__”কিরে পিয়াল সৃজা খেতে এলোনা?তুই একা একা এলি যে খাবার টেবিলে?”,জয়িতাদেবী কথাগুলো জিজ্ঞাসা করেন ওনার ছেলে পিয়ালকে।” মায়ের কথার উত্তরে সামান্য ভেবে পিয়াল এবার বলে,”না মা আসলে তোমার বৌমার পেটটা দুপুরের পর থেকে ঠিক নেই।পুদিনহরা দিয়ে এলাম ওকে নীচে নামার আগে।”
__”কই সৃজা তো আমাকে কিছু বললো না খানিকক্ষণ আগেও তো দোতলায় গেছিলাম আমি”,জয়িতাদেবীর কণ্ঠ থেকে একরাশ উৎকণ্ঠা ঝরে পড়ে।হাঁটুতে ব্যাথা সত্ত্বেও ঝটপট হাজির হন বৌমা সৃজার ঘরে।মৃদু কন্ঠে ওর কপালে হাত রেখে বলেন,”কিরে সৃজা কি অসুবিধা হচ্ছে তোর?পেটের গোলমাল আমাকে বলবি তো একবার।বিটনুন দিয়ে লেবুর জল করে দিতাম।একনিমেষে কমে যেত দেখতে পেতিস।”
__”না থাক আমার কিছু লাগবেনা।অত তেলমসলা যুক্ত খাবার খেলে পেটের গোলমাল হতে বাধ্য।আসলে আমার বাপের বাড়িতে সবাই খুব স্বাস্থ্য সচেতন।বেশির ভাগ রান্না ইটালিয়ান অলিভ অয়েল দিয়ে হয়।তোমাদের এসব সো কল্ড বাঙালি তেলমসলা যুক্ত খাবার খেলেই আমার অস্বস্তি বাড়ে”, সৃজা বেশ রাগত স্বরে বলে কথাগুলো ওর শাশুড়ির উদ্দেশ্যে।
সৃজার কথার ধরনে একটু খারাপ লাগলেও নিজেকে সামলে নিয়ে জয়িতাদেবী এবার বলেন,”কি করবো বল মা?আজ বাংলা বছরের প্রথম দিন তোরা এলি।তোর দিদিভাই আর সোহম এলো।ওদের ওখানে তো সেইভাবে এসব কই, ট্যাংরা,চিংড়ি,ইলিশ মাছ পাওয়া যায়না।আর গেলেও দুজন মিলে চাকরি করে রাঁধার সময় কোথায়?তাই রাধলাম রে একটু মনের সুখে।তুই শুয়ে থাক আমি বিটনুন জলটা করে নিয়ে আসছি।”
__”থাক বললাম তো তার আর দরকার নেই। তোমার ছেলে পিয়াল ওষুধ দিয়ে গেছে আমাকে।তাছাড়া আগামীকাল সকালে ফিরে আমি আমাদের ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানকে দেখিয়ে নেবো।তোমরা খেয়ে নাও”;সৃজা বেশ ঝাঁঝালো সুরেই বলে এবার।অগত্যা ঘর থেকে বেরিয়ে খাবার টেবিলে আসেন জয়িতা।
মৃদু স্বরে বলেন,”পিয়াল তোকে আর কিছু দেব কি?মালাইকারিটা খাবিনা?”;মায়ের কথায় উত্তরে পিয়াল কাটা কাটা ভাবে বলে,”না মা আজকালকার ফার্স্ট লাইফ স্টাইলে এসব গুরুপাক খাবার খুব বেশি চলেনা।প্লিজ নিজেকে একটু পাল্টাও মা।দিদিভাই আজ আসবে আমি আগে থেকে জানলে একটা ভালো রেস্তোরা থেকে কন্টিনেন্টাল ডিশ ওর্ডার করে দিতাম।এখন আর বেশি খেলে কাল অফিস যেতে পারবনা।বাথরুমে কাটাতে হবে সারাদিন”;আমি উঠলাম এবার প্লেটটা সশব্দে সরিয়ে দিয়ে উঠে যায় পিয়াল।
আহত কণ্ঠে জয়িতা দেবী বলেন,”তোর দিদি তো কদিন ধরে সোহমের বাড়িতেই ছিলো সোদপুরে।আমাদের বাড়িতে আসবে গতকাল রাতে ফোন করে বললো সেটা।দিনটাও আজ পয়লা বৈশাখ তাই আমিও বাড়িতে জমিয়ে রান্না করেছিলাম তোরা দুই ভাইবোন,বৌমা,জামাই সকলের জন্য।”যাক মায়ের কথা বোধয় সেভাবে কানে তোলে না পিয়াল।হাত ধুয়ে ঝটপট উপরে উঠে যায়। আসলে জয়িতাদেবী এবং ওনার স্বামী অরূপবাবু ভেবেছিলেন ওনাদের জামাই সোহম আর মেয়ে শালু ওরফে শালিনী সেই সাথে সল্টলেক কর্পোরেট সেক্টরে কাজ করা ছেলে ওনার ছেলে পিয়াল ও ওদিন ওর রাজারহাটের ফ্ল্যাট থেকে রামরাজাতলার বাড়িতে আসছে ওর বউকে নিয়ে।আসলে শিফটিং ডিউটি থাকে পিয়ালের আর সৃজার।তাই ওখানেই ফ্ল্যাট নিয়েছে।এমনিতে বাড়িতে লোক বলতে ওনারা কর্তা গিন্নি দুজন প্রাণী।সবমিলিয়ে ছেলেমেয়ে,বৌমা আর জামাই আসার আনন্দে জয়িতা আর ওনার স্বামী অরূপবাবু ভেবেছিলেন একসাথে জমিয়ে খাওয়া দাওয়া করবেন একটা ফ্যামিলি গেট টুগেদার মত।কিন্তু সৃজার পেট গোলমাল আর সবকিছুর ছন্দপতন।রান্নাগুলো তবে কি সত্যিই খুব গুরুপাক হয়ে গেলো?কি জানি?শালুদের তো আজ রাতে দমদম থেকে মুম্বাইয়ের ফ্লাইট ধরার কথা।ওদের শরীর ঠিক আছে তো?খাবারগুলো ফ্রিজে তুলে রাখতে রাখতে ভাবেন জয়িতা।কিন্তু এই সময় তো ওরা মাঝ আকাশে ফোনেও পাওয়া যাবেনা তাই চুপচাপ বিছানায় এসে শুয়ে পড়েন।পরদিন সকালে সৃজাকে নিয়ে অফিস বেরিয়ে পড়ে পিয়াল।গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে বলে,”আজ আসি মা।” ভারী কণ্ঠে জয়িতা বলেন,”আবার কবে আসবি পিয়াল?একা থাকি তো তোরা সকলে আসলে খুব ভালো লাগে।”
__”দেখি সময় পেলে আসবো নিশ্চয় মাঝেমাঝে।” আর ফোন করে নেবো তোমাকে।”পিয়াল আর ওর বউ বেরিয়ে যায়।সেদিন সারাদিন সেভাবে কাজে মন লাগেনা জয়িতাদেবীর।গতকাল খুব ধকল গেছে সকালে দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিয়ে এসে পুরো রান্নাবান্না করেছেন নিজেহাতে।আজকাল শরীর আর দেয়না সেভাবে।বারবার চোখ চলে যায় ঘড়ির কাঁটার দিকে শালুরা পৌঁছলো কিনা সেই চিন্তায়।নেমে তো ফোন করার কথা ছিল ওদের কই করলো না তো!ফ্লাইট আবার লেট ছিল না কি ?যাক নিজেই ফোনের দিকে হাত বাড়ান জয়িতা।অপরপ্রান্তে খানিকক্ষণ বাজার পর শালুর কণ্ঠ ভেসে আসে,”হ্যাঁ মা বল।”
__”কিরে তুই পৌঁছে গেছিস ওখানে? কই ফোন করলি না?শরীর ঠিক আছে তো!”
ঝাঁজিয়ে উঠে শালিনী বলে,”উফ মা আমার শরীর ঠিক আছে।কিন্তু তোমার জামাই সোহমের পেট গড়বড় করছে।কাল ওইসব না রাধলে তোমার চলছিল না নাকি?যতসব গুরুপাক রান্না।তার থেকে আমাকে বলতে হালকা ফুলকা ডিশ ওর্ডার করে দিতাম অনলাইনে।বাড়িতে ডেলিভারি দিয়ে যেত।ভুলে যাও কেনো তোমার জামাই কত ফার্স্ট লাইফ কাটায়।আর ফার্স্ট লাইফের মধ্যে থাকতে হয় আমাদের।প্রচন্ড হেলথ কনসার্ন সোহম।আর ভাইয়ের বউ সৃজা তো হোয়াটস অ্যাপ করলো ওর ও নাকি পেট গড়বড়।নিজেকে একটু পাল্টাও মা।ইউটিউবে অনেক রেসিপি পাওয়া যায় হালকা ফুলকা রান্নার।সেসব তো দেখতে পারো একটু। কত করে বললাম একটা স্মার্ট ফোন কিনে দিয়ে আসি তা না করে ওই ল্যান্ডলাইন থেকে ডায়াল করছ।কিছু শেখার ইচ্ছা নেই তোমার।পরেরবার আমরা যাবার আগে আমি তোমাকে বলে দেব সোহমের পছন্দের কিছু রেসিপি।রাখলাম এখন পরে কথা হবে”;শালিনী ফোনটা রেখে দেয় ওনার মুখের উপরে।
সেদিন রাত্রে খাওয়াদাওয়ার পর অরূপবাবুকে প্রেসারের ওষুধটা দিয়ে খাটে এসে বসেন জয়িতাদেবী।একটু আনন্দ করতে চেয়েছিলেন সবাই মিলে বাংলা বছরের শুরুর দিনটায় তাই বাঙ্গালী রান্না করেছিলেন।কিন্তু একি হলো!শালু পিয়াল দুজন মিলে তাকে কথা শোনাচ্ছে পাল্টাতে বলছে।অথচ ওরাই ছোটবেলায় কত বায়না করতো এটা খাবো ওটা খাবো করে।আজ এতটা পাল্টে গেলো ওরা।নিজের অজান্তেই চোখের জল বাঁধ মানেনা।অরূপবাবু বলেন,”সত্যি গিন্নী তুমি আর কোনোদিন পাল্টালেনা।কিছু হলো তো ওমনি ফ্যাচফ্যাচ।বিয়ের পরদিন আমাদের বাড়ি রওনা দেবার আগে যা খেল দেখিয়েছিলে।একদিকে আকাশের বুক থেকে ঘন শ্রাবণ ধারা ঝরছে আর সেইসাথে তোমার চোখ থেকেও।বলি বয়স্ তো অনেক হল অত না কেঁদে ভেঙে না পড়ে বরং নিজেকে পাল্টে নাও সময় থাকতে থাকতে।কতদিন আমি আছি কে ভগবান জানে তারপর তো ছেলেমেয়েদের কাছে তোমাকে থাকতে গেলে ওদের মতোই হতে হবে তোমাকে”।জয়িতাদেবী একটা কথার উত্তর দেননা।অরূপবাবু ঘুমিয়ে পড়ার পর ঝুল বারান্দায় বেতের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসেন।মনে ভিড় করে আসে অনেক প্রশ্ন।
আচ্ছা পাল্টানো কাকে বলে?মেয়েদের জীবনে পাল্টানোর প্রকৃত অর্থ কি?বছর বারো তেরো বয়সে বয়সসন্ধির সময় প্রথম যে পরিবর্তনটা আসে মেয়েদের সেটা তো শারীরিকভাবে পাল্টানো।তারপর যে বাড়ির উঠোনে,দালানে লুকোচুরি চুকিতকিত খেলা,বাড়ির পেছনে আমবাগানে আম কুড়ানো,ছাদে গিয়ে ভাইবোনদের সাথে চুরি করে আচার খাওয়া,গরমের বিকেলে কালবৈশাখী উঠলে এক দৌড়ে ছাদ থেকে আমচুরের বয়াম নামিয়ে নিয়ে আসা সব এক লহমায় ছেড়ে স্বামীর হাত ধরে একটা নতুন পরিবারে এসে তাদের রুচিবোধের ধ্যান ধারনার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া সেটা পাল্টানো নয়?তার কিছুদিন পর নিজের শরীরে নতুন প্রাণের অস্তিত্ব টের পাওয়া সেটাও তো একসাথে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে পাল্টানো। আস্তে আস্তে বড় হবার পর ছেলে পিয়াল যখন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে চান্স পেল তখন বড় মেয়ে শালু ইংলিশ এ মাস্টার্স করছে।দুই ভাইবোনের পড়ার খরচ আর সংসার খরচ চালাতে তখন প্রায় নাভিশ্বাস উঠার জোগাড় তখন বিয়ের সময় বাবার দেওয়া সব গয়না গুলো বেচে দিতে ও দ্বিধা করেননি জয়িতা একজন প্রকৃত মা এবং প্রকৃত সহযোদ্ধা হয়ে।স্বামী অরূপবাবুর পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে দ্বিধা করেননি এতটুকু।আর কিভাবে পাল্টাবেন নিজেকে?ভাবতে ভাবতে পূবের আকাশে রক্তিম আভা দেখা দেয়।হটাৎ মাথায় আসে মাসখানেক আগে যখন বিকেলে হাটতে যেতেন তখন রোজ ফেরার সময় হারু মুদির দোকানের সামনে দাড়িয়ে মেয়েটার কথা।কতগুলো কুকুরকে বিস্কুট খাওয়াতো রোজ।শ্যামবর্ণ দোহারা চেহারা কিন্তু চোখের মধ্যে একটা অদ্ভুত শান আছে।একদিন কৌতুহল বশে ডেকে কথা বলেছিলেন।বুড়োবুড়িদের নিয়ে একটা সংস্থা চালায় বলেছিল।এখানে ফ্ল্যাটভাড়া নিয়ে ছিল কিছুদিন।একটা কার্ড দিয়ে হাসিমুখে বলেছিল,”মাসিমা কোনোদিন দরকার হলে আমাকে ফোন করবেন কিন্তু কোনো দ্বিধা না করে।”কি নাম বলেছিল বেশ নিজের।ঘরে গিয়ে রিংব্যাগ টার ভেতর থেকে বের করেন কার্ডটা।এইতো লেখা মিস প্রত্যুষা বসু।তলায় মোবাইল নাম্বার আর সংস্থার নাম “সম্পূর্ণা”। সেদিন কাজকর্মের শেষে ডায়াল করেন নাম্বারটা।ওদিক থেকে ভেসে আসে,”হেল্লো প্রত্যুষা বলছি।”
__”হ্যাঁ প্রত্যুষা আমি জয়িতা মাসীমা বলছি।মনে পড়ছে সেই যে রামরাজাতলা হারু মুদির দোকান।”
“হ্যাঁ কেন মনে থাকবেনা মাসিমা!কেমন আছেন আপনি?একদিন চলে আসুন আমাদের এখানে এই সম্পূর্ণাতে।” মিষ্টি হেসে প্রত্যুষা বলে ওনাকে।
__”হ্যাঁ যাবো” ঠিকানাটা নিয়ে নেন জয়িতাদেবী প্রত্যুষা র কাছ থেকে।এরপর থেকে রোজই যেতে থাকেন দুপুরবেলা সম্পূর্ণাতে।অরূপবাবু কিছু জিজ্ঞাসা করলে বলেন,”অভিসারে যাচ্ছি গো।সময়মতো সব জানতে পারবে তুমি।”বছর ঘুরে আসে।শালু ফোনে জানায় পয়লা বৈশাখে এবার একাই মা বাবার বাড়িতে আসবে ও।সোহম খুব ব্যস্ত তাই আসবেনা আর পিয়ালও জানায় ও একাই আসবে এবার বছর শুরুর দিনটাতে।ওর বৌ সৃজা একেবারেই রাজি না এই বাড়ি আসতে।এই বাড়ির রুচি খাওয়াদাওয়ার সাথে খাপ খায় না ওর রুচি।পয়লা বৈশাখের সকালে রামরাজাতলার বাড়িতে প্রায় একসময়ে এসে একসাথে বেল বাজায় শালু আর পিয়াল দুই ভাইবোন মিলে।দরজা খুলতেই অবাক হয় ওরা!এ কাকে দেখছে চোখের সামনে সালওয়ার পড়া ছোটো বব কাট চুলে।জয়িতাদেবী বলেন,”হা করে দেখছিস কি দুই ভাইবোনে মিলে?ভিতরে আয়।গ্রীন টি আর স্যান্ডউইচ রেডী আছে তোদের জন্য।খেয়ে নে দেখি ঝটপট।”
__”কিন্তু মা তুমি এবার দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিতে যাওনি?”জিজ্ঞাসা করে ওরা।
__”নারে যাইনি এবার।পরে যাবো কখনো একদিন।এবার অনেক নতুন প্ল্যান আছে।সকালে ব্রেকফাস্টের পর দুপুরের খাবার টাইমটা কনফার্ম করিস তোরা দুজনে।আমি কন্টিনেন্টাল খাবার অর্ডার করে দেবো।আর লাঞ্চের পর নজরুল তীর্থে ইভনিং শোতে মুভির টিকিট বুক করেই রেখেছি আগে থেকে।অ্যাপ ক্যাব বুক করে একসাথে যাব কিন্তু আমরা!” দুই ভাইবোনে বিস্ময়ে তাকিয়ে বলে,”কিন্তু মা তুমি এতকিছু কি করে?…”
__”কেন তোরাই তো চেয়েছিলি আমি পাল্টে যাই।তাই নিজেকে গ্রুম করলাম আর আমাকে এই ব্যাপারে গাইড করেছে প্রত্যুষা।ওদের
সংস্থায় সেসমস্ত বুড়োবুড়িদের উপযোগী করে গড়ে তোলার শিক্ষা দেওয়া হয় যাদের ছেলে মেয়েরা বাইরে সেটেল্ড।বাড়িতে মা বাবাকে টাইম দিতে পারেনা।এই ধর সময় কাটানোর জন্য সিনেমা দেখে আসা,ওষুধের দরকার হলে অনলাইনে অর্ডার করা,মাইক্রোওভেনে রান্না করা,অনলাইন কেনাকাটা,বুকিং আরো কত কি।আজ ওকেও বলেছি এখানে আসতে।”বলতে বলতে প্রত্যুষাও এসে হাজির হয় ওনাদের বাড়ি।শালিনী আর পিয়ালের চোখে তখন জল।সত্যিই কি আদতে এই পাল্টানো চেয়েছিল ওরা?ছোটবেলা থেকে যে মাকে প্রতিবছর ওরা এই বিশেষ দিনে পাটভাঙা তাতের শাড়িতে,কপালে একটা বড়ো লাল টিপ আর নারকেল তেলের গন্ধে ভরা এলোখোপায় দেখে অভ্যস্ত তাকে এই রূপে ঠিক মা বলে মেনে নিতে পারছেনা।তার থেকে বরং শিকেয় তোলা থাক বাকিদের কথা মানে সোহম আর সৃজা কি ভাববে।ওদের ইচ্ছে না হলে আসার দরকার নেই এই বাড়ি আর কখনো কিন্তু তাই বলে নিজের মাকে এইভাবে পাল্টানো দেখা সম্ভব নয় কিছুতেই।
শাল পিয়াল ছুটে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”মা তুমি যেমন ছিলে তেমনি থাক।আমরা বুঝেছি আমাদের ভুল।কিছু ঠুনকো পরিবর্তন নিয়ে পড়ে আছি আমরা।দেশ কাল সীমারেখা অতিক্রম করে পাল্টানো দরকার মানসিকতার কোনোভাবেই আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির নয়।যারা বোঝেনা তারা সত্যিই বোকা খুব বোকা।তুমি আর প্রত্যুষাদি মিলে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছো।”
__”ওরে তোদের মায়ের মত তোদের কান্না রোগে পেলো নাকি”;বাবা অরূপবাবু ঘরে ঢোকেন কথাগুলো বলতে বলতে।একটু থেমে উনি আবার বলেন,”চল সবাই মিলে অ্যাপ ক্যাব বুকিং করে নিচ্ছি একটা।এসবের চক্করে সকালের পুজোর প্যাড়াটা মিস গেলো বিকেলে আর মিস করলে চলবেনা।দুপুরে ভোজটা বাড়িতে সেরে বিকেলে দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি থেকে পুজো দিয়ে আসি।বছর শুরুর দিন সব ভুলগুলো শুধরে নিয়ে পাল্টে নিই নিজেদের।”
_”হ্যাঁ বাবা সব হবে।কিন্তু কোনো কন্টিনেন্টাল খাবার টাবার নয় মা আর আমরা মিলে যা বানাবো বাড়িতে তাই খাব।”;শালিনী আর পিয়াল বলে মা বাবাকে জড়িয়ে।মান অভিমান কাটিয়ে নতুন করে রামধনু রঙের আলো উঁকি দিয়ে যায় সকলের মনে।নববর্ষে নবহর্ষে মুখরিত হয় ওদের জীবন।।।
(সমাপ্ত)