“এই ইট-পাথরের শহরে সে আমাকে শিখিয়েছিল ভালোবাসা অন্যভাবেও হয়। ভালোবাসার মানুষের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্ত হয়। আমরা দু’জন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁয় কখনো দেখা করিনি, আমাদের দেখা হতে খোলা আকাশের নিচে। টঙের দোকানের কড়া লিকারের ‘চা’ ছিল তার সবচেয়ে বেশী প্রিয়।
আমরা কখনো চাইনিজ হোটেলে খেতে যেতাম না।
সে সবসময় নিজের হাতে আমার জন্য রান্না করে নিয়ে আসতো !!
আমার পরিচিত মানুষগুলো আমাদের ভালোবাসা দেখে ঈর্ষা করতো। ভালোবাসা এত সাধারণ হয়ে কিভাবে? ভালোবাসার চাহিদা এত অল্পতেই মিটে যায় কি করে !!
এই ব্যস্ত শহরে আমাদের অবসর কাটতো নদীর ধারে, নীরব প্রকৃতি উপভোগ করতে করতে সে আমাকে বলতো, ” বুড়ো হবে একসাথে?”
আমার কাছে তার চাওয়া-পাওয়া ছিলো নিতান্তই অল্প। শত ব্যস্ততার মাঝেও তাকে দেয়া একটু অবসর সময়টাতেই মিটে যেতো তার সকল চাওয়া-পাওয়া !!
মানুষ এতো সহজে কিভাবে হাসিখুশি থাকতে পারে তা আমি তার কাছ থেকে দেখে শিখেছি।
এই পৃথিবীর শত পাষাণ হৃদয়ের মানুষের ভীড়ে সে ছিল আমার হৃদয়ের এক বিন্দু পরিমাণ শীতল আবছায়া। আমি তার চোখে চোখ রেখে রাজ্যের স্বপ্ন দেখতাম, তার অর্থহীন বুলি কথাগুলোও আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। তার অট্টহাসিতে আমি সারাক্ষণ মেতে থাকতাম !!
হঠাৎ একদিন কোনো এক অজানা ঝড়ে সে আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেল। তার সাথে আমার আর দেখা হয়নি, কথা হয়নি। কিন্তু সে কোথায় হারালো, কেন হারালো? সেই উত্তর আমার জানা নেই। আমি আজও সেই উত্তর জানার জন্য এই পৃথিবীর সবচেয়ে আগ্রহী শ্রোতা হয়ে অপেক্ষা করছি। তার সাথে কাটানো শতশত স্মৃতিগুলো আমার জীবনের বেঁচে থাকার অক্সিজেন হয়ে আজও অম্লান হয়ে আছে। নাটক, সিনেমায় কত প্রেমের মধুর মিলন হয়! আমি সেই আশায় আজও বিভোর হয়ে আছি !!
হয়তো সে আর ফিরবে না আমার জীবনে, কিন্তু অন্তত সে কেন এভাবে অতীত হয়ে গেল সে উত্তরটা জানার জন্যই আমার এই বেঁচে থাকার মিথ্যে অভিনয় !!”