কি আর করতে পারিস তুইআমার জন্য… সারাজীবন তো আমিই ঘাড়ে নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছি তোকে ..একটু শ্লেষ নিয়ে কথাগুলি বল্ল পল্লব।
ঠিক কি আশা করিস আমার থেকে…মানে কি করলে তুই মানবি যে আমি তোর জন্য সত্যিই সব কিছু করতে পারি। জিনিয়া প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল পল্লবের দিকে।
অর্ক অমৃতা সুতনুকা দীনেশ সবাই হৈহৈ করে উঠলো। পল্লব.. শুধু ছুঁয়ে দিয়ে গেলে চলবে না ..ঝেড়ে কাশো বস্। জিনিয়া আমাদেরও প্রিয় বন্ধু তাই ওকে চ্যালেঞ্জ দেওয়া মানে আমােরেদেরও দেওয়া।
ওরে ..ব্যাটারা.. তোরা সব তলে তলে জিনিয়ার ফেবারে… আর আমার দিকে কেউ নেই?
কেন আমি আছি… আকাশ একটু লেটে জয়েন করলো কলেজ ক্যান্টিনের আড্ডায় । দু বাহু প্রসারিত করে পল্লবকে জড়িয়ে ধরে বল্ল.. গুরু আমরা দুজনেই এক গোয়ালের গরু.. অঙ্কেতে মাথা নেই হয়েছি প্রেমে পাগোল। কি প্রবলেম বলে ফ্যাল..
জিনিয়া আর আমি সেই ক্লাস ফাইভ থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড । সেই তখন থেকে ওর মুটেগিরি করে বেড়াচ্ছি।
জিনিয়া ঝাঁঝিয়া উঠলো…মানে টা কি পুপু ? আমি তোকে কুলির মত ট্রিট করি?
অফ্কোর্স তাই। .. সাইকেলে বসিয়ে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া, টিউটোরিয়াল যাবি তো সব বই ধার দেওয়া। নোট মিস করলে জেরক্স করে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া … কি না করিয়েছিস তুই আমাকে দিয়ে।
মানে … তুই কি বলতে চাস ওগুলো তুই স্বেচ্ছায় করিসনি? এটা তুই বলতে পারলিপুপু?
জিনিয়ার গলা আড়ষ্ট হয়ে এলো।
ভাব গতিক ভালো লাগছেনা দেখে বন্ধুরা হৈহৈ করে বলে উঠলো… পল্লব.. চ্যালেঞ্জ নিবি না শালা.. জিনিয়াকে তুই এখনো চিনিসনা। বল তোর কি চাই।
অমৃতা মুখ টিপে হেসে বল্ল… কিসু টিসু কি কম পরিয়াছে নাকি? ওরে তোরা সব চল রে.. দেবা দেবী কে একটু একা থাকতে দে।
জিনিয়া প্রচন্ড রেগে গট্ গট্ করে উঠে চলে গেল।
ব্যাস্… পুরো মজলিসে যেন কেউ জল ঢেলে দিল।
ক্লাসের শেষে সোজা গট্ গট্ করে বাড়ির দিকে রওনা দিল জিনিয়া..প্রতিদিনের মত পল্লব ডেকে উঠলো..ওয়ে… হেঁদুয়ার ঘাস কি পুরানো হয়ে গেল নাকি? আরে যাচ্ছিস কোথায় আমাকে একা ফেলে? চল একটু বসে যাই.. কলেজ তো রোজই করছি..প্রেম করব কবে?
কেন বেকার ডাকাডাকি করছিস ? পুপু ..আজকাল আমাকে তোর বোঝা মনে হচ্ছে?
আমি ভাবতেই পারছিনা। জিনিয়ার চোখ ছল ছল করে উঠলো।
দুর পাগলি… দ্যাখ আমার একটা ইচ্ছা আছে জানিস.. জিনি… টিউশন পড়িয়ে আর পকেট মানি বাঁচিয়ে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম .. কাল তোর জন্য একটা গিফ্ট কিনেছি। পকেট থেকে লাল প্যাকেটে মোড়া একটা ছোট্ট উপহার বার করল পল্লব।
জিনিয়া আস্তে আস্তে খুলে দেখে তো হতবাক। পুপু.. তুই কি করেছিস রে.. এতো দামের গিফ্ট কেন?
আমার জিনি ..আমার দেওয়া হীরর নাকছাবি পরবে। তার উপর শুধু একা আমার অধিকার। দেখি সে আমার জন্য পরতে পারে কি না।
কি করে আমি পরবো রে? আমার তো নাক বেধানোই নেই.. হতাশ কন্ঠে বল্ল জিনিয়া।..
সে আমি জানিনা তুই কি করে কি করবি। আমি শুধু তোর নাকে ওটা দেখতে চাই। খ্যঁদানাকি কোথাকার।.. হিহি করে হেসে উঠলো পল্লব।
এআমার ভালোবাসার আদিখ্যেতা বা মিষ্টি নির্যাতন .. দেখি তুই সামলাতে পারিস কি না।
ওরা কিছুক্ষণ পার্কে বসে বকবকম করেনিল
তারপর সাইকেলে জিনিয়াকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে
পল্লব বাড়ি চলে গেল ।
পরদিন কলেজে সবাই উপস্থিত । দুটো ক্লাসের পর বিরতি.. বন্ধুরা সব কলেজ ক্যান্টিনের টেবিল জু্ড়ে গল্পে মত্ত। পল্লব চুপচাপ বসে আছে সাথে আকাশ। আজ জিনিয়া এত দেরী করছে কেন। অমৃতা ও হিস্ট্রি অনার্সের স্টুডেন্ট সে বল্ল ..জিনিয়া আজ অ্যাবসেন্ট। পল্লব কি করবি..একটা ফোন তো কর।
সকাল থেকে ফোন ধরেনি আর টেক্সটের রিপ্লাই ও করেনি। কি করছে কে জানে।
হঠাৎ চুপচাপ মাথা নীচু করে জিনিয়ার প্রবেশ । সবাই যথারীথি হৈহৈ করে উঠলো জিনিয়া কি ব্যাপার কি রে তোর।
লাজুক হেসে জিনিয়া জানালো একটা কাজ ছিল রে তাই লেট হোল ততক্ষণে পল্লবের চোখ আটকে গেছে..ঝল্ মল্ করছে হীরের নাকছাবি ।
জিনিয়া তোকে কি অপূর্ব মানিয়েছে ও মা গো চিৎকার করে উঠলো সুতনুকা কি করে একদিনের মধ্যে নাক বিধিয়ে নাকছাবি পরলি রে? লাগেনি তোর?
পুপু আমাকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল যে আমি ওর জন্য কি করতে পারি তার পরীক্ষা । আমি শুধু গান শটের সময় মন থেকে পুপুর নাম নিলাম আশ্চর্য ব্যাপার একটুও ব্যাথা লাগেনি রে।
এতক্ষণ পল্লব চুপচাপ দেখছিল .. এবার সবার সামনে জাপটে একটা আলিঙ্গন করল জিনি আমি আমার হার মানছি রে সত্যি তুই আমার জন্য সব করতে পারিস। জিনিয়ার চোখ দুটো ভরে এলো কিন্তু একি পুপু তোর ঘাড়ে এটা কি ? JP লেখা .. তুই ট্যাটু কবে করলি?? এতো খুব পেইনফুল ব্যাপার রে।
কাল ভাবলাম জিনিকে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ দিয়েছি তো আমিও কিছু করি যাতে ওর মনে হয় যন্ত্রণা আমিও সইতে পারি কিরে বল তোরা ব্যাপারটা ঠিক করিনি?
সবাই ..আবার হৈহৈ করে বলে উঠলো…. কি দেখালি গুরু এ তো অমর প্রেম।
হ্যাঁ সাধারণ ভাবে মনে হতেই পারে সবার.. ন্যাকামো , ঢঙ , কিন্তু ভালোবাসা থাকলে তার জন্য অনেক যন্ত্রণাও ক্ষুদ্র মনে হয়। জিনি.. আমাদের অনেক পথ একসাথে চলতে হবে.. এমনি করে সাথে থাকিস কিন্তু । যন্ত্রণা সইবার এই তো সবে শুরু।
পুপু… আমার কমিটমেন্টে আশা করি তোর আর সন্দেহ থাকলো না। চল .. জীবনটা অনেক বড় .. আমরা নিশ্চয়ই তাল মিলিয়ে চলতে পারবো।
“দন্ডিতের সাথে দন্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে… সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার”॥