দুই বুড়ির গল্প

দুই বুড়ির গল্প

ওই যে, আবার লাগল দুই বুড়িতে। সারাদিন খিটিমিটি লেগেই আছে। যখনই দেখ, কারণে অকারণে দুজনের তর্ক চলছে – ছোট-বড়-মেজ কোনও একটা প্রসঙ্গ পেলেই হল। কী নিয়ে তর্ক শুরু হয়েছিল তা হয়ত দুজনেই কিছুক্ষণ পরে মনে করতে পারবেন না, কিন্তু তর্ক চলতে থাকবে; হয়ত কে শুরু করেছিল বা কার আগে থেমে যাওয়া উচিত তাই নিয়ে।

খুব মজা হয় যদি কেউ ধরতাইটা মনে করানোর চেষ্টা করে। সেবার যেমন হল, কথা শুরু হল বাড়তে থাকা দুধের দাম নিয়ে। কথার থেকে আলোচনা, আলোচনা থেকে ক্রমশ তর্কে পৌঁছল কিছুক্ষণের মধ্যে কিণ্তু ততক্ষণে পুরো মোড় ঘুরে গেছে বিষয়টার – দুজনেরই দাবি তাঁদের পাড়ায় দুধ সস্তা কিন্তু একেবারে খাঁটি। দুজনেই সমানে দাবি করে গেলেন যে অন্যজন কিচ্ছুটি জানেননা।

কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল বুধোর মা, বলল, “যাই বল মা, দুধের দাম কিণ্তু খুব বেড়েছে, ভাল দুধ পাওয়াও যায়না সহজে। পালাপার্বণে বাচ্চাগুলোর জন্য একটু পায়েস বানাতে পারিনা।”

সঙ্গে সঙ্গে দুজনেই একটু থেমে গেলেন তারপর একযোগে ফুঁসে উঠলেন্‌ “তুমি থাম দিকিনি!”

তারপর একজন বললেন, “গোবিন্দভোগ চালে আজকাল আর অত সুন্দর গন্ধ হয়না।”

অন্যজনের জবাব, “বুড়ো বয়েসে গোবিন্দর নাম নিতে সময় হয়না, তার ওপর ভোগ রান্না কখন করি?”

দুজনেরই বয়েস যথেষ্ট, ছেলেপুলের চুল পেকে গেছে, নাতিপুতির বিয়ের বয়েস হয়েছে; দুজনেই কানে একটু খাটো, কথার খেই হারানো স্বভাব আছে; দুজনের যত ঝগড়া তত ভাব। একজন আমার নিভাঠাকুমা, ভাল নাম নিভাননী। অন্যজন তাঁর বোন জগুঠাকুমা, ভাল নাম জগৎজননী। দাদুদের নামগুলোও বলে রাখি, নিভাঠাকুমার বরের নাম ধরণীধর আর জগুঠাকুমার বরের নাম চন্দ্রমোহন।

সেকালের মানুষ সব, বরের নাম মুখে আনতে বাধে। যেমন আকাশে চাঁদ উঠেছে বোঝাতে জগুঠাকুমা বলেন, “দীপুর বাবা উঠেছে।” আগুপেছু না জানলে বোঝা যায়না, মনে হয় জিজ্ঞাসা করি এই ভর সন্ধেবেলায় দাদু ঘুমোচ্ছিলেন কেন, শরীর ঠিক আছে তো! আবার নিভা ঠাকুমা যদি কখনও বিরক্ত হয়ে বলতে যান,“ধরণী দ্বিধা হও”, এমন ভাবে বলেন যেন অপুকাকুর বাবাকে কেটে দুফাঁক করতে বলছেন। দুজনে থাকেন অনেক দূরে দূরে; যে-যার ছেলের কাছে। দেখাসাক্ষাত না হলেও ফোনেই চলতে থাকে ভাব আর ঝগড়া। আবার দু’চার বছরে একবার এ ওর বাড়ি এলে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, মন্দিরে যাওয়া, টিভি দেখার পাশাপাশি চলতে থাকে কথার লড়াই।

একবার কী হল বলি শোন। দুই বোন দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর বারান্দায় মাদুর পেতে বসে সুখ দুঃখের কথায় মত্ত, সামনে দোলায় ছোটপিসির মেয়ে ঘুমোচ্ছে। এই ছ’সাত মাস বয়েস। দুজনে পালা করে দোল দিচ্ছেন আর সজাগ দৃষ্টি আছে যাতে বাচ্চাটা উঠে না পড়ে। এমন সময় শুরু হল বাদানুবাদ। প্রথমে চাপা স্বরে, তারপর গলা চড়তে লাগল। শুরু করলেন নিভাঠাকুমা, “আরে এত জোরে কেউ দোল দেয়? বাচ্চাটা চমকে উঠবে যে!”

“কোথায় জোরে? এইটুকু না দোলালে বাচ্চাটার ঘুম ভেঙে যাবে যে” – জগুঠাকুমার ব্যাখ্যা।

ঘুম ভেঙে যাওয়া নাকি ঘুমের মধ্যে চমকে ওঠা, কোনটা বাচ্চার পক্ষে বেশি খারাপ তা নিয়ে তর্ক শুরু হয়ে যায়। মুখের পারদ যত চড়তে থাকে হাতের ঠেলায় জোর তত বাড়তে থাকে।

মাঝপথে হুঁশ ফিরল একজনের। নিভাঠাকুমা বললেন, “এত জোরে দোল দিলে বাচ্চা কেন বুড়োরাও দোলা থেকে ছিটকে পড়বে। আমাদের পাড়ায় কত্ত এমন হয়েছে।”

“কথায় কথায় তোমাদের পাড়াকে টেনো না তো; আজব জায়গা তোমাদের। হেলমেট পরে বাগানে যেতে হয়, আরশোলা দেখে লাফ মারলেই ছাদে মাথা ঠুকে যায়। তোমাদের পাড়ার বাজে গল্পগুলো শুনে শুনে কান ঝালাপালা হয়ে গেল।”

“ভাল কথা সহ্য না হয়, কান বন্ধ রাখ।” তারপর নিভা ঠাকুমার স্বগতোক্তি,“কী জায়গা বাবা! একটু কথা বললেই সবাই বলে চিৎকার করছি।”

“এ কি আর তোমাদের দেশ? হাজার চেঁচালেও কেউ কিছু শুনতে পায় না?” জগু ঠাকুমার উত্তর।

নিভাঠাকুমা প্রায় গর্জে উঠলেন, “শুনতে পায় না বলেই তো দীপাবলীর রাত্রে শান্তিতে থাকা যায়। গেলবারেই তো ফোনে ঘ্যানঘ্যান করলে, ‘এই শুরু হল বাজি ফাটানো, তিন চারদিন ঘুম নেই, শান্তি নেই, মাথা ধরা, প্রেশার বাড়া সব চেপে ধরল।’ এখন শোনা যায় না বলে আমাদের পাড়ার নিন্দে!”

জগুঠাকুমাও নাছোড়বান্দা, “তা বলে ঘরে ঘরে সন্ধে পড়বে, আর পাড়ায় শাঁখের আওয়াজ শোনা যাবে না!”

“সে আমাদের যা হয় তা হয়। তাই বলে তুমি এরকম জোরে দোল দেবে?” নিভাঠাকুমা দেখাতে গেলেন কত জোরে জগুঠাকুমা দোল দিচ্ছিলেন। দেখানোটা বেশ একটু জোরেই হল।

“আমি এত জোরে দোলাচ্ছিলাম? আমি তো এমনি করে করছিলাম, তুমিই তো জোরে দোলালে।” দুরকম ভাবে দুলিয়ে দেখালেন জগুঠাকুমা।

“এমনি করে আমি না তুমি? আমি তো এমনি করে-” গলা তুললেন নিভাঠাকুমা, সঙ্গে হাতেকলমে প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা।

দুজনেরই গলা চড়তে লাগল আর কে কীভাবে দুলিয়েছেন হাতেনাতে দেখাতে লাগলেন। যুগপৎ গলা আর দোলায় ভয় পেয়ে বাচ্চার ঘুম ভেঙে গেল। শুরু হল চিল চিৎকার। ছোট পিসি ভেতরের ঘরে একটু গড়িয়ে নিচ্ছিলেন। দৌড়ে এসে বাচ্চাকে কোলে তুলে থামানোর চেষ্টা করতে লাগলেন, সঙ্গে সমানে দুই বুড়িকে বকুনি চলতে লাগল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার শুরু হল দুজনের বকবক, “আর কারও বাচ্চা যেন কাঁদে না। এদের সবতাতেই বাড়াবাড়ি।”

“ঠিক বলেছ, আমরা যেন বাচ্চা মানুষ করিনি।”

আর একবার, পাড়ার রমেনবাবুর মা মারা গেছেন লম্বা রোগভোগের পরে। অন্যদের আলোচনা থেকে দুজনেই শুনেছেন খবরটা। সন্ধ্যের পরে চা খেতে খেতে দুই বোনের আলোচনা শুরু হল –

“শুনেছ! রমেনের মা মারা গেছে।”

“কোথায় কি? সন্ধেবেলা আজেবাজে বকছ কেন?”

“কোথায় আজেবাজে বকছি? রমেনের মা মারা গেছে, সেটাই বলছি।”

“বালাই ষাট; বাজে বকা নয়তো কী? দিব্যি সুস্থ মানুষ, তার নামে যা নয় তা বলছ!”

“সুস্থ মানুষ! কিছুই খবর রাখ না দেখছি। এতদিন ভুগল, হাসপাতালেই তো মারা গেল।”

“এই তো ঘন্টাখানেক আগে এসেছিল। দেখনি? চোখের মাথা খেয়েছ?”

“মরণ, এতক্ষণে সবাই শ্মশান থেকে ফিরে এল, আর রমেনের মা নাকি একঘন্টা আগে তার সঙ্গে দেখা করে গেছে!”

“আবার যা নয় তাই বলছ ভর সন্ধের সময়। সবাইকে জিজ্ঞেস করে দেখ, জয়ন্ত একটু আগে এসেছিল কিনা! ওই তো খবর দিয়ে গেল রমেনের মা মারা গেছে, সবাই শ্মশানে যাচ্ছে।”

এ’রকম নানান মজার কথা একটু কান পাতলেই শোনা যায়। কি নিয়ে দুজনের ঝগড়া হয় আর কি নিয়ে নয় তার হিসেব কেউ জানেনা। খুব চেঁচামেচি না হলে কেউ থামাতেও যায় না।

দু’জনেই পাঁজি-পুঁথি, শনি-মঙ্গল, পূর্ণিমা-অমাবস্যা, অশ্লেষা-মঘা ইত্যাদি খুব মেনে চলেন। একজন আরেকজনের বাড়িতে যখন যান সঙ্গের লটবহরে একটা পাঁজি অবশ্যই থাকে। তর্ক শুরু হলেই দুজন যে যার পাঁজি বের করে দেখাতে থাকেন। বেশিরভাগ সময় দেখা যায় দুজনের পাঁজি মিলছে না। তর্ক বাড়তে বাড়তে তারপরে অন্যদিকে ঘুরে যায়।

পাঁজি নিয়ে সেবারে যা তুলকালাম হল তা আর বলার নয়। দীপুকাকা, মানে জগুঠাকুমার ছেলে, অফিসের কাজে বাইরে যাবেন; সকালবেলা রওয়ানা হওয়ার কথা। সে সময় নিভাঠাকুমা বোনের বাড়িতে আছেন। গল্প করতে করতে নিভাঠাকুমা জানতে চাইলেন দীপুকাকা কোথায় যাচ্ছেন কখন যাচ্ছেন ইত্যাদি। কথায় কথায় যেই জানা গেল তিনি সকাল সকাল বেরবেন অমনি নিভা ঠাকুমা বের করে আনলেন পাঁজি, চন্দ্র-পঞ্জিকা।

উল্টে পাল্টে দেখে তিনি মন্তব্য করলেন, “দীপুকে তো খুব ভোরে বেরিয়ে যেতে হবে – সাতটা দশ পনেরোর মধ্যে। তারপরে তো বেরনো যাবে না। সাতটা বাইশ মিনিট গতে তো গ্রহণ লাগবে; ছাড়তে ছাড়তে তো সেই বেলা সাড়ে ন’টা।” তারপর আবার একপ্রস্থ কীসব দেখেটেখে বললেন,“ও দিদি, তোমাদের রান্নার মাসিকে খুব ভোরে আসতে বলে দিও। সাতটার মধ্যে সবাইকে জলখাবার সেরে ফেলতে হবে। তারপরে তো খাওয়াও যাবে না।”

বিনা প্রশ্নে অনেকক্ষণ জগুঠাকুমা বকবক শুনেছেন। আর চেপে থাকতে পারলেন না, বললেন, “আ মোলো যা, কী হয়েছে বল না। আসল কথা না বলে খালি বাজে বকা।”

ব্যাস, শুরু হয়ে গেল, “আমি বাজে বকছি? নিজেই দেখনা; পরিষ্কার লেখা আছে – সাতটা বাইশ মিনিটে গ্রহণ লাগবে, ছাড়বে সেই তোমার ন’টা তেরো মিনিট গতে।”

“কীসের গ্রহণ?”

“সূর্যগ্রহণ গো, আর কী হবে? অপুর বাপে গ্রহণ লাগলে এত কিছু মানতে হয় নাকি?”

“কাল আবার সূর্যগ্রহণ কেন হবে? কাল তো পূর্ণিমা। হলে বড়জোর গ্রহণ হবে দীপুর বাবার।”

“তোমাদের যত বাজে বুকনি। পূর্ণিমা অমাবস্যা আবার কী! গ্রহণ হবে হয় রাত্রে নয় দিনে। দিনে হলে সূর্যগ্রহণ আর রাতে অপুর বাবা।”

এত বড় মতভেদ কি চুপিচুপি মিটমাট হওয়া সম্ভব? গলা ছেড়ে জগুঠাকুমা ডাক দিলেন, “ওরে আমার পাঁজিটা নিয়ে আয় তো!” তারপর গজগজ করে, “উনিই সব জেনে বসে আছেন, আমরা তো সব মুখ্যু!”

পাঁজি এল, এলো মানে ধৈর্য সামলাতে না পেরে ধুপ ধুপ করে পা ফেলে ঘরের ভেতর থেকে জগুঠাকুমা নিজেই নিয়ে এলেন, একেবারে সূর্য-সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা। অনেকক্ষণ দেখে টেখে একটা খোলা পাতা বাড়িয়ে ধরলেন নিভাঠাকুমার সামনে। নিভা ঠাকুমাও কম যান না। দুজনে মুখোমুখি, চোখে চোখ, হাত সামনে বাড়ানো, আর হাতে পাতাখোলা পাঁজি।

“দেখ দেখ, ভালো করে দেখে নাও, কাল পূর্ণিমা। সকালের দিকে দীপুর বাবার গ্রহণ, সাতটা বাইশ থেকে ন’টা তেরো। আর দিপুর বাবাকে রাহু গ্রাস করলে আমাদের খাওয়া দাওয়া নিয়ে কোনও নিষেধ নেই, আমরা অত মানিনা।” – বললেন জগুঠাকুমা; পূর্ণিমাতে চন্দ্রগ্রহণ হবে তিনি নিশ্চিত। তাঁর পাঁজিতেও তাই লেখা আছে।

নিভাঠাকুমা এত সহজে হেরে যাওয়ার পাত্রী নন। তেড়েফুঁড়ে উঠে তিনিও নিজের মতামত জানালেন, “হাজারবার বললেও তোমার কানে কিছু ঢোকে না দিদি! এই দেখ, হাতে নিয়ে দেখ। এখন দিন চলছে, সূর্যগ্রহণ হবে। কিছু তো রীতি রেওয়াজ মানতে হয়। গ্রহণের সময় খাওয়াদাওয়া, বাড়ি থেকে বেরনো সব নিষেধ। অপুর বাবা হলে না হয় কথা ছিল, কিন্তু সূর্যগ্রহণেও নিয়মকানুন মানবে না নাকি?”

এরপর অবশ্য কথা অন্য দিকে মোড় নিয়েছিল। জগু ঠাকুমা বলেছিলেন, “ও, তোমার অপুর বাবা হলে নিষেধ নেই খাওয়াদাওয়ায়। আর আমার দীপুর বেলায় সব মানা। ছেলেটা বাইরে যাবে, না খেয়ে! কত দিন ছেলেটার কপালে ভাল করে দুটি ডালভাত জুটবে না ঠিক আছে? কী কপাল করেছিলি রে দীপু এমন মাসী জুটেছে।”

বুঝতে পারলে না, তাইতো? গল্পে গল্পে খেই হারিয়ে গেছে, একটা ছোট্ট কথা তো বলা হয়নি। নিভাঠাকুমা থাকেন ছেলে অপুর কাছে – চাঁদে, মারে নেক্টারিশ-এ। অপুকাকা ওখানে চাকরি করেন, টাইকো ক্রেটার আর লেক অফ ড্রিমস-এ বিশাল দুটো নতুন টাউনশিপ তৈরি হচ্ছে, তার চার্জে আছেন। আর জগুঠাকুমা থাকেন মূর এভেনিউতে, নাকতলায়, পৃথিবীতে।

দুজনের পাঁজিতে তাই আলাদা কথা লেখা আছে। যখন পৃথিবী আর সূর্যের মাঝে আছে চাঁদ, চাঁদের এইপিঠে আলো নেই তাই রাত আর পৃথিবীতে অমাবস্যা। চাঁদের ছায়া পৃথিবীর ওপরে পড়লেই নাকতলায় সূর্য গ্রহণ আর নেক্টারিশ-এ পৃথিবী গ্রহণ। ধরণী, মানে ‘অপুর বাপ’ এর রক্ষে নেই। যখন পৃথিবী এলো মাঝখানে, চাঁদে তখন সূর্যের আলো পড়ে ঝকঝকে দিন, পৃথিবীতে পূর্ণিমা। তখন পৃথিবীর ছায়া চাঁদে পড়লেই নেক্টারিশ-এ সূর্য গ্রহণ কিন্তু নাকতলায় চন্দ্রগ্রহণে ফেঁসে গেল দীপুর বাপ।

বিশ্বাস না হলে কিছু করার নেই; আমার কাছে দুরকমের বিজ্ঞান বই নেই, থাকলেও আমি তো আর ভূগোল-বিজ্ঞানের খোলা বই বাড়িয়ে ধরে ঝগড়া করতে যাব না।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত