টিউশনে ছাত্রকে স্যান্ডউইচের রাসায়নিক যৌগ চিনাচ্ছিলাম। এমন সময় নিশা ফোন দিল। নিশা আমার প্রেমিকা। একটা বিয়ের দাওয়াতে নিশার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল। সেই দাওয়াতে খেতে বসার সময় নিশা আর আমি সামনাসামনি বসেছিলাম। কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছিল আমাদের। কিন্তু দুজনে খাবার নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কেউ কারো দিকে অত বেশি মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় নি। দ্বিতীয়বার খেতে বসে দেখি নিশা আমারসামনে বসে আছে। তার মানে মেয়েটাওআমার মতো পেটুক। তখনি বুঝে গেলাম উই আর মেইড ফর ইচ আদার।
সেদিনই কথাবার্তা বলে একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব করে নিয়েছিলাম। এরপর নাম্বার আদান-প্রদান, রাত জেগে কথা বলা এসব করতে করতে আমরা একে অপরের প্রেমে পড়ে গেলাম। ফোন রিসিভ করলাম, “হ্যাঁ, নিশা বলো।” নিশা জিজ্ঞেস করল, “কই তুমি?” আমি বললাম, “এই তো টিউশনে। কেন?”নিশা এবার আদুরে কণ্ঠে বলল, “আচ্ছা শোনো না! আমার এক দুঃসম্পর্কিত মামার বিয়ে আজ।আমি যাই?” বিয়ের বয়সী প্রেমিকা থাকলে বেকার প্রেমিকদের যে কি জ্বালা তা একমাত্র সেই প্রেমিকরাই বুঝতে পারে। কোনো দাওয়াতে যাবে এরপর আত্মীয়স্বজনের নজরে পড়বে। বাসায় ভালো পাত্রের খবর পাঠাবে।পরিবার হতে বিয়ের জন্য চাপ দিবে। কতো কাহিনী! আমি হালকা রেগে বললাম, “দুঃসম্পর্কীয় মামার বিয়েতে তোমার কাজ কি?” নিশা বলল, ” খাবারদাবার ভালো হবে। অনেকদিন একটা দাওয়াত খাই না।”খাবারদাবার ভালো হলে আমারো তো যাওয়া উচিত। নিশাকে কমিউনিটি সেন্টারের নাম জিজ্ঞেস করলাম।
আমার প্রশ্ন শুনে নিশা জিজ্ঞেস করল, “তুমিও আসবে বলে ভাবছো নাকি?” আমি বললাম, “হ্যাঁ আসবো ভাবছি। সপ্তাহ খানেক ধরে আমিও দাওয়াত খাই না।” নিশা তাড়াতাড়ি করে বলল, “না না তুমি এসো না। ওখানে প্রীতম থাকবে।” প্রীতম আমার বন্ধু। নিশার কাজিন। প্রীতমের দাদার বিয়েতে গিয়েই আমার আর নিশার পরিচয় হয়েছিল। আমি নিশাকে বললাম, “তাহলে কি করব আমি?” হালকা নরম কণ্ঠে বললাম, “আমিও দাওয়াতখাই না অনেকদিন।” আমার নরম কণ্ঠে কাজ হলো। নিশা বলল, “আচ্ছা তুমি মাস্ক পড়ে আসিও তাহলে। কেউ যাতে তোমাকে চিনতে না পারে।” “আচ্ছা।” বলে ফোন কাটলাম। তাড়াতাড়ি টিউশন শেষ করে নিশার দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছুলাম। নিশার কথামতো মাস্ক পড়ে গেলাম। নিশাকে ফোন দিলাম। রিসিভ করলো না। খেতে বসেছে হয়ত।
আমি আস্তে আস্তে খাবারের টেবিলের দিকে গেলাম। কোনার দিকে একটা ভালোমতো সিট খুঁজে বসে গেলাম। এদিকে সবাই কম আসা যাওয়া করবে। তাই আমাকেও পরিচিত কেউ দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। চেয়ারে বসে আছি। খাবার দেয়নি এখনও। এমনসময় নিশা ফোন দিল, “বাবু কই তুমি?” আমি বললাম, “আমি তো খেতে বসলাম। তুমি কই?” নিশা বলল, “আমি এইমাত্র খেয়ে উঠলাম। প্রথমে একা খেয়ে নিয়েছি। পরে মায়ের সাথে আবার বসবো।” বাহ্! চমৎকার বুদ্ধি তো। এই না হলো আমার প্রেমিকা। নিশা আবার বলল, “খাসীর মাংস আর চিংড়ি মাছটা বেশি ভালো হয়েছে। ওগুলো বেশি করে নিও।” আমি আচ্ছা বলে ফোন কাটলাম। ভাত কম নিয়ে মাংস বেশি করে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। আমার পাশে যে বসেছে সে হয়ত জীবনে কোনোদিন বিয়ের দাওয়াত খায় নি অথবা আমারই মতে কেউ একজন হবে। সে খাসীর মাংসের বাটি হতে ভাত দিয়ে মুছে মুছে ঝোল নিচ্ছে। আমার সামনে বসা একটা ছেলে আড়চোখে ওর দিকে তাকাচ্ছে।
আমারও খুব ইচ্ছে করছিল চিংড়ি মাছের বাটি হতে এভাবে ভাত দিয়ে মুছে মুছে ঝোল নিই। কিন্তু ছেলেটার তাকানো দেখে আমার আর সেই সাহস হলো না। আমি ওদিকে তেমন একটা নজর না দিয়ে খেয়ে নিলাম। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে নিশাকে ফোন দিলাম। নিশা বলল, “তুমি বাইরে গিয়ে দাঁড়াও। আমি আসছি।” কিছুক্ষণ পর নিশা এলো। আমার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল, “নাও এতে কয়েক পিস চিকেন ফ্রাই আছে। বাসায় গিয়ে খেয়ে নিও।” এজন্যই মেয়েটাকে এত ভালোবাসি। কত সুন্দর করে আমার মনের কথা বুঝে গেল। ওর কাছ থেকে বিদায় নিলাম। ও আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার হাতে এটা কিসের বোতল? ” মুচকি হেসে বললাম, “আসলে টেবিলে কয়েকজন স্প্রাইট খায় নি। এগুলো বোতলে রয়ে গিয়েছিল। ভাবলাম নষ্ট করে লাভ নেই।
তাই নিয়ে চলে এলাম। এখন বাসায় গিয়ে স্প্রাইট দিয়ে তোমার গিফট করা চিকেন ফ্রাই খাবো।” আমার কথা শুনে নিশা সামান্য হাসলো। এরপর আমার হাত হতে বোতলটা নিয়ে খানিকটা স্প্রাইট খেল। “ঠিক আছে। সাবধানে যেও।” বলে নিশা চলে গেল। আমিও বাসায় চলে এলাম। এভাবে দিনগুলো বেশ কাটছিল আমাদের। বছর তিনেক পর আমাদের বিয়ে হলো। বিয়ের রাতে আমরা একে অন্যকে কথা দিয়েছি এখন হতে সব দাওয়াতে আমরা একসাথেই যাবো। বিয়ের পর আমরা একসাথে দাওয়াতে যাই। ভালোমতো খেয়ে আসি। রাতে একসাথে দাওয়াত নিয়ে স্বপ্ন দেখি। আমাদের দিনগুলি খুব সুন্দরভাবেই অতিবাহিত হচ্ছিল। বছর দুয়েক পর নিশার কোল জুড়ে ফুটফুটে এক বাচ্চা এলো।
নিশা আমাকে বলল, “দেখি আমাদের ছেলের জন্য সুন্দর থেকে একটা নাম বলো তো।” আমি বললাম, ” বিরিয়ানি মহাজন (পাস্তা) না হয় চপ মহাজন (বার্গার) রাখো।” আমার দেওয়া নাম শুনে নিশা খানিক চটে গিয়ে বলল, “বাচ্চার নামও কি খাবার দিয়ে রাখবে নাকি! মানুষ কি ভাববে বলো তো!” অনেক চিন্তাভাবনা করে বাচ্চার নাম রাখা হলো, “ডালিম মহাজন ( আপেল)। ” বেশ পুষ্টিকর নাম। আমাদের ডালিম দিনদিন বড় হতে লাগলো। (২০ বছর পর) আমি আর নিশা থানায় বসে আছি। পুলিশ একটু আগে আমাদের বাসা হতে তুলে নিয়ে এসেছে।
কারণ আমাদের ছেলে ডালিম গতরাতে বন্ধুদের নিয়ে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে সবাইকে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে চিকেন ফ্রাই আর খাসীর মাংস খেয়ে এসেছে। পুলিশ তাকে খুঁজছে। ডালিমকে পেলেই আমদের ছেড়ে দিবে। ডালিমকে যত তাড়াতাড়ি পাবে তত লাভ আমাদের। কারণ আজকে রাতে একটা দাওয়াত আছে আমাদের। আমি এবং নিশা আমরা দুজনেই কোনোমতেই দাওয়াতটা হাতছাড়া করতে চাইছি না। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।