই দিতে আসলাম ” , বলে আমি হাত বাড়ালাম ।

লাবণী আমার হাত থেকে ডায়রিটা নিলো । প্রথম পাতা উল্টানোর পরেই সেই লাল গোলাপটা দেখতে পেলো যা হাতে নিয়ে অরন্য লাবনীকে প্রেম নিবেদন করতে চেয়েছিল । গোলাপ মজে গেছে কিন্তু গোলাপের মধ্যে গন্ধ রয়ে গেছে । তিন বছর আগের গোলাপ এখনো গন্ধ রয়ে গেছে ! লাবণী গোলাপটাকে নাকের কাছে নিয়ে তীব্রভাবে গন্ধ নিতে চাইল । তারপর চোখ বন্ধ করে ফেললো । চোখ যখন খুলল তখন দুই ফোটা অশ্রু লাবণীর গাল বেয়ে ঝরে পড়ল । লাবণী পড়তে শুরু করল । প্রথম লাইন এইভাবে শুরু হল ” একটু আগে লাবনী গেলো । রিকশায় করে , লাল জামা পড়ে ……… ” । লাবনীর চোখ বেয়ে আবারও পানি ঝরল । এবার আরো বেশি পরিমাণে । লাবনী ডায়রিটাকে বুকের কাছে নিয়ে শক্ত করে ধরে কেঁদে উঠল । লাবণী কান্না থামাতে চাইল না । আজ যত অশ্রু ঝরার ঝরবে । আজ লাবনীর কাঁদার দিন । লাবণী আজ কাঁদবে ।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত