শুকনো পাতা

শুকনো পাতা

ভূতের মুভি দেখতে দেখতে অবস্থা এমন হয়েছে যে এখন যাকে দেখি তাকেই ভূত মনে হয়। এই বুঝি ঘাড় মটকে দিলো। আমার চেয়ে সাইফ আরো বেশি ভীতু। ও এখন পকেটে হাতে তাবিজ রাখে। দিনের বেলা টয়লেটে যেতেও ভয় পায়। রাতে দুই ভাই ঘুমাই না। সারারাত জেগে জেগে ফানি ভিডিও দেখি। যাতে ভূত না আসে। আর দিনের বেলা পরে পরে ঘুমাই। রাতে যখন কানে হেডফোন দিয়ে ভিডিও দেখছি ঠিক তখন-ই দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হলো। হেডফোন খুলে আমি সাইফের দিকে তাকালাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আবারো ঠকঠক আওয়াজ হলো। সাইফ ভয়ে ভয়ে বলল….

–কে?
-ঠকঠক….ঠকঠক…
–কে কে কে বলছেন? (আমি)
-হারামি আমি তোর মা।
–মা মানে, কিসের মা?
-থাপ্পড় খাবি হারামি।
–বিশ্বাস করেন পেত্নী আফা আমরা কিচ্ছু করিনি। আমরা নির্দোষ। (সাইফ)
-সাইফফ্যাঅ্যাআআ…হারামজাদা বারাবারি করলে কিন্তু মাইর দিমু দরজা খোল।
–পারতাম না, দিনের বেলায় আইসেন।
-ঐ আমি তোর মা।
–কোন মা?
-মানে? ফাইজলামি করিস আমার সাথে?
–মোটেও না, বরং ভয় পাচ্ছি। পরিচয় না দিলে দরজা খোলা নট এলাও।
-আরে বান্দর আমি তোর মা…এত ভয় পাস কেনো?
–দরজা খুলতাম না। আপনে যেই হোননা কেনো দিনে আসুন।
-দেখ বেশি বেশি হচ্ছে কিন্তু?
–আমি খুলমু না, ভাইয়া তুমি খোলো।
-যদি ওটা মা না হয়ে মায়ের রূপ ধরে ভূত আসে তখন বুদ্ধি? (আমি)
–তোরা দরজা খুলবি নাকি দরজা ভাংমু?
-ওয়েট মাদার দরজা খুলছি।

আমি গিয়ে দরজা খোলার জন্য গেলাম। পিছনে পিছনে সাইফ লাঠি নিয়ে আসলো। বললাম….

–লাঠি কেন?
-সন্দেহ হলে এক বারি দিয়ে কুপোকাত করে ফেলবো।
–আগেই বারি দিসনা।
-আচ্ছা।

সাইফ লাঠি উপরে নিয়ে আছে। বারি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। আমি আস্তে করে দরজা খুলে দিলাম। দেখি সত্যি সত্যি আম্মা দাঁড়িয়ে আছে। সাইফ লাঠি নামালো। আম্মা ভিতরে আসলো, বলল….

–উফফফ তোদের নিয়ে আর পারা গেলো না। ভূতে কেউ এত ভয় পায়?
-রাতে পাই, দিনে না। (আমি)
–কি জন্য এসেছো? (সাইফ)
-তোর বাবা তোর চাচার বাসায় যেতে বলল….
–কিইইইই, এত রাতে?
-তোর বাবাই তো বলল যেতে।
–পারুমনা। (দুই ভাই একসাথে বললাম)
-যখন বাসা থেকে বের করে দিবে তখন বুঝবি।

বলেই মা রুম থেকে চলে গেলো। আগামিকাল ছোট চাচার মেয়ের বিয়ে। তাই আজকেই আব্বা সেখানে গেছে। বাসা বেশি দূরে না। দশ মিনিটের রাস্তা। কিন্তু এত রাতে আব্বা কেন যেতে বলল? এমনিতেই প্রচণ্ড ভয় পাই। আবার আব্বার কথা না শুনলে বাসা থেকে বের করে দিবে…পরলাম বিরাট মুশকিলে। সাইফতো যাবেই না। ওর একটাই কথা প্রয়োজনে কাল বাসা থেকে চলে যাব তবুও রাতে চাচার বাসায় যাবনা। আমি নিজেকে শক্ত করলাম। বুকটা ফুলালাম। নিজেই নিজেকে বললাম রুবেল তোকে ভুতে ভয় পেলে চলবেনা। ভুতের ভয়কে জয় করতে হবে। প্রয়োজনে ভূতের সাথে মারামারি করে হলেও তোকে চাচার বাসায় যেতে হবে। যাক এখন মোটামুটি সাহস হলো। সাইফকে বললাম….

–চল চাচা বাসায়।
-যামুনা, তুমি যাও।
–ধুরররর হারামি চল কিচ্ছু হবেনা।
-না তুমি যাও।
–আরে পাগল আমি আছিতো।
-আমার ভয় হয়।
–আচ্ছা চলতো পাগল।

সাইফকে সাথে করে নিয়ে বের হইছি। হাতে বিদেশী টর্চ লাইট। রাত প্রায় সাড়ে ১২ টা। গ্রামে এই সময় গভীর রাত। দুই মিনিট হাটতেই সাইফ বলল….

–ভাইয়া চাপছে?
-মানে?
–হিসু করব…
-ওখানে গিয়ে করিস।
–না তুমি একটু দাড়াও।

সাইফ রাস্তার পাশেই বসে পরলো। আমি লাইট হাতে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ টর্চ লাইটের আলো গিয়ে পরলো একটা খেতে। সেখানে মানুষের মতন করে মূর্তি বানানো। ভয় পেয়ে দু’কদম সরে গেলাম। সাইফ গুনগুন করে গান গাচ্ছে। হঠাৎ ওর পায়ের উপর দিয়ে একটা চিকা চলে গেলো। সাইফ ভয়ে মাগো বলে চিৎকার দিলো। চিকাটাও চিকচিক করে উঠলো। আমি বললাম….

–সাইফ ভয় পাসনা।

আমার টর্চের আলো তখন খেতের মধ্যে। সাইফ। আচমকা তাকিয়েই বলল….

–ভাইয়া ভূ..ভূ..ভূউউউউত….

বলেই ঘুরান্টি দিয়ে বাসার দিকে উল্টা দৌঁড়। আমাকে আর পায় কে? সাইফের সাথে আমিও দৌঁড়। পরনের ছিলো লুঙ্গী। কাচা খুলে গেলো। দৌঁড়ানের সাথে সাথে ফারফার করে শব্দ হচ্ছে। সাইফ মনে করেছে আমাদের পিছনে পিছনে ভূত দৌঁড়াচ্ছে। ও সমানে মাগো বাবাগো বলে চিৎকার দিয়ে দৌঁড়। ওর চিৎকারের ভয়ে আমিও দৌঁড়। দুই ভাইয়ের অলিম্পিক দৌঁড় প্রতিযোগিতা শুরু হইছে। বাসায় এসে ধপাস করে বসে পরলাম। দু’ভাই সমানে হাঁপিয়ে চলছি। ঠিক পর মূহুর্তেই আব্বার ফোন….

–কিরে কই তোরা?
-বাসায়।
–মানে…?
-ভূত দেখে দৌঁড় দিছি….
–ফাইজলামি করস?
-চিকা চিকা….(সাইফ)

আব্বা রাগে ফোন কেঁটে দিলো। সাইফ গিয়ে টুপ করে বিছানায় বসে পরলো। আমিও গিয়ে বসে পরলাম। আমার বুকটা এখনো কাঁপছে। সাইফের লুঙ্গী একটু ভেজা। বেচারা হিসু করা অবস্থায় দৌঁড় দিছে যার ফলে ভিজে গেছে। যাক এখন মোটামুটি অবস্থা সহনীয়। গরমের মধ্যেও ভয়ে ফ্যান ছেরে দিয়ে কম্বল মুরি দিলাম। লাইট অফ করে দিলাম। আজকে আর এমনিতেই ঘুম আসবেনা। ফান দেখায় মনোযোগ দিলাম। কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম আমাদের রুমে কেউ এসেছে। কম্বলের নিচেই সাইফের দিকে তাকালাম। ফিসফিস করে বললাম….

–কিরে কে এসেছে?
-জানিনা, তয় মনে হয় কেউ আসছে।
–দরজা লাগিয়েছিস তো?
-না মনে ছিলনা, তুমি লাগাওনি?
–নারে, এখন উপায়।

সাইফ কাঁদো কাঁদো ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি এখন ভয় পেলে সাইফ শেষ। নিজেকে শক্ত করলাম। একটু পর অনুভব করলাম কেউ আমাদের বিছানায় বসলো। সাইফের চোখে পানি। বেচারা ভয়ে শেষ। যেইমাত্র অপরিচিত লোক/ভূতটা আমাদের কম্বলের উপর হাত রাখলো। নিজেকে আর শক্ত করতে পারলাম না। ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। আমার দেখাদেখি সাইফও চিৎকার দিলো। কে যেনো এসেছে। আমি বালিশ দিয়ে ঠেসে ধরলাম। সাইফকে বললাম….

–হারামজাদারে পিডা…
-লাঠি খুজে পাইনা।
–বালিশ দিয়ে পিডা।

আমার বলতে দেরি সাইফ অমনি শুরু করলো উরাধুড়া বারি। সে কি বারি কোন থামাথামি নাই। এদিকে আমি বালিশ সমস্ত দিয়ে ঠেসে ধরার ফলে ভূতটা নড়াচড়া করতে পারছেনা। সাইফ সমানে বাইরে চলছে। সাইফ হাপিয়ে উঠলো। শুরু করলাম আমি বারি। নিচ থেকে রুবেল বলে ডাক দিলো। ডাকটা মনে হলো ছোট কাকা দিলো। সাইফকে বললাম….

–কিরে ছোট কাকার মতন কণ্ঠ শোনা যায়…?
-হারামি ভূত আমাদের ব্লাকমেইল করতেছে।
–কস কি?
-হ, কাকার কণ্ঠ নকল করছে। যাতে কাকা ভেবে ছেড়ে দেই, আর আমাদের ঘাড় মটকায়।
–তাইলে থামলি কেন পিডা…
-ঠাসসস ঠাসসস ঠাসসস

আমিও শুরু করলাম বারি। অনেক্ষন বারি দেওয়ার পর রুমে আলো জলে উঠলো। তাকিয়ে দেখি রুমে আম্মা আর রোদেলা (ছোট বোন) দাঁড়িয়েআছে। বিছানায় তাকিয়ে দেখি বালিশের তুলো ছরিয়ে ছিটিয়ে আছে। আর যাকে আমরা দুই ভাই মিলে পিডাইলাম সে আর কেউ নয় আমাদের ছোট কাকা। কাকা কানে হাত দিয়ে বসে আছে। নাকের মাথা লাল হয়ে গেছে। বালিশের বারি খেয়ে বেচারার অবস্থা কাহিল। আম্মা রাগে গজগজ করতে করতে বলল….

–তোরা এখনি বাসা থেকে বের হয়ে যা।
-আসলে ভাবি ওদের কোন দোস নেই, আমিই না বলে ওদের রুমে এসেছি। বড় ভাই বলল ওদের ডেকে যেন সাথে করে নিয়ে আসি। (কাকা)
–জি খাক্কু সহমত, আমরা না জেনে পিডাইছি। (সাইফ)
-বাসা থেকে বের হবি নাকি….
–সরি মাদার, আমরা জানিনা কাকা এসেছে। (আমি)
-তুই হলি বড় হারামজাদা তুই সাইফকে বলছিস পিডাইতে…
–তো আই কিত্তাম? (সাইফ)
-বের হ কি আর করার। আম্মা দু’ভাইকে বাসা থেকে বের করে দিলেন। এখন ছোট চাচার সাথে উনার বাসায় যাচ্ছি। চাচা মুখ কালো হাঁটছে। চাচা বলল….

–একটু আস্তে বারি গুলো দিলো হতোনা? এভাবে কেউ কাউকে পিডায়?
-চাচা সরি…
–চাচা কি আর করমু বলেন, ভাগ্য ভালো লাঠি ছিলোনা। (সাইফ) চাচা কিছু বললেন না। আমরা সবাই সমান তালে হেঁটে চলছি। জানিনা চাচার এ অবস্থা দেখে আব্বা আমাদের কি হাল করবেন। যাইহোক বেঁচে থাকতে আর জীবনে ভূতের মুভি দেখবনা।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত