_নিশা_যামিনী_অমানিশা” নামে ফেসবুকে একটি আইডি ক্রিয়েট করেছে নিশা সান্যাল । নিজের পরিচয় গোপন করার কোনও উদ্যেশ্য তার ছিল ন কিন্তু যে প্রিয় মানুষটাকে দেখার জন্য তার এই সোস্যাল যোগাযোগ মাধ্যমে পদার্পন সেই ব্যাক্তি কিন্তু তার আসল নাম ও ছবি দেখলে সম্পুর্ণ ব্লক করে চলে যেতে পারে। একটা ভয় ছিল মনে কারণ নিশা যে তাকে খুব কাছথেকে চেনে। মুঠোফোনে নিজের মনে প্রিয় সে মানবের সান্নিধ্য তাকে আজ বেঁচে থাকার পথ দেখায়। কিন্তু অপর প্রান্তে সেই মহান মানব কিছুই জানতে পারেনা তার একদা প্রেয়সী আজ কেমন আছে।
দিন মাস বছর চলে যায়.. সারাদিন কাজের ফাঁকে চুপচাপ তার ছবি দেখা অথবা পুরানো স্মৃতির পাতা দু ফোঁটা অশ্রু রেখায় সিক্ত করে আবার এই মাটির পৃথিবীতে ফেরা।এই গতানুগতিক জীবনে নিশা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে আজকাল। কেন কে জানে হঠাৎ তার কি খেয়াল হোল.. পাঠিয়ে দিল ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট.. ব্যাস, নিজেকে যেন সে আর বেঁধে রাখতে পারলো না॥
অপেক্ষা অপেক্ষা আর অপেক্ষা… যদি তার মনের বরফ গলে। মনে মনে হাজার দ্বিধা , যদি তাকে চিরতরে ব্লক করে দেয়। তারপর ভাবে.. দিক্ না, পরিচয় তো গোপনই থাকবে। আবার কোনও ছদ্ম নামে চলে আসবো… চোখে দেখতে পাবো তার ছবি। টুং করে ম্যাসেন্জারের শব্দে তাকালো নিশা।
কে আপনি?…
আশ্চর্যজনক ব্যাপার..ফেক আইডি জেনেও সে রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করেছে!!
.. আপনার বন্ধু ..
..সে তো জানি..কিন্তু আপনার আসল পরিচয় কি?
..বল্লাম তো , বন্ধু ।
..এটা যথেষ্ট নয় আমার কাছে। পরিস্কারভাবে বলুন।…
…আমি আমার ব্যাক্তিগত তথ্য দিতে পছন্দ করিনা।
.. অদ্ভুত তো? বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিতে পারেন কিন্তু পরিচয় গোপন করে? একিরকম হেঁয়ালি !!
..পরিচিত হওয়া কি খুব জরুরী ?আপনি অপরিচিতের বন্ধুত্বে সম্মতি দিলেন কি করে? না অ্যাড করলেই পারতেন আমাকে।
ওপারে কিছুক্ষণ চুপচাপ নিরবতা। নিশা অপেক্ষারত.. কিছু একটাতো উত্তর নিশ্চয়ই আসবে।
..আমি ঋষিরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় , পেশায় আইনজীবী। অযথা কারো বন্ধুত্ব আমি গ্রহন করিনা , বাস্তবিকই আপনার মনে হতে পারে আপনার প্রস্তাব আমি কেন গ্রহন করলাম। তার কারণ #নিশা..এই নামটা আমার জীবনে কিছু প্রভাব ফেলেছিল একদা আর তাই আমি আপনার পরিচয় পেতে চেয়েছিলাম।
এবার অন্য প্রান্তে নিরবতা। নিশা হতবাক হয়ে ভাবছে.. এত বছর পর তারই মত সে মনে রেখেছে ..অপেক্ষা করে আছে যদি কখনও যোগাযোগ করি।
.. কিছু মনে করবেন না, আমি অপরিচিতের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন পছন্দ করিনা। আমার কথায় আপনি বিরক্ত বোধ করলে মার্জনা করবেন। আমি আপনাকে ব্লক করলাম, চলি।
….শুনবে কি? ঋষিদা …আমি নিশা.. তুমি যাকে অাশা করছিলে।
… কি প্রমাণ ?
…তোমার বাঁ হাতের বাহুতে একটা কাটা দাগ আছে, ছোট হাতার টি শার্টে সেটা দেখা যায়। ঠিক তো?
.. হম… কিন্তু তোমার কোনও ছবি নেই কেন?
.. দিই না… কি হবে? .. আমাকে আর কে দেখবে।
.. আমাকে হঠাৎ এত বছর পর ..কি মনে করে ডাক দিলে?
.. কি জানি… কিছু ভেবে করিনি..কেমন যেন ইচ্ছা হোল।
.. আমার পাঠানো বিবাহের প্রস্তাব তুমি গ্রহন করনি। বরং প্রতিষ্ঠিত ইন্জিনিয়ার বিবাহ করাই শ্রেয় মনে করেছিলে। সদ্য এল এল বি পাশকরা কপর্দকহীন উকিলের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ তোমাকে হয়তো দ্বিচারিতায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। তাই তো সেই তরুণ তুর্কির খালি বুকে ভালোবাসার মিথ্যা জোয়ার এনে অকূল পাথারে তাকে ভাসিয়ে
কোনও রাজপুত্রের হাত ধরতে পেরেছিলে।
..না না … ভুল বুঝেছো…আমার সিদ্ধান্ত ছিলনা তা..
.. কি বলতে চাও? আমার পাঠানো বিবাহের প্রস্তাব যায় নি তোমার মা বাবার কাছে?
.. হ্যাঁ , এসেছিল তো। কিন্তু আমার মায়ের মন ভরেনি। সে চায়নি আমার পছন্দের মর্যাদা থাকুক । বরং তার পছন্দের পাত্রকেই আমায় মেনে নিতে হয়েছিল।
… যেভাবেই হোক .. এটা তোমার সিদ্ধান্ত বলেই আমাকে ধরে নিতে হবে নিশা। তুমি ও তো তখন কোনও ভাবে আমার সাথে যোগাযোগ রাখোনি, একবারও খবর দাওনি কোথায় হারিয়ে গেলে।
… আমার মা বাবা ..আত্মীয়দের সহযোগিতায় আমাকে নিয়ে সোজা বেনারস চলে যায় আর সেখানেই আমার বিবাহ সম্পন্ন হয়।
… তুমি হঠাৎ না বলে হারিয়ে গেলে.. ভেবে দেখলেনা আমার মনের অবস্থা কি হতে পারে। এই কি আমাদের বন্ধুত্ব ? যেখানে একের অন্যের প্রতি কোনও দায় দায়িত্ব আস্থা কিছুই নেই শুধু কিছু বয়ঃসন্ধির চপলতা আর সবার অন্তরালে নিভৃত আলাপচারিতা কিংবা হাতধরে কিছু পথ চলা। …তারপর… হুস করে উধাও … সবই তো বুঝলাম, তাহলে এত বছর পর নিশা কেন যামিনী অমানিশা হয়ে প্রতি মুহুর্তে আমার ফেসবুক প্রোফাইল সার্চ করে? তার কিসের অভাব?
আবার নিশ্চুপ নিরবতা…. কি জবাব দেবে নিশা .. গুছিয়ে উঠতে পারছে না। চাপা কোনও এক বেদনায় চোখে নেমে আসছে অশ্রু নদী ।
…. আমি ভালো নেই ঋষিদা, আমার আজকের জীবনে আমার স্বামী নামক মানুষটি খুব একটা সময় দেন না আমার প্রতি.. একমাত্র পুত্র বিদেশে পড়াশোনা করছে… আমার দিন রাত কিভাবে কাটে সে শুধু আমি জানি আর জানে আমার এই নির্জন বারান্দা। তোমার ছবি দেখি.. মনের কোনায় কি যেন শান্তি খুঁজে পাই। তোমার মিষ্টি দুটি কন্যা তাদের কোমল একটি মা। ভাগ্যিস তুমি ছবিগুলো সব পাবলিক করে পোস্ট কর। তাই তো দেখতে পাই। কি যে ভালো লাগে। যাক তুমি যে সুখে আছো সেটুকু দেখতে পেয়েই আমি খুব খুশী ।
..বেশ… যদি মনে কর আমি সুখি তবে তাই। আমার সুখ শান্তি র থেকেও বেশী গুরুত্বপূর্ণ এখন আমার মেয়েদের দায়িত্ব। তাই পালন করছি।
…আমরা কি আগের মত বন্ধু হতে পারিনা ঋষিদা?
…. অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে মেঘ যখন বৃষ্টি হয়ে যায়… আবার মেঘ হতে তার আর একটি জন্ম লাগে। আজ আমারা আর আগের অবস্থানে নেই। তাই এই ধরনের কথা বলে আমাকে অযথা বিরক্ত না করলে খুশী হবো। তোমাকে আনফ্রেন্ড করলাম না। আর তোমার বর্তমান রূপ ও আমি দেখতে চাইনা। যেখানে যেভাবেই থাকো .. ভালো থাকো।
চলি
..একটু দাঁড়াও ঋষিদা… প্লিজ্
….বলো..
… এতদিন পর কথা , কেমন আছি সেটাও জানতে চাইলে না।
.. কি হবে আমার জেনে?
… এতই বড় দোষ করেছি আমি? একটা অবিবাহিত সাধারণ ঘরের মেয়ের কি খুব বেশি কিছু করতে পারে তার মা বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে?
… আচ্ছা ধরেনিলাম এক্ষেত্রে তোমার কোনো কিছু করার ছিলনা। নিজের মনের সাথে লড়াই করে তুমি আর একজনকে স্বামী হিসাবে মেনে নিয়েছো। তাই তো?
… হম্ ঠিক তাই।
.. তারপর…
..কিসের তারপর?
..এই যে তুমি আমাকে আবার ফিরে পাবার ইচ্ছা পোষণ করছো… সেটা কি আদৌ সম্ভব ?
… আমি সর্বক্ষণ একা , আমার স্বামী অধিকাংশ সময় দেশের বাইরে থাকেন তাই আমার কোনও সমস্যা নেই গো। বিশ্বাস করো এই সোস্যাল নেটওয়ার্কিং জগতে হয়তো কথা বলার জন্য অনেক বন্ধু পাবো কিন্তু তাদের থেকেও তোমাকে ফিরে পেলে আমি দুনিয়ায় অার কিছুই চাইনা।
…বেশ খুব ভালো। কিন্তু নিশা… আমার যে অনেক সমস্যা আছে।
আজ আমার তিন্নি তিতির আমার দুটো চন্দ্র সূর্য । তাদের মা সুচেতনা আমার সহধর্মিনী বন্ধু আমার জীবনের একটা খুঁটি। তাদের চোখে ফাঁকি দিয়ে আমি তোমার প্রতি নিজেকে মেলে ধরতে পারবোনা নিশা। আজ আমার জীবন সম্পূর্ণ আলাদা খাতে বয়ে গেছে। তুমি আমার অতীত তা আমি মানছি কিন্তু অতীতকে যায়গা দিতে গিয়ে বর্তমান কে প্রতারণা করার মত অন্যায় আমি করতে পারবোনা । কারা আজকের দিনে কি কি করছে সে আমার দেখার বিশয় নয় আর আমার চরিত্র সম্বন্ধে তুমি ভালো মতই জানো আশা করি,কাজেই অনেক পুরুষ মানুষের সাথে আমাকে এক আসনে রেখো না।আমাকে দয়া করে মার্জনা করে দিও। তোমার থেকে এটুকু সহযোগিতা আমি আশা করছি।
বিদায় বন্ধু ॥
… ঋষিদা…
…. ম্যাসেন্জারে একটা ম্যাসেজ ফুটে উঠলো,বাংলায় যার অর্থ… আপনি আর এই ইউজারের সাথে কথা বলতে পারবেন না।