মম মন বুঝে দেখো মনে মনে

মম মন বুঝে দেখো মনে মনে

-এত সাজানো-গোছানো এই ঘরখানা, আমি যদি হুট করে বেরিয়ে পড়ি, তবে ক্যামন পেছন থেকে ডাকে!

-এত সাজানো-গোছানো তোমার ঘর, অথচ ওই ওপাশে- সন্ধ্যা নামার আগে, ঋতুর বিবর্তনে যখন আলো আর হাওয়ার তুমুল পরাগায়নে বুদ্বুদের মতো প্রেমবীজ জেগে ওঠে।

-কোথায়?

-উম! হয়তো আমাদের মগজে।

-কিন্তু চিরকাল শুনে এসেছি প্রেম আসে হৃদয়ে।

-তা আসুক।

-হুম তা আসুক- আসলে প্রেম নিয়ে এত ভেবেই বা কী হয়? এই যে এত ভাবল মানুষ- প্রেম কী, কোথায় তার জন্ম, বিবর্তন, কী তার ইতিহাস- পারল? পারল আবিস্কার করতে? প্রেমকে?

বাতাস কেটে কেটে রিকশা চলে কোনদিকে, কেউ জানে না। আজ কী বার, কত তারিখ- কেউ জানে না। ছেলেটা রাস্তার বাঁ দিকে, মেয়েটা তার পাশে বসে- তিরতির হাওয়া বয়- রিকশা এগোয়।

ফাল্কগ্দুনের শেষ। মাত্র ক’টা দিন বাকি। এরপর বৈশাখ আসবে। মেয়েটা একখানা সাদা খোলের শাড়িতে লাল জরিপাড় খুঁজছে।

-বৈশাখের ভোরে কোথায় থাকবে তুমি?

-বাসায়- বাচ্চাদের কত কত প্রোগ্রাম!

-ওহ।

মেয়েটা তাকায় ওইদিকে।

কারওয়ান বাজারের রাস্তায় ধুলো ওড়ে; বাঁধাকপি, পটোল আর শিমের পরিত্যক্ত শরীর কাদা ঘেঁটে মিশে গেছে। মাছের আঁশের গন্ধ তিরতির চারদিক কাঁপায়।

-ফাল্কগ্দুন চলে যাচ্ছে। দ্যাখো- প্রতিবার কত ফাল্কগ্দুন আসে, অথচ আমাদের কি না এবারই প্রথম দেখা হলো!

পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন- ‘এত দিন কোথায় ছিলেন’, বলল না। কিছুই বলল না। মেয়েটা রইল চুপ করে। ছেলেটার সিগারেটের আগুন ধক করে জ্বলে উঠল একবার।

এতদিন কোথায় ছিলেন? এতদিন কোথায় ছিলেন?

-কোথায় আর ছিলাম? ছিলাম আলু-তেল- পেঁয়াজে, কালিজিরায়। পাঁচফোড়নে ভাজনা দিলে ডালের রঙ কেমন দেখনদার হয়! ছিলাম হলুদ স্নানঘরে, বিদেশি সাবানে, বাথটাবে, এসেনশিয়াল অয়েলে মনোমুগ্ধকর আমার স্তন- ঘরজোড়া আয়নায় লাল-নীল-গোলাপি শাড়ির সঙ্গে ব্যাকলেস ব্লাউজ- দখিনের জানালার পাশে ছোট্ট টি টেবিলে মুখোমুখি দু’খানা চেয়ার- কত কত দিন গেল এই ভেবে- কী ভেবে?

-কী ভেবে?

-ভুলে গেছি। আজকাল কি মনে থাকে এত? পঁয়তিরিশ হলো।

ছেলেটা এইবার হো হো করে হাসে। তার পঁয়তাল্লিশের চুল, দাড়ি, চোখ, দাঁত সব হাসে।

জ্যাম লেগে গেল। রাস্তায় এত ধুলো ওড়ে। মেয়েটা আঁচলে চোখ ঢাকে একটু।

-চোখে কিছু পড়ল?

-হয়তো পরাগরেণু। ফাল্কগ্দুনে বাতাসে এইসব হাবিজাবি ওড়ে। উড়ে এসে চোখে পড়ে, তারপর চোখের শিরা-উপশিরা বেয়ে ক্রমশ নামতে থাকে নিচের দিকে, হূৎপিণ্ডে-ফুসফুসে-পাকস্থলীতে…

-আজ আর অফিস যেতে হবে না?

-থাক না অফিস! তুমিই আমার অফিস। তুমিই আমার কাজ।

ঠা ঠা করে হাসে মেয়েটা। এই রিকশা ঘোরাও। ঘোরাও তো বনবন। ওই পাশে ওই দিকে চলো। ওই যে যেখানে কদমের বন আছে, জারুলের দ্বীপ আছে…।

– এই শহরে?

– আছে, এই শহরেও আছে।

– অথচ আমার জানাই হলো না…।

কত কিছুই জানা হলো না বলে শুধু ঘরটাই হলো। একটা পরীর দ্বীপের মতো ঘর। ডানা মেলা যায়, শিস দিয়ে গেয়ে ওঠা যায়, পাখনা ছড়িয়ে নাচাও যায় দুই পাক। আবার কখনও কখনও চোরাস্রোতের ঘূর্ণিতে ভর দিয়ে ভেসেও যাওয়া যায়। ঘরটা এমন! ক্যামন?

ঘরটা হতো জারুলের বন! পাকুরের ঝিমঝরা ছাইরঙ দুপুর হতো! পুব পুকুরের মতো জলজ হতো, ঝিলমিল জ্যোৎস্না মাখানো হাত-পা-বুক-পেটসমেত একটা ঘর যদি হতো! যদি একটা আস্ত রাস্তা ঢুকিয়ে দিতে পারতাম ঘরটার ভেতরে- সেই রাস্তাটা- প্রজাপতিওড়া- বিকেল বিকেল- জলপাইগন্ধি বাতাসে…।

মেয়েটা বুকভরে শ্বাস নেয় একবার। জলপাইয়ের সুঘ্রাণ পায় হয়তো বা।

-দ্যাখো, একটা চায়ের দোকান।

গরুর দুধের চা। বড় রাস্তার পাশে ছইতোলা ছোট্ট দোকান- একখানা বনরুটি নামিয়ে নেয়। ভেতরে ক্রিমভরা পুর। শিরশিরে বাতাসে ধানিরঙ শাড়ির আঁচল ওড়ে। চূড়া করে বাঁধা চুলের কুটোকাটা কপালে আছড়ে পড়ে। বাতাসে মিষ্টি সরিষার মতো ঘ্রাণ, কাঁচাগোল্লার মতো, রসমালাইয়ের মতো- ওই দিক থেকে ধেয়ে আসছে হাওয়ার দল।

কোন দিক থেকে? এই পথটা কোথায় চলে গেছে? নাটোরের দিকে? মুমিনসিঙের দিকে?

খুক খুক করে হাসে মেয়েটা। পথ গিয়েছে পথের ইচ্ছেয়। যে যার ইচ্ছেতেই যায়। কেউ কেউ উড়োজাহাজেও যায়। কেউ নৌকোয়…।

-আমি ভাবতাম বেদে হবো। আমি যদি বেদে হতাম!

-বেশ হতো। তোমার ওই কোমরের খাঁজে জড়িয়ে রাখতে সুতানরি সাপ…।

-আর ছুঁতে আসলেই ফোঁস করে উঠত সেটা… মাথায় বয়ে বেড়াতাম দাঁতের মাজন, বিষব্যথার মলম- এটা সেটা।

-আমি কাছে ডাকতাম, ‘তোমার কাছে শ্বাসকষ্টের ওষুধ আছেনি?’

-সন্ধ্যা হলে নৌকায় ফিরতাম- বেদে নৌকা দেখতে ক্যামন?

-জাহাজের মতো… নদীতে তার ছায়া পড়ে দিনরাত…।

ওরা দু’জন হাঁটতে শুরু করে। কারও কোনো তাড়া নেই। রাস্তায় বেগুনি পাখির মতো শত শত মৃত পাতা উড়ছে। মাথার ওপরে সাদাটে আকাশ। মেঘগুলো এই আছে, এই নেই। সড়কের পাশে ধানক্ষেত-গমক্ষেত, একটু দূরে একটা-দুটো কাঁচাপাকা ঘর, খড়ের ঢিবি, উঠোন, ভেজা ভেজা শাড়ি, সায়া, গামছা! আলপথ ধরে ওই জলের কলটা বরাবর ওরা হেঁটে যায়। দুপুর মাথায় নিয়ে একঝাঁক পাখি ওড়ে- কী পাখি? নাম জানি না- চক্কর খেতে খেতে উড়ে যায়। ধানক্ষেতের পাশে গাছের ছায়ায় পা ছড়িয়ে বসে মেয়েটা ভাবে- জলের অপর নাম জীবন আর এইচ টু ও- এই হলো জলের সমীকরণ।

-আমি ফাল্কগ্দুনে প্রেমে পড়ে গ্রীষ্ফ্মে ভুলে গিয়েছিলাম।

এই বলে ব্যাগ খুলে একখানা নোটবুক বের করে ছেলেটার চোখের সামনে মেলে ধরে মেয়েটা। তারপর একটু এগিয়ে যায় সামনে- একটা ফড়িং উড়ছে- সবুজ ঘাসে মিশে যাচ্ছে তার মেঠো শরীর, ফের ভুস করে জেগে উঠছে চিকচিকে ওড়াউড়িসমেত।

‘রোদনভরা এক তুমুল ফাগুন দিনে, উৎসব আয়োজনের ঠিক মধ্যিখানে, একরাশ মানুষের ভিড়ে আমি হুট করে প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। যেহেতু ফাল্কগ্দুন ও চৈত্র- এ দুই মাস প্রেমকাল। বাকি সব বাস্তবতা, যাপন আর বেঁচে থাকা।

প্রেম একটা বায়বীয় অসুখ, যা মগজে জন্ম নিয়ে কালে কালে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু মগজকোষে তার প্রথম প্রকাশ ও বিকাশ, তাই আপাদমস্তক মগজটাকেই চিবিয়ে ছিবড়ে করে তাকে কর্মহীন, বোধহীন ও সিদ্ধান্তহীন করে ফেলাই এ রোগের মূল লক্ষণ।

এবং যেহেতু আমি ফাল্কগ্দুনের চালাকিটা ধরে ফেলতে পারি, যেহেতু আমি জানি, ওই মন্দিরের উঠোনে দাঁড়িয়ে সান্ধ্যসঙ্গীত আর প্রদীপ জ্বালা দেখতে দেখতে একদিন আমরা পরস্পরের চোখে তাকিয়েছিলাম বটে, ফিরতি পথে বাতাসে খুব উড়ছিল চুল (সেও ওই ফাল্কগ্দুনেরই কীর্তি), আমার শাড়ির আঁচলে লেগেছিল ঘাসফুল, কুটোকাটা, মেলাভাঙা ধুলো; তবু একদিন আমাদের সকলের নিজস্ব যাপনে যার যার আয়নাঘরের সামনে দাঁড়ালে নিজেকেই শুধু দেখতে পাওয়া যায়! যেহেতু প্রেম এক আশ্চর্য অনুভব- প্রতিদিনের তেলাপিয়া মাছে, মিনিকেট চালে, ছিট কাপড়ের বালিশের ওয়্যারে, রিয়েল এস্টেটের মাসিক কিস্তিতে, পরিবার পরিকল্পনায় সে খুব ঘাপটি মেরে থাকে। কিন্তু থাকে। থাকে বলেই মন্দিরে ধরানো বিড়িতে শেষ টান দিয়ে, কফিশপের বিল মিটিয়ে, ফিরতি ট্রেনের টিকিট ডাস্টবিনে ছুড়ে ঘরমুখো স্টেশন ওয়াগন একফাঁকে মীনাবাজারে নামে; চাল কেনে, ডাল কেনে। ‘বাসায় গেছ? রান্না হয়েছে? ব্যথা কমেছে?’- এসব আলাপন সারে। তারপর পৃথিবীর তাবৎ ফাল্কগ্দুন আমাদের ভেংচি কেটে বোচকাবুচকি নিয়ে দাঁত বের করে অশ্নীল হেসে ফিরে যায় ঈশ্বরের কাছে। ঈশ্বরের জীবনে ফাল্কগ্দুন নেই। তাই প্রেম নেই। ঈশ্বর তাই একা এবং সুখী।

যেহেতু আমি ঈশ্বর নই, যেহেতু আমার মানবজন্ম সত্য-মিথ্যা প্রেম আর চুম্বনে পরিপূর্ণ, যেহেতু আমাকে বাঁচতে হবে সব ঋতুতেই- তাই আমার ফিরে আসার ক্লান্ত ইতিহাসে এক-একটা ধূসর পালক যুক্ত হয় বারবার। সেই পালকখানা কালিতে ডুবিয়ে খুলতে হয় হিসাবের হালখাতা- গ্রীষ্ফ্মের শুরুতেই। এই হলো হালখাতার প্রকৃত ইতিহাস।’

পড়তে পড়তে ছেলেটার চোখ ভিজে যায়। যেহেতু ছেলেটা কবি ও খেয়ালি। যেহেতু তার সবকিছু থেকেও নেই। ঠিক মেয়েটার মতো। যেহেতু ছেলেটা সবকিছু চায়। অথচ মেয়েটার মতো নয়। মেয়েটির চাইবার কিছু নেই। কিছুই চায় না সে।

একটা ট্রেনের শব্দ ভাসতে ভাসতে এগিয়ে আসে। কাছেপিঠে রেললাইন আছে তবে?

মেয়েটা ফড়িং ফড়িং পায়ে কাছে আসে। এসে চুমু খায়। তুমুল রোদের দিনে এক আসমান বাস্তবতার নিচে দাঁড়িয়ে হুট করে চুমু খাওয়াটাই ফাল্কগ্দুন। অথচ নোটবুকে গ্রীষ্ফ্মের খাঁ খাঁ রোদ্দুর চিরচির করে, কাগজ-কালি শব্দ আর বাক্যরাশিকে পোড়ায়।

মেয়েটার হাসিমুখ রোদের ভেতরে ঝিলিক দিয়ে ওঠে- ‘মম মন বুঝে দেখো মনে মনে…।’

ছেলেটার দ্বিধা থরোথরো মন ট্রেনের শব্দ শোনে- ট্রেন চলে যায়। কোথায়?

ট্রেন চলে যায় নিশ্চিন্তপুরে- বাসায়- সন্তানে- সঙ্গিনীতে- মায়ায়। মেয়েটা চেয়ারে পা তুলে বসে পথের ধারের হোটেলে ঝাল তরকারি মাখিয়ে ভাত খায়। একখানা কাঁচামরিচ ডলে নেয় তাতে।

ছেলেটার চোখ ভিজে যায় ফের। যেহেতু সে কবি ও খেয়ালি। যেহেতু তার সব থেকেও নেই। কী নেই- তাও সে জানে না।

দুপুরের পাখিগুলো ফিরে আসে ফের। পায়ের কাছে গ্রাম্য বিড়াল মিউমিউ করে ঘোরে। একঘর বাউলের একতারা টুং টাং ছড়ায়- ওরা বসে থাকে পাশাপাশি। এই বিকেলটা শেষ হলে ট্রেনে উঠে যাবে। ট্রেন যাবে নিশ্চিন্তপুরে।

ছেলেটা মেয়েটার হাত ধরে রাখে- গোপনে- ‘পাছে আপনারে রাখিতে না পারি, তাই কাছে কাছে থাকি আপনারি…।’

বাউলরা গান ধরে। আকাশের ওপরে ঝুলে থাকা মেঘেরাও গান ধরে। মৃতপ্রায় বসন্তও গান ধরে-

নিশির ডাকের মতো আমারে ফের ফাল্কগ্দুনে ডেকেছিল…

ভালোবাসার গন্তব্য সব সময়ই এক ও অভিন্ন। নেশাখোর পাড়-মাতালের মতো, গৃহত্যাগী সিদ্ধার্থের মতো, পথে ঘোরা বাউলের মতো, ছুটে বেড়ানো ইবনে বতুতার মতো দিকচিহ্নপুরের পথে পথে ঘুরপাক দেওয়াটাই ভালোবাসা। ঘুরতে ঘুরতে মাথায় গোল বেধে যায়, চক্ষু অন্ধ হয়, বুকে ফাঁপর লাগে এবং শেষমেশ সব অবসান হয়।

-পুরো ফাল্কগ্দুন কালীমন্দিরের বিষণ্ণ চাতালে, পরিত্যক্ত পুকুরের ঘাটলায়, ধুলো ওড়া মাঠের উৎসবে, ফানুসের মতো মানুষের ভিড়ে ভিড়ে এই যে আমরা পরস্পরের গায়ে গা ঘেঁষে উত্তাপ নিয়ে ফিরলাম… সেও কি ফাল্কগ্দুন ডাকে বলেই?

-সবকিছুকে যুক্তির ছাঁচে ফেল না, সব হিসাব কি মেলে এই জীবনে?

-তাও বটে। তবে গ্রীষ্ফ্ম কিন্তু এলো। গ্রীষ্ফ্ম একজন পরিপকস্ফ ঋতু।

মাঠের দিনের শেষে, বাউলের গানের শেষ সুরটুকু শরীরে মেখে পরস্পরকে বুকে নিয়ে ওরা ফেরে। ওদের ফেরার পথে ফাল্কগ্দুন ও চৈত্র- এ দুই মাস বসন্তকাল- তারা রয়ে যায় মাঠের ধুলোর ভেতরে, কলের জলের হিসহিসে শীতলতায়, ফুলের গোলাপি আভার ভেতরে পরাগরেণুর গভীরতায়। তারা আর সঙ্গে আসে না।

‘ভালো থেকো ফুল মিষ্টি বকুল…’

মিষ্টি বকুল বাড়ি ফিরে যায়- একা- দীর্ঘ সন্ধ্যার মতো হেঁটে চলে যায় দীর্ঘ গ্রীষ্ফ্মের দিকে! বসন্ত তার শেষ হাঁকডাক ছাড়ে!

হে আমার বাউলা বাতাস, হে আমার বিদীর্ণ বুক, হে আমার হ্যামিলিন, হে আমার শেষ রাত- বুকের বালিশে রাখা গোপন সুড়ঙ্গপথে এই আমার বসে থাকা, ছেড়ে যাওয়া, ফিরেও আসা বারবার- তুমি মম মন বুঝে দেখো- মনে মনে, এ আমার নয় ছলনা…!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত