রাজশাহীতে একটি চাকরীর সাক্ষাৎকারের জন্যে ডাক পেয়েছি। খুব ভাল মানের চাকরী বলেই মনে হচ্ছে। ভাগ্য যদি সহায় হয় তবে বেকারের ট্যাগ এবার ঘুচবে। ট্রেনের টিকিট না পাওয়াতে বাসের উপরেই ভরসা করতে হল। বাসে অবশ্য বমি করার অভ্যাস আছে তাই দুটো বমির বড়ি কিনে নিলাম।সকাল সাতটার গাড়িতে সোনার হরিণের সন্ধানে যাত্রা। সাধারণত বাসে বসে অপরিচিত কারো সাথেই আমি প্রয়োজন ছাড়া কথা বলিনা। তবে এবার মনটা বেশ উৎফুল্ল হয়ে আছে অজানা কোন এক কারনে। সম্ভবত চাকরীটা পাওয়ার আগাম বার্তা পাচ্ছি বলে। আমি জানালার পাশের সিটটাই দখলে নিলাম, অবশ্য জানালার পাশে টিকিটই কেটেছি।
বাস ছাড়ার সাথে সাথেই আমার পাশের সিটের ভদ্রলোক হাসিমুখে আগমন করলেন। মাঝবয়সী এই লোকটির হাসি দেখে আরো ভাল হয়ে গেল মনটা। মনে মনে বেশ ভাল ধরনের আড্ডা জমানোর প্রস্তুতি নিলাম। আমার কষ্ট করে কথা শুরু করতে হল না, তার আগেই ভদ্রলোক আমার সাথে কথা বলতে শুরু করলেন। জানতে পারলাম উনি একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। উনিও জানলেন আমি একটি বেনামধন্য অচেনা একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে সদ্য বের হওয়া একজন সার্টিফাইড বেকার। ভদ্রলোক বেশ ভাল উপদেশ দিচ্ছিলেন আমায়। কীভাবে সাক্ষাৎকারে আচরণ করব, কীভাবে প্রশ্নের উত্তর দিব, কীভাবে কর্মকর্তাদের কথার জাদুতে আটকে ফেলতে হবে, ইত্যাদি। সত্যি বলতে উনি যা বলছেন তার অধিকাংশই ইন্টারনেটের বদৌলতে জেনেছি গুগল করে। তবুও ভদ্রলোক আমার জন্যে কিছু উপদেশ দিচ্ছেন সেটা বেশ আনন্দের সাথেই গ্রহণ করছি। তবে সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হল ভদ্রলোক তার ব্যাপারে এতই অতিরিক্ত চাপাবাজি করছিল যে সেই চাপাবাজিতে শক্ত হয়ে ধীরে সুস্থে রিএক্ট করাটা আমার জন্যে খুবই কঠিন পরীক্ষার মত ছিল। ভদ্রলোকের অধিকাংশ চাপাবাজিই হয়ত কোন বই, পত্রিকা কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে কপি-পেষ্ট করা। আমিও এক্টিভ ইউজারের মত লাইক দিয়ে পাশেই থেকে গেলাম।
রাজশাহী থেকে বন্ধু শুভ্র ফোন দিয়ে বলল ওখানে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে নাকি, মংলা সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সংকেত জারী করা হয়েছে। অথচ এর কোন তিল পরিমাণ নিদর্শনও দেখতে পেলাম না বাসে বসে। আকাশে প্রচণ্ড রোদ্দুর, মেঘের কোন দেখা নেই, থাকলেও সাদা মেঘ। আর বাতাস বলতে চলমান বাসের খোলা জানালা থেকে অবিরাম আসা ময়লা হাওয়াটুকুই। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি বাস এখানে দশ মিনিট স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে আমার শার্ট ভিজে যাবে ঘামে। অথচ রাজশাহীতে নাকি বৃষ্টি হচ্ছে। একটা ছোট্ট দেশের মধ্যেও কত ধরনের আবহাওয়ার পার্থাক্য দেখতে হচ্ছে।
ভদ্রলোকের সাথে সম্ভবত অতিরিক্ত কথা একবারে বলে ফেলেছি। তাই বোধহয় ভাষা হারিয়ে দুজনেই নিশ্চুপ। তাছাড়া ভদ্রলোকও সম্ভবত বুঝতে পেরেছেন উনার চাপাবাজির পরিমাণ কিঞ্চিৎ মাত্রা অতিক্রম করেছে, তাই মাত্রা অতিক্রম করে আর ছাপিয়ে যেতে চাইছেন না। আমি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম বই নিয়ে আর ভদ্রলোক তার দামীও স্মার্টফোন নিয়ে। পড়ছিলাম মৈত্রয়ী দেবী ও মের্চা এলিয়েদ এর যুগলবন্দী উপন্যাস ‘ণ হণ্যতে’ এবং ‘লা নুই বেঙ্গলী’ উপন্যাস দুটি। তাদের দুজনের প্রেম কাহিনীতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আমিও হারিয়ে গিয়েছিলাম কোলকাতায়। মৈত্রয়ী দেবীর বাবার আড্ডাখানায় রবীন্দ্রনাথের পাশেই বসে থাকতাম আমি আরো কত কি!
ধ্যান ভাঙল অধিক বিরক্তিতে। ঠিক দশ মিনিট আগেও লোকটিকে দেখেছিলাম আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে, এখনো দেখছি ঠিক একইভাবে তাকিয়ে আছেন। একই সাথে কয়েক ধরনের চিন্তা মাথায় উঁকি দিতে লাগল। এক, লোকটি হয়ত খারাপ মানুষ, আমাকে বিপদে ফেলে চুরি-ছিনতাই করার কৌশল ফাঁদছে। দুই, এটি হয়ত কোন সাধারণ ঘটনা, দশ মিনিট আগেও হয়ত উনি একবার তাকিয়েছিলেন এখন হয়ত আবারো একইভাবে তাকিয়েছেন। তিন, লোকটির চোখ খোলা রেখে ঘুমানোর স্বভাব আছে। চার, লোকটির চরিত্র খারাপ, তিনি পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট।
সর্বশেষের ভাবনাটিতে এসে একেবারে শরীরের লোম কাটা দিল। এমনিতেই পড়তেছিলাম মৈত্রয়ী দেবী এবং মের্চার প্রেমের কাহিনী, এর মাঝে কি শুরু হল বুঝে উঠতে পারছি না। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম, ‘আরে নাহ, ওরকম কিছুই না। আমি এমনিতেও সোঝা সাপটা মানুষ, মেয়েদের প্রতিই কোন অনুভূতি নেই আবারতো পুরুষ’। এই ভাবনাটি ভেবে যেন আরো ফেঁসে গেলাম আমি। নিজের সাথে কিছু সময় ধরে একপ্রকার যুদ্ধই করে গেলাম। হেরে গেলাম একটি যুক্তির কাছে। আমার প্রশ্ন ছিল, তুই নিজের চেহারা কখনো আয়নায় দেখছোস, কালা ভূতের মত চেহারা, দিনের বেলাতেই চোখে দেখা যায়না তোরে, তোর প্রতি অন্য মানুষের অনুভূতি জন্মানো অসম্ভব। আর আমার মনের উত্তর হল, কালো ছেলেদের প্রতিই পুরুষরা আকৃষ্ট হয়। ব্যস, রীতিমত ঘাম ঝড়তে শুরু করল শরীর থেকে। একবার ভাবলাম জোরে চিৎকার-চেঁচামেচি করে লোক ডেকে জড়ো করি। পরে ভাবলাম, লোকটিতো আমায় কিছু করেনি, লোক জড়ো করলে সবাইকে কি জবাব দিব!
সিদ্ধান্ত নিলাম মনে সাহস নিয়ে নিজেই জিজ্ঞেস করব উনি কি চাচ্ছেন। উনার দিকে তাকালাম, সেই একই ভঙ্গিমায় চোখ দুটি বড় বড় করে মুখটাকে কেমন যেন একটা আকৃতি করে চেয়ে আছেন। আমি তার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম, উনি বিন্দুমাত্র নড়লেনও না। আমি আর কথা বলার সাহস পেলাম না। বাইরের দিকে তাকিয়ে ভাবছি আর কাঁপছি। একজন ছেলে হয়েও এখন ইজ্জত নিয়ে টানাটানি, মেয়েদের ব্যাপারটা এবার পুরোপুরি আমার মাথায় নাড়া দিয়ে গেল। মেয়েরা আসলেই এক একজন যোদ্ধা, কত শত যুদ্ধ শেষ করেই না টিকে থাকে তারা। ক্ষানিকবাদে আইডিয়া পেলাম যে উপর থেকে ব্যাগ নামানোর ভান করে বাইরে নামবো, এরপর হাটতে হাটতে সামনে গিয়ে সুপারভাইজারকে বলব সিট পরিবর্তন করে দিতে। মনে মনে অনেক তওবা করলাম, আর জীবনেও কোন যাত্রীর সাথে কোন প্রকার বাক্য বিনিময় নয়। তুমি একলা পথের পথিক, প্রয়োজন হলে একা একা কথা বল, মানুষ পাগল বলুক সেটাও অন্তত এই পরিস্থিতির থেকে ভাল।
যথারীতি আমি উপর থেকে ব্যগ নামানোর উদ্দেশে দাঁড়ালাম, ভদ্রলোককে বললাম একটু সাইড দিবেন প্লিজ, ব্যাগ নামাবো। তিনি একই ভাবে তাকিয়ে রয়েছেন। এবার আমার খুবই বিরক্ত এবং একই সাথে খুব ভয়ও করছে। আমি নিজেকে আর ধরে না রাখতে পেরে বাইরে বের হতে চাইলাম, উনার পায়ের সাথে একটুখানি স্পর্শ হওয়ার সাথে সাথেই লোকটি ধপাস করে নিচে পরে গেল। আমি প্রথমে কিছুই বুঝতে পারলাম না কি হল। ভদ্রলোক সিট থেকে পরে গিয়ে নিচেই শুয়ে রইলেন, বিন্দুমাত্র নড়লেনও না। আমি কয়েক সেকেন্ডের জন্যে হতভম্ব হয়ে রইলাম।
বাস থামানো হয়েছে, বাসের সব যাত্রীরা এক জায়গায় জড়ো হয়ে দেখতে চাইছে কি হয়েছে এখানে। সৌভাগ্যক্রমে এই বাসে একজন ডাক্তার ছিলেন। তিনি লোকটির স্পন্দন পরীক্ষা করে বললেন, লোকটি আর বেঁচে নেই। কয়েক মুহুর্তের জন্যে যেন আমার চারপাশটা অবশ হয়ে গেল। আমি কারো কোন কথা শুনতে পাচ্ছিলাম না, পুরো পৃথিবীসহ ঘুরছি আমি। নিজেকে সামলে কোনোভাবে বসে পরলাম। আমি কোনকিছুই মেলাতে পারছিনা কি হচ্ছে।
ধাক্কা সামলে নেয়ার আগেই আরেকটি ধাক্কা আসল। আমার অন্যপাশের সিটে বসা লোকটির দাবী বাসে সারাক্ষণ এই মৃত ভদ্রলোকটির সাথে আমি কথা বলছি, নিশ্চয়ই আমিই কিছু করেছি তাকে। ভদ্রলোকের দাবী অযৌক্তিক নয়, তবে আমার মনে পড়ে না আমি ভদ্রলোককে কিছু খাইয়েছি কিনা বা কোন রূমাল দিয়েছিলাম কিনা। বাসের সবাই আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। আমি বোবা হয়ে পড়ে রইলাম সিটের এক কোণাতে। সম্ভবত জীবনে এই প্রথম এতটা ভয় পাচ্ছি আমি। বুঝতে পারছি অনেক কঠিন কিছুর মধ্যে জড়াতে যাচ্ছি। চোখ বন্ধ করে উপরওয়ালার কাছে সাহায্য চাইলাম। আমি সারাজীবন দুটি স্থান সবসময় এড়িয়ে চলেছি। একটি হল বিয়ে বাড়ি আর অন্যটি মৃত বাড়ি। আমি হাতে গোনা কয়েকটি জানাযার নামাজ পড়েছি এই জীবনে। আর আজ আমার পাশে বসেই একটি লোক মারা গেল। লোকটি মারা গেল আমার দিকে তাকিয়েই! আমি কোন কিছুর হিসেব মেলাতে পারছিনা। এরই মাঝে মানুষজন এসে আমাকে জেরা করা শুরু করল। আমি এতটাই ভয় পেয়েছি যে মুখ থেকে চাইলেও কোন কথা বের করতে পারছিনা। গলাটা আটকে যাচ্ছে বারবার।
অনেক লম্বা সময় পর বাসের বাকি লোকজন আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা বন্ধ করলেন। সম্ভবত উপরওয়ালার কাছে থেকে সাহায্যবার্তা ছিল এটাই। একজন লোক বলেছেন তিনি ভদ্রলোককে দেখেছেন কারো সাথে ফোনে উচ্চবাক্যে কথা বলতে। উনি কথা বলার মাঝে অনেক উত্তেজিত ছিলেন। লোকটির এই কথা শুনে ডাক্তার বললেন উনি হার্ট এটাক করে মারা গেছেন। ডাক্তারের কথায় যেন দুঃখ পেলেন অনেকেই। কারন এই জনগণের মধ্যে কেউ কেউ চাইছিলেন আমায় বেধে পিটিয়ে সত্যটা বের করতে, তাদের মনবাসনা পূর্ণ হলনা সম্ভবত। এক কথায় সবাই সবার স্থানে চলে গেল। প্রায় ৪৫মিনিট পর এম্বুলেন্স আসলে ভদ্রলোকটির লাশটি ঢাকা ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়। ভদ্রলোকের স্মার্টফোন আনলোক করা সম্ভব না হওয়ায় তার পরিবারের কারো সাথেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বাসের বাকিটুকু যাত্রা অসম্ভব পরিমাণ বুকচাপা যন্ত্রণায় সম্পন্ন হল। যে মানুষগুলো আমাকে পেটাতে চাইছিল তারাই এসে আমাকে শান্তনা দিয়ে গেল। কেউ আসল কাহিনী জানতে আরো কত কি। কিন্তু এই যাত্রাপথে যতবারই আমি আমার পাশের ফাঁকা সিটের দিকে তাকাই, বুকের ভেতরটা কেমন যেন কামড় দিয়ে ওঠে। যেখানে আছে প্রচণ্ড ভয় আর অবিশ্বাসের ছিটেফোঁটা।বাসে বমি করার অভ্যাস থাকলেও এবার যাত্রাপথে কোন বমি করলাম না। কোন বড়িও খাইনি বমিকে সামলাতে। বাস থেকে নামার সাথে সাথেই বমি করলাম। আমার পুরো শরীরে যা ছিল সবটুকু ছেড়ে দিয়েছি। বমি করার সময় এত দীর্ঘ সময় দেখে ভেবেছিলাম এই বুঝি শ্বাস বন্ধ হয়ে আমিও মারা যাব। মানুষের জীবনটা ব্যাস এতটুকুই! আমি জানি কোন নিশ্চয়তা নেই মানুষের জীবনের, তাই বলে এভাবে! আমি কোনভাবেই মনকে শান্ত করতে পারছি না।
রাজশাহীর আকাশে কালো মেঘ। প্রচণ্ড গর্জন করছে। বৃষ্টি নেই এখন, তবে হয়েছিল বেশ কিছুক্ষন আগে। রাস্তা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে। শুভ্র এসে আমায় কোনোভাবে টেনে একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল। রাজশাহীর বিখ্যাত কালাই রুটি আর হাসের মাংস নিল আমার খাবারের জন্যে। আমার মুখে এক গ্লাস পানি ব্যাতীত আর এক বিন্দুও খাবার প্রবেশ করেনি। কোন এক অজানা কিংবা জানা কারনে আটকে যাচ্ছি আমি।
ইন্টারভিউ রুমে প্রবেশ করার জন্যে আমাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল দুঘন্টা। টানা একশত ছিচল্লিশ জনের পর
ডাক পেয়েছি আমি। প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার কারনে পাচটি টিম সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। ওয়েটিং রুমে বেশ কিছু মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে যারা বেশ কোয়ালিফাইড ব্যাক্তি। তাদের জন্যে বরং এই চাকরীটা খুবই নগণ্য। একজন লোককে দেখলাম যার বয়স আনুমানিক পঞ্চাশোর্ধ হবে। ভেবেছিলাম উনার সন্তান এসেছেন সাক্ষাৎকারের জন্যে, পরবর্তীতে দেখলাম উনি নিজেই সাক্ষাৎকার দিতে গেলেন। ওয়েটিং রুম এক ধরনের সার্কার রুমে পরিণত হয়েছে। এখানে আসা ব্যক্তিদের তুলনায় আমার যোগ্যতা নিতান্তই গন্যহীন। আমি ভেবে পাচ্ছিনা বাংলাদেশে চাকরীর বাজারের এতই করুন দশা যে একটা চাকরীর ইন্টারভিউতে এমন একটি মেলা বসবে আর হরেক ধরনের পন্য কিংবা বেকারদের ডিসপ্লে করা হবে!
যথারীতি একইসাথে খুব অসাধারণ এবং জগন্য ইন্টারভিউ দিয়ে বের হলাম। গলা থেকে টাইটা হালকা করে নিচে দাঁড়ালাম। দেখলাম একটা মেয়ে কাঁদছে। অনেক ভালভাবেই কাঁদছে। মেয়েটির মা বা বোন কেউ হবে যিনি মেয়েটিকে শান্তনা দিচ্ছেন। ঘটনা বুঝার জন্যে কাছে গেলাম। বুঝতে পারলাম যে মেয়েটির ইন্টারিভিউ খারাপ হয়েছে, তাকে শান্তনা দেয়া হচ্ছে। এক মুহুর্তের জন্যে ভাবলাম আমি কি মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বের হলাম মাত্র! উত্তরের আশা করলাম না। ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে রাজশাহীর আকাশে। আকাশটা চমকাচ্ছে একটু পরপর। এই বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসবে জানি, এরপরেও ভিজতে ইচ্ছে করছে। শুভ্র বলছিল ঝড় হবে আজ। পদ্মার পাড়টাও খুব কাছে। মনটা ভীষণ ভারাক্রান্ত। কেন যেন মনে হচ্ছে মনের মধ্যে একটা অনেক বড় পাথর আটকে আছে। পদ্মার পাড়ে আসতে আসতে মুশল ধরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। বাতাশের বেগে দোকান-বাড়ির টিনগুলো উড়ে যেতে চাইছে। গাছেরা যেন একদিকে হেলে চলছে লম্বা সময় ধরে। পদ্মার স্রোত বারবার ধাক্কা খাচ্ছে তীরে। যতদূর চোখ যায় তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করি। কার যেন মরা লাশ ভেসে আসে চোখের সামনে। যে লাশটা আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাসছে।