– অয়ন দা , কাল রাত্রে আমার মেসেজটা পেয়েছিলে ?
– হুমম
– কোনোও রিপ্লাই দিলে না যে ?
– যে চাহিদার কোনরকম ভবিষ্যৎই নেই , তার আবার কীসের উত্তর ?
(কথাগুলো বেশ কানে লাগে শ্রমনার , চোখ দুটোও ছল ছল করে ওঠে )
– আমার কথাগুলো কিন্তু একটাও মিথ্যে ছিল না ।
– সত্যি – মিথ্যে অনেক দূরের চিন্তা শ্রমনা । আমি কোনোও দিন তোকে সেইভাবে দেখিইনি । আর তাছাড়া আমার অনেক আগের থেকেই গার্লফ্রেন্ড আছে , রিমা । তুই হয়তো জানিস না , আর আমিও তোকে বলার প্রয়োজন মনে করিনি । বাই দ্য ওয়ে , ওসব ছাড় এখন , পড়ায় ফিরে আয় । সিলেবাস এখনো অনেক বাকি ।
– না অয়ন দা , আজ আর না , আমি বরং আসি এবার ।আর হ্যাঁ , অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী । ভালো থেকো ।
কিছুক্ষন একদৃষ্টে অয়ন এর দিকে তাকিয়ে থাকার পর শ্রমনা চলে গেলো । অয়নেরও একটু খারাপ লাগছিলো , যতই হোক তার সামনে কেউ যদি চোখের জল ফেলে তার মোটেই ভালো লাগে না । কিন্তু অয়ন ই বা কী করবে ! বাড়ি চলে এলো সেও ।
দুই
অয়ন , রিমা , শ্রমনা ওরা প্রত্যেকেই ‘ সিটি কলেজ অফ আর্টস ‘ এর ছাত্র ছাত্রী । রিমা আর অয়ন পড়ে থার্ড ইয়ারে । শ্রমনা সেকেন্ড ইয়ারে । অয়ন বেশ ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর ওকে আর ওর মাকে মাঝে মাঝেই আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় । তাই স্যারদের সাহয্যে অয়ন কিছু জুনিয়র স্টুডেন্ট কে পড়া দেখিয়ে দেয় কিছু পয়সার বিনিময়ে । এতে ওদের অভাবের সংসারে কিছুটা হলেও অক্সিজেন জোটে। রিমা আর অয়নের পাঁচ বছরের সম্পর্ক । শ্রমনাও লেখাপড়ায় বেশ ভালো, একটু সিরিয়াস গোছেরও । কিন্তু অয়নের ওই মায়া মাখা চোখ আর মায়াবী হাসি শ্রমনাকে বড্ড বেশি কাছে টানতো। তাই অয়নকে একটু কাছ থেকে দেখবার জন্য আর কিছুটা সময় তার সাথে কাটানোর জন্যই ওই একটু ‘ পড়া পড়া খেলা ‘ আর কী ! কিন্তু তার এই ‘ ভালো লাগা ‘ কখন যে ‘ ভালোবাসায় ‘ পরিণত হয়েছে , তা শ্রমনার নিজেরই বোধগম্য হয় নি । তাই কাল রাতে অনেক আকাশ – পাতাল চিন্তা করে অবশেষে নিজের মনের কথাটা জানিয়েই দিল অয়নকে , তবে মেসেজে । কিন্তু তার সারাটা রাত নিদ্রাহীন ফোনের দিকে তাকিয়ে কেটে গেলেও , ওপাশ থেকে আর উত্তর আসে নি । তবুও আশা রাখে শ্রমনা , ‘ হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে ‘ এই ভেবে । কিন্তু আজ সকালেও যখন কোনোও উত্তর এলো না , তখন শ্রমনা কিছুটা হলেও ব্যাপারটা টের পেয়েছিলো । এখন অয়নের উত্তরেতো সবই জলের মতো পরিষ্কার । শ্রমনা তাই চোখের জলে আর মনকে ‘ সবই কপালের লিখন ‘ সান্ত্বনা পুরষ্কার দিয়ে বিদায় নিলো । শুধু অয়ন কেন , কারুরই এক্ষেত্রে কিছুই করার নেই ।
তিন
– হ্যালো , কী রে ফোন রিং হয়েই যাচেছ , অথচ রিসিভ করার কোনোও বালাই নেই । কী হয়েছেটা কী ? শরীর আর মন দুটোই সুস্থ্য তো? (বরাবরের চেনা ইয়ার্কির ভঙ্গিতে অয়ন )
– হুমম । শরীর ঠিক আছে ।
– মনের আবার কী হলো ?
– যা হচেছ হোক, তাতে তোর কী ?
– এরকম করে কেন কথা বলছিস রিমা ? কী হয়েছে বল না ? তুই এরকম মনমরা হয়ে থাকলে আমার ভালো লাগে না , সবই তো বুঝিস ।
– হুমম । বোঝার দায়টাতো শুধুই আমার ।
– ও আমি তোকে বুঝিনা , তাইতো? আজকাল খুলে কিছু বলিসই না তুই আমাকে ।
– কী আর করব বল অয়ন , বুকের মধ্যে কথা গুলো জমে জমে দলা পাকিয়ে গলার কাছে এসে আঁটকে যায় , তবু বের হতে চায় না । এক কাজ কর , আজ ঠিক বিকেল পাঁচটায় স্পন্দন পার্কে …আসতে পারবি ?
– ঠিকাছে রিমা , আমি আসবো ।
বিকেল পাঁচটায় যথারীতি রিমা পার্কে । অয়ন এসে পৌঁছায়নি এখনো । এই এক দোষ!!অয়ন কোনোদিন সময়মতো এসে পৌঁছায় না , আজও তার অন্যথা হলো না । অয়ন এলো পৌনে ছটায় । পাক্কা পঁয়তাল্লিশ মিনিট লেট ।
– আর বলিস না , একটা ছাত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো । মারাত্মক জ্বর । তার বাবাও আবার আজ বাড়িতে নেই , তাই তার মা বললো একটু পৌঁছে দিতে । আমার মাও বললো জ্বরে গা পুড়ে যাচেছ মেয়েটার , পৌঁছে দিয়ে আয় । তাই তাকেই ছাড়তে গিয়েছিলাম বলে লেট হয়ে গেলোরে ।
– আমি কিন্তু কোনো ফালতু বাহানা শুনতে এখানে আসিনি অয়ন । এসেছি কিছু কথা জানাতে ।
– আগে আয় , দুজনে একটু বসি , তারপর তোর মান -অভিমানের সবটুকু বসে বসে শুনবো ।
– না অয়ন । আজ আমি বসে নয় , এখানে দাঁড়িয়েই কিছু কথা তোকে জানিয়ে চলে যাবো ।
(রিমার ব্যবহারে অয়ন একটু অবাক হয় , একটু রাগ ও হয় )
-আচ্ছা বল
– আমি এই ফেক সম্পর্ক থেকে বেরোতে চাই অয়ন ….
(রিমাকে থামিয়ে …)
-ফেক রিলেসেন ?
– হ্যাঁ । ফেক রিলেসেন । এখানে কোনো ভালোবাসাই নেই , আছে শুধু কম্প্রোমাইজ আর বিশ্বাসঘাতকতা ।
অয়ন বেশ রেগে গেলো এবার ।
– কে কম্প্রোমাইজ করেছে ? আর কে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে শুনি একবার ?
– সেটা তুই ভালো করেই জানিস অয়ন । তোর এই মেয়েবাজী আমি আর মেনে নিতে পারছি না। আমি তোর ফোনে শ্রমনার মেসেজটা দেখেছি । কই আমাকে কিছু তো বলিস নি ? নিশ্চই ‘ হ্যাঁ ‘ ই করেছিস , পাছে আমি জেনে যাই , তাই মেসেজে কিছু উত্তরই দিস নি , সামনা সামনি বলেছিস ।
– তোর এটাই মনে হয় রিমা ? ! !
(অয়নের গলাটা ধরে যায় , কোনোরকমে সামলায় নিজেকে )
-আর কিছু বলবি ?
– বলতে শুরু করলে তো একটা বই হয়ে যাবে অয়ন ।
– বল আমি শুনছি ।
– রাতের পর রাত আমি দেখি তুই অনলাইন , অথচ আমার সাথে চ্যাট করতে হলেই তোর জ্বর আসে …তাই না? তোর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আমি সেদিন খুলেছিলাম , তোর ফ্রেন্ডলিস্টে রাই নামে একটা মেয়ে আছে । তার সাথে দেখলাম রাত বারোটাতে চ্যাট করেছিস । কিনা তার মা মারা গেছে …তাতে তোর কী ?
আমি আর এক চুলো তোকে বিশ্বাস করতে পারছি না অয়ন । তাই তুই আমাকে ছাড়ার আগে আমিই এই সম্পর্ক থেকে বেরোতে চাই । এই সম্পর্কটা একটা কাঁটার মতো আমার গলায় বিঁধছে , এটা আমি এবার উপড়াতে চাই । এই মানসিক অশান্তি আর না। জাস্ট রেডিকিউলাস ।
(অয়ন এর দুচোখে জল , তবুও বাক্ রুদ্ধ ,রাই তার দূরের সম্পর্কের বোন। রাতের পর রাত সে অনলাইন এ অনেক প্রশ্ন উত্তর খোঁজে , পড়াশুনো করে তাদের ভালো ভবিষ্যৎ এর জন্য । সবইতো রিমা কে বলেছে সে । তাহলে রিমা এতদিন কিছু্ই বিশ্বাস করে নি ? এই রিমার বিশ্বাস তার প্রতি , এতদিনের ভালোবাসার এই প্রতিদান ? এতখানি সন্দেহ? এত সন্দেহ নিয়ে কিছুদিনের প্রেম হয় , আজন্ম ভালোবাসার সম্পর্ক নয় । তাই রিমার কনোও ভুলই ভাঙ্গায় না অয়ন ।
– এটাই কি তোর শেষ সিদ্ধান্ত ?
– হ্যাঁ (রিমা কঠিন । অয়ন এর দিকে একবার তাকালো না পর্যন্ত )
রিমা চলে গেল । সম্পর্কে দাঁড়ি টেনে । অয়ন ও ফিরে চললো চোখের জলকে সঙ্গী করে , রিমা তাকে বোঝেই নি কোনোদিন । সে আর কী করবে , ‘ কপালের লিখন ‘ এই ভেবে জীবনের পথে এগিয়ে চললো অয়ন , বাড়িতে যে তার অসহায় মা ।
চার
-অ্যাই ওঠ ।
– ওঃ আজ তো রবিবার মা । আজকের দিনটা অন্তত ক্ষ্যামা দাও ।
– আজ তাড়াতাড়ি সব কাজ সারতে হবে তো ?
– কেন ? আজ কী ?
– ওমা , আমি মেয়ের বাড়িতে কথা দিয়েছি যে আজ আমরা যাব মেয়ে দেখতে ।
– ধুর বাবা , ভাল্লাগেনা। তুমি , রমা কাকিমা আর কাকু যাও । আমি গিয়ে কী করব ? তার চাইতে আমি বরং আজ কেকেআর এর খেলা টা দেখবো । তোমার পছন্দই আমার পছন্দ ।
– ওবাবা ..ওকী কথা ? মেয়েটাকে একবার চোখের দেখা দেখবি না? যার সাথে সারাটা জীবন কাটাবি তার সাথে দুটো কথা বলবি না বাবু ? চুপচাপ যাবি । যদিও ছেলে আমার কোনো রাজপুত্রের থেকে কোনো অংশে কম যায় না, তবুও একটু ভালো করে পরিষ্কার হয়ে যাবি । জানিস বাবু শুনেছি মেয়েটি নাকি বেশ সুন্দরী ।
– তাতে কী ? যাক গে , ঠিকাছে যাবো ।
অবশেষে রাজি হলো অয়ন । অয়ন এখন সরকারি চাকুরে । গেজেটেড অফিসার । অক্লান্ত পরিশ্রম তার বৃথা যায় নি। রিমাকে একপ্রকার ভুলেই গেছে সে । যে মেয়ে তার কঠিন সময়ে শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে তার ভালোবাসার হাত ছেড়ে দিয়েছিল , তাকে মনে রেখে আর কী বা লাভ হতো ?
তাই অয়ন আর থেমে থাকেনি । রিমা ওর জীবন থেকে চলে যাওয়ার পর ভেঙ্গে পড়লেও কোনোরকমে সামলে নিয়েছে নিজেকে । সামলাতে হয়েছে নিজের মার কথা চিন্তা করেই । বাবা মারা যাওয়ার পর ওকে আর ওর মা কে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে । এক একটা দিন গেছে ওদের দুবেলা খাবার পর্যন্ত জোটে নি। সেই দুঃসময়ে ওদের পাশে দাঁড়াবার মতো কেউ ছিল না । আর যে গুটিকয়েক ছিল আত্মীয় , তারাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো । যদি কেউ ছিল তো শুধু রিমা , যার কাছে অয়ন সব মনের কথা বলতো , যাকে খুব আপন মনে করতো অয়ন । সেও তো ভুল বুঝলো । অয়ন রাত্রে বেলা নেট অন করে গুগল সার্চ করে সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতো , আর রিমা কি সবই না ভাবল । রিমা কে সব ই জানিয়েছিল অয়ন যে তার মাথার ওপর কত চাপ , একটা ভালো চাকরি পেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে , তাই চাকরি পাওয়া পর্যন্ত রিমা যেন ওর ব্যস্ততা , সময় দিতে না পারা এগুলোর সাথে যেন একটু মানিয়ে নেয় । কিন্তু রিমাও ওর হাতটা কী অবলীলায় ছেড়ে দিলো সত্যি ! রিমা কী সন্দেহপ্রবণ একটা মেয়ে! তাই যে সম্পর্কে ভালোবাসা অর্থহীন , বিশ্বাসের ভীত নড়বড়ে , সেই সম্পর্ক নিয়ে ভেবে আর বেশি সময় নষ্ট করে নি অয়ন । ঘুরে দাঁড়িয়েছিল আরও দ্বিগুণ জেদ নিয়ে ।
পাঁচ
– আসুন আসুন ।ভেতরে আসুন । রাস্তা চিনতে অসুবিধে হয়নিতো ?
– না না ….কোনো অসুবিধে হয় নি ।
– বসুন । শুনছো ওনারা এসেছেন , আপনারা বসুন , চা জলের ব্যবস্থা করছি ।
– অত ব্যস্ত হওয়ার কোনোও প্রয়োজন নেই । আপনার মেয়েকে দেখছি না ।
– হ্যাঁ , ও আসছে ।
অয়ন চুপ করে বসে আছে । কেমন যেন একটা নার্ভাসনেস কাজ করছে ওর । এরই মধ্যে ঘামতে শুরু করেছে ।
– ওই যে আমার মেয়ে । আয় মা ভেতরে আয় ।
– এসো মা । আমাদের কাছে বসো ।
অয়ন আড় চোখে একবার তাকায় । কিন্তু তাকিয়ে এক্কেবারে হাঁ । এটা সে ঠিক দেখছে তো? এতো শ্রমনা ! এই পাঁচ-ছ বছরে যেন আরও সুন্দরী হয়ে উঠেছে । কিন্তু হিসেব খানা আর কিছুতেই মেলাতে পারছে না অয়ন । যথেষ্ট ইতস্তত বোধ করতে থাকে ;যতই স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে , তত যেন আরো বেশি করে কাল ঘাম ছুটে যাচেছ । তবুও কষ্ট করে চুপচাপ বসে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো অয়ন ।
শ্রমনা কিন্তু একদম স্বাভাবিক । যেন এর আগে অয়ন কে কোনোদিনই দেখেনি । আর পাঁচজনমেয়ে যেমন পাত্রপক্ষর সামনে বসে থাকে , সেরকমই রয়েছে । একটু লজ্জ্বা লজ্জ্বা ভাব , মুখে আলগা হাসি , মা , রমা কাকিমা , কাকু সবার সাথে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছে । মাঝে মাঝে আড় চোখে অয়নকেও দেখছে , আর অয়ন ততোই নার্ভাস হচ্ছে ।
একসময় শ্রমনার মা বাবাও অফিস , কাজকর্ম ইত্যাদি সব জিজ্ঞাসাবাদ করলো অয়নকে , তখন বাধ্য হয়ে অয়নকে মৌনতা ভাঙ্গতেই হলো তাকে । সবই ঠিক ঠাক এগোচ্ছিলো , এমন সময় অয়নকে ঝামেলায় ফেলে বসলো শ্রমনার আদরের ঠাকুমা । ঠাকুমা কে বেশ মিষ্টি দেখতে । একটাও দাঁত নেই , হাসিখুশি ও বেশ । তাই তিনি যখন মুচকি এক খান হাসি দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে বসলেন যাও তোমরা দুজনে এবার নিজেদের কিছু কথা থাকলে সেরে নাও , মাত্র পনেরো মিনিট সময় দিলাম । অয়ন কে তখন রাজি হতেই হলো ।শ্রমনা আর অয়ন গেলো পাশের ঘরে উপস্থিত সবার অনুমতি নিয়েই ।
কিন্তু কী বলবে , আর কেই বা শুরু করবে সেটা আর বোধগম্য হয় না ।অয়ন এর অবস্থা দেখে অগত্যা শ্রমনাই বলে উঠলো ,
– ভালো আছো অয়ন দা ?
– হ্যাঁ , তুই ?
– এখন ভালো আছি ।
– তুই জানতিস আজ আমি আসবো ?
– মানে ?
– মানে ছেলেটা যে আমিই , সেটা তোর জানা ছিল ?
– হুমম , জানতাম । ওই রমা কাকিমা আর কাকু বাপির অফিসের কলিগ ফ্রেন্ডস । ওনারাই তোমার কথা বাপিকে বলেছিলো । বাপির পছন্দ হয়ে যায় শুনে ।
– তা সেটা যে আমিই , তা বুঝলি কি করে ?
– নাম , ঠিকানা ,পড়াশোনা সব মিলে যাচ্ছিলো ।
– একটা কথা জিজ্ঞেস করব ? সত্যি করে বলবি তো ?
– হুমম ।
– তুই তো আমার অতীত সম্পর্কে সব ই জানতিস….’ না ‘ করে দিলি না কেন ?
– শ্রমনা চুপ ।
– প্লিজ বল । এতক্ষণ ধরে এই একটা চিন্তাই আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে । আমি স্বাভাবিক হতেই পারছি না ।
– তোমাকে ভুলতে পেরেছি কই ? কিন্তু কাউকে কিছু জানাই নি । কপালের ভরসায় ছেড়ে দিয়েছিলাম । সম্বল বলতে ছিল তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার অটুট বিশ্বাস ।তাই বাপির মুখে তোমার কথা শুনে ‘ না ‘ আর করতে পারিনি । আসলে তখন আমি মনস্থির করেছিলাম তোমাকে আর কোনোদিন বিরক্ত করব না । তারপর একদিন কানে এলো রিমা দি আর তোমার সম্পর্কটা আর নেই , ‘ আমারই জন্য ‘ , ‘ আমার মেসেজ এর জন্য ‘ রিমা দি তোমাকে ভুল বুঝেছে , তখন আমি নিজেকে আরও দূরে সরিয়ে নিয়েছিলাম , যাতে আমার ছায়াও তোমাদের সম্পর্কটাকে স্পর্শ না করতে পারে । আর আমি এটাও চাইনি রিমা দির ভুল সন্দেহটা সঠিক প্রমানিত হোক। তাই মাস্টার্স পড়তে ব্যাঙ্গালোর চলে গিয়েছিলাম ।
– আমার আর রিমার পাঁচ বছরের সম্পর্ক ? কিছু জানতে চাস না সেই ব্যাপারে ? আমি কিন্তু কিছু লুকোতে চাই না।
– না
– কেন ?
– অতীত কে বেশি না ঘাটানোই ভালো অয়ন দা । এতে নষ্ট হয় বর্তমান , আর ভবিষ্যৎও । তাতে দুজনেরই কষ্ট বাড়বে বই কমবে না । তার চাইতে বরং অতীত ভালো থাক , বন্ধ থাক । যা গেছে তা হয়তো নিজের ছিল না , যা হচেছ তাই নিজের , একান্ত আপন । শুখী হোক বর্তমান । আসুক নতুন ভবিষ্যৎ ।
হঠাৎ ঠাকুমার টোকা দরজায় এবং প্রবেশ । “বলি তা সব গল্প কি আজকেই সেরে নেবে দুজনে নাকি গো ? ” ঠাকুমার মুখে সেই ‘ ফোকলা দাঁতের মিষ্টি হাসি ‘ । লজ্জা পেয়ে গেলো দুজনেই ।
বাইরে আসতেই অয়ন আর শ্রমনা দেখে সবাই ওদের দিকে কৌতুহলের সাথে তাকিয়ে …..হঠাৎ অয়ন এর মা ,
– কীরে ? নিশ্চই পছন্দ । আমার কিন্তু খুব পছন্দ । মেয়েকেও , পরিবারকেও ।
অয়ন দেখলো প্রত্যেকের দৃষ্টি ওরই দিকে। শ্রমনার মাথা নিচু ।
খানিক্ষন চুপ অয়ন । তারপর নীরবতা ভেঙ্গে একটু গম্ভীর হয়ে বলে উঠলো ‘ শ্রমনা কে তো পছন্দ , কিন্তু ঠাকুমাকে আরও বেশি , আমার দুজনকেই চাই ‘ । সাথে সাথে সারা ঘরে হাসির কল্লোল ছড়িয়ে পড়লো ।
শ্রমনা খুব খুশি । অবশেষে তার এতদিনের নীরব ভালোবাসা পরিণতি পেলো ।
অয়ন রা চলে গেলো । অয়ন এর মা এর খুব ইচ্ছে পরের মাসেই বিয়ে পর্ব সেরে ফেলার । শ্রমনার হাসি আর থামছেই না । হঠাৎ মিনিট দশ পরে শ্রমনার ফোনে একটা মেসেজ , ‘ আমার নতুন জীবনে তোমাকে স্বাগত শ্রমনা । সত্যি ভালোবাসার একদিন ঠিকই জিত হয় , তা সে যতই নীরব হোক না কেন । একদিন আমার কথায় কেঁদেছিলে , কথা দিলাম আর কনোওদিন তোমাকে চোখের জল ফেলতে দেব না । আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখো , আগলে রেখো, একবার নিজেকে সামলে নিয়েছি । আর পারব না , আই লাভ ইউ শ্রমনা । ‘
আজও শ্রমনার চোখে জল । তবে আজ এটা তার আনন্দাশ্রু। তার দীর্ঘদিনের নীরব প্রতীক্ষা এতদিনে সফল ।তাই ভগবানের আশীর্বাদস্বরূপ এই ‘ মিলন ‘ । ‘ আই লাভ ইউ টু ‘ উত্তর দিয়ে ভগবানকে নত মস্তকে প্রণাম জানায় শ্রমনা। সত্যি ‘ কপালের লিখন ‘ বোঝা যে বড় দায় !
সমাপ্ত