একরাশ গ্লানি আর কষ্ট

একরাশ গ্লানি আর কষ্ট

আমার বয়স তখন সাতাশ। যে সময়ের কথা বলছি সে সময়ে সাতাশ বছরের মেয়েদের জন্য অবিবাহিত থাকাটা বেশ গর্হিত কাজ ছিল। তার উপরে যদি সেই মেয়ের বাবা না থাকে, তাহলে তো আর কথাই নেই। আমার বাবা মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। বাবা মারা যাওয়ার আগেই সংসারের হাল ধরে ছিলেন বড় ভাই। বাবা রিটায়ার করে গ্রামে চলে গেছেন মা কে নিয়ে। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। বড় ভাই চাকরি করছেন আর আমরা বাকি তিন ভাই বোন তখন কেউ কলেজ ডিঙ্গিয়েছি, কেউ বা স্কুল। পড়ালেখার জন্য আমরা শহরেই থেকে গেলাম। আমাদের চার ভাই বোনের ছোট্ট সংসার। ছোট ভাইয়া ইউনিভার্সিটিতে। আমিও প্রথম বর্ষে।

ছোট বোনটা কলেজে। ছোট ভাইটা বেজায় ফাঁকিবাজ। বাজার আর সংসারের সব কাজ তাই বড় ভাই আর আমি মিলেই করি। বড় ভাইকে বাজারের লিস্ট করে দেওয়া থেকে শুরু করে রান্না, বান্না এমনকি ছোট বোনের পড়ালেখা দেখা শোনাও আমি করি। কেমন করে যেন ধীরে ধীরে আমি বেশ পাকা গিন্নি হয়ে উঠলাম। মা গ্রাম ছেড়ে এসে থাকতে চান না আর। মাঝে মাঝে ডাক্তার দেখাতে আসেন, আবার চলে যান। ঢাকায় নাকি তার দম বন্ধ লাগে। গ্রামেও কিছু জমি জমা আছে, ফসল তোলা আরও নানান কাজ। আর্থিকভাবে সেগুলোর উপরেও আমরা কিছুটা নির্ভরশীল। আমার গিন্নিপনা দেখে মা প্রতিবার অবাক হন। ‘তুই আবার ছোট মাছের চচ্চড়ি করতে কবে শিখলি?

”সাজনা ডালটা তো বেশ ভাল হয়েছে।’ মায়ের মুখে এসব শুনলে লজ্জা লাগে আমার। তখনো ঠিক নিজেকে কারও বোঝা মনে হত না। বড় ভাইকে অনেকটা বাবার মতই লাগত। উনি কোনদিন বাবার অভাব বুঝতে দেন নাই। বরং বাবার সংসারেই বিধি নিষেধ, টানাটানি একটু বেশি ছিল। মফস্বলে পান থেকে চুন খসলেই সমস্যা। ঢাকায় ভাইয়ের সংসারে বরং হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। ভাইয়ের কাছে অনেক আবদার করা যায়। যদিও আমার চেয়ে ছোট বোন সাথির আবদার অনেক বেশি। আর আবদার করে ছোট ভাইয়া। আজ পিকনিকে যাবে, কাল সার্ট কিনবে। বড় ভাই কখনো না করেন না। তবে আমি জানি কখন ওনার হাত খালি। তাই হাত খরচের পয়সা বাঁচিয়ে কিছু টাকা আমিও জমিয়ে রাখি। ভাইকে দুশ্চিন্তা নিয়ে ঘুরতে দেখলে সেই টাকা ম্যাজিশিয়ানের মত এনে দেই আর উনি যে ভীষণ অবাক হন আর খুশিও, সেটা দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ‘তুই যে ঘরে যাবি, সেই ঘরে সুখের অভাব হবে না কোন।’ ভাইয়াও আমাদেরকে অবাক করে মাঝে মাঝেই। বেতন পেয়ে কোন মাসে সুতির শাড়ি, কখনো কানের দুল কিনে এনে দেন।

এভাবে বেশ কিছু বছর গড়িয়ে গেল আমাদের হেসে খেলে নিশ্চিন্তে। ইতিমধ্যে, মা ভাইয়ার পেছনে লেগেছে বিয়ে করার জন্য। ভাইয়ার নাকি বয়স বেড়ে যাচ্ছে। ভাইয়া গাঁই গুই করে। ‘বীথিকে আগে বিয়ে দিয়ে নেই।’ মা রাজি হয় না ‘ওর পড়ালেখা শেষ হওয়ার আগে বিয়ে দেব না।’ আমরা মহা উৎসাহে মেয়ে দেখা শুরু করি। কিছুদিনের মধ্যেই টের পাই এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। আমার ভাইয়ের সুন্দরের দিকে ভীষণ ঝোঁক। সুন্দর মেয়ে ছাড়া সে বিয়ে করবে না। নিজে কালো, সেই জন্য নাকি ফর্সা মেয়ে হতে হবে। চেহারাও মিষ্টি হতে হবে। অসংখ্য ‘এই হতে হবে, সেই হতে হবে’ মিলাতে গিয়ে আসলেই বেশ কয়েক বছর লেগে গেল মন মত পাত্রী পেতে। আমরা তো প্রায় হালই ছেড়ে দিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত ভালো মতই বিয়েটা হয়ে গেল। বিয়ের আগে আমার বান্ধবী নীরার মা ভয় দেখিয়েছিল ‘ভাইয়ের বউ আসলে সংসারে টিকতে পারবে না। তোমাদের দুই বোনের এখন হোস্টেল দেখা দরকার। মা হোস্টেলের খরচ দিতে পারবে তো ? ‘ আমি আবছা হাসি। আমার বিশ্বাস হয় না, আবার মনটাও কেন জানি খারাপ হয়।
ভাবি আমার অল্প বড়। বড়লোকের আহ্লাদী মেয়ে।

কাজ কর্ম পারে না একদমই। তবে মনটা খারাপ না মনে হল। সংসারের দায় দায়িত্ব সেই আমার কাঁধেই রয়ে গেল। ভাইয়া সকালে অফিসে যায়। ভাবি ঘুম থেকে উঠে এগারটায়। আমি ততক্ষণে ভাইয়াকে নাস্তা দিয়ে, দুপুরের রান্না শেষে হয়তো ক্লাসে। নীরার মা খালাম্মা যে ভয়টা দেখিয়েছিলেন সেটা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছিল। ভাবি আলগা ভাবে থাকে, মনে হয় না আমাদেরকে সে সংসারে অবাঞ্ছিত ভাবে।

কিন্তু সমস্যা বাধল অন্য জায়গায়। এতোটুকু বাসা, বেডরুম ছিলই দুইটা। একটা ওদেরকে ছেড়ে দেওয়ার পর বোনদের জায়গা হল ছোট বেডরুমটায় আর ছোট ভাইয়ের জায়গা হল বসার ঘরে। প্রপার ড্রয়িংরুম নেই, ভাবির বড় লোক আত্মীয় স্বজন বা বন্ধু বান্ধব আসলে লজ্জায় পড়ে যায়। ভাবির খরচের হাতও সাঙ্ঘাতিক। দামি রেস্টুরেন্টে খাওয়া, ঘুরতে যাওয়া এসব করতে গিয়ে ভাইয়া ফতুর। ভাবি ভাইয়ার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট, ও কিছু বলতেও পারে না। আমি শুধু বুঝতে পারি ভাইয়ার কষ্ট আর দুশ্চিন্তা। একদিন আমাকে আর ছোট ভাইয়াকে ডেকে বলল ‘আমি বিদেশে একটা ভাল সুযোগ পেয়েছি, অনেক টাকা বেতন। যাওয়ার কথা ভাবছি। কিন্তু তোদেরকে রেখে কিভাবে যাই বুঝতে পারছি না। ‘

ভাইয়াকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল।
আমার তখন ফাইনাল শেষ, ফলাফলের অপেক্ষা করছি। আমি ওকে সাহস দিলাম ‘তোমরা যাও ভাইয়া। তোমাদের একটা ভবিষ্যৎ আছে না। তুমি তো অনেক দিন করলে। আমি চাকরির চেষ্টা করছি কিছু একটা হয়ে যাবে। আর ছোট ভাই তো আছেই।’

বড় ভাই যে ছোট ভাইয়ের উপরে খুব একটা ভরসা পায় না সেটা আমরা সবাই জানি।
মুখে খালি বলল ‘হু, টাকা পয়সা নিয়ে ভাবিস না, যা লাগে আমি পাঠাবো। বীথি একটু চা দে তো । ‘
আমি উঠে যেতে যেতে শুনলাম বড় ভাই ছোট ভাইকে বলছে ‘বীথির বিয়ের জন্য চেষ্টা করছি, দেখি আমার যাওয়ার তো এখনো মাস চারেক আছে। কিছু করতে পারি কিনা। ‘

আমি পরদার আড়ালে দাঁড়িয়ে গেলাম। ছোট ভাই বলল ‘লিসাদের বাসা থেকেও বিয়ের জন্য খুব চাপ দিচ্ছে।’
‘বীথির বিয়েটা হয়ে যাক, তাছাড়া তোমার একটা চাকরি ও তো লাগবে। লিসার বাবা তো বলে দিয়েছেন, বেকার ছেলের কাছে বিয়ে দেবে না।’

মা ঢাকায় চলে আসল। আমাকে একের পর এক পাত্র পক্ষ দেখে যাচ্ছে। হাল্কা গোলাপি থেকে আকাশী নীল, সালওয়ার কামিজ থেকে শাড়ি, বাসা থেকে রেস্টুরেন্টের আলো আধারি কোন পরিবর্তনেই কোন লাভ হল না। কালো মেয়েকে বিয়ের জন্য কেউ পছন্দ করল না। হ্যাঁ, এই কারণেই আমার বয়স সাতাশ হল। আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী কেউ চেষ্টা করতে বাদ দেয় নি। কথা শুনাতেও। ‘এতো গুনের মেয়ে, এই জন্যই লোকে বলে অতি বড় ঘরণী না পায় ঘর।’ কেউ বলল ‘বয়স অনেক বেড়ে গেছে, এত পড়ালেখা শিখিয়ে কি হল?’

আমি বসে বসে খালি ভাবি, ‘আসলেই তো, এই জীবনে কেউ সিরিয়াসলি প্রেমেও পড়ল না। ছোট ভাইয়ার বন্ধুরা আসত। বাসায় ওদের অগাধ যাওয়া আসা। আমার ইউনিভার্সিটির বন্ধুরাও। কত জন কত সময় কত ইঙ্গিত করেছে আভাসে। ‘ডাগর কাল’ চোখ নিয়ে তো বিজু ভাই কবিতাও লিখে ফেলল। শাহেদ কত চেষ্টা করেছে একলা পেতে, ঘুরতে। কিন্তু নাহ, সেরকম সিরিয়াস কেউ হয় নাই। আয়নায় নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখি। গড়নটা তো বেশ, চোখ দুটো ও। আমি সাঁজতেও পারি দারুণ। তবে সত্যি বলতে কি কালো রঙ ছাড়াও চেহারাটাও আমার বিশেষ কিছু না। বোঁচা নাক, এই বড় কপাল। আমার সাথে ভাব জমাতে গিয়ে বরং সাথির প্রেমে পড়ে গেল সোহেল। সাথির আর দুই বছর বাকি ইউনিভার্সিটি শেষ হতে আর সোহেল তো ইতিমধ্যেই মামার ব্যবসায় ঢুকে পড়েছে। আজ আমার বিয়ে হলে, কাল ওদের বিয়ে হবে।

এর মধ্যে আরও দুটো কাণ্ড ঘটে গেল। এক, আমি একটা স্কুলে চাকরি পেয়ে গেলাম। আর দুই, ছোট ভাইয়াও একটা চাকরি পেয়ে গেল। চাকরি পেয়ে লিসাকে আংটি পড়িয়ে বিয়ের ডেটও ঠিক করে আসল। কেমন করে যেন মাকে রাজি করিয়েছিল, বড় ভাইকে জানায় নি। মা এমনিতেই ওর প্রতি একটু দুর্বল। বড় ভাইয়ের বিদেশ যাওয়ার আর এক মাস বাকি। ছোট ভাইয়ের বিয়ের বাকি তিন সপ্তাহ। লিসাকে আমার কখনোই খুব একটা সুবিধার লাগে না। ও যে এসেই আমাদেরকে বাসা থেকে তাড়াবে কোন সন্দেহ নেই।

আমাদের তিন জনের ঘুম নেই, আমি , মা আর বড় ভাই। সাথিও মনে হয় খুব চিন্তিত। একদিন ওর বান্ধবী তুলিকে বলতে শুনেছি ‘আমি হোস্টেলে যেতে পারব না। আপুর বিয়ে না হলে আমাকে বিয়ে দেবে না বাসার কেউ। তেমন দেখলে আমি আর সোহেল কাজী অফিসে বিয়ে করব। ও বলেছে মেস থেকে এসে একটা বাসা ভাড়া করব। আপু মনে হয় না রাজি হবে, না হলে ওকেও নিয়ে নিতাম সঙ্গে। ‘

আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে। সোহেলকে নিয়ে একসময় যে আমিও একটু স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেগুলো অবশ্য এখন সুদূর স্মৃতি। এখন আমার নিজেকে আসলেই সবার বোঝা মনে হয়। মা, বড় ভাইয়ের বোঝা। এমনকি আমার জন্য ছোটভাই, লিসা, সাথি, সোহেল ওরা কেউ জীবন শুরু করতে পারছে না, এতোগুলো মানুষ।

আজ বিকেলে যে ছেলেটা আমাকে দেখে গেছে, তাকে আমার খারাপ লাগে নি। যদিও আমি মাস্টার্স পাস ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে আর এই ছেলে কলেজ থেকে বিএ পাস করেছে। নিজে ব্যবসার চেষ্টা করছে। রবীন্দ্র সঙ্গীত পছন্দ করে, বই পড়ে। ভদ্র মনে হল। কালো মেয়ে বিয়ে করতে ছেলের বা পরিবারের আপত্তি নাই। তবে একটা কিন্তু আছে। ব্যবসার পুঁজি বাবদ লাখ দুয়েক টাকা চায় ওর মা, বাবা। আর কোন চাওয়া, পাওয়া নাই। আমাকে আগে এই কথাটা জানানো হয় নাই। তাহলে হয়তো আমি যেতামই না।

পাশের ঘরে মা আর বড় ভাই কথা বলছে, ভাবিও আছে। আমি গিয়ে দরজায় দাঁড়ালাম। মনের সব শক্তি জড় করে ক্ষীণ কণ্ঠে বললাম, ‘এই বিয়ে আমি করব না। আমি তো চাকরি পেয়েছি। একটা হোস্টেলে উঠে যাই। আর সাথিকে তোমরা বিয়ে দিয়ে দাও। ‘

আমার কথা শুনে মা আর বড় ভাই তাকাল, দুজনের চোখেই গভীর কষ্ট। মা কিছু একটা বলতে গেল, বড় ভাই থামিয়ে দিল। ‘আরেকটু ভেবে দেখি, তুমিও ভাব। তোমার মতের বিরুদ্ধে কিছু হবে না।’ লক্ষ্য করলাম বড় ভাই আমাকে তুমি বলছে।

সেই রাতে মা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন, হাসপাতালে নিতে হল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি আমরা ভাই বোনেরা। সেই অল্প আলোতে আমাকে একা ডেকে বড় ভাই বলল ‘তোর কাছে সারা জীবন আমি কিছু চাই নাই। আমি জানি তুই কতখানি ম্যাচিউর। তোকে আর সাথিকে বিয়ে না দিয়ে আমি যেতে পারব না। আর এই বেতনে আমি চলতে পারছি না কিছুতেই। মায়ের কথা আর আমার কথা ভেবে তুই রাজি হয়ে যা, ছেলেটা সব দিক দিয়ে ভাল। তোর সাথে রুচিও মিলবে খুব। বাবা, মাকে না করতে পারছে না এই একটা ব্যাপারে। আর টাকাটা ওর বাবা, মা নিচ্ছে না, তোদের সংসারেই লাগবে। তোকে আর সাথিকে এক সাথে বিয়ে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত যেতে পারি।’
আমি ওনাকে না করতে পারলাম না।

আমাদের দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেল একসাথে পরের সপ্তাহেই। সেটা আজ থেকে ত্রিশ বছর আগের কথা। আমার স্বামী বাদল বা তার পরিবার আমাকে কখনো অসম্মান করে নাই। বা, অন্য দশজনের মত তারা আর পরে কখনো যৌতুকের জন্য কোন বায়না করে নাই, চাপ দেয় নাই। তারা তাদের কথা রেখেছে। বাদল বিয়েতে পাওয়া দুই লাখ টাকা আর কিছু টাকা দিয়ে একটা ফার্মেসি খুলেছে। ধীরে ধীরে ওর ব্যাবসার অনেক উন্নতি হয়েছে। আমি যেমন স্বামী চেয়েছিলাম , ও সেরকমই। কিন্তু আমাদের মাঝে আর কখনো সেই টাকাটা নিয়ে আর কখনো কোন কথা হয় নাই।
আর কয়েকদিন পরে আমার মেয়ে আশনার বিয়ে। বাদল চেয়েছিল ওদের হানিমুনের জন্য টিকেট আর রিসোর্ট বুকিং দিতে, ওর বরকে একটা গাড়ি উপহার দিতে। আমি কড়া গলায় বলেছি ‘না, আমার মেয়ে বিক্রির জন্য নয়। আমার দাম ছিল দুই লক্ষ টাকা। কিন্তু আমার মেয়ে অমূল্য।’

আমার কথা শুনে ভীষণ অবাক হয়ে তাকিয়েছিল বাদল, ওর চোখে আমি দেখেছি একরাশ গ্লানি আর কষ্ট, যেই গ্লানি আমি বয়ে বেড়াচ্ছি গত ত্রিশ বছর ধরে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত